SIDDHESWAR HATUI

SIDDHESWAR HATUI

মনোহারিতা

কলমে-সিদ্ধেশ্বর হাটুই

সকলেই তো স্পর্শ করতে চায় চাঁদ
আলোতে ভরেনা মন-প্রাণ…..।
আকাশছোঁয়া মনের আকুতি কাহারো,
টানে বারবার কেউ -পাশবিক ঐ ঘ্রান।
অমানুষিক প্রবৃত্তি নিয়ে যারা বাঁচে….
সময়ের সাথে সাথে তাদের চাহিদাও বাড়ে,
আহারের অভিরুচি যায় ক্ষণে পাল্টে,……
এরাইতো ! এরাইতো -কত প্রাণ নিচ্ছে কেড়ে।

অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবন যাপনে দাগো আলোর গোলা
সম্পূর্ণ ছিন্ন করো দুষ্কৃতকারীদের গড়ে তোলা সম্যক গঠন।
মোমবাতি জ্বালিয়ে, গন্ধদ্রব্যের আনুকূল্যে নয়,
দহনের শিখায় ভস্ম হয়ে যাক লোভাতুর জীবনচরিত এখন।
কৃষ্ণপক্ষের ক্ষয় রোধ হোক, আমার-আপনার সহায়তায়
যারা হয়েছে হিংস্রতার শিকার, কৃষ্ণত্ব বিনষ্ট করে ,করো আপন।

সকলেই জানে মনোহারিতা ফুলের প্রাকৃতিক ধর্ম
মনে মনে তা উপভোগ করো, আর শুধু দেখো,
যত্নশীল মন নিয়ে সৌন্দর্যকে সংরক্ষণ করো,
কাঁটা ছেঁড়া না করে ,বাঁচতে দাও , সম্মান রেখো।
একদিন সকলের স্পন্দনহীন হবেই এই কায়া, হ্যাঁ…
তবে কেন অন্যায়াচারী হয়ে এ জীবনের পথ চলবে।
পাল্টে ফেলো পথ,পাল্টে দাও মত, অপরাধীরাও পারে …
পারে, পারে-সভ্য-সমাজের পূজারি হয়ে শান্তির মন্ত্র বলবে।

দেখলি কেমন পূজা

কলমে-সিদ্ধেশ্বর হাটুই

সেদিন দুপুরবেলা খ্যাপার মা আসেচে পাড়ার কলে জল লিতে
আসে সেই গাগরীটা পাতেছে জল ধরবেক বলে…তখন দেখে উদিকে ফটিকের মা,
জল লিবেক বলে আসে সেই কলের সামনে থামল। তখন খ্যাপার মা বলে উঠল….
অ ফটিকের মা কেমন পূজা দেখলি –লো….
ইবারে এই দুগ্গা পূজায় হামদের খ্যাপার বাপ-হ লো…তুই মান আর নাই মান
আমদের সবার লগে লেতুন জামা কাপড় আনেদিয়েছিল,
আর আমদের ছানা-আর মাইয়াছাটাকে, আমাকে- সব্বাইকে একশোটা করে টাকা ধরাই দিয়েছিল।
সবমিলে পূজাটা বেশ ভালই কাটল বুঝলি………………..।

এই সমস্ত কথা শুনে ফটিকের মা রেগে গিয়ে বলল……..
হ- লো তোর পূজা দেখা ভাল হয়েছে ত আমার ভাতারের কী ?
আর তরাই মনে হয় কত ভাল ভাল কাপড় পরলি, কত্ত ভাল ভাল খালি
তদের মতন যেমন আর কেউ পরেও নাই, আর খাতেও পায় নাই?
দেখেছিলিস, যাদের টাকা আছে…মানে ঐ বাবু গুলান , অদের মা –বাপ-বৌ –ছানা –পানা
অদের কত্ত দামি দামি জামাকাপড় পরে ,গায়ে গন্ধ মাখে যায়ে কত রকমের ভাল ভাল খাবার খাল ,
ঐ খাবার গুলানের তুই নামেই জানিস নাই, আর খাবি কী!
আর তদেরকে খ্যাপার বাপ একশ করে টাকা দিয়েছে উটায় দুটা করে জিলাপি ………..
আর দুটা পাপড় ভাজা খায়েছিস , থালেই শেষ। দিয়ে হা করে বসে ছিলিস…।

মনটা খারপ করে ফটিকের মা খ্যাপার মাকে বলল………….
আয়নালো টুকু কাছে, তুদের ত থালেও ভাল । আর আমার দেখ…কত দুঃখাইছি …..
ফটকার বাপ করোনার সময় কাজ ছাড়ে বাইরেরলে ঘরে চলে আল, আর কাজে যায় নাই। জমিনও নাই…
একবার বলছিল যাব কিন্তু –ফেক্টেরীর লোক গুলান বলল আর কাজে লিবেকনাই…….ঐ হয়ে গেল !
এখন মড়া দুবেলা মদ গিলছে, আর লোকের কাজ করে যা পায় সব ঐ মদেই ঢুকাই দেই।
ইবারে পূজায় নিজের তো দূরের কথা ছেলাটকে একটা জামা -পেন কিনে দিতে পারি নাই।
লোকের ঘরে আমি কাজ করে যা পাই কনো রকমে খাওয়াটা চলে। তার আর গরব কিসের ?

বুঝলি লো খ্যাপার মা…….গরিব লোকের আবার পূজা,….. না পারবি ঘুরতে, আর না পারবি খাতে।
শুদু দেখবি আর ঘর আসবি ঘুরে।
তবে দুগ্গা পূজাট শেষ হল যেমন-তেমন করে।
কিন্তু লক্ষী ঠাকুর ইবারে আলে মরে দিব পায়ে মাথা ঠুকে !
সবাই বলবি আমরা কি দোষ করেছি, যে হামদের কনো দিকের লে কনো গতি করে দিচ্চ নাই ?

কিছুক্ষন পরে খ্যাপার মা বলল- দেখ ফটকার মা লক্ষী-আসবেক, কালী আসবেক
লোক কত আনন্দ করবেক, কত পিঠা ,কত মিষ্টি আর কত রকমের খাবার খাবেক , গাড়ি লিয়ে
ইপাড়া -উপাড়া-ছাড়ে শহরে যাবেক, মজা করবেক। আর আমরা সেই একই থাকব…………না জীবনটাই মনে হয় আমরাই পাপি।
আগের জন্মে মনে হছে অনেক পাপ করেছিলম………..বুঝলি !
খ্যাপার মায়ের কথা শুনে ফটিকের মা তার হাতটা ধরে বলল—
দেখ দিদি আমদেরকে চেষ্টা করতে হবেক, পথ দেখতে হবেক,
তার লাগে ঐ ফটকাটাকে অনেক আশা লিয়ে ইস্কুলে পাঠাছি।
তবু মনে হয় কি জানিস, লেখা পড়া করলেই যে চাখরি হবেক তা ত কনো পাকা-পুক্তা লয়।
চপ বিকেও খাতে হতে পারে আর নাহলে মাঠেই খাটবেক। তাও দেখি ………………যদি হয়…………………..!

তখন খ্যাপার মা বলল…………….ইবারে কিছুদিন পরে আবার মকর পরব,। পরবে পরবে যেমন
জ্বালাই মারে দিবেক, পরব আলেই যত খরচা, কুথারলে জুটাবি জুটা।

ফটিকের মা বলে উঠল—কি বলব আর দুখের কথা , এখনো যায়নাই মনের ব্যথা।
বেল পাকলে তাথে কাকের কি ? যা হবেক দেখা যাবেক। মকর আসবেক দুটি চাল কারোর কাছে লিয়ে পিঠা ট করব,
পুরানো জামা কাপড় গুলানকে একটু বাটিসাবান ঘষে দিব…
কিছু হোক -না হোক নদীএ সকাল সকাল ডুবটা ত দিব , উটাই অনেক।
হামদের উটাই আনন্দ, টাকা পয়সা না থাকলে পরবেও সুখ নাই লো…নাই…সুখ নাই…সুখ নাই।

https://bangla-sahitya.com/post/

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *