” স্মরণে-বুদ্ধদেব গুহ “
সুমিত রঞ্জন সাহা
এক বছর হল চলে গেছেন বুদ্ধদেব গুহ। আজ মনে পড়ছে কিছু কিছু কথা। তার লেখার সাথে পরিচয় – যখন আমি একাদশ বা দ্বাদশ শ্রেণিতে। অসাধারণ লেখনী। এখনো মনে আছে -“কোয়েলের কাছে ” শেষ করে বাকি রাত আর ঘুমাতে পারিনি,এতটাই প্রভাব ফেলেছিল মনে। এরপর যখনই যে লেখাটা পেয়েছি, পড়ে ফেলতে দেরি করিনি – মাধুকরী, কোজাগর,সবিনয় নিবেদন,বাবলি,বনজোৎস্নায় সবুজ অন্ধকারে,অভিলাষ, একটু উষ্ণতার জন্য , আরও অনেক। নিজের অজান্তেই আমার প্রিয় লেখক হয়ে উঠেছিলেন উনি।
অসাধারণ তার লেখার “স্টাইল “। পরিবেশ বর্ননা থেকে ঘটনার চিত্রায়ন,গল্পচ্ছলে সরল ভাষায় অনায়াসে ঢুকে যান মনের অন্দরমহলে। অনাবশ্যক অলংকরণ বা জটিলতা নেই লেখায়। ৬০ টিরও বেশি বই লিখে গেছেন তিনি যার প্রতিটিই অনবদ্য।
বিশ্ব সাহিত্যের সাথে ও ছিলো তার নিবিড় যোগাযোগ। আর্নেস্ট হেমিংওয়ে ছিলেন বুদ্ধদেব গুহ’র অন্যতম প্রিয় লেখক। হেমিংওয়ের নোবেল প্রাপ্ত উপন্যাস ” The old man and the sea” থেকে নেওয়া উদ্ধৃতি পেয়েছি তার একাধিক লেখায়।
পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট,একদিকে সঙ্গীতশিল্পী এবং সর্বোপরি একজন প্রথম শ্রেণির লেখক, নানাবিধ গুন সম্পন্ন ভালো মনের মানুষ বুদ্ধদেব বাবু ছিলেন যথার্থ এক প্রকৃতি প্রেমিক। পালামৌ’র জঙ্গলের যে ছবি উনি চিত্রায়ন করেছেন তার বিভিন্ন লেখায়,তার সাথে একমাত্র তুলনা চলতে পারে বিভূতি ভূষণ এর “আরন্যক” এর।
মানুষের মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণে ও উনি অনেকের চেয়ে এগিয়ে।
শুধু বড়দেরই নয়,কিশোর মনে ও তিনি জায়গা করে নিয়েছেন অনায়াসে। ঋজুদার চরিত্রের হাত ধরে কিশোর হৃদয় জয় করে নিয়েছেন তিনি, অন্য বয়সের পাঠকের কাছে ও তা সমান আকর্ষণীয়।
সবশেষে বলি তার লেখায় আছে পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করে ধরে রাখার অসাধারণ ক্ষমতা যা ভাল লেখকদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বুদ্ধদেব গুহর লেখা পড়তে শুরু করলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত মনে রয়ে যায় অতৃপ্তি যার নিবৃত্তি সম্ভব একমাত্র কাহিনীর সমাপ্তিতে।
আরও অনেক কিছু পাওয়ার আশা ছিল তার কাছ থেকে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, গত ২৯ শে আগষ্ট ২০২১ – রাতে, তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি দেন।
বুদ্ধদেবগুহ ‘র চলে যাওয়া বাংলা তথা সমগ্র সাহিত্যের দরবারে এক অপূরনীয় ক্ষতি।