Md. Akabbor Ali PK

বলিউডের থ্রি ইডিয়টসের মুভির আমির খান অভিনীত র‌্যাঞ্চো চরিত্রটির নেপথ্যের কাহিনী বিস্তারিত জেনে নিন।

লিখেছেনঃ #প্রভাষক_একাব্বর।

[[ একটা ফেল করা ছাত্রদের স্কুলের গল্প। যে স্কুলে ভর্তি হতে হলে অবশ্যই ম্যাট্রিকে ফেল করতে হবে। তিন-চারবার ফেল করা ছাত্ররা কেউ আজ বিশ্ব সেরা সাংবাদিক, ফিল্মমেকার, স্বনামধন্য উদ্যোক্তা।]]

 

বলিউডের থ্রি ইডিয়টসর মুভির আমির খান অভিনীত

চরিত্রটি মূলত লাদাখের বিজ্ঞানী সোনম ওয়াংচুক এর অনুপ্রেরণায় তৈরী।তাঁকে মাথায় রেখেই তৈরি হয়েছিল ‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমার ফুনশুক ওয়াংডু ওরফে র‌্যাঞ্চো চরিত্রটি।

✓ বিজ্ঞানী ইঞ্জিনিয়ার সোনম ওয়াংচুক–

• বরফের স্তূপ বানানোয় ২০১৬ সালের রোলেক্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।

• জম্মু ও কাশ্মীরের লাদাখে সমাজসেবামূলক কাজের জন্য রমন ম্যাগসেসে পুরস্কার পেয়েছেন।

• শিক্ষাখাতে অবদানের জন্য ভারত সরকারের সম্মাননা অর্জন করেছেন ১৯৯৬ সালে।

• ২০১৪ সালে অর্জন করেছেন UNESCO Chair for Earth Architecture.

• ২০০৮ সালে India-CNN Real Hero পদকসহ আরো অনেক সম্মাননা অর্জন করেছেন।

 

✓ ভিন্ন খবর :

• গীতাঞ্জলি একজন ইঞ্জিনিয়ার,শিক্ষক,নৃত্যশিল্পী

এবং ব্যবসায়ী। সেই গীতাঞ্জলি এখন ওয়াংচুকের সহযাত্রী।বাস্তবের র‌্যাঞ্চোর ভরসা হয়ে উঠতে চাকরি ছেড়ে লাদাখে গীতাঞ্জলি।

 

∆ মূল কাহিনীঃ

 

লাদাখে এমন একটা স্কুল আছে যেখানে কোনো বই- পুস্তক পড়ানো হয়না।সব হাতে কলমে শিখে,বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়।সে চেষ্টায়

সফল‌ও তারা।

স্কুলে ভর্তি হতে হলে অবশ্যই ম্যাট্রিকে ফেল করতে হবে।অনেকেই বলে থাকেন University of Failures. এই স্কুলের ছাত্রদের আশ্চর্য রকমের সব আবিস্কার।ওরা মাটি দিয়ে এমনভাবে স্কুল বানায়,বাইরে যখন মাইনাস ১৫ডিগ্রি সে. ভিতরে তখন প্লাস ১৫ডিগ্রি সে. থাকবে।

তিন-চারবার ফেল করা ছাত্ররা কেউ আজ বিশ্ব সেরা সাংবাদিক,ফিল্মমেকার,স্বনামধন্য উদ্যোক্তা।

 

এমনকি লাদাখের শিক্ষামন্ত্রী যে ম্যাট্রিকে পাঁচবার ফেল করে পরেThe Himalayan Institute of Alternatives এই স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন।

এই স্কুলের বড় সাজা হলো এক সপ্তাহের স্কুল ছুটি! স্কুলটা একটা দেশের মতো। ছাত্ররা স্কুল পরিচালনা করে,নেতৃত্ব তৈরি করে,রেডিও স্টেশন সম্প্রচার করে,নিউজপেপার ছাপায়।এমনকি নিজেরাই চাষ

করে উৎপন্ন করে নিজেদের খাবার।

 

নিজেদের দ্বারা সৃষ্ট উপাত্ত সমূহগুলোকে বাজারে বিক্রি করা অর্থ দিয়ে বছর শেষে ঘুরতে যায়। যার মাধ্যমে তাদের অর্থনীতি,ভূগোল,জীববিজ্ঞান শেখা হয়।শিক্ষা নিয়ে রেভ্যুলেসন করে সফল হওয়া সোনম ওয়াংচুকের স্বপ্ন একটি ইউনিভার্সিটি করা।

যে ভার্সিটির নাম হবে ‘Doers University’,

যেখানে কাজ করা হবে আবিস্কার নিয়ে কিন্তু কোন পড়ালেখা হবেনা।এ লক্ষ্যে লাদাখে ৬৫ হেক্টর জমির উপর একটি বিকল্প বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করছেন তিনি।

 

✓ বরফের স্তূপ বানিয়ে গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড পেলেন বাস্তবের ফুংসু “সোনম ওয়াংচুক”।

 

ফুংসু ওয়াংরুর’কে মনে নেই! থ্রি ইডিয়টস‌্-র সেই ইডিয়ট,যে কি না প্রথাগত শিক্ষার বাইয়ে গিয়ে বিজ্ঞানের খেলায় ভরিয়ে দিয়েছিলেন একটা গোটা গ্রাম।যে চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন আমির খান।

 

লাদাখের সেই ফুংসুর বাস্তবে নাম সোনম ওয়াংচুক। তাঁর জীবনের উপরে ভিত্তি করেই থ্রি-ইডিয়টস‌্-এ

ফুংসু ওয়াংরু চরিত্রটি তৈরি।

 

বরফের স্তূপের মাধ্যমে কৃত্রিম হিমবাহ তৈরি করে তিনি তাক লাগিয়ে দেন সারা দুনিয়াকে। লাদাখ মরুভূমিতে জলের সমস্যা মেটাতেই ছিল তাঁর এই আবিষ্কার।

জলের যোগানের জন্য বরফের স্তূপ বানানোয় ২০১৬ সালের রোলেক্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ওয়াংচুক।

 

✓ ম্যাগসেসে পেয়েছেন রিয়েল লাইফের র‌্যাঞ্চো “সোনম ওয়াংচুক”।

 

লাদাখের ইঞ্জিনিয়ার সোনম ওয়াংচুকের জীবনের অনুপ্রেরণাতেই তৈরি হয়েছিল ‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমার ফুনশুক ওয়াংডু চরিত্রটি।বাস্তবের সোনম অবশ্য ছাড়িয়ে গিয়েছেন রিয়েল লাইফকেও।

জম্মু ও কাশ্মীরের লাদাখে সমাজসেবামূলক কাজের জন্য রমন ম্যাগসেসে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

এশিয়ার দেশগুলিতে সামাজিক উন্নয়নের জন্য যাঁরা কাজ করেন,তাঁদেরকে সম্মান জানাতেই দেওয়া হয় ম্যাগসেসে পুরস্কার।

এই পুরস্কারটি চালু হয় ১৯৫৭ সালে।

 

বলিউডের থ্রি ইডিয়টসর শেষাংশে বিজ্ঞানী ফুংসুখ ওয়াংড়ুর আবিষ্কারগুলো দেখে অবাক হননি এমন দর্শক কমই আছেন।

 

✓ কে এই সোনম ওয়াংচুক ?

 

সোনম ওয়াংচুক,নামটা অপরিচিত হলেও লাদাখবাসীর জন্য মোটেও অপরিচিত নয়।

১৯৬৬ সালের ১লা সেপ্টেম্বর লাদাখের উলে তকপোতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।মূলত লাদাখে সোনম একজন বিজ্ঞানী,প্রকৌশলী ও শিক্ষা সংস্কারক হিসেবে পরিচিত

ও জনপ্রিয়।

সোনম ওয়াংচুকের বাবা সোনম ওয়াংগ্যাল ভারত সরকারের মন্ত্রী হওয়ায় তার ছোটকাল কাটে শ্রীনগরে। ওইখানেই তিনি স্কুল শুরু করেন,কিন্তু সম্পুর্ণ ভিন্ন ভাষার স্কুল হওয়ায় তিনি কিছুই বুঝতে পারতেন না। তাছাড়া আর দশটা ছেলেদের তুলনায় একটু ভিন্ন হওয়ায় তার স্কুলের শিক্ষকরা তাকে নির্বোধ ভাবতো!

 

কাশ্মীরের দুঃসহ স্মৃতি থেকে মুক্তি দিতে তাকে দিল্লীতে সরকারি আবাসিক স্কুলে পাঠানো হয়।সেখানকার শিক্ষকদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন বিজ্ঞানী ওয়াংচুক।

 

১৯৮৭ সালে তিনি শ্রীনগর ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ব্যচেলর ডিগ্রি অর্জন করে চলে যান জন্মস্থান লাদাখে। সেখানে শিক্ষা সংস্কারের উদ্দেশ্যে তিনি Students’ Educational and Cultural Movement of Ladakh (SECMOL) প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৮৮ সালে।

এরপর থেকেই সোনম ওয়াংচুক নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন লাদাখের শিক্ষা ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নে।

২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর শিক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা।

২০১৩ সাল থেকে তিনি তার Ice Stupas প্রজেক্ট এর কাজ শুরু করেন।

সেই সোনম ওয়াংচুক তার উদ্ভাবনী কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন মর্যাদাপূর্ণ Rolex Awards for Enterprise 2016।

মুলত “Who have reshaped the world with their innovative thinking and dynamism” এই স্লোগানের উপর ভিত্তি করেই এই পুরষ্কার প্রদান করা হয়।সোনম ওয়াংচুক তার “Ice Stupas” প্রজেক্ট এর মাধ্যমে এবছরের সেরা পাঁচজন উদ্ভাবকের একজন নির্বাচিত হয়েছেন।

 

সোনম ওয়াংচুক পশ্চিম হিমালয় অঞ্চলের খরা এলাকার চাষাবাদের পানির সমস্যা দূর করতে

দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করে আসছিলেন।

এই চেষ্টার ফসল এই “Ice Stupas” প্রজেক্ট।

 

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৫০০ মিটার উচ্চতায় লাদাখ অঞ্চলে,বিশেষ করে কুনলুন থেকে বৃহত্তর হিমালয় পার্বত্য এলাকায় এপ্রিল-মে মাসে তীব্র পানির সংকট থাকে।আর এই সময়টাই মূলত ফসল ফলানোর সময়। লাদাখের অপর এক প্রকৌশলী চেভাং নোরফেল এর একটি পরীক্ষামূলক কাজ থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে সোনম ওয়াংচুক তার “Ice Stupas” প্রজেক্ট এর ধারণা সামনে নিয়ে আসেন।তিনি বুঝতে পারেন হিমালয় অঞ্চলের উচ্চ খরাপ্রবন মালভূমি এলাকায় পানির সমস্যা অতি সহজেই মেটানো যাবে যদি শীতের সময়কার জমাট বাঁধা পানিকে কোনভাবে বরফে পরিণত করে সংরক্ষণ করা যায়।

পদ্ধতিটি ছিলো অতিসাধারণ কিন্তু অত্যন্ত কার্যকরী।

তিনি দেখলেন যে,জমাট পানিকে কোণক আকৃতিতে সাজিয়ে ছোট-ছোট জমাট পানির টিলায় পরিণত করে রাখলে তা খরার সময় ধিরে ধিরে পানির আকারে ক্ষয় হয়ে পানির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখে।

তিনি এর নাম দেন “Ice Stupas” বা বরফ-স্তুপ।

 

রোলেক্সের কাছে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সোনম ওয়াংচুক বলেন,রোলেক্স অ্যাওয়ার্ড থেকে পাওয়া ফান্ড তার “Ice Stupas” প্রজেক্ট এর অনেক সহায়তা করবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিপরীতে খরা অঞ্চলে পূনরায় সবুজ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।

 

সম্প্রতি এই উদ্ভাবক রোলেক্সে অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করার জন্য ঘুরে এসেছেন হলিউড থেকে। আর এ সময়কার একটি মজার ঘটনা তুলে ধরেছেন নিজের ফেসবুক পেজের অ্যালবামে- “পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে আয়োজকরা আমাকে একটি হলরুমে ভাষণ দিতে বলেন স্থানীয় লোকজনের উদ্দেশ্যে।

আমি যখন ভাষণ শেষ করে স্টেজ থেকে নেমে আসি, তখন আমাকে জানানো হয় আমার সামনের দর্শক সারিতে বসে ছিলেন হলিউডের নামকরা সব পরিচালক অভিনেতা-অভিনেত্রীরা।যাদের মধ্যে ছিলেন টাইটানিক এর পরিচালক জেমস ক্যামেরন,অভিনেতা ক্রিসপাইন, ডন শিয়াডলের মতো সুপারস্টাররা।তাদের ধারণা ছিলো মঞ্চে ভাষণ দিতে উঠে আমি এত-এত হলিউড সেলিব্রিটি দেখে সারপ্রাইজড হবো। কিন্তু তারা তো জানে না আমি প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা এক ‘ক্ষ্যাতমার্কা’ বিজ্ঞানীমাত্র! তারা ভাবতেও পারেনি যে, আমি বাঘা-বাঘা এতসব সুপারস্টারকে চিনতে পারবো না।”

 

সোনম ওয়াংচুক চেষ্টা করছেন ৩০মিটার উচ্চতার এরকম ২০–২৫ টি “Ice Stupas” তৈরি করতে যা থেকে কয়েক মিলিয়ন লিটার পানির সরবরাহ করা সম্ভব। যা থেকে তিনি আশা প্রকাশ করছেন পার্বত্য লাদাখের খরা এলাকার পানির অভাব অনেকাংশেই পূরণ করা সম্ভব।

শুধুমাত্র প্রত্যন্ত লাদাখে না,তার উদ্ভাবিত Ice Stupas এখন কাজে লাগানো হচ্ছে সুইজারল্যান্ডের মতো উন্নত দেশেও।

 

এছাড়া বর্তমানে তিনি যুবকদের পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীল করে তোলার লক্ষ্যে লাদাখে লাদাখ- বাসীর দানকৃত ৬৫ হেক্টর জমির উপর একটি বিকল্প বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করছেন।এই বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজস্ব প্রাকৃতিক উৎস ব্যবহার করে হিমালয় ও তার আশেপাশের পার্বত্য এলাকাসহ পৃথিবীর সকল পার্বত্য ও মালভূমি এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত উদ্ভূত সমস্যার সমাধান বের করা।

 

শুধু রোলেক্স অ্যাওয়ার্ড নয়,শিক্ষা খাতে অবদানের জন্য ভারত সরকারের সম্মাননা অর্জন করেন ১৯৯৬ সালে, ২০১৪ সালে অর্জন করেন UNESCO Chair for Earth Architecture, ২০০৮ সালে India-CNN Real Hero পদকসহ আরো অনেক সম্মাননা অর্জন করেন।

 

✓ অন্যরকম গল্পঃ

আস্ত একটা জিপ দিয়ে ছাদ বানিয়েছেন ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর সেই ওয়াংড়ু!

 

সেই মাহিন্দ্রা জিপ।

বরফে মোড়া দুর্গম রাস্তা অনায়াসে পেরোনোর সাহস দেখানোর পর এখন সে লাগাতার তুষার ঝড় আর বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচাচ্ছে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে। সেখানকার ছাত্র,শিক্ষক,গবেষকদের।

 

আস্ত একটি জিপ হয়ে উঠেছে লাদাখে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাথার ছাদ! চাকা,ইঞ্জিন-সহ একটি মাহিন্দ্রা জিপই এখন বরফে মোড়া লাদাখের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘হিমালয়ান ইনস্টিটিউট অফ অলটারনেটিভস’-এর মাথার ছাদ।জিপটি বিখ্যাত গাড়ি নির্মাতা সংস্থা মাহিন্দ্রার।হিমালয়ের কোলে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি চালান একই সঙ্গে প্রযুক্তিবিদ,উদ্ভাবক ও শিক্ষক সোনম ওয়াংচুক।

 

লাদাখে বরফে মোড়া রাস্তায় বহু দিন চলার পর সেই মাহিন্দ্রা জিপটি যখন কিছুটা ‘বুড়িয়ে’ গিয়েছিল,তখন তাকে ফেলে না দিয়ে,কাজে লাগানো হয়েছে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাথা বাঁচানোর দায়িত্বে।বোঝানো হয়েছে,কেউই ফেলে দেওয়ার নয়।কেউই পুরোপুরি পরিত্যক্ত হয় না।কাজে লাগানোর ভাবনাটা অন্যভাবে ভাবা হলে, বহু ‘বাতিল’, ‘পরিত্যক্ত’কেও কাজে লাগানো যায়।

এমনকি,তা হতে পারে বৃহত্তর স্বার্থে! বৃহত্তর অর্থেও!

 

ওয়াংচুক লিখেছিলেন,

Dear Mr @anandmahindra the Jeep you tweeted has a lovely story. It was instrumental in educational campaigns in the remotest frontiers of Ladakh… which finally took the matriculation results from 5% to 75%. It served us faithfully between 1997 to 2007 before taking new avatara.

 

— Sonam Wangchuk (@Wangchuk66) December 17, 2018

 

আনন্দ মাহিন্দ্রা লিখেছিলেন,

 

A friend sent these pics from Sonam Wangchuk’s Himalayan Institute of Alternatives,Ladakh.Recycling a Mahindra car into a home roof.A way of life at the Institute, where nothing gets discarded.Well this will compete with our auto-shredding venture but it’s far more creative!

 

— anand mahindra (@anandmahindra) December 14, 2018

 

Sonam you’re absolutely right—that IS a lovely story. How do I find out more about the educational campaign you referred to? And how we can support the campaign if the job is unfinished? @Wangchuk66 @manoj_naandi https://t.co/JgidIlv5qU

 

— anand mahindra (@anandmahindra) December 19, 2018

 

✓ গল্পটা এরকমঃ

 

‘বুড়ো’ মাহিন্দ্রা জিপের হাতে তাঁর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাথা বাঁচানোর ‘জোয়ান’-এর দায়িত্ব তুলে দেওয়ার কথা নিজেই টুইট করে জানিয়েছিলেন সোনম ওয়াংচুক।তার প্রশংসা করে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই টুইট করেন মাহিন্দ্রা সংস্থার চেয়ারম্যান আনন্দ মাহিন্দ্রা। ধন্যবাদ জানিয়ে তার জবাব দিতেও দেরি করেননি ওয়াংচুক।টুইটারে মাহিন্দ্রা আর ওয়াংচুকের সেই ‘বাক্যালাপ’ ভাইরাল হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

 

আনন্দ মাহিন্দ্রা তাঁর টুইটে লেখেন,

‘‘এক বন্ধুর পাঠানো ছবি দেখেই জানিতে পারি,লাদাখে সোনম ওয়াংচুক তাঁর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাদ বানিয়েছেন মাহিন্দ্রা জিপ দিয়ে।কেউই যে পরিত্যক্ত হয়ে যেতে পারে না, বোঝালেন তিনি।’’

 

এর পরেই মাহিন্দ্রাকে উদ্দেশ্য করে তাঁর টুইটে ওয়াংচুক লেখেন,

‘‘আপনাকে জানাই,এই জিপটিই ছিল লাদাখের প্রত্যন্ত এলাকায় শিক্ষা-সচেতনতা বাড়ানোর অভিযানের জন্য আমাদের ‘অন্ধের যষ্ঠি’।

এতে চড়েই আমরা যেতাম প্রচারে।

তার ফলে,লাদাখে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় সাফল্যের হার যেখানে ছিল মাত্র ৫ শতাংশ, তা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ শতাংশে।’’

 

ওয়াংচুক এও জানান,মাহিন্দ্রা জিপটি ‘প্রচারক’-এর ভূমিকা পালন করেছিল ১৯৯৭ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত। একটানা ১০ বছর।

 

মাহিন্দ্রাও তাঁর জবাব দিতে গিয়ে লাদাখে ওয়াংচুকের শিক্ষা বিস্তারের প্রয়াসে সহযোগিতার ইচ্ছা প্রকাশ করেন,যা নেটিজেনদেরও ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে।

 

✓ থ্রি ইডিয়টস ছবিতে আমির খান যেটা করেছিলেন, সেটাই বাস্তবে করেন সোনাম ওয়াংচুক।

 

ইউনিভার্সিটি অফ ফেলিয়র্স।লাদাখে আজ এই নামেই পরিচিত সোনাম ওয়াংচুকের স্কুল।সেখানে লেখাপড়া মানে শুধুই পুঁথিগত বিদ্যা নয়।সেখানে শিক্ষা মানে বাস্তবকে চেনা।আসলে এমনটাই আমরা দেখেছিলাম ফুংসুক ওয়াংড়ুর স্কুলে।ওটা ছিল রিল আর সোনাম হলেন রিয়েল।ডাক্তার কিম্বা ইঞ্জিনিয়ার তো অনেকেই হন।কিন্তু সত্যিকারের মানুষ?

পেশাগত সাফল্য এলে যে কোনও ব্যক্তি প্রকৃত মানুষ হবেন তেমনটা মনে করার কোনও কারণ নেই।

সেটাই যেন চোখে আঙুল দিয়ে থ্রি ইডিয়টস ছবিতে দেখিয়েছিলেন Rancho অরফে ফুংসসুক ওয়াংড়ু ওরফে আমির খান।সিনেমায় আমির খান যেটা করেছিলেন,সেটাই বাস্তবে করেন সোনাম ওয়াংচুক। লাস্ট বেঞ্চারদের ফার্স্ট বেঞ্চার করার চেষ্টা করেন। তবে অন্যভাবে।কারণ তিনি প্রথাগত শিক্ষায় বিশ্বাসী নন।

 

বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর তাঁর আস্থা নেই,তেমনটা কিন্তু নয়।তবে অভিযোগও বিস্তর।সিংহভাগটাই অভিভাবকদের ওপর।

বিশেষত স্কুলে ফার্স্ট-সেকেন্ডের ইঁদুর দৌড়।অভিভাবকদের সন্তানের প্রতি অতিরিক্ত ভালবাসা, মাত্রাতিরিক্ত যত্নবান হওয়াও পছন্দ নয় সোনাম ওয়াংচুকের।ক্লাসরুম শিক্ষার বাইরে গিয়েও যে কিছু হয়,সেটাই দেখিয়েছেন সুদুর লাদাখের আধুনিক শিক্ষার পথিকৃত সোনাম ওয়াচুক।

 

✓ ভিন্ন খবরঃ

বাস্তবের র‌্যাঞ্চোর ভরসা হয়ে উঠতে চাকরি ছেড়ে লাদাখে পড়ে আছেন গীতাঞ্জলি।

 

ইঞ্জিনিয়ার,শিক্ষক,নৃত্যশিল্পী এবং ব্যবসায়ী একসঙ্গে এতগুলো পরিচয় বহন করতেন গীতাঞ্জলি।

অথচ একটা হোয়াটসঅ্যাপেই সব ছেড়ে দিয়ে আজ তিনি লাদাখে।লাদাখকে শিক্ষিত করে তুলতে সোনম ওয়াংচুকের অন্যতম ভরসা হয়ে উঠেছেন তিনি।

 

সোনম ওয়াংচুক বরফে মোড়া হিমালয়ের কোলে শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যা নয়,হাতেকলমে ছাত্রদের জীবন ধারণের পাঠ শেখানোর উদ্দেশ্য নিয়ে ‘‘হিমালয়ান ইনস্টিটিউট অফ অলটারনেটিভস’ নামে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করেন বর্ণময় জীবন ছেড়ে সেই কাজেই সোনমের ভরসা হয়ে উঠেছেন এখন গীতাঞ্জলি।

 

ওড়িশার বালাসোরে একটা পঞ্জাবি পরিবারে জন্ম গীতাঞ্জলির।দেশভাগের সময় গীতাঞ্জলির বাবা লাহৌর থেকে চলে এসেছিলেন।পদার্থবিদ্যায় স্নাতক গীতাঞ্জলি ভুবনেশ্বরের জেভিয়ার্স ম্যানেজমেন্ট স্কুল থেকেএমবিএ করেন।তারপর ৬ বছর তিনি কর্পোরেট হাউসে কাজ করেছেন।

চাকরি সূত্রে বিদেশেও ছিলেন।

 

চাকরি সূত্রে ডেনমার্কে থাকাকালীন তিনি একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম এবং একটা প্রকাশনী সংস্থা তৈরি করেন।দেশে ফিরে পুদুচেরীর একটা হাসপাতালের সঙ্গেও যুক্ত হন গীতাঞ্জলী।২০১৫ সালে চেন্নাইয়ে তৈরি হয় কেমব্রিজ স্কুল।এই স্কুলের হাত ধরেই তাঁর শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রবেশ।ওই স্কুলে শিক্ষকতা করতেন গীতাঞ্জলি।

একটা সময় এমন ছিল যখন,সোমবার থেকে শুক্রবার স্কুল পরিচালনা করতেন গীতাঞ্জলি।আর তারপর পুদুচেরীতে ফিরে শুরু হতো হাসপাতালের দেখাশোনা।

 

তবে এত কিছু করেও কিন্তু নিজেকে নিয়ে প্রসন্ন হতে পারছিলেন না গীতাঞ্জলি।বারবারই শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর আরও কিছু করার ইচ্ছা চেপে বসেছিল।

কিছু একটার অভাব বোধ করছিলেন।কী করলে যে তাঁর এই অভাব কাটবে তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না।

সোনমের সঙ্গে তাঁর পরিচয় আগে থেকেই ছিল।

২০১৭ সালে মুম্বাইয়ে একটি অনুষ্ঠানে দু’জনের পরিচয় হয়েছিল।তার কিছু দিন পরই গীতাঞ্জলির হোয়াটস অ্যাপে একটি মেসেজ আসে।

তাতে “হিমালয়ান ইনস্টিটিউট অফ অলটারনেটিভস” গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা সোনম তাঁকে জানান। হোয়াটসঅ্যাপ পড়ে দু’বার ভাবতে হয়নি গীতাঞ্জলিকে, তিনি যেন খুঁজে পেয়ে যান তাঁর জীবনের আসল গন্তব্য।

ব্যাগ গুছিয়ে নিজের ক্যারিয়ার জলাঞ্জলি দিয়ে বেরিয়ে পড়েন লাদাখের উদ্দেশে।ঘুরে ঘুরে তহবিল জোগাড় করে এবং লোকজনকে সচেতন করে দু’জনে শুরু করে দেন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির কাজ।

 

✓৪৬ বছরের গীতাঞ্জলি কী বলছেন?

‘ছোট থেকে দুটো বিষয় শিখে বড় হয়েছি।বিশ্বাস এবং স্বাধীনতা।আমার স্বাধীনতায় কোনদিন‌ও বাড়ি থেকে হস্তক্ষেপ হয়নি।’সেই স্বাধীনতা এবং বিশ্বাসে ভর করেই আজ তিনি সোনমের ভরসা।

 

সোনাম ওয়াংচুক স্বপ্ন দেখেন শুধু লাদাখ নিয়ে নয় বরং পুরো বিশ্ব নিয়ে।সোনাম ওয়াংচুক এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

অন্য মানুষ। ভিন্ন চিন্তা চেতনার মানুষ। নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে আলোর পথ দেখানো আলোকবর্তিকা,

যারা শুধু আলো ছড়াতেই ভালোবাসেন।

 

তথ্যসূত্রঃ

ABP Ltd. Neon Aloy Magazine, Zee Media Corporation Ltd.

 

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *