#vampire_love_bites
#রওনক_জাহান_রিপ্তী
#পার্ট_১
“আমি ওকে আমার করে পেতে চাই। বহু বছর পর ও আবার ফিরে এসেছে। সেদিন আমি ওকে পেতে পেতে হারিয়ে ফেলেছি কিন্তু আজ আর আমি ওকে হারাতে দিবো না। আমি যেকোনো মূল্যে ওকে চাই।”
কথাগুলো বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল এডল্ফ।
এডল্ফ এর কথা শোনা মাত্র মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ পড়ে গেলো এলির। কিছুক্ষন সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে এডল্ফকে দেখেই পরক্ষনে স্তিমিত গলায় বলল,
—“ইউ শুড লেট হার গো, ভাইয়া। তুমি এটা ভেবো না যে সে ফিরে আসলেই তুমি তাকে পেয়ে যাবে। তার আর তোমার ডেসটিনি সম্পুর্ন আলাদা। আর তার ডেসটিনিতে অন্য কেও আছে।”
—” শাট আপ এলি!” চিতকার করে কথাটা বলেই হাতের কাছে থাকা টেবিল টাকে জোরে একটা লাথি দিয়ে দূরে ছুড়ে ফেলে দিলো এডল্ফ। সাথে সাথে টেবিলটি দুমড়ে মুচড়ে ছিটকে গিয়ে লাগলো ঘরের দেয়ালের সাথে। এলি আকস্মিক ঘটনায় খানিকটা চুপসে গেলো। কিছুক্ষন বাদে কিছুটা সাহস জুগিয়ে মিনমিনে গলায় বলল,
—” এতো বছর পর প্রিনসেস ফ্লোরা কে তুমি কোথায় দেখলে ভাইয়া?”
—“দেখিনি! ওর শরীরের সেই অদ্ভুত গন্ধে আজ বহু বছর পর আমি আবারও হারিয়ে গিয়েছিলাম। আর সেই গন্ধ কতোটা ইউনিক তা তুমি ভালো করেই জানো।”
এলি খানিকটা ভড়কালো। তারপর শান্ত গলায় ধিরে ধিরে বলল,
—” তোমার তো ভুল ও হতে পারে।”
এলির কথায় চোখ বড় বড় করে তাকালো এডল্ফ। এডল্ফের চোখের তেজের হল্কায় নুইয়ে গেলো এলি।
খানিক বাদে এডল্ফ থমথমে গলায় বলল,
—“এসব নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না এলি। নাও ইউ ক্যান গো! আই ওয়ান্ট টু স্টে হেয়ার এলোন।”
এলি আর কথা বাড়ালো না। দ্রুত আন্ডারগ্রাউন্ডের অন্ধকারে ঢাকা রুমটি ত্যাগ করল।
____________________
রাত্রিকালীন গা ছমছমে নৈঃশব্দের মাঝে ঝিঝি পোকার নিরবচ্ছিন্ন শব্দে আরও খানিকটা ভয়ংকর হয়ে উঠেছে ডার্ক ফরেস্ট টা। চারিদিকে ঝোপঝাড় এর আস্তরন। জঙ্গলের দৈত্যাকার গাছগুলোর মাথা প্রায় ৫ তলা দালানের সমান। হুহু করে হাওয়া বিলি কাটছে কালচে বন বনানীর ভেতর। দৈত্যাকার গাছগুলোর পাতা খানিকটা নড়েচড়ে উঠছে। কুয়াশাচ্ছন্ন ধোয়ামাখা পরিবেশ নিতান্তপক্ষেই ছমছমে। লোক লোকারণ্য হীন বন প্রান্তরে বিশালার একটা প্যালেস।
প্যালেস এর বাইরে অন্ধকারাচ্ছন্ন প্যাটিওতে তে থমথমে মুখ করে বসে আছে আধার রাজ্যের রাজা ইভান রেদোয়ান। পরনে ব্ল্যাক হুডি! হুডির কারনে কপালের পুরোটাই ঢাকা পড়ে আছে। ভ্রু কুঞ্চিত থাকায় কপালে চিন্তার রেখা আচ করা যায়। চোখ দিয়ে লাল আভা ছড়াচ্ছে, চোয়াল শক্ত।
—“এখানে কি করছো ভাই?”
ইভানকে খুজতে খুজতে প্যাটিওতে এসে দাড়িয়েছে উইলিয়াম। ইভানকে দেখা মাত্রই সে উল্লিখিত কথাটা বলে। ভাইয়ের ডাক শুনার পরেও ইভান সামান্য নড়েচড়ে উঠলো না, তার দৃষ্টি স্থির। যেনো এটাই হওয়ার ছিলো। এই মুহুর্তে উইলিয়ামের এখানে এসে উপস্থিত হওয়ারই কথা ছিলো। উইলিয়াম এসে ইভানের সামনে একটা চেয়ার টেনে বসল তারপর ক্ষীন গলায় বলল,
—“stanton moor এবার কিছুদিনের জন্য ছাড়া উচিত ভাই!”
ইভান রেগে গিয়ে ক্ষিপ্র গতিতে টি টেবিলের উপর একটা বিট দিয়ে বলল,
—“ইম্পসিবল! এটা আমার রাজ্য, আমার ডার্ক ফরেস্ট। আর আমার রাজ্য আমি কিছুতেই ছাড়বো না।”
উইলিয়াম খানিকটা চিন্তিত মুখ করে বলল,
—“কিন্তু ‘central saint martins University’ তে তো তোমার যেতে হবে। তোমার লাইফের মিসটারি জানার জন্য!”
—“সেটা আমি এখান থেকেই ম্যানেজ করে নিতে পারব দ্যা। ইউ ডোন্ট হ্যাভ টু থিংক এবাউট দ্যাট”
—” ওকে! তোমার যা ইচ্ছা।”
বলেই বসা থেকে উঠে চলে যেতে লাগলো উইলিয়াম। পেছন থেকে করুন গলায় বসে উঠলো ইভান,
—” দ্যা,তুমি সবটা জানার পরও কেন কিছু বলছো না আমায়?”
উইলিয়াম ইভানের কথায় কর্নপাত করল না। ক্রমশ এগিয়ে গেলো। একসময় হারিয়ে গেলো আধার রাজ্যের গহীনে। ইভান মুখ কালো করে উদাসীন হয়ে বসে রইল। পাস্ট…পাস্ট…পাস্ট! একটা মানুষের কতোটা পাস্ট থাকতে পারে! যে পাস্ট সবসময় তাড়া করে বেড়ায়। যে পাস্ট আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রাখে। যে পাস্টের তাড়নায় বর্তমানও তালগোল পাকিয়ে তার নিচে চাপা পড়ে যায়। এরকম অভিশপ্ত জীবনের কি খুব দরকার ছিলো? সবার থেকে ব্যতিক্রম হয়ে জন্মানোর কি খুব দরকার ছিলো?আধার রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ারও কি খুব দরকার ছিলো?
_________________
“নাহ,এমন টা হতে পারে না!! প্রিন্স তুমি যেও না,আমাকে এখানে একা ফেলে যেও না প্রিন্স। প্রিন্স যেতেই ফ্লোরার দিকে এক ভয়ংকর দেখতে পশুরুপী মানুষ এগিয়ে এলো।
ফ্লোরা ভয়ে চিতকার করে উঠলো,
নায়ায়ায়ায়ায়াহহহহহহ।”
ফ্লোরা ভয়ে বেড শিট আকড়ে ধরে চোখ খুলল। তার চোখেমুখে ভয়ের ছাপ। বুকটা ক্রমশ ধরফর করছে। হার্টবিট খুব ফার্স্ট হচ্ছে। যেনো বাইরে থেকেই হার্টবিটের সাউন্ড উপলব্ধি করা যায়। কোনো রকমে উঠে বসে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল ফ্লোরা। এই অদ্ভুত টাইপের রহস্যময় জিনিসগুলো প্রায় প্রতিদিনই তার স্বপ্নে এসে হানা দেয়। কেন দেয় জানা নেই ফ্লোরার। তবে এটা একদমই স্পষ্ট যে এসবের সাথে ফ্লোরার কোনো না কোনো কানেকশন আছে। কিন্তু এই ভ্যাম্পায়ার, ওয়্যারওল্ফ দের সাথে কি কানেকশন থাকবে তা ভেবেই ঘাবড়ে যায় ফ্লোরা। অজানা ভয়ে রীতিমতো কেপে উঠে বুক। ফ্লোরার চিৎকার শুনে এতোক্ষণে ওর রুমে এসে হাজির হয়েছে নোরা চৌধুরী। ফ্লোরাকে এলোমেলো হয়ে বসে থাকতে দেখেই উনি বলে উঠলেন,
—“ফ্লোরা কি হলো তোমার মামুনি?”
ফ্লোরা দুহাতে নোরা চৌধুরী কে আকড়ে ধরে। নোরা চৌধুরী বুঝতে পারে যে ফ্লোরা খুব ভয় পেয়েছে। কিন্তু ভয়ের কারন উপলব্ধি করতে পারছে না। তিনি আবার শান্ত গলায় ফ্লোরা কে উদ্দেশ্য করে বলে,
—“হোয়াট হ্যাপেন্ড ফ্লোরা? তুমি তো রীতিমতো ভয়ে কাপছো। এনিথিং রঙ মাই চাইল্ড? প্লিজ, সে টু মি।”
ফ্লোরা নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
—“এভ্রিথিং ইজ ওকে মম।”
—“বাট ইউ আর পানিকড!”
ফ্লোরা বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে বলল,
—“একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছি।”
নোরা চৌধুরী ফ্লোরার মাথার চুলগুলো তে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
—“এইজন্য আমি তোমাকে হরর মুভি গুলো দেখতে বারন করি। রাতভোর হরর মুভি দেখলে এরকম টাই হবে!”
ফ্লোরা চুপচাপ বসে থাকে। ফ্লোরার মনে হয় হরর মুভির মতো কোনো আধার রাজ্যের সাথে ওর জীবন টাও জড়িয়ে আছে। সে আধারে ভয় পেলেও এই অন্ধকার জীবন সম্পর্কে জানার তার প্রবল আগ্রহ। একমাত্র হরর মুভির মাধ্যমেই সেই জীবনটার কিয়দংশ উপলব্ধি করা যায়।
—“কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে খেতে এসো ফ্লোরা।”
নোরা চৌধুরীর কথায় ধ্যান ভাংলো ফ্লোরার। ধীর পায়ে উঠে ব্যাক ইয়ার্ডে গেলো সে। তার সবচেয়ে প্রিয় একটা জায়গায়। মাথার উপর এক স্বপ্নীল সকাল। নীল আকাশের নিচে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা বৃক্ষরাজির গায়ে এখন বাহারি রঙ। কোথাও সবুজ,কোথাও হলুদ,কোথাও আবার খয়েরী অথবা লাল। এই রঙের খেলা দেখতে দেখতে চোখে এক রকম নেশা লেগে যায়। হুহু হাওয়ায় ক্রমশ উড়ে চলেছে ফ্লোরার লম্বা লম্বা সিল্কি চুল। চারপাশে বাহারি ফুলের শোভা ও গন্ধে বিমোহত হয়ে যায় প্রান।
চলবে
পরের পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=237067128102064&id=100053963351266
রওনক জাহান রিপ্তী