আসহাবে কাহাফ বা গুহাবাসী যুবকদের কথা [] এস এম শাহনূর
আসহাবে কাহাফ (Cave of the Seven Sleepers)। সুরা কাহাফে বর্ণিত সেই গুহা যার অভ্যন্তরে সাতজন একেশ্বরবাদী লোক এক অত্যাচারী পলিথিস্ট শাসকের জুলুম থেকে বাঁচার জন্য আল্লার ইচ্ছায় এক ঘুমে ৩০০ বছর আর চন্দ্রমাসের হিসাবে ৩০৯ বছর পার করে দিয়েছিলেন (সুরা কাহাফ, আয়াত নং ২৫)। মহান আল্লাহ্ পাকের বিশেষ দয়ায় সৌভাগ্য হয়েছে তুরস্কে অবস্থিত সেই শান্তিময় গুহাভ্যন্তরে কিছু সময় কাটানো এবং জিয়ারত করার।আলহামদুলিল্লাহ।
সকলের সদয় জ্ঞাতার্থে, গুহার এই ঘটনাটি নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই যেহেতু এটি মহাগ্রন্থ কোরআনে উল্লেখ রয়েছে। তবে এই গুহার প্রকৃত অবস্থান নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
‘আসহাবে কাহাফ’ অর্থ ‘গুহাবাসী’। এ ঘটনা ঘটেছিল প্রাচীন গ্রিক শহর আনাতোলিয়া বা এফিসাসে (Ephesus)। কাছেই ছিল গ্রিক দেবী আরটেমিসের বিখ্যাত মন্দির।সে সময় এশিয়া মাইনর (বর্তমান তুরস্ক ) এলাকায় এফিসাস/আফসুস (Ephesus) নগরী ছিল রোমান সাম্রাজ্যের অন্যতম প্রধান শহর ও বানিজ্যকেন্দ্র।অধিকাংশ খ্রীস্টান ইতিহাসবিদদের মতে আফসুস নগরীকেই আসহাবে কাহাফের শহর বলে গ্রহণ করা হয়েছে। মুসলিম গবেষক এবং তাফসীরবিদগণের মধ্যে অনেকেই মনে করেন ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী তুরস্কের মেরসিন (Mersin) এলাকার অন্তর্গত টারসুস (Tarsus) {যার খ্রিস্টান নাম Ephesus}শহরের অদূরে যে বিখ্যাত গুহা রয়েছে সেটিই আসহাবে কাহাফ, যার ছবি এখানে দেয়া হল। মুসলিম এবং খ্রিস্টান উভয় সম্প্রদায় এই আসহাবে কাহাফের ঘটনা বিশ্বাস করেন। জানা যায়, এই এলাকার খ্রিস্টান লোকজন বহু কাল ধরে জুলাই মাসের একটি নির্দিষ্ট দিন এখানে আসহাবে কাহাফ দিবস হিসাবে পালন করে আসছেন।
তবে ১৯৭৬ সালে জর্ডানের এক মুসলিম গবেষক অনেক গবেষণার পর দাবি করেন আসহাবে কাহাফ জর্ডানের আম্মানে অবস্থিত। একই ভাবে কেউ বলেছেন এটি স্পেনের গ্রানাডা আবার কেউবা বলেছেন সিরিয়া কিংবা ইয়েমেনে এর অবস্থান।
কুরআনের ১৮ নম্বর সুরা ‘সুরা কাহাফ’ মক্কাতে অবতীর্ণ হয়, অর্থাৎ তখনও নবী হযরত মুহাম্মাদ সাঃ ও তাঁর অনুসারীরা মদিনায় চলে যাননি। কিন্তু মক্কাতে তখন তাঁর অনুসারীর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে দেখে কুরাইশরা খুবই চিন্তিত হয়ে পড়ে। যেহেতু নবী সাঃ এমন ধর্ম প্রচার করে চলেছিলেন, যেখানে আগের নবীদের সাথে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের নবিরা মিলে যায়, তাই কুরাইশ নেতারা সিদ্ধান্ত নেয় যে, তাঁরা ইহুদি র্যাবাইদের (আলেম) সাথে পরামর্শ করবে। নাযার ইবনে হারিস এবং উকবা ইবনে মুয়িত নামের দুজনকে তাঁরা মদিনার ইহুদি র্যাবাইদের কাছে প্রেরণ করে এই বলে যে, তাঁরা যেন মুহাম্মাদ সাঃ এর ব্যাপারে তাদের মতামত জানায়।
তারা মদিনা পৌঁছালে ইহুদি আলেমরা তাদের কথা শুনে মীমাংসা করার জন্য একটি উপায় বাতলে দেন,
দেখো, আমরা তোমাদের মীমাংসা করার জন্য একটি কথা বলছি। তোমরা ফিরে গিয়ে তাঁকে তিনটি প্রশ্ন করবে। তিনি যদি উত্তর দিতে পারেন, তবে তিনি যে সত্য নবী, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর না দিতে পারলে তিনি মিথ্যেবাদী।
প্রথম প্রশ্ন: পূর্বযুগে যে যুবকেরা বেরিয়ে গিয়েছিলেন তাদের ঘটনা বর্ণনা করুন তো?এ এক বিস্ময়কর ঘটনা।
দ্বিতীয় প্রশ্ন: তাঁকে সে ব্যক্তির অবস্থা জিজ্ঞেস কর,যে পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম এবং সারা বিশ্ব সফর করেছিল। তার ঘটনা কি?
(এ সূরার ৮৩-১০১ অংশে জুলকারনাইন সম্পর্কিত বর্ণনা আছে,জুলকারনইন পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে বেড়াতেন নির্যাতীত,বঞ্চিত,শাসকের হাতে শোসিত লোকদের মুক্তি দিতেন। পবিত্র কুরআনের বর্ননা অনুযায়ী অরুণাচলে,যেখান থেকে সূর্য উদিত হয় সেখানে ইয়াজুজ,মাজুজের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করার জন্য দেয়াল তুলে দিয়েছিলেন জুলকারণাইন)
তৃতীয় প্রশ্ন: তাঁকে রূহু সম্পর্কে প্রশ্ন কর যে,এটা কি? (তার উত্তরটি সূরা বনী ইসরাঈলের শেষে বর্ণনা করা হয়েছে)
🖋️এস এম শাহনূর
কব৭ ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক।