Priyanka Ghosh

*প্রণয়ের সাক্ষী প্রকৃতি*

প্রিয়াঙ্কা ঘোষ

প্রকৃতির সঙ্গে প্রণয়ের একটা যোগাযোগ আছে। এই বিষয়টি আরও বেশি যথার্থ হয়েছে কবি সাহিত্যিকদের জন্য। তাঁরা প্রকৃতি আর প্রণয়কে একাত্ম করে অভিনব রূপ দিয়েছেন তাঁদের সৃষ্টি তথা লেখনীর মধ্যে। প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দুই সাহিত্যেই প্রকৃতি-প্রণয় এক হয়ে মিশে গিয়েছে। ইংরেজ কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থ,উয়িলিয়াম হ্যাজলিট,শেলী, কিটস, লর্ড বায়রন প্রমুখ রোম্যান্টিক কবিদের লেখনীতে প্রকৃতি ও প্রণয়ের কথা খুব স্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে। 

তেমন বাংলা সাহিত্যেও একই বিষয় পরিলক্ষিত হয়। যেমন- রবি ঠাকুরের লেখা প্রকৃতি প্রেমের কবিতায় প্রকৃতি প্রণয়ের নির্যাস বের করে এনে কবিতা গুলিকে আরও প্রণয়ময় লাবণ্যময়ী করে তুলেছিলেন। তাঁর রচিত ভানুসিংহের পদাবলীতে রয়েছে বর্ষার অপরূপ বর্ণনা,সেই সঙ্গে রয়েছে রাধা কৃষ্ণের প্রণয়কথন।

আবার জীবনানন্দ দাশের কাব্যে প্রকৃতির শোভা ভূমিকায় প্রণয় এসেছে বারংবার। তাঁর কাব্য হয়ে উঠেছিল চিত্ররূপময়। তিনি ‘রূপসী বাংলার কবি’ অভিধায় খ্যাত হয়েছিলেন। 

কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ও তাঁর রচনাতে প্রকৃতি আর তাঁর কল্পিত চরিত্র, প্রেয়সী নীরাকে একই সঙ্গে রেখেছিলেন। 

বৈষ্ণব পদাবলির কবিরাও প্রকৃতি ও প্রণয়কে সঙ্গে করে তাদের লেখার উপকরণ করেছিলেন। 

এইরকম সংস্কৃত সাহিত্যের কবিরাও প্রকৃতি আর প্রণয়কে একত্রিত করে রচে ছিলেন বহু রচনা। কবি কালিদাস, বানভট্ট, শুদ্রক প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।

তাই প্রকৃতি আর প্রণয়কে একে অপরের দোসর বলা যায়।

এই প্রকৃতির বুকে অসংখ্য প্রণয়ের সূচনা হয়। আবেগের গল্প জমে আর গাছের ছায়াঘেরা পরিবেশ ও নীরবতায় মধুময় কথোপকথনে প্রকট হয়ে ওঠে অপরূপ মায়াবী দৃশ্য। প্রকৃতির উপাদান মেঘ-বৃষ্টি লেখে প্রণয়-বিরহের কবিতা অথবা গল্প। বৃষ্টি আনে কখনও বিষণ্নতা কখনও বৃষ্টি আনে প্রণয়ের অমৃত সুধা। সেই অমৃত সুধায় ডুবে যায় প্রকৃতির রোমাঞ্চকর স্থানগুলো। প্রকৃতিতে রেকর্ড হয়ে যায় অজস্র প্রণয়ালাপ, অঙ্কিত থাকে প্রণয়ীযুগলের অন্তরঙ্গতার চিত্র, মিশে থাকে প্রণয়ীযুগলের সুখ-দুঃখের স্মৃতি। এইভাবেই প্রকৃতি অসংখ্য প্রণয়ের সাক্ষী হয়ে থাকে।

©প্রিয়াঙ্কা ঘোষ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *