Mousumi Sarkar

বিশ্বাস দা
মৌসুমী সরকার, সমাজতত্ত্বে এম. এ.

পাড়াতে হৈমন্তীদির প্রবল দাপট, তিনি এক উনিভার্সিটির একেবারে হেড অফ ডিপার্টমেন্ট । গাড়ি তে আসা যাওয়া করেন, বিশাল বাড়ি, আর দুটি কাজের মহিলা নিয়ে একাই থাকেন, বয়স বাষট্টি, উনিভার্সিটি তে সারা দিন বাস্ত থাকেন, নানান কাজে, কাজ ছাড়া উনি নাকি থাকতেই পারেন না! উনি দুই বারের ডিভোর্সি, নিন্দুকেরা বলে, কারো সাথে নাকি ওনার বনে না, উনিভার্সিটি তেওঁ ঠিক পড়ান না, উনি আসলে পুরুষ বিদ্ধেষী, তা এহেন হৈমন্তীদি পাড়া তে একটি নারী কল্যাণ কেন্দ্র খুলেছেন, মহিলাদের উন্নতির জন্য, সেলাই শেখানো হয়, মহিলাদের অনেক রকম হাতের কাজ ও শেখানো হয়, আর যে যে মহিলারা পড়তে ইচ্ছুক, নানান বাধাতে যাদের পড়া হয় নি, তাদের পড়ানোর ব্যবস্থা ও আছে ।

আমি ওই পাড়াতে থাকি, অবসর করেছি কিছুদিন হলো স্কুল থেকে, আমাকে ও উনি খুব বলেছেন, বয়স্ক দের পড়াতে, তা আমার বেশ সময় কেটে যায়, সন্ধা সাত তা থেকে নয়টা, এই কাজে । মেয়ে দের সেলাই হাতের কাজের দেখভাল আরো তিন মহিলা করেন, আমি রবি বাবু আর বিশ্বাস দা পড়ানো কাজে থাকি, তা আমাদের বয়স্ক মহিলা ছাত্রী গোটা পঁচিশ প্রায়, বিশ্বাস দা রোজ আসেন। উনি ও ব্যাঙ্ক এ ছিলেন, অবসর নিয়েছেন, অনেক দিন, বিশ্বাস দা কিন্তু রোজ পৌনে নয় টা বাজলেই চলে যান, সেদিন বেশ জোর বৃষ্টি হয়েছে বাইরে পড়ুয়া এসেছে কম ,বিশ্বাস দা কথা কম বলেন চিরকাল, ওনার ছেলেরা শুনেছি বাইরে থাকে, আর কিছু জানি না ।

পোনে নয়টায় বিশ্বাস দা চলে গেলেন, হৈমন্তী দি আছেন আজ, কাজের মেয়ে আরতি কে চা করতে বলে উনি শুরু করলেন নানান কথা, মূলত সব পুরুষই খারাপ, সুবিধাবাদী, চোর, এমন কি দুশ্চরিত্র! একপেশে কথা উনি বেশ দাপটের সাথে বব কাট চুল দুলিয়ে আর হাইহিল পরে টক টক করে বলে চলেছেন । আমি কিছু বলিনি, শুনছি ওনার কথা, পাশের রবি বাবু ও ব্যাংকে ছিলেন, বিশ্বাস দার বন্ধু বোধ হয় অনেক দিনের । রবি বাবু হঠাৎ বললেন ”দিদি, আপনি যে এমন বলছেন, আপনি খারাপ দিক টাই দেখে ছেন চিরকাল পুরুষদের, জানেন, এই বিশ্বাস দা রোজ ঠিক সময়ে কেন বাড়ি যান !” “ কেন আবার, খেতে, সময়ে !”, “ না !ওনার বৌ তিরিশ বছর ধরে মানসিক ভার সাম্য হারিয়েছেন! ওনার নিজের ভাই কে আতঙ্ক বাদী দের হাতে মরতে দেখে, বিশ্বাস দা সময়ে বাড়ি যান ওনার ওষুধ দিতে,ওনাকে খাওয়াতেও ।

বৌদি অবশ্য সমস্যা কিছু করেন না শুধু চিনতে পারেন না, কাউকে, নিজের স্বামী কে ছাড়া । দুটি ছেলে ওনাদের, একজন ডাক্তার, একজন ব্যাংকে আছে, তারাও মা বাবার যথেষ্ট দেখভাল করে ।” হৈমন্তীর মুখটা কেমন যেন হয়ে গেছে, আরতির চা বোধ হয় খারাপ লাগছে, আমার তো দিব্ব্যি লাগলো চা, বৃষ্টি কমেছে, বাড়ি যাবো, বয়স্ক মহিলাটি আবার পড়া দেখাতে এসেছে, সাহিত্য সম্রাটের কপাল কুন্ডলা, পড়া হচ্ছিলো, সেই নবকুমারের, জায়গাতে ছিলাম,, সে আবার জোরে পড়তে লাগলো ,”তুমি অধম, তা বলিয়া আমি উত্তম না হইবো কেন !”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *