Sumit Sen

রুপকুন্ডের পথে।
দ্বিতীয় পর্ব।
সুমিত সেন।

আজ (২৩/৮/৯৬) সকালবেলা আমরা গোয়ালদাম থেকে দেবলের উদ্দ্যেশ্য রওনা দিলাম। এখান থেকেই আমরা ট্রেকিং শুরু করি, যদিও আমাদের ল্যগেজ এবং রেশন একটা গাড়ীতে চলে গিয়েছিল। আমরা এদিন খালি পিঠে এবং খালি হাতে হেঁটে ছিলাম। (এখানে বলে রাখা ভালো যে লোহা জং পাস পর্যন্ত গাড়ী করে যাওয়া যায়।)
বনের মধ্যে দিয়ে খুব শর্টকাট একটা রাস্তা দিয়ে গাইড আমাদের নিয়ে দেবলের উদ্দ্যেশ্য রওনা দিয়েছিলেন। অপূর্ব সুন্দর মনোরম দৃশ্য। বন রাজির অপূর্ব শোভা। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা নেসপাতি গাছে উঠে নেসপাতি পারছে, আমাদের দেখতে পেয়ে আমাদের কাছে লজেন্স চাইল, আমরা প্রচুর পরিমাণে লজেন্স নিয়ে গিয়েছিলাম আমাদের নিজেদের জন্য এবং পথে বিলাবো বলে। আমরা তাদের লজেন্স দিলাম আর আমাদের প্রাপ্তি ঘটল নেসপাতি আর তাদের উজ্জ্বল চোখ -মুখ।
“মহাবিশ্বে মহাকাশে মহাকাল মাঝে
আমি মানব কী লাগি একাকী ভ্রমি বিস্ময়ে।
তুমি আছ বিশ্বেশ্বর সুরপতি অসীম রহস্যে
নীরবে একাকী তব আলয়ে।
আমি চাহি তোমা -পানে-
তুমি মোরে নিয়ত হেরিছ, নিমেষবিহীন নত নয়নে। ”
কবিগুরুর এই গান টা ই যেতে যেতে মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। গুনগুন করে গাইছিলাম ও। পথে বৃষ্টি পেয়েছি তাই বর্ষাতি ও পরতে হয়েছে। সোয়া এগারোটা – সাড়ে এগারোটা নাগাদ দেবলের ট্রেকারস (বানান টা এর চেয়ে ভালো ভাবে লেখা যাচ্ছে না) হাটে।
গ্রুপের অন্য সকল সদস্য আমার বেশ কিছু টা আগেই গন্তব্যে পৌঁছে গিয়েছিল। আমি পৌঁছানো মাত্রই হাতে এক কাপ চা ধরিয়ে দিল। শরীর মন দু- ই জুড়িয়ে গেল। হাসি ঠাট্টা লেখ পুলিং করে দুপুর টা বেশ ভালো ভাবেই কেটে গেলো। বিকেলে আমরা সবাই মিলে আশপাশ টা ঘুরলাম। চরাচর বৃস্তিত নৈসর্গিক সৌন্দর্য। উপর দিকে মাথা তুলে তাকালেই আদিগন্ত মৌন পাহাড়। এখানে সন্ধ্যা নামে বেশ দেরীতে। সন্ধ্যার পর আর বিশেষ কিছু করার থাকে না। একটা ফায়ার প্লাস যদিও ছিল আমরা তাতে আগুন পোহাই নি।
রাত্রি তে (কলকাতা হলে সন্ধ্যা) একবার বাইরে বের হতে হলো খাবার জল আনার জন্য। বেশ অনেকটা পথ। কিলোমিটার খানেকের বেশী বৈ তো কম নয়। রাত্রি তে শুনশান নির্জন পাহাড়ী রাস্তায় হাঁটার অভিজ্ঞতা বেশ উপভোগ করলাম। রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে তাড়াতাড়ি শুয়ে পরলাম। পরদিনের গন্তব্য লোহা জং পাস। বেশ অনেকটা পথ।

ক্রমশঃ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *