Suchandra Basu

অণুগল্প

সুচন্দ্রা বসু 

হাসপাতালের গাইনি বিভাগের ইনচার্জ সুপ্রিয়া  মাকে জানায়  থানা থেকে পুলিশ এসে হাসপাতালে মেয়েটিকে  আশঙ্কা জনক অবস্থায় ভর্তি করে দিয়ে যায়।  নাম জিজ্ঞেস করলাম বলতে পারল না।বিড়বিড় করে আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। কি নিষ্পাপ দৃষ্টি দেখলাম তার। দেখে করুণা হল।অল্প বয়সী মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে ওর মনের কথা জানার চেষ্টা করলাম।অনেক পরে কাঁদতে কাঁদতে শুধু বলল রাজু তুই কোথায়? 

অনেকবার জিজ্ঞেস করলাম রাজু কে?কোথায়

থাকে? ওর বাড়ি কোথায়? কিচ্ছু বলতে পারল

না।অথচ ও মা হতে চলেছে। 

আমি ওকে লেবার রুমে রেখে রুগি দেখতে যাই।এসে দেখি মেয়েটি নেই।রাস্তায় রওনা দিয়েছে।

হাসপাতালের দারোয়ান ওকে ধরতে গেলে কামড়াতে আসে।তাই সে আর তাকে ধরার চেষ্টা করে নি।মেয়েটি শেষে  রাস্তায় সন্তান প্রসব করে। অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পথচারী পুলিশকে জানায়।জ্ঞান ফিরতে কিছুক্ষণ পরে বাচ্ছা সহ পাগলীকে পুলিশ আবার হাসপাতালে নিয়ে  আসে।আর মেয়েটি আঙুল দেখিয়ে কেঁদে ডাকে রাজু রাজু? 

সুপ্রিয়ার কথা শুনতে শুনতে মায়ের দুচোখ জলে 

ভরে যায়।এইরকম পাষণ্ড তো আমার জীবনেও

এসেছিল।তবে তুমি যে বলেছিলে পথ দুর্ঘটনায়

মারা গেছে আমার বাবা। মিথ্যে বলেছিলাম নিজের লজ্জায়।লজ্জা কেন গো।এখন সিঙ্গেল 

মাদার পরিচয়ে পরিচিতি হয়।আমি তো তোমার 

পরিচয়েই সকলের কাছে পরিচিত।তবে এখন আমি সম্পূর্ণ নিজের পরিচয়ে  বাঁচতে চাই। 

পাগলীমেয়ের ছেলেটা ফর্সা  ফুটফুটে হয়েছে। এরপর থেকেই শিশুটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে। ‘পাগলী’ মা শিশুটির দেখভাল করে না। বিভিন্ন সময় হাসপাতাল ছেড়ে চলে যায় আবার ফিরে আসে। 

হাসপাতালের নার্স ও আয়াদের কোলেই বেড়ে উঠছে শিশুটি। তবে মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়েটির  কোনো আত্মীয় স্বজনের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

ঘটনাটি সমাজসেবা অধিদপ্তর ও আদালতকে অবহিত করা হলে মানসিক ভারসাম্যহীন মা ও শিশুর জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যেহেতু মানসিক ভারসাম্যহীন মা শিশুটিকে লালন পালনে অক্ষম সেহেতু মাকে চিকিৎসার জন্য মানসিক হাসপাতাল ও শিশুকে  শিশু কল্যাণ সংস্থায় পাঠাতে হবে।

মা শুনে বলল তবে তো শিশুটির দেখাশোনা থাকার ব্যবস্থা হয়ে গেল। তোর আর চিন্তা করে 

লাভ নেই।

না মা আমি ভেবেছি। 

কি ভাবছিস?

জানো মা  ফুটফুটে শিশুটির আমি নাম দিয়েছি  দেবদূত। কেউ  ডাকে এঞ্জেল  কেউবা ফরিস্তা।অনেকেই শিশুটিকে দত্তক নিতে আগ্রহী। তাদেরকে শিশু কল্যাণ সংস্থা ও  আদালতের শরণাপন্ন হতে বলা হয়েছে।আমি ভাবছি শিশুটিকে দত্তক নেব।শিশুটির নিষ্পাপ দৃষ্টি আমায় টানে।চোখ পিটপিট করে 

যখন তাকায় আর দেয়ালা করে আমি তখন ওকে

খুব আদর করি।কি নরম তুলতুলে ওর শরীরটা।

ঠিক তোমার আদরের বিড়াল মহারাণীর মতো।

দেখ তাকিয়ে ওর দৃষ্টিটাও নিষ্পাপ। মহারাণী যখন 

সন্তান সম্ভবা অবস্থায় তোমার ছাদের চিলেকোঠার ঘরে আশ্রয় নিয়েছিল তুমি কি পেরছিলে ওকে তাড়িয়ে দিতে।

অবলা জীব কি করে তাড়িয়ে দিই বল।আমিও তো ওই অবস্থা ভোগ করেছি একদিন।যন্ত্রণাটা বুঝি যে।

দেখলাম তুমি আদর করে কাঁচের প্লেটে করে ঈষদুষ্ণ  দুধ খাওয়ালে।তুমি হয়তো বুঝতে পেরেছিলে ওর সন্তান পৃথিবীর আলো দেখতে চাইছে।গরম দুধ খেতেই আর বেশি দেরি হল না।পটপট করে তিনটি বাচ্ছা বিইয়ে তোমার দিকে জুলজুল করে তাকিয়ে বলছিল ম্যাও। 

সত্যিই ভীষণ মায়াবী দৃষ্টি আমার মহারাণীর।

ওদের পাশেই বিড়ালটি বসেছিল।বিড়ালটিকে আদর করে  সুপ্রিয়াকে মা  বলল ওই পাগলীর সংস্পর্শে থেকে তুইও পাগলী হয়ে গেছিস।বিয়ের বয়স হয়েছে তোর এসব পাগলামী ভালো না।আগে তোর বিয়ে তারপর তুই ছেলেটিকে দত্তক নেওয়ার কথা ভাববি।

ঠিক আছে, তুমি এখনই আমার সাথে চল

আমার দেবদূতের আজ আট কড়াই।হাসপাতালে ওরা সব আয়োজন করেছে।আজ তুমি ওকে আশীর্বাদ করবে।

সুপ্রিয়া মাকে নিয়ে দেবদূতের কাছে রওনা হল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *