Md. Akabbor Ali PK

চিয়া সীড (Chia seed).
প্রাচীন মায়া এবং অ্যাজটেক জাতির মানুষ চিয়া সিডকে সোনার থেকেও মূল্যবান মনে করত।

#প্রভাষক_একাব্বর_রসায়নবিজ্ঞান

✓ চিয়া সীডের অবাক করা পুষ্টিগুণঃ

• দুধের চেয়ে ৫ গুণ বেশী ক্যালসিয়াম।
• কমলার চেয়ে ৭ গুণ বেশি ভিটামিন সি।
• পালং শাকের চেয়ে ৩ গুণ বেশী আয়রন।
• কলার চেয়ে ২ গুণ পটাশিয়াম।
• স্যামন মাছের থেকে ৮ গুণ বেশী ওমেগা-৩.

✓ চিয়া সীড (Chia seed) কি?
চিয়া সিড বা চিয়াবীজ মরুভূমিতে জন্মানো সালভিয়া হিসপানিকা (Salvia Hispanica) উদ্ভিদের বীজ।
এই অতি উপকারি বীজটির আদি জন্মস্থান সেন্ট্রাল আমেরিকা এবং সেখানকার প্রাচীন আদিবাসি অ্যাজটেক জাতির খাদ্য তালিকায় এই বীজ অন্তর্ভুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়।

প্রাচীন মায়া এবং অ্যাজটেক জাতির মানুষ চিয়া সিডকে সোনার থেকেও মূল্যবাণ মনে করত। তারা বিশ্বাস করত এটা তাদের শক্তি ও সাহস জোগাবে।

চিয়া সীড সব ধরণের আবহাওয়ায় হয় এবং এতে পোকামাকড়ের আক্রমণ তেমন হয় না। চিয়া বীজ সাদা ও কালো রং এর এবং তিলের মত ছোট সাইজের হয়।

চিয়া বীজ ডিম্বাকৃতি ও ধূসর বর্ণের সাথে কালো এবং সাদা দাগযুক্ত এবং ব্যাস প্রায় ২ মিলিমিটার (০.০৮ ইঞ্চি)। বীজগুলি তরল শোষক, যা ভিজে যাওয়ার পরে ওজনে তার ওজনে 12 গুণ অবধি হয় এবং একটি মিউসিলজিনাস প্রলেপ তৈরি করে যা চিয়া ভিত্তিক খাবার দেয় এবং পানীয়ে একটা জেলিভাব দেয়।

এখানে উল্লেখ্য যে চিয়া সীড এবং তোকমা নিয়ে একটি ভুল ধারণা আছে। অনেকেই তোকমাকে ভুল করে চিয়া সীড মনে করেন। চিয়া সীড তোকমার চেয়ে সাইজে ছোট, তবে এ দু’টোর পুষ্টিগুণ প্রায় একই। তোকমার ইংরেজি নাম ব্যাসিল সীড (Basil seed)।

✓ চিয়া একটি সুপার সীডঃ

এতে আছে প্রচুর পরিমানে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড,
কোয়েরসেটিন (Quercetin) কেম্পফেরল (Kaempferol) ক্লোরোজেনিক এসিড (Chlorogenic acid) এবং ক্যাফিক এসিড (Caffeic acid) নামক এন্টিঅক্সিডেন্ট,
পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় আঁশ (ফাইবার)।

• পুষ্টিমানঃ
প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স)-এ
শক্তি ৪৮৬ kcal (২,০৩০ কিজু),শর্করা ৪২.১ g,খাদ্য তন্তু ৩৪.৪ g,স্নেহ পদার্থ ৩০.৭ g, প্রোটিন ১৬.৫ গ্ৰাম।
• ভিটামিনের পরিমাণঃ
থায়ামিন (বি১) ৫৪% ০.৬২ মিগ্রা,রাইবোফ্লেভিন (বি২)
১৪% ০.১৭ মিগ্রা,নায়াসিন (বি৩) ৫৯% ৮.৮৩ মিগ্রা,
ফোলেট (বি৯) ১২% ৪৯ μg,ভিটামিন সি ২% ১.৬ মিগ্রা, ভিটামিন ই ৩% ০.৫ মিগ্রা।
• খনিজের পরিমাণঃ
ক্যালসিয়াম ৬৩% ৬৩১ মিগ্রা,লৌহ ৫৯% ৭.৭ মিগ্রা,
ম্যাগনেসিয়াম ৯৪% ৩৩৫ মিগ্রা,ম্যাঙ্গানিজ ১৩০% ২.৭২ মিগ্রা,ফসফরাস ১২৩% ৮৬০ মিগ্রা,পটাসিয়াম ৯% ৪০৭ মিগ্রা,জিংক ৪৮% ৪.৬ মিগ্রা ।
• অন্যান্য উপাদানের পরিমাণঃ পানি ৫.৮ g

✓ সুপারফুড চিয়া সীডের ১৫টি উপকারিতাঃ

১। এটা শক্তি এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
২। চিয়া সীড রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে।
৩। চিয়া বীজ ওজন কমাতে সহায়তা করে।
৪। চিয়া সিড ব্লাড সুগার (রক্তের চিনি) স্বাভাবিক রাখে, ফলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
৫। চিয়া বীজ হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ উপকারি।
৬। চিয়া সিড মলাশয় (colon) পরিষ্কার রাখে ফলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
৭। চিয়া সিড শরীর থেকে টক্সিন (বিষাক্ত পদার্থ) বের করে দেয়।
৮। চিয়া সীড প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করে।
৯। চিয়া সীড ভাল ঘুম হতে সাহায্য করে।
১০। চিয়া বীজ ক্যান্সার রোধ করে।
১১। চিয়া সিড হজমে সহায়তা করে।
১২। চিয়া বীজ হাঁটু ও জয়েন্টের ব্যথা দূর করে।
১৩। চিয়া সীড এটেনশান ডেফিসিট হাইপার এক্টিভিটি ডিসর্ডার (Attention deficit hyperactivity disorder ADHD) দূর করে।
১৪। চিয়া সিড ত্বক, চুল ও নখ সুন্দর রাখে।
১৫। চিয়া সীড গৃহপালিত পশুর খাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

✓ চিয়া বীজের ব্যবহারঃ

চিয়া সিড সরাসরি যে কোন ফলের স্মুদি বা জুসের সাথে পান করা যায়। শুধু পানিতে মিশিয়েও পান করা যায়। চিয়া বীজের নিরপেক্ষ স্বাদের কারণে এটা সব ধরনের খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়ার উপযুক্ত। বেক করা খাবার (বিস্কুট, কেক ইত্যাদি), সুপ, সালাদ ইত্যাদির সাথে মিশিয়েও চিয়া সীড খাওয়া যায়।

✓ ওজন কমাতে চিয়া সীডের পানি।

• খাওয়ার নিয়মঃ
১ গ্লাস পানিতে ১ চা চামচ চিয়া বীজ দিয়ে নেড়ে ৩০ মিনিট রেখে দিন। তারপর ছেঁকে খেয়ে নিন।
স্বাদ বাড়াতে চাইলে এতে লেবুর রস, কমলার রস, গোল মরিচ গুড়ো, বা মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন।

তথ্যসূত্রঃ

ইউএসডিএ ও উইকিপিডিয়া ।

1 thought on “Md. Akabbor Ali PK”

  1. কোথায় পাওয়া যাবে চিয়া সিড । জানালে উপকৃত হবো ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *