
কুমিল্লা,বাংলাদেশ।
প্রদীপ ভট্টাচার্য,
বিবর্তনের ধারাপাত
সামনে যেতে যেতে এলোমেলো অদৃশ্য পথ হাটে
ঠিক কতদূর গেলে পাওয়া যাবে তার প্রান্ত
খয়েরি ধূসর জামা কেবল হেঁটে যাচ্ছে দিগন্ত।
কখনো কখনো অলিতে গলিতে পছন্দ ঘর
সহচর গোলাকার বৈঠা বায় উদরভর্তি হাঙ্গরকোণ
হরতন রুইতন খেলার প্যাঁচে মূল্যহীন দেখায়।
সভ্যতা মুখ খুললে কায়মী কোটরে পালাঘর
অবয়ব ঢাকে শক্ত দেয়াল ভাবে স্বনির্ভর নিশ্চিত
ঝর-তুফানে ভাঙ্গেনা হেলে পড়ে কুড়ে ঘরে।
প্রাচীনতার ঐতিহ্য একসময় ঘোমটা পড়ে রাস্তায়
কথা থাকেনা শরীর ঢাকনার প্রত্যয়ে আমরণ
ভেতরে যাবে বলে ওৎ পেতে থাকে কালো বিড়াল।
সূর্য উঠলে অগোচরে দুধ খাওয়া দেখে ফেলে গেরস্হ
অপদস্ত হয় স্বনির্মিত কাঠামো ভাঙ্গা দুয়ার তখন
হা-করে থাকে নির্বাক বৃক্ষের মত দাঁড়িয়ে উন্মুখ।
সভ্যতার পালাবদল হলে রং-ধনু ওঠে আকাশে
আসলে পৃথিবীর সৃষ্টি কর্তা কে মানুষ এখনো
চিনেনা নির্ঘাত সময়ে সময়ে চোখ বদলায় চোখ।
অণু কবিতা-1
দূর পথের আল্ বেয়ে নেমেছে সর্ষে ক্ষেত
পাশের পথ ঘেঁষে হেঁটে যায় আটপৌড়ে শাড়ী
বুকে তার অসীম তৃষার ভাটার নিঃশ্বাস
আনাগোনা করে নদীর মতন নিরব নদী
সোনালী চুড়ির ঝিলিক দ্যাখে নবান্ন চোখে
কতদিন এমন স্বপ্ন চড়ে তার হয়েছে অগাধ বিশ্বাস।
2)
এইতো সেদিন মাটিতে পড়ে বোবা কাঁদলো সে
প্রথম আলোর সম্ভাবনায় সৃষ্টির বীজ তার পটে
নিরন্তর ফসলের বাগানে স্বপ্ন দ্যাখে বাগানের মালি
প্রতিটি জলের ফোঁটা পড়ে মূলে চোখ থেকে
সতেজ হয় দিনে দিনে শাখা প্রশাখা সবুজ তটে
শুধু ঝরে ঘাম তখন দেখায় তাকে অপরূপ শক্তিশালী।
3)
একটি সাদা সুতোর মাঝে ঢুকে গ্যাছে
গুটি কতেক শব্দ- বাক্যের বোলে অসীমে
সুর ধরে তাল ধরে প্রতি প্রহরে বাজে মধ্যম লয়
একটি অচিন তান তার ছন্দে ছন্দে গেলে সাগরে
বুকের অণু-পরমাণু গুলো সন্মোহিত হয় অনির্বান
গড়ে তোলে কুসুমপুরে অমৃতের আগামী বাগান।
হাওয়ায় সনেট
রাত পোহালেই কী দৃশ্য দেখবো ভাবি
তবলায় সেজে আছে বুকের স্পন্দন!
প্রতিদিন চোখেতে ফোটে আতস বাজি
রাতে নিজেকে আগলানোর গর্ত খুঁজি।
মানুষের কথা বলে অচল হাওয়া
লোভি চোখ দ্যাখে ক্ষত পরষ্পর দেহে
সভার পদ ছেড়ে উঠে যায় স্হপতি
অনর্গল কথার ফোরণ মুখে মুখে।
কঙ্কাল ফ্রেমেও আজকাল রোগ থাকে
লাল চোখের সাবলীল কৌশল থেকে
কবিরাজ লিখেন শত ব্যবস্হা পত্র
তবু রোগী দ্যাখে তার মৃত্যু যত্রতত্র।
সভ্যতার কথা বলে প্রাচীন পুরাণ
অতঃপর লেখেন ধংসের ফরমান।
অণুকবিতা—
পথ – 1
মধ্য গগন থেকে তাকিয়ে আছে সূরুয
মেঠো পথ বেয়ে গ্যাছে সরল রোদ
চিরকুটে লেখা নেই গন্তব্যের ঠিকানা
শুধু হেঁটে চলেছে অন্তবিহীন ক্লান্তিহীন চারণা
ছুটে আসে সবুজ পাতা থেকে কালো ছায়া
আসমান পড়ে মাথায় চোখ তার অমাবশ্যা।
পথ – 2
অচেনা পথের বাঁকে পথ চলে গেছে
পথহারা পথিক খোঁজে পথের শেষে
একটা ঠিকানা নামহীন গোত্রহীন সার্বভৌম
স্বপ্ন হাঁটে স্পন্দিত বুকে ছন্দ তোলে অথচ
লাল নীল পতাকা উড়ে টাইফুনের পিঠে
উড়ে ঘরবাড়ী বাস্তুহারা মানুষ তবু ছবি আঁকে।
পথ 3
একদিন ঘুমিয়ে ছিলো সে সংসার পেতে
কোন এক বাদলা দিনে ওঠে পিচ্ছিল পথে
দ্যাখে চারিদিকে সীমানা প্রাচীর উঠেছে।
বর্তমান থমকে আছে ভবিষ্যত অজানা হাটে
বিকি-কিনি করে দরপতনের আবিষ্কারক ছকে
মূল্যহীন চাহিদা তার বসত গড়ে মাটির গর্তে।
বাংলা লতিফা – আমার আমি
যেতে হলে যাবে তুমি
আটকাবোনা কখনো তোমায় তখন
জানি যাবে আমারি পথ মাড়িয়ে চোখে বর্ষা এনে তুমি
তাকাবে চুপিসারে আমি যখন
স্বেচ্ছায় যাবো দূরে মুক্ত পথের ক্ষত শিশিের আজীবন চুমি
এই আমি লীন হয়ে দেখবো তোকে জানবে শুধু অন্তর্যামী।