বিবেক
মৌসুমী সরকার
ছেলে থাকে ছাত্রাবাসে, ইন্জিনিয়ারিং পড়ে। এই আঠেরো বছর এ বাড়ি ছেড়েছে সে, তার মা কনকের ভারী মন খারাপ, একমাত্র সন্তান, তার তাই মাসে একদিনও না দেখতে পেলে খুব কষ্ট হয়, কনকের মনে। মাত্র আধ ঘন্টা দেখার জন্য তাকে প্রায় ট্রেন বাস মিলিয়ে নয় ঘন্টা জার্নি করতে হয়, কনক তাই করে ভোর পাঁচটায় বেরোয়, ট্রেনে লাগে তিন ঘন্টা, বাসে দেড় ঘন্টা। সেদিন, ফেরার পথে ট্রেনে খুব ভিড়, বেশি ক্ষণ বসতে পায়নি সে, বাসেও উঠে দেখে প্রচন্ড ভিড়।
আধ ঘন্টা মতো সে দাঁড়িয়ে আছে, তারপর এক মহিলা উঠে গেলে সে বসবে, সেই মতোই সে দাঁড়িয়ে। কিন্তু একটা গন্ডগোল! আগে থেকেই সে খেয়াল করেছে, একটি লোক, যে কিনা পরে উঠেছে ঠিক কায়েদা করে তার ওই সিট্ এর দিকেই এগিয়ে এসেছে, মুখে তার সুমধুর আলোচনাও চলছে, আর এক জনের সাথে, কোন এক অফিসার এর আদ্দ শ্রাদ্ধ চলছে দুজনের, “বুঝলেন মশাই, আমাকে দিয়ে কাজ করানো অত সহজ নয়, ঠিক বেরিয়ে এসেছি, ফাঁকি দিয়ে“, দুজনের কত হাসি, তার কানে আসে, এবং কনক দেখতে পেলো, সেই সিট্ টি খালি হওয়া মাত্র ওই লোকটি বসে পড়লো।
কনক প্রতিবাদ করলো, উল্টে শুনলো সিট্ এ তার নাম লেখা নেই, ওখানে বসাটা ওনার ঠিক কাজ হয়েছে, সঙ্গী লোকটিও একই কথা বললো। কনক এর পায়ে একটা যন্ত্রনা হয়, বেশিক্ষন দাঁড়ালে, কিন্তু কি করা যাবে? কারো কোনো প্রতিবাদ নেই, বাস ছুটে চলেছে। এই বার কনকের সামনে এক মহিলা বসে ছিল, একটি ছোট্ট ছেলের মা সে, সে পুরো ব্যাপারটি খেয়াল করেছে, সে উঠে দাঁড়িয়েছে, ওই ভিড় বাস এ, জোর গলায় প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেছে, ওই লোকটির বিরুদ্ধে গিয়ে, সে কনক কে জোর করে তার সিটে বসিয়েছে, আর লোকটিকে সমানে বকে চলেছে।
মহিলাটির সত্য বলার সাহস দেখে সামনের লোক টি কেমন হয়ে পড়ছে, মিথ্যা কথা আর কতক্ষন চালানো যায়…। তার বাড়ি নামার জায়গা এসে গেছে, সে নেমেও গেল , কিন্তু বাস এ তার হয়ে লড়াই করছে সম্পূর্ণ এক অপরিচিত মহিলা। সন্ধ্যা নামছে, বাড়ি বাড়ি আলো জ্বলে উঠছে। আলো তো মানুষের মনেও আছে, অন্ধকার আছে বলেই আলোর এত দাম। কনকের বাড়ি যেতে আরো দশ মিনিটের হাঁটা রাস্তা, তার আর পায়ে ব্যাথা করছে না, এমন প্রতিবাদের ভাষা, শক্তি, সাহস যদি সবার হয়, পরিবেশটা কেমন হয় সমাজে? একটা ফুরফুরে মন নিয়ে সে আজ বাড়ি ফেরে।