Stéphane Mallarmé

প্রবন্ধ

স্তেফান মালার্মে

প্রতীকিবাদী কবি স্তেফান মালার্মে
শংকর ব্রহ্ম

( চতুর্থ পর্ব)

অনুবাদে অদিতী ফাল্গুনী

এক ছাগ দেবতার অপরাহ্ন ÔL’après-midi d’un faune.

রোমক পুরাণে বর্ণিত এক ছাগ দেবতা :
সেই পরীদের চির অমর দেখতে চাই আমি,
যারা এত স্বচ্ছ
যেনবা অতীব লঘু দেহ তাদের বাতাসে ভাসে,
বাতাসে চপল দেহবিভঙ্গ ওদের
নিয়ে আসে গাঢ়, পত্রপল্লবিত নিদ্রার ঘোর।
আমি কি ভালবেসেছিলাম এক স্বপ্ন?
আমার সন্দেহ, যেন প্রাচীন রাত্রির স্তপ, গোলকধাঁধাঁর মত
শাখা-প্রশাখায় খুঁজে বেড়াচ্ছে সেই পরীদের।
হাতড়ে খুঁজে ফেরা সেই একই প্রকৃত অরণ্য
যা প্রকাশ করে
গোলাপের আদর্শ ভুল হিসেবে আমার বিজয়।
একবার বিবেচনা করো…
তোমার ভাবনায় সদা উদ্ভাসিত নারীরা
আসলে তোমারই কল্প-বাসনার প্রতিমা!
হে ছাগ দেবতা, পবিত্রতর পরীর তুষার শীতল নীল চোখ
থেকে তবু বিভ্রম ছড়ায় যেনবা ক্রন্দনশীল ঝর্ণা।
আর অন্য যা কিছু দীর্ঘশ্বাসে প্রোথিত,
তুমি বলতে চাও সেসবই
ভেড়ার পশমের মত তপ্ত দুপুরের হাওয়ার সাথে তূল্য?
না! তীব্র গরমের এই শ্বাসরোধী সকালের গতিহীণ,
ক্লান্ত মূর্ছার ভেতর দিয়ে,
আমার বাঁশী ব্যতীত উপবনের ভেতর দিয়ে
কলকল শব্দে প্রবাহিত নয় কোন জলধারা।
দিগন্তের একমাত্র বায়ুতে কোন লহরী নেই,
আমার যমজ পাইপ থেকে নি:সৃত এবং সহজে নিষ্কাশনক্ষম
সুরধারা বৃষ্টির শুষ্ক প্রবাহে যেন
সেই দৃশ্য, শান্ত ও অলীক প্রেরণাদায়ী বায়ু
যা জেগে উঠছে প্রার্থনার মত।

চেহারা Poème Apparition

দু:খী হয়ে পড়ছিল চাঁদ। ক্রন্দনশীল দেবশিশুরা স্বপ্ন দেখছিল।
শান্ত ও বাষ্পীয় পুষ্পস্তবকে তাদের তীরবাহী আঙুল
যেন বা তাদের মরণাপন্ন বেহালার তার বাদিত হচ্ছিল
আর আকাশ-নীল ফুলের পাঁপড়িতে গড়িয়ে পড়ছিল শ্বেত অশ্রু।
সে ছিল তোমার প্রথম চুম্বনের আশীর্ব্বাদধন্য দিন,
এবং আমি শহীদ হলাম আমার স্বপ্নের কাছে,
বেঁচেছিল যা বিষাদের সুগন্ধীর উপর ভর করে,
যা এমনকি কোন পরিতাপ বা দূর্ঘটনা ব্যতীতই
একটি স্বপ্নকে সেই হৃদয়ের কাছে রেখে যায়
যে প্রথম স্বপ্নটি তুলেছিল।
এখানে আমি ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম, পুরণো পাথর বাঁধাই সড়কে
আমার চোখ নাচছিল।
যখন তোমার চুলে সূর্যের উচ্ছাস নিয়ে, রাস্তায় এবং রাত্রিতে,
তুমি সহাস্যে আমার কাছে এসেছো,
এবং আমি ভাবলাম আমি দেখছি আলোর টুপি পরা এক পরীকে,
যে আমার শৈশব নিদ্রার স্বপ্নে দেখা দিত,
এবং যার অর্দ্ধমুষ্টি হাত থেকে
সুগন্ধী নক্ষত্ররাজিতে ঝরে পড়ছে পুঞ্জ পুঞ্জ তুষার।
বৃক্ষের সূক্ষ যত শাখায়।

জানালা Les fenêtres

দু:খী হাসপাতালের পূতি গন্ধে ক্লান্ত
যে গন্ধ বেয়ে উঠছে আর বসে যাচ্ছে পর্দার
বস্তাপচা সাদায়,
শুণ্য দেয়ালে ক্রুশবিদ্ধ যীশুর বিপুল অবসাদ,
অসুখী ওয়ার্ডে মৃতপ্রায় সেই বৃদ্ধ বসে আছেন প্রায়ান্ধকার ঘরে।

বৃদ্ধ শিরদাঁড়ায় কখনো কখনো ভর দিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন,
জানালার সামনের পাথররাজি দেখার ইচ্ছে তত নেই-
যারা যতটা না রোদে পোড়া ততটা নয় তপ্ত
আর ক্ষয় হতে পারে যখন তখন,
জানালার শার্সিতে তবু তাঁর সাদাটে চোয়াল
আর চোয়ালের হাড় আঠার মত সেঁটে থাকে-
যে শার্সি আহা মিষ্টি রোদ্দুরে বাদামী।

জ্বরগ্রস্থ মুখখানা তার নীলের জন্য বড্ড লোভী
যেমনটা বহু বহু আগে, এক কুমারী ত্বকে, নোনা চুমু দেবার আশায়,
তৃষার্ত হয়ে উঠতেন তিনি, আর দীর্ঘ আলিঙ্গন,
সোনালী, কবোষ্ণ বর্গক্ষেত্রে দীর্ঘ কর্ষণ।

আসবমত্ত তিনি বেঁচে থাকেন, পরিশোধিত যত ঔষধি ভুলে,
কফ, ঘড়ি, পবিত্র যত তেল, যে বিছানায় তাঁর মৃত্যু হয়;
আর সন্ধ্যা যখন রক্তক্ষরণ করছে তাঁর যাবতীয় প্রতিবন্ধকতার উপরে,
তাঁর চোখজোড়া, দিগন্তের আলোয় সেঁটে আছে।

বেগুণীবর্ণ ঢেউয়ের উপরে তিনি দেখতে পান স্পেনীয় অর্ণবপোত,
সুরভিত, যেন বা সমাধিগ্রস্থ রাজহংসের ঝাঁক সাঁতার কাটছে,
ঐশ্বর্যময় আলোর রেখার চমকে সাজাচ্ছে তারা সারিবদ্ধ রেখা
স্মরণে প্লাবিত এক পরম আলস্যে।

সুতরাং কঠোর হৃদয় পুরুষদের প্রতি বিরূপ হয়ে,
যাদের স্বাদের শেকড় শুধুই সুখের গোবরগাদায়,
জলাভূমিতে দৃঢ়, সেই নারীকেই তারা কিছু কিছু দান করে
যে স্তন্য পান করায় তার শিশুদের।

আমি উড়ে যাই, এবং প্রতিটি জানালার সাথে সেঁটে থেকে,
কাব্য করি, জীবনের দিকে ফিরে আমার কাঁধ পরিতাপ করে,
চিরায়ত শিশিরে ধোয়া গ্লাসে তাদের
অসীমের পবিত্র সকালের অপরাধবোধ।
দেবদূতের মত প্রতিসরিত আমি! এবং আমি মরছি,
আর প্রেম, শিল্পের জানালায় রহস্যের বিষন্ন হয়ে থাকা,
পুনরায় জন্ম নেয়া, স্বপ্ন-মুকুট পরা, আরো আগের আকাশে,
যেখানে রূপ প্রথম তার কুঁড়ি থেকে ফেটে প্রস্ফুটিত হয়েছিল।

কিন্ত নিচে এখানে ঈশ্বর আছেন এবং তিনি পরম দয়ালু, আহা!
ধিক্কার আমাকে এমনকি যখন আমি আমার গোলাপও শুঁকি,
মানুষের নিতম্বের নোংরা বমন
আকাশের সামনে আমাকে বাধ্য করে
চেপে ধরতে নাসারন্ধ্র আমার!

এমন কি উপায় নেই কোন যে তিক্ত যত প্রতিবন্ধকতা নিয়েই,
রূঢ়ভাবে কলুষিত
এই জানালার কাঁচ ভেঙে
উড়ে যেতে পারি নি:সীম নীলে উন্মুক্ত দুই পক্ষ বিস্তার করে?
— অনন্তের ভেতর পতিত হবার সম্ভাবনা নিয়েই?

(সমাপ্ত)

[ সংগৃহীত ও সম্পাদিত।
ঋণ ও কৃতজ্ঞতা ম্বীকার –
১). তথ্যসূত্র – অন্তর্জাল।
২). ইমন জুবায়ের।
৩). রুখসানা হক।
৪). আজফার হোসেন।
৫). অদিতী ফাল্গুনী। ]

তৃতীয় পর্বের লিঙ্ক
https://www.facebook.com/groups/sahityapatrika/permalink/1152573438733229/

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *