
নাদু র বউ
সুজিত চট্টোপাধ্যায়
বরের সাজে নাদু কে দারুণ লাগছে। কে বলবে ব্যাটা গলদঘর্ম হয়ে নোংরা ছেঁড়া জামাপ্যান্ট চড়িয়ে ভ্যানরিস্কা চালায়।
টিনের চালের ঘরে বিধবা মা আর নাদু। মা বললো,,
” নাদু রে একটা বে কর। আমার দিন ফুরিয়েছে। “
জন্মে ইস্তক ঘরে হা দরিদ্র হাল দেখতে অভ্যস্ত নাদু। মাতাল বাপের হম্বিতম্বি একদিন হঠাৎই ফুরিয়ে গেল।
মা কাঁদলো না। বাজারে শাকপাতা সব্জি নিয়ে বসলো।
অভাবির শোক থাকতে নেই। দায় বড় বালাই। নাদু তখন বছর দশেকের।
তখন থেকেই মায়ের চোখেমুখে একটা আস্বস্ত নির্ভয় ভাব ফুটে উঠছিল। অহেতুক চ্যাঁচামেচি খেস্তাখিস্তি আর মাঝ রাতের উথলে ওঠা মিথ্যে সোহাগের থেকে রেহাই।
মনের কথা মনে থাকাই ভালো। সমাজ বড় কঠিন ঠাঁই।
ভ্যান রিকশা মা’য়ের দান। লেখাপড়া তেমন হলো কই। মা একা পারেনা। মাগ্যিগণ্ডার বাজার। বিশ বছরের জোয়ান ছেলে বসে থাকবি কেন !
রিকশায় নগদ রোজগার।
” দেখিস যেন বাপের পথ ধরিসনি। তাহলেই সব্বনাশ।”
নাদু কে বরের সাজে বেশ মানিয়েছে। ধুতি পাঞ্জাবী গলায় গোড়ের মালা কপালে চন্দনের ফোঁটা। একপাল বন্ধুবান্ধব সব্বাই হাজির চওড়া হাসি মুখে নিয়ে।
তারা বরযাত্রী।
এক পাড়াতুতো পাতানো মাসি বললো,,
” ওরে নাদু , বিয়ে করতে যাচ্ছিস মা’কে ব’লে যা,,, বল,,,
মা তোমার জন্যে দাসী আনতে যাচ্ছি । “
কথাটা কানে যেতেই নাদু র মা চমকে উঠলো। ছুটে গিয়ে নাদু র মাথা নিজের বুকের মধ্যে চেপে ধরে বললো,,
” না রে বাপ না। খবরদার মনেও আনবি না এমন কথা। দাসী নয় বল বৌ। ঘরের লক্ষ্মী। তোর সারা জীবনের সাথী।
দাসীর জীবন কেমন তা আমি জানি। ভুক্তভোগী কিনা !
কক্ষনও তুই তোর বাবার মতো হয়ে যাস নি বাপ আমার।
যাকে ঘরে আনবি সে আর কিছু পাক বা না পাক , ন্যায্য মান টুকু যেন পায় , সে ই জানবি অনেক অনেক পাওয়া।
যা নাদু যা তোর বউ নিয়ে আয়। সুখে থাক সুখে রাখ। জানবি
সে ই শান্তি। আর কিছু না ।।
সুজিত চট্টোপাধ্যায়।।