প্রেমিক থেকে লেখা
রূপক চট্টোপাধ্যায়
প্রিয়তমা তোমাকে রূপোলী লালায়
ডুবিয়ে রেখে আমি উঠে যাবো
ঠিক, একবিংশ শতাব্দীর ডাঙায়!
পুরুষালী চাট্টান থেকে দেখবো
তুমি ডুবে যাচ্ছো, ডুবছো অতলে
সূর্যের ডুবন্ত আলোয় যেভাবে
ডুবে যায় রূপবতী সুতান, বিহ্বল পাখির কলরব!
তবুও সংযত পথে, তোমার জন্য রেখে যাবো
ঝরা হিঙ্গন নিশান, উড়ো পালকের ডিঙা আর
ভবঘুরে যুবকের দীর্ঘশ্বাস থেকে পাওয়া
বিষন্ন শ্রাবণ মাস!
তুমি এসো, নাকের নোলক
পূর্ণ পূর্ণিমায়, গ্রহের সব দোষ কেটে গেলে
জ্যোতিষীর থুতু পূর্ণ মিথ্যার ভেতর।
পৃথিবীর শরীরে সব ক্ষত সেরে যাওয়ার পর,
অসুখের পাদদেশে। এসো তারপর একদিন
হিরণময় হ্রদের তীরে বসাবো আমাদের বসতী।
আমদের সন্তানেরা সবুজ পৃথিবী বুকে জাপটে ধরে
খাড়া পথ দিয়ে নেমে আসবে। নেমে আসবে
দেব শিশুরা। আগে আগে ভেড়ার পাল
নেচে নেচে ঝর্ণা হবে অপূর্ণ অবসরে!
তুমি, জানো না প্রিয়তামা
কতো যুগ এভাবেই তোমার পিছু নিয়েছি আমি!
কতবার স্বপ্ন দেখেছি চন্দ্রাঘাতে আত্মহত্যার !
কতো দরদালানের মাথায় বটবৃক্ষ হয়ে এলো,
কতো থামের অহংকার থেকে উঁকি মারল
ইঁটের নির্লজ্জ হাসি। কতো দুর্যোধন
জানুতে বসাতে চাইলো তার লালিত লাম্পট্য আর
লন্ঠনের হলদে আলোয় বিধবা মায়ের মূর্তি
সাধন করতে করতে নিজেই বিক্রি হলো
সেলাই শেখা মেয়েটা! তুমি জানো না প্রিয়তমা!
এভাবেই শীত থেকে উড়ে গেলো
পশমের শিশুরা বসন্তের দিকে। ওরা সব আমাদের
শিশু। তুমি মানতে চাইবে না জানি। তবু্ও বলি
তুমি, বিশ্বাস করো, ওদের জিন খুলে খুলে দেখো
সব বংশগতির ধারাবিবরণী আমাদের দুজনার!
পশমের শিশুরা হলো আদমে ইভে পূর্ণ চৈত্র মাস!
তারা আর আমাদের চিনতেও পারেনা
চিনতে চায় না হয়তো বা।
আমাদেরও অসুখ সারেনি আজও, তাই
ক্যাকটাস হয়ে দাঁড়াই সাহারা সন্ধ্যায়, চৌকাঠে।
তুমি প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ হাতে বিমুগ্ধ বাংলাদেশ!
ওদের ডাকি আয়।
আয়৷ আয় রাত হলো ঘরে ফিরে আয়।
হায় কতো উত্থান হলো সভ্যতার। কতো
মৌর্য পতাকায় লেগে গেলো কালান্তরে ধুলো,
রক্তের দাগ মুছে নীচু মাথায় ফিরেগেলো
অশোকের বিষন্ন বিবেক!
কতো
ঘসিটি বেগম, প্রতিশোধ নিল চোরাপথে।
কতো খাদ্য সংকটে শিশু ছিঁড়ে খেলো
জননীর স্তন মাংস মেধা! হায়
তবু আমদের সন্তানের…
এতো দিন তুমি সব ভুলে গেছো জানি
তাই এসো আর একবার এই রাঢ়রঙ্গে
সাজাই ছৌনাচ। বেজে উঠবে থালা বাসন
খাদ্য আর বাসস্থানের নিশ্চয়তায়!