Priyanka Ghosh

প্রিয়াঙ্কা ঘোষ

শারদীয়া উজ্জ্বল হেরিটেজ শিরোপায়

শরতের সৌন্দর্য বহন করে আনে দুর্গাপূজার বার্তা। আকাশে-বাতাসে বিস্তৃত প্রান্তরে শোনা যায় আগমনীর সুর। আগমনীর সুরের ছন্দে ধ্বনিত শারদ লক্ষ্মীর পদধ্বনি। তখন শহর হতে শহরতলি সব জায়গায় শুরু হয়ে যায় আসন্ন দুর্গাপুজোর জন্য তোড়জোড়।

দুর্গাপূজা বাঙালীর শ্রেষ্ঠ ধর্মীয় উৎসব এবং বাংলার অন্যতম উৎসব। এই দুর্গোৎসব বাংলার প্রত্যেকটি মানুষের মনে আনে খুশির জোয়ার। বাংলার সকল মানুষ এই উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠে। এই উৎসব উপলক্ষ্যে আত্মীয় পরিজন, বন্ধুবান্ধব সবাই সবার সঙ্গে মিলিত হয়, গল্পের আসর বসে। নতুন জামাকাপড়ের গন্ধে মন মেতে ওঠে, তারমধ্যে বাড়িতে ভালো ভালো খাওয়া দাওয়া, চারিদিকে আলোর রোশনাই সব মিলিয়ে পুজোর পাঁচদিন জমজমাট থাকে।

বাংলার এই শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো ইউনেস্কোর হেরিটেজ তকমা পেল। দুর্গাপূজাকে ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করা হলো। জাতি সংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো। এই দুর্গোৎসব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রধান দিক আলোকিত করেছে।

শারদ লক্ষ্মীর আগমনের অনেক আগে থেকেই কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোতে প্যান্ডেলের কাজ শুরু হয়ে যায়। সেখানে সাবেকি থেকে থিমের প্যান্ডেল দুইই পরিলক্ষিত হয়। কলকাতার মধ্যে বারোয়ারি পুজোগুলোতে এখন থিমের জৌলুস বেশি চোখে পড়ে। কলকাতার সংলগ্ন অঞ্চলগুলোতেও এখন থিমের পুজো শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রত্যেক বছরই এই বারোয়ারি পুজো কমিটিগুলো নিত্য নতুন ভাবনা নিয়ে আসে বাঙালীর কাছে। শিল্পীদের সুনিপুণ শিল্পকলায় প্যান্ডেলগুলো হয়ে ওঠে অদ্বিতীয়। চোখ ধাঁধানো সব প্যান্ডেলের কারুকার্য তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আলোকসজ্জা। এইসবকিছু দর্শনার্থীরা প্রাণভরে উপভোগ করে। প্রত্যেক বছরই শিল্পীর ভাবনায় উৎকর্ষতার ছোঁয়া থাকে।

কলকাতার বুকে একদিকে যেমন আছে থিমের চাকচিক্য তেমনি আরেকদিকে আছে ঐতিহ্যবাহী সাবেকিয়ানার মুগ্ধতা। এই সাবেকিয়ানার মুগ্ধতা ধরা পড়ে উত্তর কলকাতার বনেদি বাড়ির পুজোগুলোতে। জানবাজার অঞ্চলে রানী রাসমণির বাড়ির পুজো থেকে শুরু করে শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো দেখার জন্য প্রত্যেক বছরই দর্শনার্থীরা ভিড় জমায়। এই ঐতিহ্য আর সবেকিয়ানায় কলকাতার বনেদি বাড়ির পুজোগুলো যেন ইতিহাসের দলিল।

আধুনিকতা এবং সাবেকি এই দুই পুজোই কলকাতা সহ সমগ্র বাংলার প্রত্যেকটি মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ কলকাতায় এসে চোখ ধাঁধানো সব প্যান্ডেলগুলো লাইন দিয়ে দর্শন করে। রাজপথে যেন জনস্রোত বয়ে যায়।

পুজোর পাঁচটা দিন মহানগর সহ গোটা বাংলা এক অন্যরূপ ধারণ করে। সমগ্র বাংলার পুজো আপন বৈচিত্রে সকল দর্শনার্থীদের মনে বিরাজ করে। দুর্গাপূজা সমগ্র মানুষের কাছে এক আদরণীয় উৎসব হয়ে উঠেছে। তাই এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব ইউনেস্কোর তরফ থেকে হেরিটেজের শিরোপায় ভূষিত হয়েছে।

©প্রিয়াঙ্কা ঘোষ 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *