POEM and PRABANDHYA

প্রবন্ধ

শিল্পের ক্ষয়
কলমে-সিদ্ধেশ্বর হাটুই
সুখাডালী,/ সারেঙ্গা/বাঁকুড়া/পশ্চিমবঙ্গ

একটা সময় ছিল আজ থেকে পঁয়ত্রিশ বছর পূর্বে গ্রামাঞ্চলে তৎকালীন যারা যুবক-যুবতি ছিল এবং বৃদ্ধ ও বৃদ্ধারাও পাড়ার আটচালা কিম্বা ক্লাবে ফ্রি তে ভিডিও দেখার জন্য ভিড় জমাতেন। অবশ্য তখন সবার বাড়িতে টিভি ছিল না,হাতে গোনা কয়েকটি বাড়িতে টিভি ছিল । কোন কোন গ্রামে দু-একটি ভিডিও হল ছিল। ভিডিও হলে সিনেমা দেখতে গেলে দু-টাকা করে দিয়ে টিকিট কাটলে একটি সিনেমা দেখা যেত। তার জন্য গ্রামাঞ্চলের যুবকেরা বাড়ি বাড়ি চাল আদায় করে সেই চাল বিক্রয় করে ভিডিও সেট ভাড়া করে এনে সারা রাত ধরে দেখত। যে দিন যে পাড়ায় হতো, অন্য পাড়ার লোকজন হাতে একটি টর্চ আর বসার জন্য চট না হলে তালাই নিয়ে গিয়ে বসে পড়ত।
তখন কোন কোন গ্রামে বড় সিনেমা হলও ছিল। কিন্তু টিকিট কাটতে বেশি টাকা লাগবে বলে সমস্ত মানুষ সেখানে দেখতে যেতে পারতো না। যাদের আয় বেশি ছিল তারা যেত। কিন্তু বর্তমানে আর এত আনন্দ করে সকলে মিলে, বা কেউ কারো বাড়িতে গিয়ে আর টিভি দেখে না। বর্তমানে সকলের বাড়িতেই টিভি আছে। নেজেদের বাড়িতেই নিজেরাই দেখে।
একটা সময় ছিল, যাত্রাপালা দেখতে ছোট বড় সব বয়সীরা দল বেঁধে ছুটে যেত। হারিয়ে যাচ্ছে সেই নাটক-যাত্রাপালা। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির হাজার বছর ধরে মিশে থাকা বিনোদনের অন্যতম নিদর্শন ঐ যাত্রাপালা গান বর্তমানে প্রায় আর চোখে পড়ে না। যদিও কোন স্থানে হয় তাও আর সেভাবে হয় না। পূর্বে গ্রামে শীতের সময় এলেই শুরু হয়ে যেত যাত্রাপালা । কত আশা নিয়ে প্রতীক্ষায় থাকতো গ্রামবাসীরা। সারাদিনের পরিশ্রমের পরও রাতে মানুষ ভিড় করত যাত্রাপালার আসরে । কত ধরণের যাত্রাপালা, নাটক হতো। মানুষের লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম ছিল গ্রাম বাংলার যাত্রাপালা। সারা রাত জেগে দর্শকরা উপভোগ করতেন যাত্রাপালা। যাত্রাতে উচ্চ শব্দে চড়া গলায় সংলাপ উচ্চারণ, বেণু, বীণা, মৃদঙ্গ, সেতার, সরোদ, তানপুরা, শানাইয়ের সুরপার্টির তোলা করুণ সুরে ভরে উঠত আসরের চারপাশের পরিবেশ। সামাজিক, পৌরাণিক, ও আধুনিক যত্রাপালা হতো। তখন যাত্রাপালা দেখতে ছোট বড় সব বয়সীরা দল বেঁধে ছুটে যেত।

কিন্তু কালের বিবর্তনে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির যা হাজার বছর ধরে মিশে থাকা বিনোদনের অন্যতম নিদর্শন ঐ যাত্রাপালা গান আর চোখে পড়ে না । গ্রামে যাত্রা হলে শিল্পীরা যারা যাত্রাতে অভিনয় করতেন তারা দু-মাস আগের থেকে মহড়া শুরু করে দিতেন। আজ আর সে সব হয় না। এই শিল্প যেমন অস্তিত্ব সংকটে আছে তেমনই এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত শিল্পীরাও। পূর্বে যারা অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তারা অনেকেই হয়তো মারা গেছেন। বর্তমানে গ্রামে মানুষের মধ্যে এই উদ্যম আর সেভাবে চোখে পড়ে না। সকলেই এখন অন্য কাজে ব্যস্ত থাকেন। হারিয়ে যেতে বসেছে যাত্রাপালা গান।
লোকসংস্কৃতি ও রূপকথার গল্পগুলোকে তুলে ধরার পাশাপাশি যে কোনো সামাজিক , অর্থনিতিক সংকটকে মানুষের মাঝে তুলে ধরত যাত্রাশিল্প । কিন্তু বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতি যাত্রাশিল্প বর্তমানে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। কালের বিবর্তনে প্রায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে আমাদের যাত্রাশিল্প। বর্তমানে টিকিট দিয়ে যে যাত্রাপালা গুলো দেখি তাও আবার খুব কমে গেছে। কিছু কিছু পেশাদারি দল এখনও আছে বলে নাম মাত্র যাত্রাশিল্প টিকে আছে।

বর্তমানে দেখবেন গ্রামে- শহরে সিনেমা অভিনেতাদের যাত্রাপালা। টিকিট দিয়েই দেখতে হয়, কিন্তু মানুষ পুরানো দিনের সেই যত্রাপালার সঙ্গে এর কোন মিল খুঁজে পান না। মানুষ আস্তে আস্তে রঙিন টেলিভিশনে সিনেমা দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। ফলে যাত্রা বিলুপ্তির পথে হাঁটতে শুরু করেছে। জানি না যাত্রা শিল্প আবার প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে কী না !

যদিও কিছু কিছু গ্রামে বা শহরাঞ্চলে কম-বেশি দু একটি করে যাত্রাপালা বা নাটক অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। দু হাজার কুড়ি সালে করোনা মহামারির কারণে তাও বন্ধ হয়ে গেছে। এই শিল্পের বেশ ক্ষয় হয়েছে। তার পর এখনো পর্যন্ত এই শিল্প ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। করোনার সময় থেকে মানুষকে আরো বেশি গৃহবন্দ থাকার অভ্যেসটাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। শিল্পীরা তখন থেকে অনেকেই অভিনয়ের কাজকর্ম ছেড়ে, রোজগারের আশায় অন্য কাজে চলে গেছেন। সেখান থেকে কেউ ফিরে এসেছেন, আবার অনেকেই অন্য কাজে যুক্ত রয়ে গেছেন।

বর্তমানে বিনোদনের অনেক আধুনিক মাধ্যমের প্রবর্তন এবং দর্শক-শ্রোতাদের রুচি পরিবর্তনের কারণে নাটক ও যাত্রাপালার চাহিদা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু বর্তমানে যাত্রাপালা এবং নাটকের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য কিছু কিছু পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে যাত্রার বিষয়গত ও গুণগত অনেক রূপান্তর ঘটানো হয়েছে। বর্তমানে ঐতিহাসিক ও পৌরাণিক বিষয়ের পাশাপাশি সামাজিক ও সমকালীন বিষয়ভিত্তিক বা রোমান্টিক এবং রাজনীতি ও সাহিত্যনির্ভর যাত্রাও অভিনীত হচ্ছে। আধুনিক যাত্রাশিল্পে অভিনয়, নৃত্য ও সঙ্গীতের সঙ্গে সঙ্গে বাচনভঙ্গি, পোশাক-পরিচ্ছদ, বাদ্যযন্ত্র, সাজসজ্জা, মঞ্চ, আলোকসজ্জা ও পরিবেশসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর প্রতিও দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে।

আশা তো থাকবেই, পূর্বের ন্যায় আবার যেন নাটক ও যাত্রাশিল্প মানুষ বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন। এবং এটাও আশা করব যাত্রাশিল্প বা নাটক শিল্পের সঙ্গে যারা যুক্ত তারা যেন মানুষের বা যুগের চাহিদা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে এগিয়ে যান। তাহলেই দেখবেন নাটক ও যাত্রাশিল্প আবার হয়তো প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে ।

এই যদি হয় ভালোবাসা
কলমে-সিদ্ধেশ্বর হাটুই
সুখাডালী/সারেঙ্গা/বাঁকুড়া/পশ্চিমবঙ্গ

ভালো কী বেসেছিলে কাউকে কভু
দেখেছিলে তার মুখ পানে চেয়ে ?
তার চোখে তুমি কী দেখেছিলে
ভালোলাগার দাগ, ভালোবাসার চিহ্ন ?
তোমরা ….ভালোবেসে থাকো যদি
কেন যন্ত্রণা আসে নিরবধি ।
কেমনে সইবে বলো এত লাঞ্ছনা !

ভালোবাসা যদি সত্যি হয়
তা শুধু কী যাতনা ময়, তারেই কী
ভালোবেসে ভালোবাসা কয় ?
প্রেম তো থাকে না বেঁচে দীর্ঘ সময়
মরে যায় পাওয়ার শেষে,
বলো কোথায় রয়েছে প্রেম অমর হয়ে ?
প্রেমেতে যে আছে জ্বালা
কে পারিবে সইতে তাহা, কে আছে
কোথায় মহান কোন জনা ?

হৃদয়ে হৃদয়ের স্পর্শ
মনেতে মনেতে মিল, থাকে কতটা সময় ?
তাসের ঘরের দেওয়াল ঠুনকো,
একটুতেই এই আছে …এই নেই
তবে কিসের আশায় ও দু- বুক বাঁধে ?
শুধু কী দেহের আশায় প্রাণ কাঁদে !

এই যদি হয় ভালোবাসা, বলো
কী আছে তার দাম ?
সত্য ভালো বেসে ছিল যারা
পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে তারা।
ও পারেতে ভালোবেসে কাটাবে জীবন,
তারা চলে যায়…সেই আশায়।
পৃথিবীতে ভালোবাসা, বৃথা কর এই আশা
দেখিবে যা ভালোবাসা, দু-দিনের মেলামেশা,
এর বেশি টিকে না ভালো বাসাবাসি।

তুমি কী দেখেছো… যারে তুমি দিয়েছো মন
তোমার বিপদে সে দেবে তার জীবন ?
তাই যদি নাই হয়, ভালোবাসা কেমনে হয় !
তুমি একা সেও একা, ভালোবাসার
প্রলেপ মাখা, এই জীবনে কেউ কারো নয় !
হাতে হাত ধরে ক-দিন হেঁটেছিলে পথ
তারপর ভুলে যাবে, বদলাবেই মত ।
এতো নয় ভালোবাসা, এতো নয় জীবন
প্রিয় তুমি একা ….সেও একা
একা একা ………দেখছো এ ভুবন।

স্বার্থের বেড়াজালে জড়ালে গো বন্ধু
তাতে কী আর ভালোবাসা রয়,
সকলে দেখিয়া তারে ভালোবাসা কয় !
ভালোবাসা দুটি হৃদয়ের মিলন,
সে কী বেঁচে রয়…ভালোবাসা হয় ?
বলো………….কেমনে সে রয় !

PHATO.jpeg

SIDDHESWAR HATUI

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *