শিরোনাম – সম্পর্কের স্রোতে জীবন গড়ে ওঠে
কলমে – মৌসুমী দে
জীবনের জটিলতা না বুঝলে তো ভুগতেই হবে। তাই শৈশবের নরম আদরের মন যখন প্রথম ভাঙার আওয়াজ অনুভব করে তখন ছোট্ট মন টা বিস্ময়ে তার চেনা গণ্ডিতে বারবার ঘুরে বেড়ায়। ভাবে ভুল হচ্ছে কোথাও হয়তো । না কি সত্যি ।
পিয়া ওর মায়ের কোলে মুখ গুঁজে থাকে কিছুক্ষণ ,এটা অনুভব করতে যে কোলের আঁচলটা চেনাই লাগছে কি না ।
পিয়ার মা পিয়ার মাথায় হাত রেখে বলেন, ” কি রে হঠাৎ গয়নাগাটি, বেনারসি সব ছেড়ে আমার কোলে মুখ গুঁজলি যে । মন খরাপ করছে ?
পিয়ার আজ আইবুড়ো ভাত । মা যত্ন করে পিয়ার পছন্দের সব খাবার নিজে হাতে রান্না করেছেন, না চাইতেই আঁচলে ঝাপসা হয়ে আসা চোখ মুচেছেন সবার অলক্ষ্যে ।
পিয়ার বায়না , মা তুমি কিন্তু ভেটকি পাতুরি আর ডিমের ডালনা টা অবশ্যই নিজে করবে। ছায়া মাসি যেন না করে । আরো কতো বায়না । মেয়ের বায়না রাখতে কোমরের ব্যাথা ভুলে সব রান্না করে পিয়ার মা পিয়ার সামনে আইবুড়ো ভাতের থালা সাজান ।
পিয়াকে নিয়ে এত মাতামাতি পিয়া খুব এনজয় করছিলো। কিন্তু হঠাৎ কোথায় জেনো মনে হতে লাগলো ও সেই আগের পিয়া নেই। কেমন যেনো নিজেকে অচেনা লাগে । সবাই খুব ভালোবাসছে, আদর করছে যেনো নবমীর রাত , দুর্গা মা চলে যাবেন সবাই দুঃখী মনটাকে সাজ গোজ , ভালো ভালো খাওয়া দাওয়া দিয়ে যেনো ভুলে থাকতে চায় , ছেড়ে তো দিতেই হবে , যতক্ষণ মা আছেন আনন্দ করে নিই। পরের দিন বিসর্জন । সব সাজ , ফুল মালা, এতদিনের এতো আয়োজন সব জলে চলে যাবে ।
পিয়ার বুকটা ধড়াস করে ওঠে । রাত পোহালেই বিয়ে। একটা পরিবার যেখানে জন্ম থেকে ছাব্বিশটা বছর নানা ওঠাপড়ায় সামিল ছিল, আপন ছিল, সব্বাই খুব খুব নিজের ছিল, আমার মা শুধুই আমার মা , যে কি না পরিবারের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে তাকে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়িয়েছে।
নানা কম্পিটিটিভ এক্সাম দিতে নিয়ে গেছে , সারা রাত জেগে সুস্থ করেছে, যার কারণে মা দিনের পর দিন বাবার সাথে যুক্তি তর্ক করেছেন, ..পিয়া বোঝে নি বাবার আপত্তি কোথায় ছিল , শুধু মাকে রুখে দাঁড়াতে দেখেছে । তার পাশে থাকতে দেখেছে । আজ পিয়া একটা চাকরি করি বটে টাও কেনো যেনো মনে হচ্ছে আর মা কে আগের মতো কাছে পাবে না।
মা কি পারবে পিয়াকে একদিনও না দেখে ঘুমাতে । একটা স্কুটি কিনে ছিল মা কে পিছনে বসিয়ে
নিয়ে শপিং করতে যেতে সুবিধা হবে বলে। কোমরে ব্যাথা টা কি মায়ের সত্যি বেড়েছে না কি তার থেকে দূরত্ব বাড়িয়েছে একটু একটু করে।
মা যেনো আরো শক্ত করে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে রেখেছে আজ পিয়াকে।
পিয়ার মনে হলো কিছু একটা ভাঙছে , একটা কষ্টের দলা গলা অব্দি আটকে আছে । কেনো মন টা বড়ো হয়নি তার । সবার কাছে এসে বড়ো হয়ে গেছে সেই কবেই, কিন্তু মায়ের কাছে তো ছোটই ছিল । মা আমি তো সেই ছোটই আছি , দেখো সেই আগের মতোই আছি। তোমায় ছেড়ে থাকবো কি করে বলো। হঠাৎ বুঝতে পারে পিয়া সে মা কেও আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে । কেউ কাউকে মুখে কিছুই বলছে না ।
জানি না পিয়া এখন কেমন আছে । তার মায়ের সাথে বছরে দুবার দেখা হয়। কাজ কর্ম নিয়ে এমন ভাবেই একটা সংসার জীবন ভেঙে আর একটা সংসার জীবন গড়ে ওঠে ।
——————–++-++++++—–++++
https://www.facebook.com/groups/sahityapatrika/posts/1091705524820021/