কিছুদিন আগে রাজা রামমোহন রায় এর ২৫০ বছর পূর্ণ হলো। সেই উপলক্ষে ওনার প্রতি সশ্রদ্ধ প্রণাম জানিয়ে এই লেখাটি লিখেছিলাম।
রাজা রামমোহন রায়।
১৮২৯ সালের ৪ই ডিসেম্বর। লর্ড বেন্টিঙ্ক তার সাথে সহমত পোষণ করেন। আইন করে বন্ধ করলেন সতীদাহ প্রথা। আর সব কিছু ছেড়ে দিন, কেবলমাত্র এই একটি কারণেই তিনি বিশ্বের দরবারে মাত্র ২৫০ বছর কেন, চিরদিন অমর হয়ে থাকবেন।
ত্তিরিশ বছর বয়সে ইষ্ট- ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারী থাকার সুত্রে জন ডিগবির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা হয় এবং রংপুরের দেওয়ান রুপে কাজ করেন ১৮০৩ থেকে ১৮১৪ সাল পর্যন্ত। এই সময় তিনি প্রভুত্ব অর্থ উপার্জন করেন। কলিকাতায় চারটি প্রসাদোপম বাড়ি তৈরী করলেন এবং তৈরী করলেন বিদগ্ধ বাঙালীদের এক সমাজ। নাম ‘আত্মীয়সভা’। এই আত্মীয়সভাই ক্রমে ক্রমে পরিণত হল ‘ব্রাহ্মসমাজ ‘ এ। এরপর তিনি একটি দুঃসাহসীক কাজে নিজেকে
নিয়োজিত করলেন। তিনি হিব্রু ভাষা শিখলেন বাইবেল এর পুরানো অংশ মূল ভাষায় পড়ার জন্য। অত্যন্ত দুঃসাহসের সঙ্গে তিনি বললেন যে পুরান বাইবেল এর অবতার বাদ বর্জনীয়। ক্রাইষ্ট এর উপদেশ ই ক্রিশ্চিয়ান ধর্মের সারাৎসার। একদিকে মূর্তি পুজো তে তিনি বিশ্বাস করতেন না অন্য দিকে গোঁড়া ক্রিশ্চিয়ান রা ও তার বিরোধিতা শুরু করে দিল। ঠিক এই সময়েই এক ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটলো তার জীবনে । দাদা জগমোহন এর অকাল প্রয়াণ ঘটল।পন্ডিতেরা বলপূর্বক জগমোহন এর চিতায় তুললেন অলকামঞ্জরী দেবী (জগমোহন এর স্ত্রী) কে। রামমোহন সেদিন জীবন্ত অলকামঞ্জরী কে চিতায় পুড়তে দেখে শপথ নেন, হিন্দুদের এই বর্বরতা তিনি নাশ করবেন- ই।
উদারপন্থী রামমোহন হিন্দু শাস্ত্রের প্রমাণ দাখিল করে সহমরণ প্রথার বিরুদ্ধে আইন আনতে সক্ষম হলেন। সে যুগে এই কাজ করা যে কত দুরূহ ছিল, তা আমরা ভাবতেই পারব না।
তিনি ‘রাজা’ উপাধি পেয়েছিলেন দিল্লীর বাদশাহের কাছ থেকে। ধন-সম্পত্তির জন্য নয়, রাজা উপাধি পেয়েছিলেন তার মননের বিশ্বব্যাপী ব্যপ্তির জন্য। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে রাজা রামমোহন ছিলেন ভারতের প্রথম রাজদূত।
আসুন, আজ আমরা সবাই তার ২৫০ বছরের জন্মদিনে বিনম্র চিত্তে তাকে প্রণাম জানাই।