গদ্য কবিতা : খেলাঘর
সত্যেন মণ্ডল
একরাশ কাশফুল আন্দোলিত গোধূলির বাতাসে
বর্ণচোরা মেঘের দল যক্ষর দূত হয়ে আকাশ গাঙে
ভাদ্রের অন্তিম পর্ব
দেবীর আবাহন শুরু হবার জন্য অপেক্ষা মাত্র
কয়েকটা প্রহরের
পাখ পাখালির চিরচেনা কাকলি আর নেই
বাসার যাত্রীর মতো ভালোবাসার বাসাতে
পৃথিবীটা শান্তির স্বর্গদ্যান !
দুঃসংবাদটা আচমকা নাড়িয়ে দিলো গোটা বাড়ি
বাড়ির সুগৃহিনী লড়েছেন মৃত্যুর সঙ্গে
দুরারোগ্য মারণ ব্যাধিতে
চলে গেলেন অকালে ।
থেমে গেল সন্ধ্যারতি
দেবীর আবাহনের আগে বিসর্জনের সংবাদ
শোক দুঃখ বিলাপ ডুকরে ডুকরে কান্নার শব্দ
হঠাৎ ঝড়ে সব ওলট পালট —–
দূর থেকে ভেসে এল মহালয়ার মন্ত্র
যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা—-
ক্ষুদে নাতনিটা এসে বললো, দাদু আলো জ্বালনি কেন?
প্রতিদিন সন্ধ্যায় একবার করে ঘরে আসে আর বলে ,
দিদা কবে ফিরবে দাদু ?
আজ ছোট্ট শিশুটিও বুঝে গেছে
দিদা আর কখনও ফিরবে না
এবার দাদু একা হয়ে গেল।
গভীর রাতে হাসপাতাল থেকে এলো মরদেহ
আত্মীয় পরিজন সবাই আজ এসেছে
যে যার মতো শোক প্রকাশ করছে
কেউ চিৎকার করে কাঁদছে
কেউ ডুকরে ডুকরে কাঁদছে
সবাই শেষ দেখার জন্য বারান্দায়
কেউ অঝোরে কেঁদে চলেছে
ঘরের মধ্যে কার উপস্থিতি টের পেল বৃদ্ধ
বৌমা বলছেন,বাবা , মা’কে সবার দেখা শেষ
আপনি চলুন, আপনার জন্য ছেলেরা অপেক্ষা করছে
মা’কে শ্মশানে নিয়ে চলে যাবে
বৃদ্ধ ধীর স্থির, শান্ত কন্ঠে বলে—-
বৌমা, তোমার মাকে এ ঘরে একবার নিয়ে এসো
এ ঘর থেকে ও বিদায় না নিলে
ওর আত্মা শান্তি পাবেনা
ঘরকে পর করতে না পারলে
হয়তো মুক্তি মেলেনা ।