Nikhilranjan Guha

       গতবার পুজোটা তাঁর ভালো কাটেনি । শরতের আকাশে আষাঢ়ের ঘন কালোমেঘ দেখা দিলে যেমন পৃথিবী পালটে যায়, অন্ধকার নেমে আসে, মনের আলো শুষে নেয়, দেবুরও যেন ঠিক তাই হয়েছিল । ভাঙাচোরা মন নিয়ে সে তখন বিধ্বস্ত  । একটা ফোন যেন তাঁর জীবনের ছন্দটাই কেটে দিয়েছিল । সে আগ বাড়িয়ে সুনিপাকে এই নিয়ে কিছু বলতে চায়নি । পাছে সে বিড়ম্বনায় পড়ে । সে না চাইলেও সেই ছায়া সুনিপার ওপরেও এসে পড়েছিল । 

সেবার পুজোর দিনগুলি তাঁরও ম্যাড়ম্যাড়ে কেটেছে । এতদিনের সম্পর্ক ! সব কিছুই যেন ওলটপালট হয়ে গেল । চেষ্টা করেও সুনিপা দেবুর মুখ থেকে একটা কথাও বের করতে পারেনি । নাছোড় সুনিপা অবশেষে তার কারণ আবিষ্কার করতে পেরেছিল । সে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিল, মেঘ কেটে সূর্য যখন নিজ তেজে উপস্থিত হয়,চারদিক ঝলমল করে ওঠে,মনের দীপগুলি নিজে থেকেই জ্বলে ওঠে । তাই এসব নিয়ে ভেবে মন খারাপ কোরো না ।  

 কথাটা যেন অক্ষরে অক্ষরে খেটে গেল । এবার সে খুশি । দেবুর এই খুশির সাথে সুনিপার স্বার্থও জড়িত । সংবাদটা শোনার পর নীল আকাশের লক্ষ কোটি তারা যেন রংবেরংযের প্রজাপতির ডানায় ভর করে তাঁকে ঘিরে ধরেছে । স্বপ্নগুলি যেন একে অপরের সাথে ঠোকাঠুকি করছে । 

পাশাপাশি গ্রামেই ওঁদের বাড়ি  । তাঁদের পরিচয়ও তো আর এক-দুদিনের নয় । তবে সেটা তাঁর মায়ের কারণে । সুনিপার মা তাঁর মায়ের মিতা । সেই কারণেই দুই পরিবারের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা । দেবুর বয়স যখন এগারো কী বারো হবে, তখন সুনিপার বয়স খুব বেশি হলে আট কী নয় । ডাক নাম পুতুল । সকলের আদরে তা পুতু  হয়ে দাঁড়াল । পুতুলের মতোই দেখতে । চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে । শুধু চঞ্চল বললে কম বলা হয় । যাকে বলে দস্যি মেয়ে । 

গাছে উঠে পেয়ারা পাড়া, আঁকশি দিয়ে আম পাড়া সবেতেই সে আছে । ছেলেদের সাথে নদীতে গামছা পেতে টলটলে জলে ভেসে বেড়ানো সদা চঞ্চল দারকিনার ঝাঁকের পিছু নেওয়াতেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার । ডাংগুলি খেলা, ঘুড়ি ওড়ানো কোনটাতে সে নেই ? পায়ে যেন চাকা লাগানো । ভয় ডর বলতে যদি কিছু থাকে । বিপরীতে দেবু ছোট বেলা থেকেই কম কথা বলতে ভালোবাসে । ধীর স্থির ।

এই জন্য তাঁকে মস্করাও কম সহ্য করতে হয়নি । সুনিপা আলাপ করতে গেলেও সে তাঁকে এড়িয়ে গিয়েছে । সেটা সঙ্কোচ থেকেও হতে পারে । বয়স বাড়ার সাথে সাথে সুনিপার মেয়েবেলার সেই দস্যিপনা কবে থেকে যে উধাও হয়ে গেল তা সে বলতে পারবে না । হয়তো ছেলেদের সাথে পার্থক্য বোঝার বয়স থেকেই এই পরিবর্তন ।

কলেজে পা রাখার পর দেবু একেবারে পালটে গিয়েছিল ! দেবু তখন যেমন চৌকস তেমনই বুদ্ধিদীপ্ত । সুনিপাও একই কলেজের ছাত্রী । তবে সে কলা বিভাগের । দেবু বিজ্ঞানের ছাত্র । সেই সুনিপার সাথে এই সুনিপাকে মেলানো যায় না । কলেজে নাম লিখিয়েই তাঁর এই বদল যেন রীতিমতো চোখে পড়ার মতো ।

সুনিপাকে তুই চিনিস ? প্রশ্ন করেছিল শাঙ্খ । 

চিনব না কেন । একসময় আমাদের বাড়িতে ওঁদের খুব যাতায়াত ছিল ।

শাঙ্খই  দেবুকে প্রথম বলেছিল, ‘সে মনে হয় তোকে কিছু বলতে চায়’ ।

শাঙ্খকে সে তেমন পাত্তা দেয়নি । তবে তাঁর সারবত্তা যে একেবারেই ছিল না তা নয় । সে নিজেও পরীক্ষা করে দেখেছে তাঁর অফ পিরিয়ডে সুনিপা ক্লাস বাঙ্ক করে নানা ছুতানাতায় ক্যান্টিনে এসে উপস্থিত হয় । তাঁদের মধ্যে যে কথা হত তেমন না । তবে সুনিপার চোখের ভাষা পড়তে দেবুর মন ভুল করেনি । সেই ভাষাই যে কবে প্রেমের ভাষা হয়ে দেবুর মনে জায়গা করে নিয়েছিল তা তাঁর অনুভবে ধরা পড়লেও তাঁর দিনক্ষণ বলা যাবে না ।  সেই দেবুই এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে ।   

  সুনিপার বান্ধবী চন্দ্রমুখীও দেবুর বান্ধবী । সেও বিজ্ঞানের ছাত্রী । সুনিপা আর চন্দ্রমুখীর মধ্যে দেবুকে নিয়ে একটা টানাপোড়েন অনেকদিন ধরেই চলছিল । তাঁর সাথে দেবুর মেলামেশাও ছিল চোখে লাগার মতো । সুনিপাকে দোষ দেওয়া যায় না । তাঁর মেয়ে মনে তা অসহ্য হয়ে উঠেছিল । চন্দ্রমুখী যেমন প্রাণচঞ্চল তেমনই মেধাবী এবং সপ্রতিভ । সুন্দরীও বটে । সুনিপার বিপরীত ।  দেবু, চন্দ্রমুখীকে ভালো বন্ধু হিসেবেই দেখে এসেছে । তবে সেই বন্ধুত্বকে অনেকেই ভালোবাসা ধরে নিয়েছিল । এই ভুল চন্দ্রমুখীও করেছিল । 

তা দূর করতে একসময় দেবুকেই এগিয়ে আসতে হয়েছে । ঘনিষ্ঠদের নিয়ে একটা টি-পার্টিতে সে তা পরিষ্কার করে দিয়ে বলেছিল, ‘সুনিপার সাথেই সে গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছে’ । এই ঘোষণার পর বেশ ক’দিন চন্দ্রমুখীকে কলেজে দেখা যায়নি । সুনিপার বাড়ি থেকেও চাপ আসছিল । দেবু ছাত্র হিসেবে কোনওদিনই খারাপ ছিল না । স্কুলেও তাঁর নামডাক ছিল ।

হরির লুঠের বাজারে তাঁর নম্বর অনেকের থেকেই এগিয়ে । তবে তাই দিয়ে তাঁর মেধা বিচার করলে ভুল হবে । লেখাপড়ায় সত্যি তাঁর কোনও ফাঁকি ছিল না । মাস্টার্স শেষ করে যেখেনেই সে চাকরির পরীক্ষা দিয়েছে সেখানেই সাক্ষাৎকারের জন্য তাঁর ডাক পড়েছে । সুনিপার মনে পুষে রাখা ছোট ছোট ইচ্ছেগুলিও যেন মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে । তবে ওই টুকুই । এই পর্যন্ত তাঁর ভাগ্যে শিকে ছিঁড়েনি।

   শাঙ্খ তাঁর বন্ধু । শুধু বন্ধু বলা যায় না । যেন একে অপরের ছায়া । সে বলেছিল, ‘স্কুল কলেজে চাকরির আশা ছেড়ে দে । এখন প্রাইমারি থেকে কলেজ, সব জায়গায় রেট ফিস্কড করা আছে । শুনেছি মহেন্দ্রকে আট লাখ দিতে হয়েছে । সে এখন একটা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক’ ।  সাধারণ মানের ছাত্র । এই বাজারেও তাঁর কপালে কোনও পরীক্ষাতেই এক দাগ জোটেনি । সে তাঁদের তিনচার বছরের জুনিয়র । কলা বিভাগে স্নাতক হয়েই তাঁর এই চাকরি । সে কোনও রাজনীতি করে না । তবে রাজনীতি করা তাঁর বন্ধুর ডাকে সে মাঝে মধ্যে মিছিলে পা মেলায়  । ঝাণ্ডা ধরে । সরকারি দলের মিটিংয়েও তাঁকে মাঝে মধ্যে দেখা যায় । তবে এক সময় তাঁর বাবা লাল ঝাণ্ডার সাথে ছিল । সম্মেলনে চাল,ডাল,আনাজপাতিও পাঠাত ।

কখনো কখনো চাঁদাও দিত । এখন দিন পালটেছে । সেও বদলেছে । তাঁর ছেলে সেই মহেন্দ্রই এখন মানুষ তৈরির কারিগর ! ঘটনাটা গোপনই ছিল । আকস্মিক তাঁর জমি বিক্রিকে ঘিরে প্রতিবেশীদের মধ্যে একটা কৌতূহল ছিলই । বিশেষতঃ মহিলাদের সান্ধ্য আড্ডায় এই নিয়ে চর্চা হতে দেখা গিয়েছে । প্রত্যেকের ঘরেই একটা দুটো বেকম্মা ছেলে বা মেয়ে ঘারের ওপর, মনে হয় তাই এই চর্চা । মহেন্দ্রর পিতৃদেবই কারণটা মুখ ফসকে বলে ফেলেছিল । এখন তা মুখে মুখে । শাঙ্খর কথায় একটা হতাশার সুর । হবেই বা না কেন, দেবুর মতো না হলেও তাঁকে সাধারণের মধ্যে ফেলা যায় না । নিজেও সে তাঁর বন্ধু দেবুর সাথেই বিজ্ঞানে মাস্টার্স করেছে ।

     দেবু একটা জিনিস কিছুতেই মেলাতে পারে না । কচিকাঁচাদের যাঁরা শিক্ষা দেবে তাঁরা যদি এই হয় তবে ছাত্রছাত্রীদের সামনে দাঁড়াবে কিভাবে ? একবছর আগের কথা, সেবার সেও খবর পেয়েছিল । সে তা প্রত্যাখ্যান করেছে । তাঁর বন্ধুরা বলেছিল, ভুল করলি । তোর ইনভেস্ট করা উচিত ছিল ।  দেবুদের সামর্থ ছিল না বলা যাবে না । আপত্তিটা দেবুরই ছিল । মায়ের ইচ্ছে থাকলেও ছেলের ইচ্ছেকেই মেনে নিয়েছিলেন তাঁর বাবা দেবব্রত বসু । স্কুলটা উচ্চ মাধ্যমিক । বাড়ির পাশেই স্কুল । তাঁর শিক্ষা এখান থেকেই শুরু । সকালে প্রাথমিক স্কুল চলে ।

মহেন্দ্র সেখানেই এখন পড়ায় । পাঁচিল ঘেঁষা প্রায় স্কুলের সাথেই লাগোয়া একটা চায়ের দোকান । আড্ডা দেবার আদর্শ জায়গা । সকাল থেকেই শুরু হয় । চা নিমকিও বিক্রি হয় । অনেকেই সামনে চা নিয়ে সময় কাটায় । তবে মুখগুলি এক থাকে না । সেদিন দেবুও সেখানে গিয়েছিল । মাঝে মধ্যে সেও যায় । সময় কাটায় । সাথে তাঁর বন্ধুও ছিল । কজনকে দেখা গেল । মনে হয় তাঁদের আড্ডা অনেকক্ষণ ধরেই চলছে । গাঁয়ের লোক । গায়ে গতরে খেটে খাওয়া মানুষ । দিন আনে দিন খায় । তাঁদের কথাগুলি বাতাসে ভেসে আসছিল । একজন বলে উঠল, ‘সচিনের ব্যাটা এই স্কুলে ‘মাস্টর’ হয়ে কামে যোগ দিছে, বুঝছস । তাঁর জন্য তাঁরে জমি ছাড়তি হইছে কয়েক বিঘা’ ।

  আমিও শুনেছি, ‘আট লাখ দিয়ে সে নাকি চাকরিটা কিনেছে’, বলল একজন । একজন বলে উঠল, ‘অখন স্কুলে যত চাকরি দ্যাখবা সবই ট্যাকা দিয়া খরিদ করা । পোলাপানরা কী যে শিখবো তা ভগবানই জানেন । আমাগো সুবোধের ব্যাটার কথাই ধর । তাঁরেও নাকি কেউ খবর দিছিল । সুবোধ হাতও পাতছিল জনাকয়েকের কাছে । অতগুলি ট্যাকা ?  কেউ তাঁরে ভরসা করব ক্যান কও ?  তাঁর তো মাথাগোঁজনেরই ঠাঁই নাই । কিস্তির টোটোর ওপর দুইবেলা দশটা প্যাট । শুনা যায় অনেকে নাকি আবার টাকা দিয়াও ঠগছে । সকলেই কয়,ছাওয়ালটার নাকি মাথা ভালা’  ।

   দেবুর ধারণা শিক্ষকদের সম্পর্কে সকলেরই এখন এই ধারণা । তাঁর গর্ব হয় তাঁর শিক্ষকদের কথা ভেবে । সত্যিই সে ভাগ্যবান । তাঁদের স্নেহ, তাঁদের জ্ঞান এখনো তাঁকে টানে । মাথা উচু করে বাঁচার মন্ত্র সে তাঁদের কাছ থেকেই পেয়েছে । সে ঠিক করেছিল সে তাঁদের পথেই হাঁটবে । এবার সে মত পালটেছে । এই নিয়ে সুনিপার সাথে তাঁর মন কষাকষিও হয়েছে । দেবু তাঁর সিদ্ধান্তে অটল । সুনিপা তাঁকে বোঝানোর অনেক চেষ্টা করেছে । ফল হয়নি’ ।

  সে উত্তর দিয়ে বলেছিল, ‘ সেটা বড় কথা না, মানুষ কী ভাবছে সেটাই বড় । এই গ্লানি নিয়ে আর যাই হোক এই পেশায় আসা যায় না । এতগুলি দিন তো অপেক্ষা করলে । কিছু একটা ঠিক জুটে যাবে ’ । সুনিপার তা নিয়ে সন্দেহ ছিল না । তবে তাঁর পক্ষে অপেক্ষা করা সত্যিই কঠিন হয়ে উঠেছিল । গ্রামে এই নিয়ে কথা শুরু হয়েছে । এতদিনের সম্পর্কের পরিণতির দাবি নিয়ে সেও এখন দেবুর মুখোমুখি ।

  একটা খবরই যেন পরিবেশটাইকে পালটে দিল । কবে পরীক্ষা দিয়েছিল তা দেবুও ঠিক মনে করতে উঠতে পারে না । সেটা তাঁর মাথা থেকে একেবারেই উড়ে গিয়েছিল । পোস্টালে একটা চিঠিটা হাতে পড়তেই সবটা যেন চোখের সামনে ভেসে উঠল । চাকরিটা মন্দ না । বেতনও ভালো । তবে মা বাবাকে ছেড়ে থাকতে হবে এই যা । দেবুর পিতৃদেব দেব্ব্রত বসু খুশি । ছেলেকে নিয়ে তাঁর অহংটা যেন এবার খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসল ।

  বাড়িতে খুশির হাওয়া । ব্যস্ততাও দেখা দিয়েছে । একটা হইহই ব্যাপার । অনেকদিন পর সুনিপার মায়ের যাতায়াতও বেড়ে গেল । দুই মিতার মুখেই তৃপ্তির হাসি । ছেলের বিয়ে বলে কথা ! দেব্ব্রত বাবুরও ব্যস্ততা বেড়েছে । অনেক দিন পর বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান হচ্ছে । তিনি কোনও খামতি রাখতে রাজি নন । দেবু বাবাকে বলেছিল, ‘বয়স হয়েছে, বেশি চাপ নিও না’ ।

 তাঁর এক ছেলে, এক মেয়ে । মেয়ে এখন পুরোদস্তুর গিন্নি । বাইরে থাকে । দাদার এই বিয়ের নিয়ে সে এতদিন মুখিয়ে ছিল । এই নিয়ে দাদাকে সে কম জ্বালায়নি । হবু বোউদি সুনিপাকেও ছাড়েনি । সেও চলে এসেছে । মায়ের সাথে লেগে পড়েছে । দিনটাও এগিয়ে এল । বিয়েটাও হয়েছিল ধুমধাম করে । আত্মীয় সজনের আগমনে বাড়িটা ভরে উঠল ।  দেবুদের বাড়িটা নেহাত ছোট না । হঠাৎ করেই তা যেন ছোট হয়ে গেল । সেই বিয়েতে শাঙ্খও এসেছিল । বাড়ির ছেলের মতোই কদিন সে প্রাণপাত করেছে । শাঙ্খর বান্ধবী মণিদীপাও ছিল তাঁর সাথে । মণিদীপা সুনিপারও বান্ধবী । দুইজনের মধ্যে রংতামাশাও কম হয়নি সেদিন ।

 মণিদীপা এমনিতে চাপা স্বভাবের মেয়ে । বাড়ির অবস্থা খুব একটা ভালো না । স্বাঙ্খর সাথে তাঁর মন দেওয়া নেওয়া কলেজ থেকেই । তাতে সুনিপারও একটা ভূমিকা ছিল । দেবু তা জানে । 

 বোউভাতে স্বাঙ্খকে না দেখে দেবু বেশ বিরক্ত হয়েছিল । দেবু আশা করেছিল সে একটা দায়িত্ব নেবে । অন্তত তদারকিতে তাঁর একটা ভূমিকা থাকবে । না,তাঁকে পাওয়া যায়নি । এতদিন সে সব কাজে থেকেছে । আগের দিনও এই নিয়ে কথা হয়েছে । তাঁর এই আচরণে সে স্তম্ভিত । কয়েকবার ফোনও করেছে । সে ধরেনি । রাগটা যেন তাঁর বেড়ে গেল । পরে জেনেছে ইচ্ছে করেই সে ফোন রিসিভ পাছে বন্ধুর আনন্দ মাটি হয়ে যায় । সত্যিটা সে লুকোতে পারত না ।  দেবু নিজেই পরের দিন গিয়েছিল তাঁর বাড়িতে ।

মণিদীপা তখন পৃথিবীর আলো বাতাসের ওপর তাঁর সব অধিকার ত্যাগ করে না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছে । জীবনের অনেকগুলি বিষন্ন বসন্ত পার হয়ে আসা মণিদীপা এখন সকলের ধরা ছোঁয়ার বাইরে । ভরা আকাশের তারার ভিড়ে সে এখন জীবন রেখার অপর প্রান্তে মহাশুন্যে লীন হয়ে যাওয়া কায়াহীন মায়া । সুতোকাটা ঘুড়ির মতো আকাশে ভাসমান দিশাহীন নিঃসঙ্গ শ্বাঙ্খকে দেখে দেবু ভেঙে পড়েছিল । তাঁকে ক’দিন থানায় যেতে হয়েছিল । মণিদীপার ভালোবাসার ঘেরাটোপে আগলে রাখা তাঁর একান্ত আপনজনকে পুলিশ স্পর্শ করতে পারেনি । সে একটা চিঠি রেখে গিয়েছিল, যার ছত্রে ছত্রে উঠে এসেছিল হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার ছোঁয়া । সে লিখেছিল;

প্রিয় শ্বাঙ্খ,

আমি নিজেই্ এই পথ বেছে নিলাম । এই ঘটনাতে কারো ভূমিকা নেই । তোমার অসহায়তা আমার কাছে দিন দিন অসহ্য হয়ে উঠছিল । সব ভালোবাসারই একটা দাবি থাকে । পরিণতির দাবি । তোমার চেষ্টার কোনও ত্রুটি ছিল না । সকলের ভাগ্যে সব হয় না । আমিও তাঁদের মধ্যে একজন । এই জীবনে তোমার কাছে যা পেয়েছি তাতেই আমি ধন্য । মানস প্রেমকে আশ্রয় করেই স্বেচ্ছায় বিদায় নিলাম । আমাকে ক্ষমা করে দিও । ভালো থেকো ।

                                             তোমার মণিদীপা

দেবু শ্বাঙ্খর মুখের দিকে তাকাতে পারছিল না । সান্ত্বনা দেবার মতো কীই বা ছিল তাঁর ?

বিহ্বল সুনিপা শাঙ্খর মুখে দিকে তাকিয়ে বলেছিল, ‘মণিদীপা একটা সংসার চেয়েছিল’ ।

ঠিকানা –

[jetpack_subscription_form show_subscribers_total=”false” button_on_newline=”false” custom_font_size=”16px” custom_border_radius=”0″ custom_border_weight=”1″ custom_padding=”15″ custom_spacing=”10″ submit_button_classes=”has-neve-link-color-border-color has-background has-neve-link-color-background-color” email_field_classes=”has-neve-link-color-border-color” show_only_email_and_button=”true” success_message=”Success! An email was just sent to confirm your subscription. Please find the email now and click 'Confirm Follow' to start subscribing.”]

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *