Sumit Ranjan Saha

“আমি – গৃহবধূ ”

সুমিত রঞ্জন সাহা

আমার দাদা-বৌদি আমাকে মানুষ বলেই মনে করেনা।
বৌদি উচ্চ শিক্ষিত,একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষিকা,
অনেক টাকা উপার্জন করে।
তাই আমার মতো …

আমার ননদ ও আমাকে বাড়ির ‘কাজের লোকের’ বেশী ভাবতে পারেনা বোধহয়, অন্তত ব্যবহারে তাই মনে হয়।
ননদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা,সংস্কৃতি মনস্কা।
মাস গেলে …
সংসারের কাজ তাদের জন্য নয়।

একে আমি মেয়ে তার উপর কালো,ছিলাম
প্রতিবাদীও,
তাই মায়ের প্রিয় হতে পারিনি কোনদিন।
পড়তে পড়তেই বিয়ে দিয়ে দায় সারেন বাবা-মা, অনেকটাই আমার অনিচ্ছা সত্ত্বেও।
এম.এ তে ভালো ফল করলেও সংসারের কারণে সুযোগ হয়নি
এর বেশী এগোনোর।

জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ –
মধ্যবিত্ত পরিবারে
কখন যে শেষ হয়ে যায় দিন।
আর ‘মা’ হওয়ার পর তো কথাই নেই।

তবুও –
‘সংসারের কাজ আবার কাজ নাকি? ‘

শ্বশুরবাড়িতে সবার মন যুগিয়ে না চলতে পারলেই অপ্রিয়।
সকলের সব প্রয়োজন মিটিয়ে
নিজের কথা ভাবার অবকাশ কোথায়?
অথচ আমারও ইচ্ছা ছিল …

সমস্ত কিছু সামলেও
রাতের পর রাত জেগে –
নিজেকে তৈরী করেছিলাম।
কিন্তু …

এভাবেই পেরিয়ে গেল অনেকটা বেলা।

শুধু যোগ্যতা থাকলেই কি হয়?
নিজেকে প্রমাণ করতে
না পারলে মেলেনা নূন্যতম সম্মানটুকুও।

সে সুযোগ জোটেনি আমার ভাগ্যে,
আর তাই …

দিনের শেষে এসে –
আমি এক ‘ হাউস ওয়াইফ ‘,
শুধুই ‘গৃহবধূ ‘ –
নিজের অস্তিত্ব ভুলে সংসারের সবাইকে
ভালো রাখাই যার একমাত্র কাজ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *