PULAK MAJUMDER

পুলক মজুমদার (1)

বীর শিবাজী – ১

পুলক মজুমদার

মারাঠা পরিবারে জন্ম শিবাজীর। শিবের কৃপায় পুত্র লাভ করেছিলেন বলে মা নাম রাখলেন শিবা। মা জিজা বাঈ ছোট ছেলে শিবাকে নিয়ে বিজাপুরে থাকতেন। শিবাজীর শৈশব আর যৌবনের উল্লৈখযোগ্য কিছু সময় কাটে এই বিজাপুরে।

এই রাজ্যের তুলজাপুরে আদি ভবাণী মন্দির। অত্যন্ত জাগ্রত এই মন্দির লোকের মুখে মুখে তুলজা ভবাণী মন্দির নামে সমধিক পরিচিত। ছেলেবেলায় মার সাথে নিত্য সেবায় তুলজা ভবাণী মন্দিরে যেতেন। কৈশোরে সেটা অভ্যাসে দাড়িয়ে গেল। ব্রাহ্ম মুহূর্তে উঠে তুলজা ভবানী মন্দিরে পূজা সেরে দিন শুরু হত শিবাজীর।

মারাঠা জাতি স্বভাবগত ভাবে তেজী ও স্বাধীনতা প্রিয়। ঊষর প্রান্তর বলে মারাঠা মহিলারা ও সব ধরনের কাজে পারঙ্গম। ইতিহাসের পাতায় অনেক বীর মারাঠা মহিলার নাম অক্ষয় কালিতে লেখা রয়েছে।
হানাদার মোগলদের অনাচার, অত্যাচার আর শোষনের কবল থেকে নিজ জন্মভূমি উদ্ধার করার জন্য পাহাড় দিয়ে ঢাকা মারাঠা রাজ্যের পাহাড় শীর্ষে তলোয়ার নিয়ে কঠোর অনুশীলন করতেন শিবাজী। তাঁর অপরিসীম আত্মত্যাগ, কর্তব্য নিষ্ঠা, অদম্য মনোবলের মূল লক্ষ্য ছিল স্বরাজ।

কিন্তু ভাবা যত সহজ বাস্তবে তা করে দেখানো ছিল প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। কারন বৈদিক যুগ পরবর্তী সহস্রাব্দের পর সহস্রাব্দ ধরে স্বার্থলোভী প্রভাবশালী মানুষদের ভূল পরিচালনায় সাধারণ মানুষদের প্রাত্যহিক জীবন ছিল অধর্মাচারের স্বেচ্ছাচার দিয়ে ভরা। ভূল শিক্ষার অনুশীলন ভূল পরিণাম বয়ে আনে। ধর্মের নাম দিয়ে অধর্ম করে চলা এসব মানুষদের মনোবল নানাভাবে ভেঙ্গে বিলীন করে দেওয়া ছিল খুব সহজ। আর এ কাজে সুনিপুন ও দক্ষ ছিল বহিরাগত পরধর্মদ্বেষী তুর্কী ও মোগল বংশ।
সমগ্র ভারতবর্ষ তখন পরাধীনতার শৃঙ্খলে বন্দী। শিবাজীর জন্মস্থান বিজাপুর আদিল শাহের কব্জায়। ১৬৫৬ সালে আদিল শাহের মৃত্যুর পর তার পুত্র বিজাপুর রাজ্যের ক্ষমতার মসনদে বসে। আওরঙ্গজেব গুপ্তচর দিয়ে চারদিকে রটিয়ে দেয় আদিল শাহের কোন পুত্র নেই। এরপর বিভিন্ন ভাবে বিজাপুর রাজ্যের জায়গীরদারদের হাত করার চেস্টা চালায়। নানা প্রলোভন দেখিয়ে শিবাজীকে ও মুগল শিবিরে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেয়।

কিন্তু ভবি ভোলার নয়। শিবাজীর কাছে আদিল শাহ যা আওরঙ্গজেব ও তাই। স্বরাজ আনতে হলে এদের কারো অধীনেই কাজ করা চলবে না। স্বরাজ গঠন করার কাজ বেগবান করতেই ১৬৫৭ সালের এপ্রিল মাসে ভীমা নদীর অপর পাড়ে শিবাজী দুজন সুদক্ষ মারাঠা সর্দার মিনাজী ও কাশীকে মুগলদের অধিকৃত চামারগুণ্ডা ও রায়সীন পরগণা অধিগ্রহণ করতে পাঠিয়ে নিজে উত্তর পুণার জুন্নর নগরে গভীর রাতে দড়ির সিঁড়ি বেয়ে উঁচু সুরক্ষিত প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে রক্ষীদের বধ করে নগরের দখল নেন।
আওরঙ্গজেব বিরাট সেনাদল পাঠিয়ে তিনটি জায়গায় শিবাজীর হাত থেকে ছিনিয়ে নেয়। মুগল খাজাঞ্চীর বার লক্ষ টাকা, দুশো ঘোড়া, বিপুল পরিমাণ মূল্যবান গহণা নিয়ে আরাবল্লী পাহাড়ের গহীন কন্দরে মিনাজী ও কাশীকে নিয়ে গা ঢাকা দেন শিবাজী।

বিজাপুরের পরলোকগত আদিল শাহের রাজ্য পরিচালনায় অযোগ্য, অসহিষ্ণু পুত্র আওরঙ্গজেবের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে। বিজাপুর আওরঙ্গজেবের শাসন ব্যবস্থার সাথে যুক্ত হয়।
আওরঙ্গজেব আদিল শাহের ছেলেকে গুপ্তচর মারফত খবর পাঠাল। যে কয়টি দুর্গ শিবাজীর দখলে আছে তা কেড়ে নাও। আর যদি তা সম্ভব না হয় তবে তাকে কর্ণাটকে জায়গীর দিয়ে চাকর বানিয়ে রাখ।
কিন্তু বিজাপুরের কেউই শিবাজীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য এগিয়ে এল না।

আর সে সুযোগে শিবাজী স্বরাজ গঠনের জন্য রাজ্য বিস্তার শুরু করে। ১৬৫৮ সালে শিবাজী সহ্যাদি পর্বতমালা পেরিয়ে কল্যাণ, ভিবণ্ডী ও মাহুলী দুর্গ দখল করেন। উত্তর কোঁকন অধিগ্রহণ করার পর দক্ষিণ কোঁকনের কোলাবা জেলার কিছু অংশ দখলে নিয়ে অনেকগুলো দুর্গ নির্মাণ করেন। কল্যাণের উত্তরে দামন প্রদেশের আসিরি দুর্গ দখলে নিয়ে নীচে সমুদ্রের খাঁড়ীতে জাহাজ নির্মাণ করে মারাঠা নৌসেনার সূ্ত্রপাত করেন এই মহান বীর।

(ক্রমশ)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *