শহরের জন্য
শহরের আকাশে সাদা কালো মেঘের ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা। বৃষ্টি সিক্ত গলিত আকাশ। মাঝে মাঝে আকাশের মন ভারাক্রান্ত। তাই উদাসীন। উদাসীন আকাশেরও কিছু গোপন কথা থাকে। ঐ সাদা কালো মেঘেদের কাছে ব্যক্ত করার জন্য ওদের ধরার ফিকির খোঁজে।
এ শহর চিরকালই আমার বড্ড প্রিয়। ছয় ঋতুর সৌন্দর্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শহরের মানানসই সাজসজ্জা। তার জটপাকানো যানজট। মাঝে মাঝে এই জট খুলতে শহরকে অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়। তবুও এ শহর অনন্য। সুন্দরী তিলোত্তমা। শহরের আকাশচুম্বী বাড়িগুলোর মধ্যে চলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। এ বলে আমায় দেখ ও বলে আমায় দেখ। তারা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকলেও সর্বদা নির্বাক। তারা হয়তো নিজেদের দাম্ভিকতাকে বেশি প্রাধান্য দেয়। কিন্তু তারা যতই দাম্ভিক হোক এই তিলোত্তমার সৌন্দর্যকে প্রাণভরে উপভোগ করে। তারা দেখে এই শহরের এক নিঃশ্বাসে ছুটে চলাকে।
শহরের ব্যস্ততার বিরাম নেই। আবার মাঝের মধ্যে ঢিমে তালে চলে। ঐ যে রবি ঠাকুর বলে গিয়েছিলেন “কলিকাতা চলিয়াছে নড়িতে নড়িতে”। রবিবার গুলো ব্যস্ত থাকলে শহরের এমন ঢিমে তালে চলা দেখে মনে হয় রবি কবির কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে। তবুও যেন এ শহরকে বড়ই প্রিয় বলে মনে হয়। আর প্রিয় শহরের প্রেম-ভালোবাসা-উৎকণ্ঠা, প্রেমিকযুগলের খুনসুটি,ডেটিং স্পট। তাদের কোড ল্যাঙ্গুয়েজে প্রেমালাপ।
বৃষ্টি সিক্ত শহর। বৃষ্টির জলে রাজপথের জলকেলি। প্রিন্সেপ ঘাটের গঙ্গাবক্ষে দেখা যায় নীল মেঘের খেলা। মেঘেরা আহ্লাদিত হয়ে কেমন গঙ্গাকে চুম্বন করে যায় আবার গঙ্গার সঙ্গে একাত্ম হয়ে যায়। ঐ মেঘের বুকে কান পাতলে শোনা যায় প্রেমিকের হৃদস্পন্দন।
এ অনুভূতি যেন স্বর্গসুখজনক। আবার ময়দানে খোলা আকাশের নিচে ঐ সবুজ নরম ঘাসের ওপর ছড়িয়ে থাকে অসংখ্য প্রণয়মূলক কথোপকথন। ভিক্টোরিয়ার একাকী পরী আজও তার প্রেমিকের অপেক্ষায় একই ভাবে দাঁড়িয়ে দিনগোনে। আর শহরের রোমাঞ্চকর রেস্তোরাঁগুলোর কুহকী আলোয় মিশে থাকে কত সম্পর্কের প্রতিশ্রুতি।
তিলোত্তমার বুকে এই অমূল্য রত্নের আকর সত্যিই বড্ড প্রিয়। বড়ই আপন বলে মনে হয়।
তবুও যেন ইতঃস্তত মন খারাপের বিজ্ঞাপন লাগে। হয়তো খানিক একঘেয়েমি এসে কাঁধে চাপে। তখন মনে হয় একটু অন্যরকম কিছু হোক। আর তখনই মন এদিক ওদিক ধাবিত হয়। কেমন উদাসীন আনমনা হয়ে যায়।
©প্রিয়াঙ্কা ঘোষ।