SOUMYA GHOSH.

STORY AND ARTICLE:

১৯১২ থেকে ১৯৫৬ সাল, বিশ্বের দীর্ঘতম সময় ধরে চলা ‘ভাষা আন্দোলন’ , বাঙ্গালী আজ তার গর্বের ইতিহাস ভুলতে বসেছে ……

১লা নভেম্বর
————————

বাংলা ভাষা আন্দোলন (মানভূম)
========================
সৌম্য ঘোষ
______________________

১লা নভেম্বর,১৯৫৬!

অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার
জন্য গর্জে ওঠা বাঙ্গালীর এক গৌরবময় ইতিহাসের উজ্জ্বল দিন। বিশ্বের দীর্ঘতম সময় ধরে চলা ‘ভাষা আন্দোলন’। হতমান বাঙ্গালী আজ ভুলতে বসেছে তার অতীত গৌরবান্বিত ইতিহাস।
ফিরে দেখা যাক, সেইসব দিনগুলো
কথা।
পুরুলিয়া বললেই মাথায় আসে ছৌ-নাচ, অযোধ্যা পাহাড়, প্রকৃতি ও ইতিহাস । ১ নভেম্বর এই জেলার জন্মদিবস । ঠিক ৬৫ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৫৬ সালের ১ নভেম্বর বিহার রাজ্য ভেঙে জন্ম হয় পুরুলিয়া জেলার । তাই ১নভেম্বর শুধুমাত্র পুরুলিয়াবাসীর কাছেই নয়, গোটা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কাছে স্মরণীয়।
ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়,
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের হাত থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পরবর্তীকালে পুরুলিয়া জেলা, পশ্চিমপ্রান্ত ‘মানভূম’ ছিল বিহারের অন্তর্গত । যদিও এখানকার সমস্ত বাসিন্দারাই ছিলেন বাঙালি ও বাংলাভাষী। কিন্তু বিহারের শ্রীকৃষ্ণ সিংহের সরকার সকলের ওপর জোর করে চাপিয়ে দিতে চান হিন্দি ভাষা । এর পরেই প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন মানভূমবাসী ও ঠিক এই সময়ই তাদের নেতৃত্ব দিতে তৈরি হয় ‘লোকসেবক সঙ্ঘে’র । তৎকালীন মানভূম জেলার সকল শ্রেণীর মানুষ একত্রিত হয়ে জেহাদ ঘোষণা করেন শ্রীকৃষ্ণ সিংহের সরকারের বিরুদ্ধে । অতুলচন্দ্র ঘোষ ও লাবণ্যপ্রভা ঘোষের নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলনের জন্য উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা মানভূম জেলা ।
১৯৫৬ সালের এপ্রিল মাসে ১০১৫ জন সত্যাগ্রহী পুঞ্চার পাঞ্চবিড়রা গ্রাম থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে শুরু করেন পদযাত্রা । অবশেষে ১৭ দিন পর সত্যাগ্রহীরা পৌঁছন কলকাতায় । বঙ্গভুক্তির দাবিতে তাঁরা সেখানে বিক্ষোভ দেখাতে গেলে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় বিক্ষোভকারী দলের, যদিও পরে সকলেই ছাড়া পান ব্যক্তিগত চুক্তিতে। এই বিক্ষোভের খবর ক্রমে ছড়ায় দিল্লিতেও । সেই সময় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ডা. বিধানচন্দ্র রায় । বঙ্গভুক্তির এই আন্দোলন তীব্র রূপ নিতে থাকায় রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে বিহার প্রদেশের মানভূম জেলার ২টি থানাকে বাংলার অন্তর্ভুক্ত করে নতুন জেলা গঠনের নির্দেশ দেন ।
এদের মধ্যে চান্ডিল, পটমদা ও ইচাগড়কে পশ্চিমবঙ্গে অন্তর্ভুক্ত না করার দাবি জানায় টাটা কোম্পানি, কারণ এই তিনটি থানা ঘেঁষে জামশেদপুরে টাটা কোম্পানির মোটর গাড়ি তৈরি ও লৌহ ইস্পাতের বিশাল শিল্প গড়ে উঠেছে । জেলা ভাগ হলে শিল্পে  বড় প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় ওই তিন থানাকে পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্তি না করে বিহার রাজ্যে রাখার আবেদন জানায় টাটা কোম্পানি । ফলে মোট ১৬টি থানাকে নিয়ে ১৯৫৬ সালের ১ নভেম্বর গঠিত হয় পশ্চিমবঙ্গের নতুন জেলা পুরুলিয়া জেলা ।

মানভূমে বাংলা ভাষা আন্দোলন ১৯১২ সালে শুরু হয়। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে ভাষা আন্দোলন তীব্র ভাবে ছড়িয়ে পড়ে মানভূমের বাঙালিদের মধ্যে। মানভূমের এই ভাষা আন্দোলন পৃথিবীতে ঘটা দীর্ঘতম ভাষা আন্দোলন। ১৯৫৬ সালের আগে পুরুলিয়া জেলা বিহারের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেই সময় রাজনৈতিক ভাবে বিহারের স্কুল-কলেজ-সরকারি দপ্তরে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। সেই সময় জাতীয় কংগ্রেসের মাধ্যমে বাংলাভাষী জনগণ হিন্দি ভাষার বিরুদ্ধে আন্দোলন করার চেষ্টা করা হয়; কিন্তু, বাংলা ভাষার দাবি প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় পুরুলিয়া কোর্টের আইনজীবী রজনীকান্ত সরকার, শরৎচন্দ্র সেন এবং গুণেন্দ্রনাথ রায় জাতীয় কংগ্রেস ত্যাগ করে জাতীয়তাবাদী আঞ্চলিক দল লোকসেবক সঙ্ঘ গড়ে তোলেন। বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে তাদের সুদৃঢ় আন্দোলন করেন। এরপর ১৯৫৬ সালে ভারত সরকার মানভূম জেলা ভেঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে সঙ্গে একটি নতুন জেলা হিসাব ( পুরুলিয়া জেলা) সংযুক্ত করতে বাধ্য করেন।

আরো পিছিয়ে যাই যদি আমরা অর্থাৎ ব্রিটিশ আমলের ইতিহাস ঘাঁটলে আরও অনেক কিছু জানা যায়।
১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় শাহ আলম বক্সারের যুদ্ধে পরাজিত হলে তিনি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বিহার-উড়িষ্যা সমেত সমগ্র বাংলার দেওয়ানী দিতে বাধ্য হন। কোম্পানি বাংলার জঙ্গলমহল এলাকায় কর সংগ্রহ করা শুরু করলে তারা প্রশাসনিক সুবিধার জন্য এই এলাকাকে ১৭৭৩ খ্রিষ্টাব্দে পাঞ্চেত, ১৮০৫ খ্রিষ্টাব্দে জঙ্গল মহল এবং ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দে মানভূম এই তিন ভাগে ভাগ করেন। মানভূম জেলার সদর দপ্তর হয় মানবাজার। এই জেলা বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাঁকুড়া জেলা ও বর্ধমান জেলা ও ঝাড়খন্ড রাজ্যের ধানবাদ, ধলভূম ও সেরাইকেলা খার্সোয়ান জেলার অংশ নিয়ে ৭,৮৯৬ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে তৈরী করা হয়। পরবর্তীকালে ১৮৪৫, ১৮৪৬, ১৮৭১ ও ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে মানভূমকে আরো ভাগ করা হয়। ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ রদ হলেও বাংলা ভাষাভাষী সমগ্র মানভূম ও ধলভূম জেলাকে নতুন তৈরী বিহার-উড়িষ্যা রাজ্যের অন্তর্গত করা হয়।  এই বিভক্তির ফলে ঐ অঞ্চলের নেতৃবৃন্দ প্রতিবাদ জানালেও ঐ সিদ্ধান্ত রদ হয়নি। জাতীয় কংগ্রেসের ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের নাগপুর অধিবেশনে ভাষাভিত্তিক প্রদেশ পুনর্গঠনের দাবী আনুষ্ঠানিক ভাবে গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে বিহারে জাতীয় কংগ্রেস মন্ত্রীত্ব লাভ করার পর ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদের সভাপতিত্বে ‘মানভূম বিহারী সমিতি’ নামক এক সংগঠন গড়ে ওঠে। এর বিপরীতে মানভূম জেলার বাঙ্গালীরা ব্যারিস্টার পি আর দাসের সভাপতিত্বে ‘মানভূম সমিতি’ নামক সংগঠন তৈরী করেন। বিহার সরকার আদিবাসী ও উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে প্রাথমিক স্তরের বিদ্যালয় খুলতে শুরু করলে বাঙ্গালীরাও বাংলা স্কুল খুলতে তৎপর হয়ে পড়েন। এই সময় সতীশচন্দ্র সিংহ রাঁচি, পালামৌ, সিংভূম ও মানভূম জেলা নিয়ে ছোটনাগপুর নামক এক নতুন প্রদেশ গঠন বা বাংলার সঙ্গে পুনরায় সংযুক্তির প্রস্তাব করেন।

স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে খুব ধীরে ধীরে হলেও পরিস্থিতি পরিবর্তনের দিকে এগোতে থাকে।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পর থেকে জাতীয় কংগ্রেসের ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের নীতির বাস্তব রূপায়নের দাবিতে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে আঞ্চলিকতা বেড়ে উঠতে শুরু করে। সেই পরিস্থিতিতে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু দেশের স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তাকে বিবেচনা করে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রদেশ গঠনের সুপারিশ করেন এবং সেই হিসেবে ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন বা দার কমিশন নিয়োগ করেন। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে্র ডিসেম্বর মাসে কমিশন মত দেয় যে, স্বাধীনতার সাথে সাথে জাতীয় কংগ্রেস তার অতীত অঙ্গীকার থেকে অব্যহতি পেয়েছে এবং শুধুমাত্র ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠন না করে ভারতের ঐক্যবদ্ধতাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এই কমিশনের প্রতিবেদন খতিয়ে দেখার জন্য প্রধানমন্ত্রী, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ও পট্টভি সীতারামাইয়াকে নিয়ে গঠিত তিন সদস্যের এক উচ্চপর্যায়ের কমিটি নিয়োজিত হয়।

১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তৎকালীন বিহার সরকার ঐ রাজ্যের মানুষদের ওপর হিন্দী ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। প্রাথমিক স্তরে ও সরকারি অনুদান যুক্ত বিদ্যালয়ে হিন্দী মাধ্যমে পড়ানোর নির্দেশ আসে, জেলা স্কুলগুলিতে বাংলা বিভাগ বন্ধ করে দেওয়া হয় ও হিন্দীকে বিহার রাজ্যের আনুষ্ঠানিক ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

মানভূম জেলার বাংলাভাষী মানুষদের ক্ষোভ আঁচ করে জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র ”মুক্তি” পত্রিকায় ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই মার্চ হিন্দী প্রচার, বাংলা ভাষাভাষীদের বিক্ষোভ ও মানভূম জেলার বঙ্গভুক্তির যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করে সম্পাদকীয় নিবন্ধ প্রকাশিত হল। এই বিষয়টি বিবেচনার জন্য ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে এপ্রিল বান্দোয়ান থানার জিতান গ্রামে অতুলচন্দ্র ঘোষের সভাপতিত্বে জেলা কমিটির অধিবেশন হলে সেখানে প্রতিনিধিদের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। ঐ বছর ৩০শে মে পুরুলিয়া শহরের অধিবেশনে মানভূমের বঙ্গভুক্তির প্রস্তাব ৫৫-৪৩ ভোটে খারিজ হয়ে গেলে অতুলচন্দ্র ঘোষ সহ সাইত্রিশজন জেলা কমিটি থেকে পদত্যাগ করে ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই জুন পাকবিড়রা গ্রামে ”লোকসেবক সংঘ” তৈরী করেন। বিহার সরকার বাংলাভাষীদের প্রতিবাদসভা ও মিছিল নিষিদ্ধ করলে মানভূম জেলায় আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। লোকসেবক সংঘ ১৯৪৯ থেকে ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সত্যাগ্রহ আন্দোলন এবং ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই জানুয়ারি থেকে ৮ই ফেব্রুয়ারি টুসু সত্যাগ্রহ আন্দোলন করে। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি এ আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে যোগদান করে। হাজার হাজার বাংলাভাষী মানুষ কারাবরণ করে। এই সময় বেশ কয়েকটি টুসু সঙ্গীত জনগণের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল। তার মধ্যে একটি হল:—-

“শুন বিহারী ভাই
তোরা রাখতে লারবি ডাঙ দেখাই
তোরা আপন তরে ভেদ বাড়ালি
বাংলা ভাষায় দিলি ছাই৷”

এই আন্দোলনের ফলে ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯শে ডিসেম্বর ভারত সরকার সৈয়দ ফজল আলির সভাপতিত্বে, হৃদয়নাথ কুঞ্জরু ও কবলম পানিক্করকে নিয়ে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন তৈরী করে। এই কমিশন ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই ফেব্রুয়ারি থেকে মানভূম জেলায় তদন্ত করে ঐ বছর ১০ই অক্টোবর তাদের বক্তব্য জমা দেন। তাদের বক্তব্যে মানভূম জেলা থেকে বাঙালী অধ্যুষিত এলাকাগুলি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ১৯টি থানা নিয়ে পুরুলিয়া জেলা নামে এক নতুন জেলা তৈরী করার প্রস্তাব দেন। তারা মানভূম জেলা থেকে ধানবাদ মহকুমার ১০টি থানা ও পুরুলিয়া মহকুমার ২টি থানা বিহার রাজ্যে রেখে দেওয়ার প্রস্তাব করেন। অপরদিকে ধলভূম পরগণায় বাংলাভাষীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা স্বীকার করেও যেহেতু ভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ ঐ জেলায় বসবাস করেন সেই কারণে কমিশন জামসেদপুরকে পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত করতে বা ধলভূম পরগণা ভেঙ্গে বাংলায় আনতে রাজি ছিলেন না। এই প্রস্তাবে ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ থেকে ২০শে জুন বিহারপন্থীরা মানভূম জেলায় ধর্মঘটের ডাক দেন। অপরদিকে বাংলা ভাষা আন্দোলনকারীরা ধানবাদ বিহারের অন্তর্ভুক্তিতে খুশি ছিলেন না।
১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে জানুয়ারী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায় ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীকৃষ্ণ সিং পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার উভয় রাজ্যের সংযুক্ত করে পূর্বপ্রদেশ নামে এক নতুন প্রদেশ গঠনের প্রস্তাবনা করেন। তারা প্রস্তাব দেন যে, ঐ প্রদেশের সরকারি ভাষা হিসেবে হিন্দী ও বাংলা উভয়েই স্বীকৃত হবে, মন্ত্রিসভা, বিধানসভা, পাবলিক সার্ভিস কমিশন একটি করে থাকলেও হাইকোর্ট থাকবে দুইটি। এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে প্রবীণ কংগ্রেস নেতারা ছাড়াও বামপন্থী দলগুলিও প্রতিবাদ করেন। দুই রাজ্যে এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সত্যাগ্রহ আন্দোলনের মধ্যে বিহার বিধানসভায় ২৪শে ফেব্রুয়ারি প্রস্তাবটি পাশ হয়ে যায়। লোক সেবক সংঘের কর্মীরা ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে এপ্রিল পাকবিড়রা গ্রাম থেকে বাঁকুড়া, বেলিয়াতোড়, সোনামুখী, পাত্রসায়র, খন্ডঘোষ, বর্ধমান, পান্ডুয়া, মগরা, চুঁচুড়া, চন্দননগর, শ্রীরামপুর, হাওড়া হয়ে কলকাতা শহরের দিকে শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা শুরু করে ৬ই মে কলকাতা পৌঁছায়, ৭ই মে মহাকরণ অবরোধের কর্মসূচী অনুসারে বিনয়-বাদল-দীনেশ বাগ পৌঁছছে ৯৬৫ জন কারাবরণ করেন। এই ঘটনার তিন দিন আগে ৪ঠা মে উভয় রাজ্যের সংযুক্তির প্রস্তাবনা বাতিল হয়ে যায়।
১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই আগস্ট বাংলা-বিহার সীমান্ত নির্দেশ বিল লোকসভায় ও ২৮শে আগস্ট রাজ্যসভায় পাশ হয়। ১লা সেপ্টেম্বর এতে ভারতের রাষ্ট্রপতি সই করেন। এর ফলে ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১লা নভেম্বর ২৪০৭ বর্গ মাইল এলাকার ১১,৬৯,০৯৭ জন মানুষকে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের নতুন জেলা পুরুলিয়া তৈরী হয়। সম্পূর্ণ ধানবাদ মহকুমা বিহার রাজ্যে রয়ে যায়।

ঐতিহাসিক নিদর্শনের জেলা পুরুলিয়াকে ঘিরে তার এই জন্মদিবস নিয়ে আয়োজিত হয় না তেমন বড়ো কোনো অনুষ্ঠান। অন্যদিকে জেলার মানুষ আজ এই জেলার জন্মদিবসও প্রায় ভুলতে বসেছেন। তবু বঙ্গভুক্তির সময় গড়ে ওঠা ‘লোকসেবক সঙ্ঘ’ এই দিনটিকে পালন করে চলে আজও । এককথায় জেলা প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের এ ব্যাপারে মাথাব্যথা না থাকলেও লোকসেবক সঙ্ঘের বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে এ দিনটি পালিত হয় পুরুলিয়া জেলায় ।

_______________________________

ঋণ স্বীকার : —

(১)”সময়ের নিরিখে পৃথিবীর ইতিহাসে চলা দীর্ঘতম ভাষা আন্দোলন হয়েছিল এ বঙ্গেই – জিয়ো বাংলা”। JiyoBangla (ইংরেজি ভাষায়)। ১৯৭০-০১-০১

(২) নন্দদুলাল আচার্য (২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮)। “ভাষা আন্দোলনে মানভূম”। আনন্দবাজার পত্রিকা।

(৩)”HISTORICAL BACKGROUND, Purulia District”। ১৬ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
(৪) “HISTORICAL EVENT: BHASA ANDOLON”

 (৫) Circular of District Inspector of Schools, Manbhum under No. 700. IIG-5-48, Purulia, 8 March, 1948 to all the Sub-Inspectors of Schools of the District
=========================

লেখক •••• সৌম্য ঘোষ। চুঁচুড়া।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *