Sudip Ghoshal

Sudip Ghoshal

আত্মসম্মান
সুদীপ ঘোষাল

ট্রেনে যাচ্ছি । একজন লটারী টিকিট বিক্রেতার সঙ্গে পরিচয় হলো । সুন্দর সৌম্যকান্তি । কিছুক্ষণ পরে পাশে বসা আমার বন্ধুকে ছেলেটি বললো, দাদা কুড়ি টাকার টিকিট কিন লে আমার খুব উপকার হয় । আমার বন্ধু বললেন, আমি টিকিট কিনি না ।

শেষে বন্ধুটি একটি একশো টাকার নোট বের করে বললো, ভাই এই একশো টাকা রাখো । আমি স্বেচ্ছায় তোমাকে দিলাম ।

আমাকে টিকিট নিতে অনুরোধ করবে না ভাই ।ছেলেটি টাকা নিলো। ট্রেন চলতে শুরু করলো ।দুটি স্টেশন পরে ছেলেটি নাম লো । তারপর জানালার কাছে এসে একশ টাকার নোট টি এগিয়ে দিয়ে বন্ধুকে বললো, দাদা টাকা টা রাখুন ।আমরা দুজনেই হত বাক ।সে হেসে বলল,আমি দান গ্রহণ করি না,খেটে খাই।

চিঠি
সুদীপ ঘোষাল

সুমন যে গ্রামে বাস করত, সেই গ্রামের মেয়ে জয়ন্তী।তখন মাঠে হাঁটতে গেলে জয়ন্তী, সুমনের জন্য দাঁড়িয়ে থাকত চিঠি হাতে। তখন মোবাইল ছিল না। ছিল না হোয়্যাটস আ্যাপে, চ্যাটের দাপট।
সুমন বলত,তোমার চিঠির আনন্দে আমি সারাদিন আনন্দে থাকি।
জয়ন্তী বলত,উত্তর না দিলে কিন্তু খুব রাগ করব।

তারপর সুমনও চিঠি লিখত। সারদিন চেয়ে চেয়ে চমকে যেত বিকেল। সকালে মেঘের চালফুঁড়ে জয়ন্তীর চিঠি সুমনকে বাঁচিয়ে রাখত,তরতাজা রাখত। কোনো কারণে পত্রালাপ না হলেই মনখারাপের মেঘগুলো ভিড় করত মনে। তার মনে অকারণে জয়ন্তীর বিপদের কথা মনে হত। এইভাবে চলত ছাইখেলার ছলে পুতুলখেলা। তারপর একদিন জয়ন্তীর ঘরে আগুন লাগলো।কারা যেন চিঠিগুলো পুড়িয়ে মনের সাধ মিটিয়েছে।

জয়ন্তী বিয়ে করেছে।তার মেয়ে আছে।এখন আর উড়োচিঠিগুলো আনন্দ দেয় কি তার মনে। সুমনভাবে একবার দেখা হলে জিজ্ঞাসা করবে। প্রায় কুড়িবছর পরে জয়ন্তীর মেয়ের বিয়ের চিঠি এল সুমনের হাতে।সুমন বিয়েতে গিয়ে পুরোনো চিঠিগুলো নিয়েছিলো ব্যাগে। যদি জয়ন্তী দেখতে চায়, সে দেখাবে পুরোনো চিঠির মালা।

জয়ন্তী সুমনকে ডেকে বলল,এই দেখ, আমার বর। ডাক্তার মানুষ।এই আমার মেয়ে। তোমার বউ কই? সুমন বলে,বিয়ে করাটা হয়ে ওঠে নি,আর হবে বলেও মনে হয় না। জয়ন্তী কাজের ব্যস্ততায় বরকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো কাজে। জয়ন্তী বলল,তুমি বসো।আমাদের এখন অনেক কাজ।

মেয়ের বিয়ে বলে কথা। সারাদিন আর জয়ন্তী সুমনের ঘরে আসে নি। বিয়ের পরের দিন বাইরে এসে সুৃমন চিঠিগুলো আগুনে পুড়িয়ে দিলো। এক নতুন জীবনের খোঁজে সুমনের শুরু হল পথচলা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *