জীবনটা রেল গাড়ির মতন।
শীলা দে
আমাদের জীবনটা রেল গাড়ির মত জানেন! দূরপাল্লার ট্রেনে অনেক রকমের যাত্রী ওঠে, আমিও উঠে বসলাম সেই ট্রেনেই , যদিও সিট টা রিজার্ভভেশন ছিলো আমার, অনেকদূরে পারি দেবো আমি, যেতে যেতে কতরকম মানুষের রূপ দেখলাম।
হটাৎ একটি হকার বাদাম বিক্রি করতে উঠলো চিৎকার করে বলছে,” চিনা বাদাম চাই বাদাম, আমি বললাম ! কত করে ভাই? ছোট্ট ছেলেটি বলল, একশো গ্রাম দশ টাকা আমি অমনি ব্যাগ থেকে দশ টাকা দিলাম, আর একশো গ্রাম চীনে বাদাম নিলাম, বাদাম আমার খুব প্রিয়, একটা করে ছাড়িয়ে খাচ্ছি আপন মনে। ট্রেনে প্রচুর যাত্রী উঠছে, নামছে যদিও ট্রেনের দূরত্ব বেশি , তাই স্টেশনের ও দূরত্ব বেশি।
আসলে আমাদের জীবনটা একটা ট্রেন , আর সেই ট্রেনের যাত্রী আমরা সকলেই, যখন যার সময় হবে ঠিক নেমে যাবো, বলতেও হবে না কাউকে। দীর্ঘ পথের যাত্রী আমরা, তারই মধ্যেই বসে আছে কত কপোত কপোতী, বৃদ্ধ বৃদ্ধা , কত যুবক যুবতী , চলছে কত , হাসি ঠাট্টা , আবার কেউবা তাস খেলায় মত্ত, আমি একবার আড় চোখে দেখি কি তাস খেলছে? দেখলাম”” কল ব্রে “” খেলছে , টাইম পাশ করতে হবে তো নাকি??? হঠাৎ এক বিধবা মহিলা উঠে বললো,””” দাদারা দিদিরা , আপনারা যদি কিছু কিছু করে সাহায্য করেন আমার মেয়েটার বিয়ে দিতে পারি, ছেলেদের ইয়ং বয়েস, মেজাজ উগ্র, বললো “”ফোট ফোট রোজই কানের কাছে ভ্যান ভ্যান করে “”! কেও বা দিলো কেও বা দিলো , আমার কিন্তু মনটা টন টন করে উঠলো ,”” ভাবলাম আমার ঘরে ও মেয়ে আছে, তাই ডাক দিলাম “” এই মেয়ে শোনো, এই ২০০ টাকা রাখো,”” জানি এতে তোমার কিছুই হবে না “”তবুও ওকে এটা দিয়ে একটা ব্লাউজ অন্তত কিনে দিও, আমি মনে শান্তি পাবো!
পাশ থেকে একটি ছেলে বলে উঠলো, আরে মাসিমা কেনো দিচ্ছেন? জানেন ওদের কত ইনকাম!!!!!! আমি বললাম,”””” আমার জানার দরকার নেই “””” আমার কর্ম আমি করছি তোমার কর্ম তুমি কর।। হঠাৎ কোন কামড়া থেকে চিৎকার ভেসে আসলো ,””” আরে গেলো গেলো , বুড়োটা বোধ হয় টস্কে গেলো !!! উঁকি দিলাম দেখলাম, হ্যাঁ সেই বৃদ্ধ, মুখ দিয়ে গাজা উটছে , বয়স্ক বুড়িটা তার বুক ডলছে , আর চিৎকার করে কাদঁছে,ততক্ষণে বুঝলাম ওনার হার্ট হ্যাটাক হয়েছে , অথবা ব্রেইন স্ট্রোক? একটু রাগান্বিত সুরেই বললাম “”” এই ছেলেরা দেখছো কি!!! রগড়??? ওনাকে একটু হেল্প করতে পারছো না??
ছেলে গুলো বললো “””কাকিমা আজকে কাজে না গেলে টাকা কেটে নেবে মাইনা থেকে”””” বলি আমি= তোমাদের কাছে টাকা বড়ো না মানুষের জীবন বড়???? ছেলে গুলোর বিবেকে ধাক্কা দিলো ,”””” ধর ধর করে পাঁজা কোলে , নামিয়ে নিলো, পরের স্টেশনে , যাতে কোনো হসপিটালে অন্তত দিতে পারে।
কপোত কপোতী যাচ্ছিল হানিমুন করতে, তারা বাংকের উপড়ে গল্পে মশগুল , ট্রেন চলছে দ্রুত গতিতে হঠাৎ একটা আওয়াজ, তারপর আর কিছুই মনে নেই, চোখ খুলে দেখি , আমি একটি হাসপাতালের বেডে শুয়ে, মেয়েরা কাদঁছে , আমি ইশারায় ডাকলাম , ছোট মেয়ের হাতটা মাথায় রেখে বলতে, চাইলাম কিছু , বলতে পারলাম না , দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরলো, আগেও বলেছিলাম মেয়েকে , নিজের পায়ে দাঁড়াতে , এই পৃথিবী সম্পত্তির শিকারি, কেও আপন নয়, আমার চোখ বুজে এসেছে কখন দুর দেশে চলে গিয়েছি বুঁজতেই পারলাম।। বি দ্রঃ= আমাদের জীবন টা ট্রেনের যাত্রীর মতন , কে কোন স্টেশনে নামবে , কেও বলতে পারে না।।
((((( সমাপ্ত))))))