শ্রুতি নাটক – ঠাম্মী
রচনা – সুকান্ত পাল
জিতপুর। মুর্শিদাবাদ
২৫/০৮/২০২২
চরিত্রঃ নীলা—মা, রিয়া—মেয়ে।
স্থানঃ রিয়ার পড়ার ঘর।
নীলাঃ একি!দুদিন বাদেই না তোমার টেস্ট পরীক্ষা ! আবার মোবাইল ?
রিয়াঃ পরীক্ষা তো কি হয়েছে?এটা তো টেস্ট। ফাইনাল নাকি!
নীলাঃ টেস্ট পরীক্ষা কি পরীক্ষা নয়?
রিয়াঃহ্যাঁ, পরীক্ষা ! বাট্ টেস্টে সব্বাইকে অ্যালাও করে দেবে। অল অ্যালাও বুঝলে মা। অল অ্যালাও।
নীলাঃআমি ওসব কিচ্ছু শুনতে চাই না। মোবাইল রেখে পড়তে বসো। মাসে মাসে এই জন্য কাড়ি কাড়ি টাকা তোমার পিছনে ঢালছি?
রিয়াঃও সব বাবা মা’ই এখন ঢালে। এ আবার নতুন কথা কি। বলতে পারো এটা একধরনের ফ্যামিলি স্ট্যাটাস। লোককে বলতে পারবে —
নীলাঃতুমি কি বলতে চাও ?
রিয়াঃকিছুই না। তুমি এখান থেকে যাও তো।
নীলাঃ আসুক তোমার বাবা। এভাবে চলতে পারে না।
রিয়াঃবাবা আসলে কি হবে? পিঠে বড় জোর দু’চার বাড়ি কঞ্চি পড়বে। কঞ্চির তো আর রবিবার নাই —ধর্মঘট ও নাই।
(নেপথ্যে কলিং বেল বেজে উঠল। )
নীলাঃওই বোধ হয় পেপার দিতে এসেছে। অনিমা দেখো তো দরজা খুলে।
(নেপথ্যেঃদেখছি । দরজা খোলা ও বন্ধের শব্দ শোনা গেল। কাগজ দিয়ে গেল)
নীলাঃ টেবিলে রাখো। ভাতটা দেখো একটু।
রিয়াঃএখানে চিৎকার কোরো না। যাও তো।
নীলাঃ তোমার ব্যবহার দিন দিন অমানুষের মতো হয়ে যাচ্ছে। বাবা-মা’র সাথে কিভাবে কথা বলতে জানো না?
রিয়াঃব্যবহার!মা তোমার মুখে এসব মানায় না।
নীরাঃরিয়া!
রিয়াঃহ্যাঁ। আমি ঠিকই বলছি। তুমি!তুমি কি বাবার মা , মানে তোমার শ্বাশুড়ি মা – তার সাথে কি সঠিক ব্যবহার করেছিলে? একজন বৃদ্ধা অসহায় মানুষকে এই বাড়ি থেকেই তো তাড়িয়ে দিয়েছিলে। আর বাবা তোমার ভয়ে মুখে রা পর্যন্ত কাড়ে নি।
নীলাঃআমি মোটেও তাঁকে তাড়িয়ে দিই নি। তোমার বাবা সারাদিন বাইরে থাকে ব্যবসার কাজে। আমি এখান থেকে বিশ ক্রোশ দূরে স্কুল যায়। ওই বৃদ্ধা মহিলাকে বাড়িতে কে দেখতো? তাই তার ভালোর জন্যই বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এসেছি।
রিয়াঃমা , তুমি দায়িত্বটা এড়িয়ে যেতে চেয়েছো।
নীলাঃদায়িত্ব ? এড়িয়ে গেছি?আমি গত তিনবছর প্রতিটি রবিবার ছুটে গেছি তোমার ঠাম্মীর কাছে। যাতে তার এটা মনে না হয় যে তিনি একা।
রিয়াঃতুমি ইচ্ছা করলে এ ফ্ল্যাটেই ঠাম্মীকে রাখতে পারতে মা। আন্টি তো সকাল সাড়ে ছ’টা-সাতটা থেকে রাত সাড়ে আটটা-ন’টা পর্যন্ত এখানেই থাকে।
নীলাঃ থাকবে তো ঘর কই। একটা ঘরে তুমি আর একটা ঘরে তোমার বাবা আমি থাকি। থাকা বলতে তোমার পড়ার ঘরটা। তিনি এখানে থাকলে তুমি পড়বে কোথায়?
রিয়াঃতার মানে তুমি বলতে চাইছো আমার পড়ার জন্য তুমি ঠাম্মীকে —
নীলাঃ ধর তাই। তোমার বাবার মত ছিল না ঠিকই কিন্তু তোমার পড়াশোনার কথা ভেবেই তিনি আর অমত করেন নি। আর—
রিয়াঃআর?
নিলাঃ একথা তোমার ঠাম্মীও জানেন। তাই তো তিনি হাসি মুখে বৃদ্ধাশ্রমে চলে গেছেন।
রিয়াঃ মা!
রিয়াঃ একটা ছেলে মেয়েকে মানুষ করতে বাবা মা আর ঠাম্মীদের যে কত ত্যাগ করে তার খবর যদি রাখতে তাহলে এই সাত সকালে বই নিয়ে বসতে, মোবাইল নিয়ে বসতে না।
রিয়াঃ তুমি ঠাম্মীকে ফিরিয়ে নিয়ে এসো মা আমি কথা দিচ্ছি আর মোবাইল দেখবো না। তুমি চেয়েছিলে না মা আমি নিট ক্র্যাক করি?
নীলাঃহ্যাঁ চেয়েছিলাম। চেয়েছিলাম তুমি ডাক্তার হবে। মানুষের ডাক্তার। তোমার ঠাম্মীও তাই চেয়েছিলেন।
রিয়াঃমা এই নাও মোবাইল । ফিরিয়ে দাও আমার ঠাম্মীকে। ফিরিয়ে দাও
(কান্নায় ভেঙে পড়ে রিয়া)
নীলাঃ কেঁদো না। তোমার বাবা ফিরে আসুক আমরা কালই যাব । ফিরিয়ে দেবো তোমাকে তোমার ঠাম্মী। এখন ওঠো। হাত ধুয়ে পড়তে বস। অনিমাদি তোমাকে চা আর ব্রেকফাস্ট দিয়ে যাচ্ছে।
(রিয়া উঠে যায়। নেপথ্যে ট্যাপ থেকে জল পড়ার শব্দ। অনিমাদির কন্ঠে শোনা যায় চা আর স্ন্যাক্স রইল রিয়া। আমি রান্নাঘরে আছি। কিছু দরকার হলে বোলো। উত্তর ভেসে আসে ভিজে গলায়ঃবলব। )