Zobayer Hossain

জোবায়ের হোসেন

অভিশাপ
জোবায়ের হোসেন

আম্মু, আসলেই কি অভিশাপ বলে কিছু আছে? ইরফানের এই প্রশ্নে তার মা ফোন রেখে কিছুক্ষন ভেবে উত্তর দেয় ” তোমার নিশ্চয় রহিম চাচার কথা মনে আছে।তিনি আজ আসবেন আমাদের বাসায়।তিনি আসলে হয়তো তুমি তোমার প্রশ্নের উত্তর পাবে। ইরফান তো মহাখুশি, এর আগে ৬ বছর আগে রহিম চাচা এসেছিলেন এবং দুহাত ভরে অনেক কিছু এনেছেন শুধু ইরফানের জন্য। দামী দামী সব চকলেট আর আইস্ক্রিম।

জন্মদিনের উপহার গুলো ও তিনি পাঠিয়ে দিতেন কিন্তু উপস্থিত থাকতেন না,হঠাৎ দুই বছর ধরে সব বন্ধ।ইরফান অনেকক্ষন অপেক্ষা করতে থাকে কখন রহিম চাচা আসবেন।মাঝখানে কলিং বেলের আওয়াজ শুনে দৌড়ে গিয়েছিলো কিন্তু দরজা খুলে দেখে তার বাবা। যাই হোক অবশেষে রহিম চাচা আসলো।লজ্জায় সামনে গেলো না ইরফান।পর্দার আড়াল থেকে উকি মেরে দেখতে লাগলো এবং হতভম্ব হয়ে গেলো।

রহিম চাচা একেবারে খালি হাতে এসেছে। সে মুখ ভার করে মায়ের কাছে গেলে তার মা বললো এত মন খারাপ করতে হবে না। তুর জন্য ফ্রীজে তো আইসক্রিম আছে। তারপরে ও সে মন খারাপ করে পর্দার আড়াল থেকে বাবা আর রহিম চাচার কথোপকথন শুনতে থাকে। অনেকক্ষন না থাকায় সে কিছু বুঝে উঠলো না।তারপরে ও শুনতে থাকে, রহিম চাচা বলছেন আজ তার কাছে কিছুই নেয়। পেনশনের টাকা যা ছিলো তা ও ফুরিয়ে এসেছে।বাবা বললেন হঠাৎ এই অবস্থা হলো কেমন করে তোমার?
বাবার প্রশ্নে চাচা উত্তর দিলেন “অভিশাপ”।
বাবা বললেন “কেমন অভিশাপ?

তোমার অবস্থাতো বেশ ভালোই ছিলো।” রহিম চাচা জবাব দিলেন “আমার সব কিছু ছিলো,তবে লোভ আর অসদুপায় আমার থেকে সব কেড়ে নিয়েছে। “
অবসর এর ৫-৬ বছর আগে একবার আমার কাছে এক বৃদ্ধা এসেছিলো তার পেনশনের ৩ লাখ টাকা তুলতে কিন্তু আমি নানা তাল-বাহানায় ১ লাখ টাকা দাবী করলাম।বৃদ্ধার হাজারো আকুতি আমি শুনলাম না।

এক পর্যায়ে বৃদ্ধা বললো তিনি ও সরকারী চাকরী করছেন এবং এইসব তাল-বাহানার স্বীকার হতে ও দেখেছেন। তিনি বলে গেলেন ” আমি সম্পূর্ণ সৎ উপায়ে আমার চাকুরী জীবন শেষ করেছি আপনাকে আমি এত টাকা দিতে পারবো না। আমার ঘরে দুইটি মেয়ে আছে, বিয়ে উপযুক্ত, এমনটা করবেন না। তার এইসব কথা আমি শুনলাম না বরং আরো নানা নিয়ম তাকে বুঝাতে গেলাম।” হঠাৎ আম্মু গেলেন নাস্তা নিয়ে এবং বললেন ভাবীর (রহিম চাচার স্ত্রী) এখন কি অবস্থা?
রহিম সাহেব বললেন মেডিকেলে ভর্তি আছে আপাতত।কিছু দিন পর হয়তো পাবনায় নিয়ে যাওয়া হবে।

রহিম চাচা কাদো গলায় আবার বাবার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন- সে বৃদ্ধা আবার এলো আমার কাছে এবং মেয়েদের বিয়ের কথা বলে ১ লাখ টাকা ছাড়া বাকি টাকা নিয়ে গেলো এবং আমাকে বললেনঃ
“আল্লাহ সবই দেখছেন, তিনি এর বিচার করবেন।” তখন এই কথাটির পাত্তা দি নেয়। তবে আজ আমি বুঝতে পারলাম, আজ আমার কিছু নেয়, স্ত্রী অসুস্থ হওয়ায় সবকটি জমি বিক্রি করে দিলাম। সে (রহিম চাচার স্ত্রী) বোধহয় ভাবীকে কিছু কিছু বলেছে। এক পর্যায়ে তিনি বাবাকে অনুরোধ করলেন তাকে যে কোনো একটা চাকরি খোজে দিতে। যে কোন চাকরি তিনি করতে পারবে।

ইরফান রহিম চাচার সামনে যায় নি তবে বুঝতে পেরেছেন তিনি কাদছেন।এক পর্যায়ে বাবা ওনাকে থামালেন এবং সান্ত্বনা ও দিলেন।এমন সময় মা-বাবা ওনাকে রাতের খাবার খেয়ে যেতে জোর করলেন। অনেক জোরাজোরিতে তিনি রাজি হলেন না। বাবার হাজারো জোরাজোরিতে তিনি বললেন একটু ঘুরে আসি নিচ থেকে।পান কিনবো একটা।আজকে সারাদিন খাই নি।বের হোওয়ার পর আর তিনি আর আসেন নি।বাবা হয়তো জানতেন তিনি আসবেন না তাই বোধ হয় মাকে নিষেধ করেছিলেন খাবার না বাড়তে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *