
দুর্গার দুর্গতি??
সৌদামিনী শম্পা
আজ মহা পঞ্চমী। নেমে যাবে বন্যা ফেবুর পাতায় পাতায়, নারীশক্তির আবাহন, নারী শক্তির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, নারী শক্তির এই সেই, ইত্যাদি প্রভৃতি!
এরপর সন্ধ্যায় নামবে শহরের রাস্তায় রাস্তায় জন জোয়ার, নারী শক্তির প্রতীক দেবীদুর্গাকে দেখতে গিয়ে নারীপুরুষ একেবারে কাছাকাছি, গা ঘেঁষাঘেঁষি করে ভিড় বাসে উঠবে, লাইনে দাঁড়াবে, পথ চলবে। এরই মধ্যে নারীশক্তির পূজারী হাত ফাঁক বুঝে পিষে দেবে কোনো সদ্য কিশোরীর বুকের কুঁড়ি, কোনো নিতম্বে খাঁমচে দিয়ে চলে যাবে কোনো পাঁচ আঙুল, কারো যৌন দন্ড দৃঢ় হয়ে উঠবে এতো ভিড়ে, এত কাছাকাছি দাঁড়ানো নারীশরীর অনুভব করে! কারো কারো খোলা পিঠে এসে পড়বে উষ্ণ কামার্ত নিঃশ্বাস, বাসের গতির অছিলায় এক শরীর হামলে পড়ে ছুঁয়ে নিতে চাইবে অস্পর্শযোগ্য অনেককিছু, যা অন্তত তার ছোঁয়ার অধিকার নেই! কারো বুক খাবে কনুইয়ের গুঁতো, কারো শাড়ি পরা কোমরে ছুঁয়ে যাবে কামার্ত হাত।
আরে প্রচন্ড ভিড় যে! এতো অসুবিধা হলে ভিড়ে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছেন কেন? মজার ব্যাপার এই আঙুলগুলো, হাত গুলো, কনুইগুলো, যৌন দন্ডগুলো, ছোঁয়াগুলো আশ্চর্যজনক ভাবে পুরুষের, শুধুই পুরুষের! একটা নারী হাতও ভিড়ের সুযোগে চেপে ধরবে না কোনো যৌন দন্ড, ঘষে দেবে না রঙিন ঠোঁট পরিষ্কার জামার পিঠে বা হাতায়, ভিড়ে ইচ্ছে করে ঢলে পড়বে না কোনো পুরুষের গায়ে একটাও নারীদেহ, ভিড়কে অস্ত্র করে যৌন লালসা পূরণ করবে না একটিও নারীশরীর।
না জানি কজন দুর্গা গ্ৰামের পথে কিশোর প্রেমিকের সঙ্গে ঠাকুর দেখার শেষে, ক্লান্ত পায়ে বাড়ি ফেরবার পথে , মাঠের ভেতরে চলে যাবে শেয়াল কুকুরের ভক্ষ্য হয়ে? কত জন দুর্গা লাঞ্ছিত হয়ে চোখের জল ফেলবে ঘরের কোণে? লাল বাতি পাড়ায় কত দুর্গা রোজ বেশি বার করে শরীর পেতে দেবে , বেশি রোজগারের আশায়!
এভাবেই তো আমরা নারীশক্তিকে শ্রদ্ধা জানাই, প্রতি দিন, প্রতি মুহূর্তে , প্রতি ক্ষণে। তবু আমরা বাঁচি, আমরা ঘুরে দাঁড়াই, আমরা লড়ি, আমরা দুর্গতি নাশ করি অপরের! কিন্তু নিজেদের?