দুই বন্ধু
মৌসুমী সরকার
দীর্ঘ দুই যুগ পর দুই বান্ধবীর দেখা। তারা একসাথে এগারো-বারো, ক্লাসে পড়তো। মাস্টারমশাই এর কাছেও পড়তো। একজন রীতিমতো লেখা পড়া তে ভালো, আরেকজন সাধারণ। অন্য এক বন্ধু সূত্রে তাদের যোগাযোগ হয়েছে। এতদিন পড়ে দেখা হয়ে তাদের গল্প আর ফুরোতেই চায় না। কোন বন্ধু কি করছে কেমন আছে সব, নানান গল্প। স্কুলের পাশে একটা খেলার মাঠ ছিল, আর সেখানে তারা দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে কেমনকরে হটাৎ উল্টে পড়ে গিয়েছিলো, সেই কথা মনে করে দুই বান্ধবীর হাসি আর থামতেই চায় না।
তখন তারা পনের বছরের কিশোরী দুজনেই। সংসার অনভিজ্ঞ সহজ সরল দুটি প্রাণ। কত সময় চলে গেছে, তারা চল্লিশোর্ধ সংসার অভিজ্ঞ মহিলা এখন। তারা দুজনেই পাত্রস্থ হয়েছে, মা হয়েছে সন্তানের। এবার তারা আসে জীবনের গল্পে। গল্পই জীবন? না,জীবনই গল্প তাদের? পড়াতে বেশি ভালো বন্ধুটি জানায়, বারো ক্লাস এর দিদিমনি হবার সুযোগ পেয়েছিলো সে রীতিমতো পরীক্ষা দিয়ে। ইন্টারভিউ সম্পূর্ণ হয়েছিল তার।
স্কুলে যাবার দুদিন আগে জানতে পারে, আর যাবার দরকার নেই। তার চেয়ে অনেক কম যোগ্য তার একজন প্রার্থী, রাজনৈতিক দাদা, কাকা বা মামার চেনা, সে স্কুলে যোগদান করেছে । আর এক জন জানায় তার পরিবারের কিছু বিশ্বাসঘাতক আত্মীয়দের কথা, যাদের সে অসময়ে আশ্রয় দিয়েছিল, তারা উপকার নিয়ে আড়ালে কত বদনাম করেছে তার। সংসারের আবর্তে পড়ে সহজ দুটি প্রাণ কত জটিলতার সম্মুখীন হয়েছে। মুখোমুখি তারা হাত ধরে বসে থাকে। রবীন্দ্র জন্মমাস, পড়ন্ত বিকেলে কে যেন জোরে আবৃত্তি করছে, “যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু … তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছো ভালো?”