অণুগল্প
সুমিত সেন।
রিমি
ছোট্টো মেয়ে রিমি। ভাল নাম রিমঝিম। বয়স সাড়ে-তিন। যুগের নিয়ম, এই বয়সেই পাড়ার কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে যায় সে। সকাল সাতটা থেকে দশটা, তিন ঘণ্টা স্কুল। স্কুল থেকে ফিরেই সব গল্প ঠাকুমার সঙ্গে। ঝাড়া দু ঘন্টা। এই সময় বাড়িতে আর কেউ থাকে না, মা রিমিকে স্কুল থেকে বাড়ি এনেই তার স্কুলে দৌড়ান। মা এর স্কুল বেশী দুর না হলেও পৌনে এগারোটার মধ্যে তাকে স্কুলে পৌঁছতেই হবে। স্কুল থেকে ফেরার পর তাই রিমির রাম রাজত্ব। ঠাকুমার ও প্রচ্ছন্ন প্রশয় অবশ্যই থাকে। রিমি প্রতিদিন ঠাকুমার কাছে বায়না করে তাকে স্কুলে নিয়ে যেতে আর নিয়ে আসতে, কিন্তু রিমির ভাগ্যে সেই সুদিন আর আসে না। বাবা আপিস যাবার সময় তাকে স্কুলে নিয়ে যান আর মা তার স্কুলে যাওয়ার আগে তাকে স্কুল থেকে নিয়ে আসেন। এটাই প্রায় প্রতিদিনের রুটিন। মা বাবার কাছে অনেক বায়না করেও এর অন্যথা হয়নি। মা -বাবার যুক্তি, ঠাকুমার বয়স হয়েছে।
রিমির প্রার্থনার জোরেই বোধহয় একদিন তার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ল। মা এর স্কুলে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং সকাল আটটা থেকে, বাবার ও দেরী করে আপিস যাবার উপায় নেই। তাই ঠিক হল ঠাকুমা রিমিকে স্কুল থেকে নিয়ে আসবে। রিমির খুব আনন্দ। ঠাকুমার- ও।
বাড়ির কাছেই স্কুল তবু ঠাকুমা বেশ অনেক টা তাড়াতাড়ি -ই স্কুলের সামনে পৌঁছলেন। তিনি অনেকটা অবাক- ই হয়ে গেলেন যখন দেখলেন তার ও আগে অনেক বাচ্ছার মা সেখানে উপস্থিত। তাদের হাবেভাবে তিনি বুঝতে পারলেন যে তারা প্রতিদিন- ই স্কুল ছুটি হবার বেশখানিকটা আগেই আসেন। তাদের কিছু কিছু কথাবার্তা ও তার কানে আসতে থাকে। পরনিন্দা পরচর্চা, বলা ভালো শশুর শাশুড়ির চর্চা এবং অবশ্যই তা নেতিবাচক।
স্কুল ছুটি হতে এখনও বেশ খানিকটা দেরি। তিনি অনান্য অভিভাবকদের থেকে একটু দুরে সরে এলেন। তার চোখে জল এসে গেল। রিমির মার কথা ভেবে নয়, আজ থেকে তিরিশ বছর আগে তিনি যখন রিমির বাবা রঞ্জনকে স্কুলে দিতে নিতে আসতেন, তিনিও কি তখন এভাবেই…..।