অদ্ভুদ মায়াজাল
মোবারক হোসেন
প্রায় প্রতি দিন কোন না কোন সময়ে মেয়েটির সাথে দেখা হয় আদনানের। কখনো নদীর ঘাটে কখনো রাস্তায় কখনো আবার সামনা সামনি চলার পথে। মেয়েটিকে সে আগে কোন দিন দেখেনি। দেখবেই বা কেমন করে সাত বছর পর আদনান বিদেশ থেকে বাড়ি এসেছে। তাই গ্রামের কোন মেয়েকই সে ভাল করে চিনেনা। তাই এই মেয়েটিকেও সে চিনেনা। তার নামও জানেনা। তার সাথে দেখা হওয়ার সময় মেয়েটি নির্দৃষ্ট একটা দুরত্বে থাকে। অদ্ভুদ ভাবে হাসে।
তার হাসিতে যেন নিবিড় নিরবতা কিন্তু অসম্ভব সুন্দর। চোখের চাহনিতে যেন হাজার কথা জমা করা আর কথাগুলো যেন একান্ত আদনানকেই বলতে চায়। সে সব সময় একাই চলাচল করে আর এমন সময় সামনে পড়ে তখন আর সেখানে থাকেনা। এই অপূর্ব সুন্দর মেয়েটি আদনানের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। সে একমাস হল বাড়ি এসেছে। এর মধ্যে কোন ভাবেই মেয়েটির নাম, বাড়ি কোনটাই জানতে পারেনি। অথচ প্রতিদিন কোন না কোন ভাবে তাদের দেখা হয়।
আদনানের মনে একটা উপায় উকি দিল। সে ভাবলো মেয়েটি নিশ্চয় আমাদের গ্রামের মেয়ে, সুতারাং গ্রামের প্রত্যেকটি ঘরে খুজ নিতে শুরু করলো। অনেক দিন পরে বিদেশ থেকে এসেছে বলে লোকজন তাদের বাড়ি গেলে কেউ কিছু বলেনা। বসতে দেয়, বিদেশে কি করে, কত টাকা বেতন পায় এসব জানতে চায়।
সুযোগ মত আদনানও তাদের ছেলে মেয়ে, পারিবারিক পরিচয় জানতে চায়। প্রতিদিন তো আর এসব করা যায়না, তার তো অনেক কাজও থাকে; এভাবে আরও একমাস কেটে গেল কিছুতেই মেয়েটির পরিচয় জানা গেলনা।
একদিন নদীর পাড়ে বসে মেয়েটির এমন আচরনের কথা ভাবছে আদনান। এমন সময় তার পিছনে অনেক গুলি কাচের চুড়ি ভাঙ্গার মত আওয়াজ হল। পিছু তাকাতেই সে দেখলো সেই মেয়েটি অদ্ভুদ ভঙ্গিমায় হাসছে আর তার হাসিতেই যেন কাচের চুড়ি ভেঙ্গে খান খান হচ্ছে।আদনানের বুকের মধ্যে ভয় এবং আনন্দ এক সঙ্গে খেলা করে উঠলো।
সে কিছু বলার আগেই মেয়েটি বলে উঠলো আমার জন্য আপনি অনেক কষ্ট করেছেন। আমাকে হন্যে হয়ে খুজেছেন। আপনাকে আর কষ্ট দিতে চাইনা। আমার নাম নিশি।গ্রামের শেষ মাথায় যে ছোট বাড়িটায় আপনি গরিব অবহেলা করে যাননি আমি সেই বাড়ির রহমত আলির মেয়ে।
নাটকীয় ভঙ্গিমায় কথাগুলো শেষ করে আবার সেই অদ্ভুদ হাসি হাসতে হাসতে সে সামনের দিকে হাটতে লাগলো। আদনান কিছু বলার জন্য তার পিছু নিতে চাইলো কিন্তু কি এক মায়াবি মােহ তাকে সেখানেই বসিয়ে রাখলো।যখন তার ভাবনার মোহ কাটলো তখন আর মেয়টিকে আশে পাশে কোথাও দেখা গেলনা।