Md Rafiul Alam

##সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ##

মহঃ রাফিউল আলম

জীবন অমূল্য।আপনার জীবন নিয়ে খেলার অধিকার আপনাকে কেউ দেয়নি।কারণ আপনি শুধু একা না।আপনার জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে আপনার পরিবার।আপনার মা-বাবা,আপনার স্ত্রী,আপনার সন্তান।তাদের কথা কী একবারও ভাববেন না?তাদের প্রতি কি আপনার এতটুকু দায়বদ্ধতা নেই?
আরে ছাড়ুন সকলের কথা না হয় বাদই দিলাম—-কিন্তু আপনি কি আপনার জীবনকে ভালোবাসেন না?দেখুন তো আয়নার সামনে গিয়ে একবার দাঁড়িয়ে।আরশি নগরের অপর প্রান্তে যে লোকটি দাঁড়িয়ে আছে তার কত পরিপাটি ই না করেছিলেন আপনি একটা সময়।

ধরুন আপনি অমর—বাড়ি থেকে বার হয়েছেন।ছেলের জন্মদিনের গিফট কিনতে।তারপর হয়তো আপনার আর কোনোদিন বাড়ি ফেরায় হল না।কিংবা ধরুন আপনি আকবর।বাড়িতে বৃদ্ধা মা–অন্ধ।পরিবারে রোজগেরে বলতে শুধু আপনিই।বাড়ি ফিরছেন ফুল স্পিডে গাড়ি চালিয়ে।সামনে একটা ট্রাক।তারপর হঠাৎ করে দেখলেন আপনি লাশ কাটা ঘরে…..আপনার বৃদ্ধা মা অসহায়ভাবে পথ চেয়ে বসে আছে।তারপর আপনার মায়ের কী হবে ভেবে দেখেছেন?আপনি এন্টোনিও হতে পারেন।আপনি পরিবারের একমাত্র সন্তান,বিবাহযোগ্যা বোন।আপনার চোখে অনেক স্বপ্ন তাকে ভালো পাত্রস্ত করার।কারণ আপনি যখন ছোট ছিলেন তখন আপনার মা-বাবা মারা গেছে।অনেক কষ্টে বড়ো করেছেন মা-বাবার স্নেহ দিয়ে আপনার সেই ছোট্ট আদরের বোনটিকে।কিন্তু দেখা গেল আপনার ছোট্ট একটা ভুলে আপনার গঙ্গাপ্রাপ্তি হয়ে গেল?তখন কিভাবে বাঁচাবেন আপনার বোনকে সেই লোলুপদৃষ্টিপ্রাপ্ত হাইনাগুলোর হাত থেকে যারা আপনার বোন কে প্রায়ই রাস্তায় উত্যক্ত করতো!
দেখুন তো এই অমর-আকবর-এন্টোনি কে চিনতে পারছেন কিনা?আপনিই নন তো এই চরিত্রগুলোর কোনো একজন?

#নাটকের স্ক্রিপ্ট।
#কর্তব্য/ মহঃ রাফিউল আলম(Md R Alam)

যমরাজ—- চিত্রগুপ্ত—-চিত্রগুপ্ত!ডেকে আনো সেই তিন উজবুক কে।শান্তিতে যে একটু চ্যাট করবো সেটাও হচ্ছে না এই সব মর্তের পাব্লিকদের জন্য।

চিত্রগুপ্ত—-জি হুজুর!কিন্তু একটা মহা মুশকিল দেখা গিয়েছে!

যমরাজ—-মুশকিল!

চিত্রগুপ্ত—-হ্যাঁ।নেটওয়ার্ক প্রবলেম থাকা সত্ত্বেও আপনি যে তিন জন পাবলিক কে আজ তুলে নিয়ে এসেছেন তাদের কারোর-ই আজ মরার ডেট ছিল না।

যমরাজ—যমরাজ কে?তুই না আমি?

চিত্রগুপ্ত—-স্যার আপনি।কিন্তু—

যমরাজ—আমাকে জ্ঞান দিচ্ছিস?যা ওদের নিয়ে আয়—

চিত্রগুপ্ত—-অমর—আকবর—এন্টোনি—-হাজির হো…

অমর—-যমরাজ আপনি কি মানুষ—

যমরাজ—না আমি যমরাজ।

অমর—যে আজকের দিনেই আমাকে উঠিয়ে নিয়ে আসতে হল?আমার 3 বছরের ছেলের আজ জন্মদিন।

যমরাজ—-সেটা কী মরার আগে ভাবা উচিত ছিল না?

অমর—-কিন্তু যমরাজ বাবু আমি কি জানতাম আমার এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে!তাছাড়া আমার একটু তাড়া ছিল তাই গাড়ি ফুল স্পীডে চালাচ্ছিলাম…..
যমরাজ—কিন্তু তোর মাথায় তো হেলমেট ছিল না।

চিত্রগুপ্ত—দেখুন এবার বলবে তারাহুড়োতে হেলমেট পড়তে ভুলে গিয়েছিলাম।অজুহাত—অজুহাত—বুঝলেন কিনা।

যমরাজ—-তুমি কি জানোনা সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফের কথা?

অমর—-শুনেছিলাম টিভি তে।সেদিনও টুকটুক গাড়িতে প্রচার করে বেড়াচ্ছিল পাঁচগ্রাম প্রগতি সংঘের ছেলেরা।আমাকে একটা লিফটলেটও দিয়েছিল।কিন্তু আমি ওটা পড়েই রেখে দিয়েছিলাম।

যমরাজ—বলেই পটল তুলেছিস। তোর ছেলের আজ জন্মদিন।তোর স্ত্রী-সন্তান, তোর মা তোর জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছে তোর বাড়ি ফেরার প্রতীক্ষায়।আর তুই এখন জমালয়ে।তুই কী তোর পরিবারের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য ভুলে গেছিলিস?

অমর—আমায় ক্ষমা করে দিন যমরাজ।শুধু একটিবারের জন্য আমার পরিবারের কাছে যেতে দিন।আর কোনোদিনও আমি অমন বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাবো না।শুধু একটি বার যেতে দিন আপনার দুটো পায়ে পড়ি—-আমি না যেতে পারলে আমার ছেলেটা অনাথ হয়ে যাবে।আমার স্ত্রী হবে বিধবা।মা-বাবার বয়স হয়ে গেছে।আমি ছাড়া আমাদের সংসারে রোজগার করার মতো আর কেউ নেই।

যমরাজ—–সেটা তো হতে পারে না।তোর ভুলের শাস্তি তোর পরিবার পাচ্ছে।তোর একটা ভুলের জন্য আজ এতগুলো লোক পথে বসেছে।তোর ভাবা উচিত ছিল তোর জীবনের সঙ্গে কতগুলো জীবন জড়িয়ে রয়েছে।দ্যাখ একবার লাইভে তোর ছেলের ভবিষ্যৎ—-

(একটা বাচ্চা ছেলে রাস্তায় ভিক্ষা করছে।দুজন পথচারীর কথোপকথন।)
বাচ্চা—-বাবু দুটো টাকা দিন।বাড়িতে মা খুব অসুস্থ।

১ম—কেমন সব মা-বাবা দেখ আজকাল একটা বাচ্চা ছেলেকে পথে নামিয়েছে ভিক্ষা করতে।সত্যি কি যুগকাল এলো রে বাবা।

২য়—-আরে ও তো আমাদের অমরের ছেলে।সত্যিরে মানুষের ভাগ্য কি জিনিস।অমরটা মারা গেল এক্সিডেন্টে।গোটা পরিবারটাকেই পথে বসিয়ে দিয়ে গেল।মা অন্ধ, বাবা পঙ্গু, বাড়িতে চারটে পেট কিভাবে একা হাতে সব কিছু ম্যানেজ করবে বল?তাই এইটুকু বয়সে অমরের ছেলে কে আজ ভিক্ষা করতে বার হতে হয়েছে।

১ম–ও সরি।কিন্তু এর জন্য অমর ই দায়ী বুঝলি। ছেলেটাকে একদিন আমি বলেছিলাম ও বেপরোয়া বাইক যেন না চালায়।উল্টে সেদিন আমাকে খুব অপমান করেছিল।

২য়—-কিন্তু অমরের ভুলের শাস্তি আজ ওর গোটা পরিবার পাচ্ছে।এই অসহায় বাচ্চা ছেলেটাকে দেখলে খুব কষ্ট হয় জানিস।বাড়িতে যৌবনা বিধবা স্ত্রী।অনেক অপবাদ নিয়েও সে তার সংসারের বাকি ৩ টে প্রাণী কে বাঁচানোর জন্য জীবন সংগ্রাম করে যাচ্ছে।

অমর—-বন্ধ করুন এই লাইভ।আমি আর সহ্য করতে পারছিনা যমরাজ।আমাকে শুধু একটিবার সুযোগ দিন আমি জীবনে কোনোদিন আর বেপরোয়া গাড়ি চালাবো না।কিন্তু আমার পরিবারকে এভাবে অনাথ করে দিবেন না….ক্ষমা করুন যমরাজ….আমাকে শুধু একটিবার যেতে দিন…..(কান্নায় ভেঙে পড়ে)
যমরাজ—কিন্তু তোকে কথা দিতে হবে।তুই হেলমেট ব্যবহার করবি।আরো পাঁচজনকে এই বিষয়ে সতর্ক করবি।আর কখনো বেপরোয়া গাড়ি চালাবি না—

চিত্রগুপ্ত—-তাহলে কি হুজুর অমরের হিসেবের খাতাটা বন্ধ করবো?

যমরাজ—-না।ওটা খুলেই রাখ এবার যদি ও একই ভুল করে তাহলে কোনো হিসেব ছাড়াই ওকে সোজা নরকে পাঠিয়ে দিবি।

অমর—-আপনি মহান যমরাজ।এই নাক মলছি, এই আমি কান মলছি আর কোনোদিন এই ভুল হবে না।মর্তে ফিরে গিয়ে আমি এই মহা মন্ত্রই জপ করবো এবং গোটা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে দেব সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ।আপনার জীবন শুধু আপনার একার নয়।আপনার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরও অনেকজনের জীবন।তাই বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে আপনার পরিবারকে পথে বসাবেন না।নিজে বাঁচুন, অপরকে বাঁচতে সাহায্য করুন।

অমরের স্ত্রী—-অমর ওঠ বিছানা ছেড়ে বেলা যে অনেক হলো।

অমর—-আমি কোথায়??(ঘুম থেকে চমকে ওঠে)

অমরের স্ত্রী—আরে তুমি বিছানায়।কিছু দুঃস্বপ্ন দেখেছ নাকি?এত ঘেমে গেছো—

অমর—-যাক বাবা। বাঁচা গেল।এটা স্বপ্ন ছিল।
———০—–//

অমরের এটা হয়তো স্বপ্ন ছিল।কিন্তু আপনাদেরটাও যে স্বপ্ন হবে এমন কোনো কথা নেই।অতএব সাধু সাবধান।আপনার সাবধানতায় এই নাটকের মূল উদ্দেশ্য।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *