Pradip Bhattacharjee

Pradip Bhattacharjee

সময়ের চোরাবালি

প্রদীপ ভট্টাচার্য

নদীর ধারে ঐ অরণ‍‍্য বসে
দেখে পূর্ণিমার চাঁদ
ছায়াঘেরা জোছনা
সামনের মাঠ পেড়িয়ে
অনেকদূর —।

ফসলের মাঠে ধানের ডগাগুলো
আধোছায়ায় আছে দাঁড়িয়ে
স্পন্দিত বুকে
দৃঢ়তার ত্রিসীমানায় পরিপূর্ণ হতে
অনেক রোদের উষ্ণতাকে গিলেছে
সময়ের চাহিদায়।

আষাঢ় দিনে কোন কোন সময়
বারবার শব্দ নামে
অধিকারের দাবি নিয়ে
মৃত‍্যু বিভিষিকায় কাঁটাবন থেকে
কিছু কাঁটা ছুটে গিয়ে
খোলা আকাশের বুকে বিঁধে।

প্রতিদিনই লোপাট হয় এখানে
স্বপ্নের ঘরবাড়ী
রাখালিয়া সুরে
আশাজাগানিয়া গান শিল্পীর তুলি
অদৃশ‍্য বাঁধে থমকে দাঁড়ায়
সময়ের নদী
নিরবধি আটকে থাকে শ‍্যাওলা
চোরাবালিতে
উৎসবের দিনে।

রাত আরো গভীর হলে
রহস‍্যময় আকাশটা
ছায়া-ঘন অক্ষর তারায় রংগীন
মৃদু বাতাসে খোলে
ইতিহাসের পৃষ্ঠা দোলে শোণিত ধারায়
আবারো জেগে ওঠে
একাত্তরের দিন।

একদিন ফিরে যাবো আমরা

প্রদীপ ভট্টাচার্য

একদিন ফিরে যাবাে হারিয়ে যাবো নিশ্চিত
আমাদের সীমানা থেকে তুমি
আর আমি সেখানে—যেখানে
একদিন দুটি নদী শিখেছে হেঁটে যাওয়া
এই পলির প্রান্তর,শ‍্যামলী বনানী
হয়ে উঠেছে উর্বর ফসলের মাঠ।

তারপর অনেক বর্ষা হবে মুখর ছলো-ছল্
অনেক বসন্তফুল কথা কইবে বৃথা
পৃথিবী চেয়ে থাকবে শূণ‍্যে বছরের পর বছর।
কতো বসন্ত এসে চলে যাবে নিরবে একা
কোন এক কোকিল গাইবে গান শত অনবরতঃ
সেদিনের মত সেই চেনা সুরে অথচ ;
অথচ তুমি-আমি বুঝবোনা তার সরল অর্থ।

একদিন আমাদের নাপেয়ে হতাশ হবে এই শশধর,
আজকের বৃষ্টি বিহীন ছায়াময় এই গোধূলি
কর্ণফুলি তীরে কুড়াবে বকুল ফুল আঁচল ভরে
তাদের ছায়া দিয়ে রাখবে প্রথম জোছনা চাদর
কথা কইবে একা একা বহমান নদীর সাথে যেথা
মাঝরাতের তারা নিঃঝুম জেগে থাকবে মেঘের সাথে।

থাকি লক্ষ‍্য বিহীন

প্রদীপ ভট্টাচার্য

আলোরা একত্র হলে বড় ভালো লাগে
বারবার আসতে ইচ্ছে করে এই সমাগমে
আমার ইচ্ছে করে ম‍্যাকাও পাখির মতো
মেঘের বুকে হরদম রাঙ্গাতে
রংধনুর মতো পরিযায়ী মেঘে
ইচ্ছে করে সাজতে সাজাতে অবয়ব।

আকাশটা বড্ড বেরসিক রংবিহীন
আষাঢ়ের মতো একটু ভিজে রোদে
নিভিয়ে দিতে চায় পৃথিবীর সব আলো
ঘাতক অদৃশ‍্য পোষাকে পরে বিলীন চাদর।

মূলতঃ তার হদিস পেতে যাই ঝরনার কাছে
অরণ‍্যের কাছে গাঁয়ের মেঠো পথে নিঃসীম
দেখি নগরের পরিক্রমা মিশে আছে পীচঢালা পথে
সন্মোহনি চোখ দেখি শামুকের সীমাবদ্ধ কোটরে।

গোলক ধাঁ-ধাঁর চক্করে সব যেন মশগুল
বোঝেনা সৃষ্টির আনন্দ সীমার নিরানন্দে
কল্পনার ফানুস ওড়ায় কতবার ভবিতব‍্য
অহরহঃ কেঁপে ওঠে বুকের ধমনি আগমনি মাসে।

সাগরের পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখে খাঁচার পাখির
আনচান দৃশ‍্য ডানা ঝাপটানোর অসীম বিশ্বাস।
বিরানের মরুভূমি থেকে দেখি একদা উড়ে আসে
ক্ষুধার্ত চিল মরা সবুজের দেশে উঁচু পাহাড়ে বসে
রচনা করে কাঙ্খিত অপসৃষ্টির উপনিষদ অতঃপর
মুক্তিপাগল পাখি চিৎকার করে আকাশে যেতে
আমি পাথর হয়ে ভিড়ি আশাহীন বন্দরে লক্ষ‍্যবিহীন।

তোর অবাধ‍্যতার কাব‍্য

প্রদীপ ভট্টাচার্য

সেদিন তোর বাঁকা চোখে দেখেছিল
অবাধ‍্যতার আগুন তাই কিছু পূরুষ
তোকে পাজড়কোলে পুরে দিল গারদে।

মেঝেতে শুইয়ে দিল তোর তরতাজা শরীর
তারপর দেখালো একচ্ছত্র তার পূরুষত্ব
বিজয়ের শিৎকারে হাসি ভরলো শ্লেষে।

তুই আবার শুয়ে পড়লি পথে পথে লেলিহান
শিখা ছড়িয়ে।

কীছিলো তোর অপরাধ তাতো জানি
তুই বলেছিলি অন্ধকার থেকে আলোতে আসা কথা
তুই বলেছিলি চারদেয়ালের কারাগার নয়
চাই খোলা ঘর—-।

দখিনের জানালা খোলা থাকবে তুই বসবি সেখানে
দেখবি কেমন করে মেঠো পথে তোর প্রিয় আসে
তুই দেখবি খোলা আকাশ তোর দিকে চেয়ে আছে।

তুই চেয়েছিলি তোর আপনজনের বুকের ওম্ পেতে
শারদের সাদা মেঘের ভেলায় ভাসতে যুগপৎ
কোমল হৃদয়ের ভাষা আবেগঘন নিঃশ্বাস।

তুই চেয়েছিলি বইয়ের অক্ষরে অক্ষরে জীবনের
মানে বুঝতে
পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় লিখে রাখতে তোর বিগত কালো
ইতিহাস
আর মৌসুমী সমাজে তোর মূল‍্যস্ফীতির কাব‍্য।

জন্ম ও মৃত‍্যু

এক

জন্ম আর মৃত‍্যু ওরা যেন পাশাপাশি
একই যোগসূত্রে চলাফেরা করে
জন্ম মানে আগমন মৃত‍্যু মানে প্রস্হান
বৃত্তের বাঁকানো সীমাবদ্ধ ক্ষেত্রে।

অথবা যদি এভাবে বলি অতঃপর
জন্ম মানেই মৃত‍্যুর পথে অদৃশ‍্য বস্তুর।

দুই

মৃত‍্যু মানেই সব কিছুর শেষ নয়
মৃত‍্যু মানে কোন কিছুর রূপান্তর
মৃত‍্যু মানে বিশেষ জ্ঞানের রসায়নে
নতুন কিছুর স্বতঃস্ফুর্ত আগমন।

তোমার কৃতকর্মে বলে জন্মান্তর
এজনমে মানুষ তুমি বিগত দিনে কুকুর।

তিন

সাগরের ঢেউয়ের দোলায় ভেসে গিয়ে
তীরে একদা রূপ নিলে জ‍্যান্ত পোকা
তারপর বহু বছর গেলে দেখি তুমি আমি
বানরের বহরে তারো বেশি রূপে ডাকা
জীবন্তকোন মানুষরূপী উন্নত স্বেচ্ছাচারি
আকার ইকারে তোমায় বোঝাবার চেষ্টা করি।

কদিন ফিরে যাবো আমরা

প্রদীপ ভট্টাচার্য

একদিন ফিরে যাবাে হারিয়ে যাবো নিশ্চিত
আমাদের সীমানা থেকে তুমি
আর আমি সেখানে—যেখানে
একদিন দুটি নদী শিখেছে হেঁটে যাওয়া
এই পলির প্রান্তর,শ‍্যামলী বনানী
হয়ে উঠেছে উর্বর ফসলের মাঠ।

তারপর অনেক বর্ষা হবে মুখর ছলো-ছল্
অনেক বসন্তফুল কথা কইবে বৃথা
পৃথিবী চেয়ে থাকবে শূণ‍্যে বছরের পর বছর।
কতো বসন্ত এসে চলে যাবে নিরবে একা
কোন এক কোকিল গাইবে গান শত অনবরতঃ
সেদিনের মত সেই চেনা সুরে অথচ ;
অথচ তুমি-আমি বুঝবোনা তার সরল অর্থ।

একদিন আমাদের নাপেয়ে হতাশ হবে এই শশধর,
আজকের বৃষ্টি বিহীন ছায়াময় এই গোধূলি
কর্ণফুলি তীরে কুড়াবে বকুল ফুল আঁচল ভরে
তাদের ছায়া দিয়ে রাখবে প্রথম জোছনা চাদর
কথা কইবে একা একা বহমান নদীর সাথে যেথা
মাঝরাতের তারা নিঃঝুম জেগে থাকবে মেঘের সাথে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *