উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ এর কবিতার অনুবাদ
আমরা বলি মানুষের যুক্তিবাদী হওয়া দরকার। কিন্তু অনেক সময় প্রত্যয় বিশ্বাস তা বিজ্ঞান বিরোধী হলেও জীবনে যুক্তি তর্ক থেকে বড় হয়ে ওঠে যাকে অস্বীকার করা যায় না। কবিতায় শিশুটি যাকে ভালোবাসে সে মারা গেলেও তার মানসপটে বেঁচে আছে। সে তাই তাকে জীবন সঙ্গী বলে মনে করে। সকলের মত সেও তার জীবনে একজন। কবিতায় ভাল মারা গেছে।তার শিশু বোনের ভালোবাসা তাকে তার জীবনে অমর করে রেখেছে। যুক্তি তর্কের ওপরে বিশ্বাস বিশেষ স্থান পায়।নিচের কবিতায় কবি মানসে তার প্রকাশ। এখানে কবি মনের রোমান্টিকতা কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে। ভাববাদ বস্তুবাদের ওপরে জায়গা পেয়েছে।নিচে William Wordsworth We Are Seven কবিতার অনুবাদে ভাবনাটা পাওয়া যায়।
আমরা সাতজন
রণেশ রায়
১৪/০৭/২০২২
আমি যাই তার পিছু পিছু
সরল সহজ শিশু
বোঝে না জীবনে জটিল কিছু,
আলতো করে শ্বাস নেয় নিঃশ্বাস ফেলে,
তার প্রতিটি শ্বাস নিঃশাসে
সত্যেরে সে খোঁজে
জীবনের কথা বলে,
সে জন্ম মৃত্যু রহস্যের কি বোঝে ?
গ্রাম্য মেয়েটি দাঁড়িয়ে সরবে
কুটিরের দুয়ার প্রান্তে,
সে আমাকে জানায়,
আটে পা দিয়েছে সবে,
কোঁকড়ানো চুল মাথা জুড়ে
একটা বন্যতা তার চেহারায়,
সুন্দর চোখ দুটো নজর কাড়ে,
তার রূপে মুগ্ধ আমি;
আমি বলি, প্রশ্ন করি তোমাকে,
“ছোট্ট সুন্দর মেয়ে আমার
তোমরা ক ভাই বোন বলবে আমাকে ?”
সে বলে, ‘‘ জানতে চাও কজন?
বলি তবে তোমায়,
আমরা ভাইবোন
সবাই মিলে মোট সাতজন”
এই বলে অবাক মুখে তাকায়।
.
“অন্যেরা সব কোথায়?”
আমি জানতে চাই আবার,
কোন দ্বিধা না করে
সপ্রতিভ উত্তর তার,
“ ওই কনয়ে দুজন
সেখানে বাস করে তারা,
সাগরে গেছে আরো দুজনে,
আর এক ভাই এক বোন
দুজন শুয়ে গির্জার উঠোনে,
সেখানে কুটির প্রাঙ্গনে
আমার বাস তাদেরই কাছে
মায়ের সাথে উঠোন পাড়ে‘‘।
.
আমি অবাক, বলি, “কি করে হলো?
দুজনে কনওয়ে দুজনে সাগরে
আর তুমি ‘‘সাত কি করে?”
মেয়েটি বলে,‘‘ বললাম তো
দুজন যায় সাগরে
আর দুজনের বাস কনওয়ে
দুজন শুয়ে গির্জা প্রাঙ্গনে
তারা ঘুমিয়ে সেখানে গাছের নীচে
মায়ের ঘরের খুব কাছে,
এখনও তোমার প্রশ্ন কজন,
গুনে দেখ আমরা মোট সাতজন।”
আমি বলি,
‘‘বেঁচে আছ তোমরা সাথে আমাদের
তোমরা দৌড়ে বেড়াও
অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সচল তোমাদের,
দুজনে তো কবরে শুয়ে
প্রাণ নেই তাদের,
তোমরা তো তবে পাঁচজন
কেমন করে হলে সাতজন?‘‘
সে বলে স্থির প্রত্যয়ে,
‘‘তারা শুয়ে গির্জা প্রাঙ্গনে
সবুজ গালিচায় ঘুমিয়ে
তাদের দেখা যায় ওই,
মায়ের ঘর থেকে একটু দূরে
বারো পা এগোলেই দেখবে
দুজনে পাশাপাশি শুয়ে,
আমার সরঞ্জাম সেখানে
তাদের জন্য শীতের কাপড় বুনি
তৈরি করে দিই মাথার টুপি,
উঠোনে বসে তাদের গান শোনাই আমি,
প্রায়ই সূর্য যখন অস্ত যায়
আলো থাকতে থাকতে
রাতের আহার সারি‘‘।
.
সে আমায় জানায়
তার বোন জেন মারা যায়
কঠিন এক রোগে,
দীর্ঘদিন ভোগে যন্ত্রনায়
ঈশ্বর তাকে মুক্তি দেয়
আজ সে শুয়ে থাকে উঠোনে।
সে বলে,
‘‘শুকনো ঘাসে আমি আর ভাই,
কবরের চারদিকে দৌড়ে বেড়িয়ে
খেলতাম আমরা দুজনে,
তাকেও যেতে হয় শেষে
সেই ভয়ঙ্কর বরফপাতে,
সেদিন আমি পালিয়ে বেঁচেছি দৌড়ে
জন ফেরেনি আর
সে আজ কবরে বোনের পাশে শুয়ে‘‘।
.
বলি আমি জোর গলায়,
“তবে তো নেই আজ দুজনে
পৃথিবী তাদের দিয়েছে বিদায়,
হলে তবে তোমরা
পাঁচজন
কেমনে হয় সেটা সাতজন হায়?”
.
স্থির বিশ্বাস তার, সে বলে, “যাও,
দেখ, আমরা সাতজন
দু’জন নেই তাও,
ওরা আছে বারোমাস
ঈশ্বরের আশ্রয়ে তাদের বাস”।
.
আমি বুঝি কি হবে বাক্য ব্যয় করে
এটা যে প্রত্যয় বিশ্বাস ওর
বাক্যের আঘাতে কি বিশ্বাস মরে?
তারা সাতজন তার বিশ্বাসে
আমি হার মানি তার প্রত্যয়ে।