
নদীর ধারে বাস
ভাবনা বারো মাস
দুধারি জনপদকে পিছনে ফেলে সবুজের বুক চিরে উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গ অভিমুখে এগিয়ে গেছে যে পিচঢালা গালিচা সেই রাজকন্যের নাম ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। ঈষৎ খানাখন্দের উপস্থিতি তার ত্বকের লাবণ্য খানিক হ্রাস করলেও তন্বী শরীরের হাতছানিকে উপেক্ষা করে সাধ্য কী! অতএব পা বাড়ালাম।
নমোনমো নম সুন্দরী মম
জননী বঙ্গভূমি!
গঙ্গার তীর স্নিগ্ধ সমীর,
জীবন জুড়ালে তুমি।
নদী উপত্যকা এই গাঙ্গেয় সমভূমি। নদীর এককূল ভাঙ্গে অপরকূল গড়ে-এই প্রকৃতির নিয়ম। এমনই এক কালের খেয়ালে নদীর বুকে চর পড়ে জাতীয় সড়কের ধারে গড়ে উঠেছে মুর্শিদাবাদ জেলার প্রাচীন শহর -ধুলিয়ান গঙ্গা। অনতিদূরেই ফারাক্কা ব্যারেজ। ঝাড়খন্ড ও বাংলাদেশ সীমান্তও লাগোয়া। ক'য়েক কিলোমিটার এগোলেই দেখা মেলে এক ঐতিহাসিক দৃশ্যের। গঙ্গা যেখানে ভাগীরথী ও পদ্মা নামে দ্বিধাবিভক্ত হচ্ছে সেই দেবীপুর!
শোনো বন্ধু শোনো---
প্রাণহীন এই শহরের ইতিকথা
ইঁটের পাঁজোরে লোহার খাঁচায়
দারুন মর্ম ব্যথা....
সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই জনপদ। অতি ঘনবসতিপূর্ণ। স্কুল- কলেজগুলিতে উপচে পড়ছে ছাত্রসংখ্যা। শহরের শেষপ্রান্তে নদীর অবস্থান। তাই সম্প্রসারণের সুযোগ নেই। বিড়িশিল্পের খাস তালুক । ভোগ্য পণ্যের অভাব নেই। কিন্তু শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিকাঠামো তলানিতে। শহরের ইতিউতি চোখ রাখলে দেখাযাবে ছোট ছোট কুঠুরিগুলোতে মেয়ে -বৌ রা সারাদিন বিড়ি বাঁধছে। পুরুষেরা বেশিরভাগ পরিযায়ী শ্রমিক। শিশুরা নানা অসংগঠিত ক্ষেত্রের ‘চাইল্ড লেবার’।
বিস্তীর্ণ দু'পারের, অসংখ্য মানুষের হাহাকার শুনেও
নিঃশব্দে নীরবে, -ও গঙ্গা তুমি-
গঙ্গা বইছ কেন?
বর্ষা ও বাঙালি এক স্বভাবজাত। ভাবুক, আবেগি ও সৃজনশীল। বর্ষা আসলেই আম বাঙালি যেখানে ইলিশ ও কবিতা উৎসবে মাতে সেখানে নদী তীরবর্তী এই মানুষেরা প্রাণ হাতে করে বাঁচে। অতিবৃষ্টিতে উপকূলবর্তী এলাকাগুলি জলমগ্ন হওয়া এখানে মামুলি ব্যাপার। ভয় মূলত পূর্ণযৌবনা নদীর টানে মড়মড় শব্দে কখন না জানি ভিটেমাটি সমেত সবংশে নদীগর্ভে সলিল সমাধি ঘটে!
বরষায় আজ কদম্বতনু
জড়ায়েছে শ্যামলতা
সহসা পড়িল মনে মোর বধূ
হারানো দিনের কথা...
কাছ থেকে দেখেছি এই শহরকে ।এর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে অনেকগুলো বছর। স্মৃতিপটে ভিড় জমায় গলিপথ। আম, লিচুর গন্ধ নাসারন্ধ্রে এসে লাগে। অতিথি বৎসল মানুষগুলো যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে। সুযোগ পাওয়া মাত্রই তাই ঘুরে এলাম এই শহর থেকে। সঙ্গে নিয়ে এলাম একমুঠী টাটকা বাতাস!!
স্বনন্দিনী