
কবি
অঞ্জন ব্যানার্জ্জি
ভিড়ের মধ্যে তোমাকে দেখেছি হাঁটতে
বিষন্ন মুখ নিঃসঙ্গ একাকী হাঁটা
খুঁজছিলে ইতি উতি সঙ্গীকে
সেও খুঁজছিল এধারে ওধারে
দুজনেই কাছাকাছি ছিলে।
কয়লার স্তুপে অনাবিষ্কৃত একজন
দেশলাই মনের গভীর ছোঁয়ায়
কখন অজান্তে জ্বলন্ত গিরি
ঢেকে ফেল চারপাশ
তোমার সৃষ্টির ধোঁয়ায়।
বোধের গভীরে অনুঘটক অন্বেষণে
নিরন্তর মনের ছায়াপথ ধরে
জনঅরণ্যে তোমার খুঁজে ফেরা
সেই হাত যে হবে
তোমার ক্যাম্বিয়ান বিষ্ফোরণের সঙ্গী।
যদি অন্ত না খুঁজে পাও
খুঁজ নিজের গহনে সঙ্গী।

কেন?
সৌদামিনী শম্পা
কেন শুধু ঘৃণাদের স্তর বাড়ে,
বিষেরা আবর্তিত কোণে কোণে?
কেন শুধু দোষ দিয়ে যাও সরে?
কেন শুধু প্রাপ্তির আশা মনে?
সব কিছু দুহাতের মাঝখানে,
পেতে হবে এমন তো নয় ঠিক।
দূর থেকে, থেকে যাওয়া, তাও হয়,
না হয় ভিন্ন তার আঙ্গিক!
না হয় শিউলি ঝরা ভোরগুলো,
সূর্য হয়েই তুমি ছুঁয়ে দিলে!
না হয় শিশির মাখা পাপড়ি,
রোদের উষ্ণ ঠোঁটে ধুয়ে দিলে!
ব্যথা যদি নাই বোঝো ভালোবাসা,
সত্যি নয় তো এক বিন্দু,
চাই বলে না পেলেই ঘৃণা হয়,
ভালোবাসা ছিল না সে কিন্তু!
কি ছিল সে? প্রশ্নটা তোলা থাক!
সব কিছু জেনে যাওয়া ঠিক নয়!
ঘৃণা দিয়ে খুশি হলে , তবু জেনো,
এ বুকেও যন্ত্রনা পাক খায়!
কেন?
©® সৌদামিনী শম্পা

ভুল কাব্য
~ ড. নজরুল ইসলাম খান
একটা সময় নিজের জন্য কাব্যের প্রেম জমে, ভালো লাগা থেকে অন্যের জন্যও একটু একটু করে কাব্য জমানোর অভ্যেস গড়ে তুলি।
এই অভ্যেসটা একটা সময় আমাকে তাড়া দেয়, সাহস জোগায় কাগজের টুকরো পাতায় ছন্দোবদ্ধ করতে।
সে কি আর হয় আমার দ্বারা! অবসরের আলসেমির চাদর খুলে সত্যি একদিন ঘুরে এলাম কাব্যের গগনতলে। চায়ের পেয়ালার তলে চুমুকে চুমুকে।
অচেনা জগতের সবচেয়ে ভালো বন্ধু আমার কাব্য।
কাব্যের প্রেম আমাকে সুধায়, আমাকে হাতের বাহুতে চেপে চঞ্চলা হরিণীর বেষ্টনীর ভেতরে ফুলের মত আলিঙ্গন করে।
মনের আজান্তে ঢের টের পেলাম তুমি কাব্যের স্বর্গে মর্গে বিচরণ করতে করতে নীরবে কথা কও। জীবন কাব্যের আলো ছায়ায় উজ্জ্বল পূর্ণিমায় তোমার আগমন।
কাব্যিক সুরের মূর্ছনায় স্বপ্নময় জগৎ তৈরি হয় অন্তরময়।
কাব্যের কাচামালের সন্ধান করতেই দেখি তুমি আছ কাব্যের ঢালি পেতে জীবনের অচেনা পথজুড়ে। সাদা-কালো চোখের চাহনি এক নিমিষেই তৈরি করে এক বিশেষ সম্মোহনী। কতটা গদ্য হলে জীবনটা কাব্যময় হয়ে উঠবে হবে ভেবে পাশে দাঁড়াই তোমার।
কাব্যের প্রেম আমাকে ডাকে বেসুরো গলায়, হৃদয় ছুঁয়ে যায় সাহিত্যের দ্যোতনায়। খানিক হেঁটে বেড়াই দিনরাত করি কাব্য রচনা। বুঝতে পারি এই কাব্য সেই কাব্য নয় যাকে খুঁজে চলছি অনাদিকাল ধরে সাত সাগরের তীরে। কুয়াশার আড়ালে স্বপ্নের ঠিকানায় মোড়ানো খুঁজে পাওয়া যায় কি এতো কাব্যের ভীড়ে?
তোমার কাব্যময় অনুভবে আমার কাব্যের প্রেম হয় ছন্নছাড়া।
এ আমার কাব্য নয় এ তোমার কাব্য। সব ভুলে ভরা।
সবই ভুল
এ একটি
ভুল কাব্য।

নবরাগ
মহীতোষ গায়েন
ভালোবাসা মরে গেলে
শরীর হিমশীতল হয়,
শিরা,উপশিরা,উপত্যকায়
আরেক বসন্ত আসে যায়।
প্রেমের বয়সের গাছ,পাথর
থাকে না,থাকে না সংশয়,
লাউ ডগার মত বয়স বাড়ে…
থাকে না পিছুটান দৃশ্যত ভয়।
ভালোবাসা প্রেম হয়ে গেলে
আকাশে মেঘ জমে,বৃষ্টি হয়;
বৃষ্টি বিধৌত সমূহ চরাচরে
আশা ভরসার নবরাগ জয়।
শারদীয়া গাছে প্রেমের কুঁড়ি ফোটে
ডাল ভরে যায় ভালোবাসা ফল,ফুল;
সব গ্লানি,ঈর্ষা,হিংসা অপ্রেমের ক্ষয়…
আশ্বিনে নবরাগ ধরাধামে বিলকুল।

মতাদর্শ ও মৃত্যুচিন্তা।
আতাউল হাকিম আরিফ
১
বিশাল এক অরণ্যের মধ্যে দিয়ে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছি , সবুজ,হলুদ , বাদামী কত যে রংয়ের মিশেলে সুবিস্তীর্ণ পথ, ডানা ঝাপ্টায় বনপাখি, নিশব্দে হেঁটে যায় পোকামাকড়,পশুগুলোর সতর্ক পদক্ষেপ,যাত্রা অনিদির্ষ্ট , স্বপ্নের ভেতর দিয়ে চলে যাচ্ছি হয়তোবা অন্যকোনো গুহায়-মানবীসদৃস ঝিরঝিরে বাতাসের বুকজুড়ে।
২
কতগুলো অচেনা শব্দের ঘুঙুর বাজে,পরীরা নাচতে থাকে নীলরংয়ের হেরেমখানায়! পুষ্পরজ; এবং কামশাস্ত্রের ভিন্ন ভিন্ন পাঠ চলে….
বৃষ্টিধারায় জন্মনেয় কাব্যবালিকা! দূর্বার বেগে ছুটে চলা শব্দগুলো কবিগণ লুটে নেয়।
৩
অন্য এক ভূখণ্ডের বুকে আছড়ে পড়ি, অচেনা সভ্যতা, আদিম পোষাকে খেলছে ভিন্নতর নর-নারী,
পাখির মতো করে শব্দের ব্যবহার, ওখানে কোনো ক্লেদ নেই,জাগতিক ক্ষুধা নেই, আছে যৌবিক মন্ত্রবাণ!
৪
স্বপ্ন ভেঙে গেলে ফিরে আসি চেনা পৃথিবীর নৈমিত্তিক কোলাহলে,এখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে জাগতিক ক্ষুধার অজস্র সামগ্রী! মতাদর্শ ও মৃত্যচিন্তা আমাকে নিয়ে যায় নরকের খুব কাছে।

সোনার মন্দিরের মুখ
তুষার ভট্টাচাৰ্য
ও দেবী তোর এই ঝলমলে আলোর মায়াবী রূপ দেখতে চাই না আর ;
আমি শুধুই দেখতে চাই
যে মেয়েটি কাজ করে ইটের ভাঁটায়,
প্রান্তরের ধান মাঠে ঘাটে
তার ঘামে ভেজা কপালে জেগে উঠুক তোর ত্রিনয়ন ;
কিংবা যারা দাঁড়িয়ে থাকে
মোহিনী রাত্তিরে নিয়ন আলোয় ভিজে
রাস্তায় রাস্তায়
তাদের অশ্রু ভেজা হাতে
তুই তুলে দে
বেঁচে থাকার নিরাপদ আশ্রয় ;
দেবী তোর দু’চোখ কেন অবহেলিত মেয়েদের কান্নার জলে ভেজে না ?
তাই দেখতে চাই না
আমি তোর সোনার মন্দিরের মায়াবী মুখl

চোপ! এখন কার্নিভ্যাল!
ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ
এসি অন করে লাইট নিভিয়ে শুলাম;
হালকা চাদরটা টেনে নিয়ে আধপোড়া ইউক্রেন চাপা দিলাম–
একটা ভাবী বিশ্বযুদ্ধকে রেখে দিলাম নিশ্চিন্ত বালিশের তলায়।
সূর্যকে কারা নিয়ে গেছে কিডন্যাপ করে সেই কোন ভোরে;
মোচ্ছব-মাফিয়ারা হোর্ডিং-এর অতিকায় চাটাই মুড়ে
ফেলে গেছে কলকাতার থিকথিকে-মাছি-বসা লাশ…
খবরের কাগজ থেকে ইরানী যুবতীর
রক্তমাখা কর্তিত চুল এসে পড়ে চায়ের কাপে;
বিস্বাদ বিস্কুট দিয়ে গিলে ফেলি তাকে প্রাত্যহিক অন্যমনস্কতায়।
চোরবাজারে বিকিয়ে যায় চক-ডাস্টার লাখো টাকায়;
জেলের আঁতুড়ঘরে বীরদের অবিরত প্রজনন হয়:
গণতান্ত্রিক খাটে শুয়ে মুদ্রারাক্ষস অশ্লীল নাচায় পা…
মৃত-প্রতিমাদের শ্মশানযাত্রায় লাল রাস্তার পাশেই
লুকোনো আগাছার মতো উপড়ে দিতে চায় ওরা
রুজি-ছিনতাই-হওয়া আন্দোলনের শেষ শেকড় বাকড়!
তিলোত্তমাকে আর কত ছিঁড়ে খাবে সাদা ডানার শকুন?
নীল চাদরের তলায় আর কত হবে চালান নোংরা অন্তর্বাস?
আর কত ঘুমের মৃত্যু হলে জীবন বাঁচবে জীবন?

আমৃত্যু বিরহ চেয়েছে কি ঈশ্বর
শামসুদ্দিন হারুন
দেখা হলো…
কতো দিন পর, দেখা হলোই যখন কেনো এই এতোটা কাল পরে !
আমি জানি…
এই তুমি আর সেই তুমি নেই, তুমি যে এখন
অন্য কারও ঘরে।
হতে পারে…
এ শুধু নিয়তির ফের, অথবা প্রকৃতিই চেয়েছে
এখনই আমাদের দেখা হোক।
সময় জানে…
তুমি কি জানো? ভয়াল ভূমিকম্পের পর ভেসে গেছে কতোটা সুনামীর শোক !
আচ্ছা ধরো…
তোমার আমার দেখা তখন হতোই যদি,তাহলেই
কি দু’জনের বাঁধা হতো ঘর ?
জানি বলবে…
এই প্রশ্ন তুমি করলে ? এই প্রশ্ন কেনো করছো
তুমি এই এতোটা কাল পর !
কেউ চাইনি…
প্রকৃতিই যদি চাইলো এখন, কেনো চায়নি বলো
বছর তিরিশ আগে ?
তা না হলে…
উড়নচন্ডি মেঘের মতো কেনো তুমি ভেসে গেলে
প্রশ্ন আমারও জাগে।
হয়তো এটাই…
আসল সত্য, ঈশ্বরই চায়নি তোমাতে আমাতে ঠিক তখনই দেখা হোক ।
এবং হয়তো…
ঈশ্বর কেবলই চেয়েছে আমৃত্যু আমরা দু’জন বেড়াবো বয়ে বিরহের শোক ।

একটু সুখের আশায়
সত্যেন মণ্ডল
তুমি কি পেলে সুখি হবে ?
নাও চোখ বন্ধ কর
সেটা তোমায় দেওয়া হল।
এবার তুমি আর কী কী চাও ?
নাও সেটাও তুমি নাও ।
আর একটা সুযোগ রয়েছে তোমার
আজ সারারাত ভাবো
সকালে যদি তুমি তোমার চাহিদার
কথা বলতে পারো
তোমাকে সে সব দেওয়া হবে !
নাও সেগুলোও তোমাকে দেওয়া হল।
কোন কিছুর অভাব বোধ যদি
তোমার দুঃখের কারণ হয় তবে
সব কিছু তোমাকে দেওয়া হয়েছে
এবার—–
সুখি হতে পারবে ?? ??
* * *
আপন অবস্থা মানিয়ে যে পারবে চলতে
এ জগতে সে-ই হবে সবচেয়ে সুখি
লোভ লালসার মোহে আরো– আরো– চাই
এমন চিন্তার মানুষ জেনো হবে চির-দুখি।

শরীর বেয়ে রক্ত নামে
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ
বিরানভূমির দীর্ঘশ্বাসে চেইন-বিক্রিয়া থামবেনা–
তেমনই মনে হচ্ছে।
কড়া রোদ চোখে নিয়ে হাইরাইজড বিল্ডিং থেকে নামে আমানতের যক্ষার ফুসফুস,
মাথায় ইটের স্তুপ।
আনন্দীপুরের সেরা ছাত্র ছিলো সে।
এখানকার মাটির এঁটেল চরিত্র,
ঘোলাটে পুকুর,
ঘন সবুজ শসার খেত,
কলকেসুন্দের পাতার ফড়িং -এর সাথে
তার ছিল নিখুঁত বন্ধুত্ব।
একদিন সগৌরবের সবুজ আনন্দপুর,
মহাজনী বন্টনরীতি রিক্তহাতে
তাকে ঠেলে দিলো শহরে।
প্রিয়তমা শাপলার কলাবেণীতে
লেগে থাকা কলাবতীর রঙ।
ওটার পরাগে এতোটা নেশা ছিলো যে,
আমানত
শাপলার ঘোরতর নীল চোখের দিকে তাকিয়ে শহরের দিনমজুরিতে গিয়েছে।
সীমা-পরিসীমাহীন কষ্টের চাবুক খেতে খেতে আমানতের রিপোর্টে সবকটা আণ্ডারলাইনে আবহাওয়া ছিল ঝঞ্জাট,
জটিল সমীকরন এবং কষ্টকর সিরিজের শিরোনাম আমানত।
হাড়ে লেপটে থাকা পানসে কালারের পেশী
দহন কালের সাক্ষী।
লুকোনো ফরিয়াদে আমানতের
শরীরের মানচিত্র ভিজিয়ে ঘামের বদলে রক্ত ঝরে কর্কশ শহুরে রাজপথে লুটিয়ে পড়া
জামানতহীন আমানত।

বৃষ্টি
মোবারক হোসেন
বৃষ্টি পড়ে আমায় করে
উতালা আর মৌন
সব কিছু ভুলিয়ে দেয়
তাকে ভাবায় গৌন।
বৃস্টি পড়ে ঘরের চালে
বৃষ্টি নদীর পাড়ে
বৃষ্টি এসে চোখের পাতায়
মনের অতীত নাড়ে।
বৃষ্টি আমার মানিক রতন
হারিয়ে দেয় করে যতন,
উল্টে পাল্টে ম্মৃতি ঘেটে
ফিরিয়ে দেয় আমার মতন।
টুনটুন
মোবারক হোসেন
টুনটুনি গো পাখি,নাচতো দেখি!
নারে বাবা নাচবো না
পড়ে গেলে বাচবো না।
তোমার ছিল বেজায় সাহস
রাজার সাথে লড়াই,
সাত রানীর নাাক কাটলে
ঢাল তলোয়ার ছাড়াই।
আজকে তুমি ভয় কাতুরে
নামের সোনাম,বাকি সবই মেকি!
টুনটুনি গো পাখি,নাচতো দেখি!
নারে বাবা নাচবো না
তোমার কথায় রাগবো না।
তখন মানুষ ছিল বোকাঁ
তাইতো দিছি ধোঁকা,
এখন মানুষ খুব সচেতন
ডিজিটালের পোকা।
পানি দিয়ে গিলবে না আর
একেবারেই জবাই,
দেখাবো না বাহাদুরি
যতই ঝাড়ো ছাপাই।

বৃষ্টির এসে গেছে
(মোহাম্মদ আল ফিরোজ)
ব্যস্ত শহরে আটকে পড়েছি জ্যমে
মিনিট ‘দশ’ পর ঘাম ঝরছে শরীলে
আসছে বাতাস উড়ছে বালি সারা শহরে
বৃষ্টির দিন এসে গেছে।
কৃষক চাচার খালি ঘোলা ভরে গেছে ধানে
সারা বছরের খোরাক তার হয়ে যাবে তাতে
জমিন ফেটে মাটি হয়েছে ঈট
পুকুরগুলোর পানিতে বারুদ ধরেছে
বৃষ্টির দিন এসে গেছে।
রাখাল ছেলে মাঠ ফেরিয়ে বসে বটের ছায়ায়
একটু খানি জল খুঁজে তৃষ্ণা মেটাটে
গাছে ফোঁটে জুই, জবা আর রঙের কত ফুল
বৃষ্টি হলে ফিরে পাবে তাদের গোঁড়ার মূল।
বৃষ্টির দিন এসে গেছে।
নামঃ মোহাম্মদ আল-ফিরোজ।
স্টুডেন্টঃ ইংরেজি বিভাগ (তৃতীয় বর্ষ)।
জন্মঃ রসুলপুর, বেগমগন্জ,নোয়াখালী।
বয়সঃ ২২।
পিতাঃ মোহাম্মদ রুহুল আমিন।
মাতাঃ জোস্না আক্তার।
ঠিকানাঃ রসুলপুর, বেগমগন্জ,নোয়াখালী।
ফোনঃ ০১৯৬১৫৮৪৪৫৬।

সিদ্ধেশ্বর হাটুই
অন্যায়
অন্যায় কে প্রশ্রয় দিলে, সমাজকে ঘিরে ধরে পীড়া
তবে কেন অন্যায়কারীকে লাই দিয়ে মাথায় তোলা ?
প্রতিবাদ তো হবেই , যতদিন সূর্য উঠবে দিনের বেলা
প্রতিবাদীরা নোয়াবেনা মাথা, রজনিতে যতদিন থাকবে আকাশে চাঁদ-তারার মেলা।
বিছুটি পাতা লাগলে গায়ে করবে ভীষণ জ্বালা, দূরেতো তাকে রাখতেই হবে, তাইনা ?
নাহলে অযথা , হ্যাঁ অমূলক চুলকে শরীরে দাদা বাড়াবে নিজের ব্যথা।
তোমার –আমার চলার পথের বাধা উপড়ে ফেলো, দ্বিধাদ্বন্দ্ব দূরে ঠেলে
পারবে – পারবে- পারবে তুমিও, মানুষ থাকবে তোমার পাশে , নিন্দুকেরা বলুক হাজার উল্টো কথা।
মানুষের মতো দেখতে হলেই সবার থাকেনা মানবিকতা, কেন রে- লজ্জা লাগেনা ?
স্বার্থের নেশায় তারা যে করছে ভুল, এটা মনে ভাবে ? না-না এক্কেবারে না।
পোষা হস্তী সিঁদুর নিয়ে শুঁড়ে, মুক্ত জীবনে ফিরবে বলে- জঙ্গলে যদি যায় দলে মিশে,
রাখবে ? রাখবে ? রাখবে না ভাই , পশুরাও বোঝে ভালো-মন্দ , কে পর- কে যে আপনজনা।
সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী , যে না মানে মানুক, অপরাধী বুঝে নাও
গাছের ফল মাটিতেই পড়বে, হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ –যতই আকাশপানে চাও।
ঝরা পাতা
প্রবল বেগে ছুটে চলা জীবন স্রোতে
ভাসতে ভাসতে দেখেছি কত ঝরে যাওয়া মুকুল,
শুনেছি কত ঝরে যাওয়া পাতার মর্মর ধ্বনি।
অবিরাম দেখছি………
জীবন্ত লাশ গুলোর প্রাণ ফিরে পাওয়ার প্রয়াস,
ফুটপাতে কত পিড়িতো মানুষ……………….
শৈত্যপ্রবাহ গায়ে মেখে, রাতের ঘুম উড়িয়ে
দীপ্ত সূর্যোদয়ের প্রহর গোনে।
কামিন মুনিশের দল পথভ্রষ্ট পথিক হয়ে
ছুটে চলে কাজের অন্বেষনে।
দীন ঐ শিশুর দল হা করে দেখে
বাবুদের পাতের লোভনীয় খাবার।
অত্যাধুনিক স্বার্থান্বেষী সমাজ ব্যবস্থার ছোঁয়ায়
কতশত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রতিভাগুলো………………
প্রভাতকালে পশ্চিম আকাশে চাঁদের মতো
ধীরে ধীরে বিলিন্ হয়ে যায়।
এসো হে বীর
কোথায় আছো হে তুমি ওহে বলবান
তোমার করুণা হোক সাগর সমান,
চোখে জ্বলুক অগ্নি শিখা, মুখে রণ হুঙ্কার
বাহুতে উঠুক শানিত তলোয়ার, পায়েতে কর চুরমার।
এসো এসো হে দিগ্বিজয়ী মহাপুরুষ
তোমার আগমনে চূর্ণ হোক যত ভন্ড-কাপুরুষ।
কোথায় আছো হে তুমি, ওহে দানবীর
পীড়ক-জুলুমবাজদের তুমি কর হে সংহার
এদেশের মাটিতে কাঁদছে মানুষ হাজারে হাজার,
স্বাধীন দেশকে পূর্ণ স্বাধীনতা দাও একটিবার।
রাজা-মহারাজা গরিব-ভিক্ষুক হোক একাকার
তেজস্বী হস্তে হোক সমাজের নিস্তার।
কোথায় আছো হে তুমি ওহে জ্যোতির্ময়
তোমার আগমনের এইতো মোক্ষম সময়,
দিকে দিকে মানুষ আজ কাতর অপেক্ষায়
হাতে নিয়ে বিজয়মাল্য পরাবে গলায়।
মায়েরা দীপ্ত চোখে-শঙ্খ হাতে-মুখে উলুধ্বনী
চারিদিকে বাজে গীত, তোমার আগমনী।
হারানো স্মৃতি
হারিয়েছে অতিত, হারিয়েছি যত
পুরানো দিনের সুমধুর সেই স্মৃতি,
পাল্টেছে দিন, পাল্টেছে রাত
বদলেছে প্রেম-প্রীতি সমাজ-সংস্কৃতি।
স্মৃতি রোমন্থনে মনে পড়ে যায়…
হারানো সেই সব দিন,
কত আনন্দে গাইত পাখি গান
কত আনন্দে খেলত যমুনা-পারভিন।
বর্তমানে ফাঁকা দেখি সেই খেলার মাঠ
দল বেঁধে আর যায়না স্নানে, ফাঁকা স্নানের ঘাট,
যান্ত্রিকতায় মেতেছি সবাই, যন্ত্রেই উন্নতি
যাচ্ছি ভুলে পুরানো দিন, ভালো থাকার পাঠ।
হিংসা-বিবাদ লাউয়ের ডগা
ঢালছি অযথা তেজ,
খাঁটিটা আর রাখছিনা খাঁটি
সব কিছুতেই ভেজ।
আর হয়তো পাবোনা ফিরে
হারানো সেইসব দিন।
বেলা বয়ে যায়- তবু মনে হয় আজ,
সেই দিনের আশা ক্ষীণ।
হেঁসেল ফাঁকা
সাধারনের আজ হেঁসেল ফাঁকা
খেতে হলে লাগবে টাকা,
পকেটে থাকলে বাজার দেখা
যার নেই সে কাঁদবে একা।
আগামিতে দেখো আসছে সময়
সেই দিন আর বেশি দূরে নয়।
যার আছে তার অনেক নাম
না থাকলে কে দেয় দাম,
বাজারে লেগেছে কৃত্রিম আগুন
জিনিসের দাম বেড়েছে দ্বিগুন।
সাধারন মানুষ বড় অসহায়
যারা দিন এনে –দিন খায়।
জীবন পথ
প্রভাত প্রাতে একলা বসিয়া আমি ভাবি মনে মনে
অব্যক্ত কত কথা-শত ব্যথা ঢাকিয়া রাখি সংগোপনে।
দিবা আকাশে রবি যেমন সদা থাকে উজ্জ্বল
রজনিতে চাঁদ হাসে করে ঝল-মল,
তারাদের কত দীপ্তি দেখো আকাশ পানে
কত তারা স্থলিত হয় শুধু আঁধার-ই তা জানে।
দিবাকর-নিশাকর আর তারাদের দেশে
কেহ বোঝেনা কাহারো ব্যথা থাকে আপন বেশে।
মানব জীবনে আসে কত জোয়ার-ভাটা
কত জীবন ভাসিয়া যায় হদিস রাখে কে কটা।
শত ব্যথা-শত কাঁটা শত শত ভয়
এ জীবন সকল সয়ে চায়না পরাজয়।
যুদ্ধক্ষেত্রে নামিয়া আর ভাবিয়া কাজ নাই
যতক্ষন থাকিবে শ্বাস আত্ম বিশ্বাস রাখা চাই।
অতি সাহস-অতি ভয় অতি আবেগময়
কনোটিই রাখিয়োনা মনে অন্যথায় পরাজয়।
কিটনাশকে্র বিষ ছড়িয়ে আছে চারিদিক
কিটপতংগোর ন্যায় এই মানব জীবন এক্কেবারে সঠিক।
স্বার্থপরতার বীজ ভূমিষ্ঠ হইয়া উঠিছে লাখো নবোদ্ভিন্ন
ডাল-পালা মেলিয়া তারা সাধারনকে করছে শূন্য।
এ সমাজে তাই বাঁচিয়া থাকিতে হইলে ভাই…
সমস্ত কিছুর মধ্যে বাঁচার রসদ চাই।
আমি ভাবি মনে ব্যথা থাক গোপনে গোপনে
ব্যঙ্গ করিবে অনেকে ব্যক্ত কথা যদি কেহ শোনে।
মানুষতো ভাই হাতের আঙুল
কেহ আবার ভুল করিলেও বোঝেনা সে ভুল,
জীবন চলিবে আপন ছন্দে দ্রুত কিম্বা শ্লথ
বিধাতার লিখন মানিতে হইবে এটাই জীবন পথ।
শেষের আলো
চারিদিকে অমাবস্যার ঘুটঘুটে অন্ধকার
দূরে ঐ দেখা যায় একচিলতে আলো
নিভতে নিভতে দপ করে জ্বলে ওঠে,
আবার অন্ধকার…….
জল ঢেলে কারা যেন নিভিয়ে দিচ্ছে।
অবশেষে মৃদু আলো
ঢলতে ঢলতে মিলিয়ে গেলো
মাটির বুকে, চিতার শেষে।
শিক্ষা
মাছুয়াদের ঐ বড়শি শেখায়
সবুরে মেওয়া ফলে,
আগুনের ঐ শিখা দেখায়
উত্তাপে সবই গলে।
প্রভাতের রবি শেখায়
কাজে মন দিতে,
সাঁঝ আকাশের চাঁদই পারে
ঘুম এনে দিতে।
বৃষ্টির ধারাই পারে
বন্যা করে দিতে,
প্রকৃতি সবই পারে
ইচ্ছে মতো করতে।
জঙ্গলের হিংস্ররা চায়
দুর্বলদের খেতে,
স্বার্থান্বেষী মানুষ চায়
সকলের কেড়ে নিতে।
ভেজাল
পৃথিবীটা আজ হয়েছে ভেজাল
ভেজাল সারাদেশ।
ভেজাল কখনো শেষ হবেনা,
করবে সকল শেষ।
ভেজাল করে ভেবেছে মানুষ
জয় করবে সারাদেশ।
নিজেরাই হয়েছো খাঁটি ভেজাল
বোঝা যাচ্ছে বেশ।
আশাকে ভেজাল পোশাকে ভেজাল
ভেজাল চুল আর গালে,
দেখছি এখন রঙের বাহার
যাচ্ছি আসল ভুলে।
এক রোগের কেউ খাচ্ছে ঔষধ
ধরছে অন্য রোগ,
মানুষের জন্য মানুষ আবার
করছে যে রোগ ভোগ।
আটাও ভেজাল, চালেও ভেজাল
ভেজাল এখন সব্জি-দুধে ও তেলে,
সিমেন্ট- চুনেও মিশছে ভেজাল
একটু সুযোগ পেলে।
ভেজাল এখন নানান দ্রব্যে,
ভেজাল এখন মদে
মদটা এখন লাগছে কাজে
অনেক মাতাল বধে।
রক্তও এখন হয়েছে ভেজাল,
ভেজাল প্রশাসন।
ভেজাল ভেজাল করতে করতে
ভেজাল হয়েছে মানুষের ঐ মন।
ঐ মন নিয়ে মানুষ এখন
করছে নানান খারাপ কাজ,
তাইতো তারা খুশি অনেক
পাচ্ছে না আর লাজ।
স্বার্থান্বেষী মানুষ এখন গড়ছে
স্বার্থরক্ষার যন্ত্র,
দিনরাত তারা করছে যে- যপ্
মানুষ মারার মন্ত্র।
বিশ্বাস ঘাতক
বিশ্বাসের উপর ভর করে চলে মানব জীবন
তবুও দেখো কিছু মানুষ বিশ্বাসের মাথায় চোট মারে,
সম্পর্ক গুলো তাই হয়ে যায় ঠুনকো
অল্প আঘাতেই বিস্তর ঘায়েল করে।
বিবেক বুদ্ধি যারা পাথর চাপা দিয়ে
অন্যজনের বিশ্বাসের অমর্যাদা করে
ভবিষ্যত্ চিন্তা ভাবনা যার ঘিলুতে না জন্মায়
বর্তমানের ক্ষণিক সুখের আশায় তারাই ছুটে মরে।
বিশ্বাসের অমর্যাদা করায় যত না সুখ
বিবেকহীন হৃদয়ে কখনো যদি হয় শুভ বুদ্ধির উদয়
সেদিন দেখবে সুখের চেয়ে বড় হবে দুঃখ
পাশে থাকবেনা কেউ, কাঁদবে হৃদয়।
পাষাণ হৃদয়টা সেদিন ভিজবে চোখের জলে
তখন বুঝবে বিশ্বাস রক্ষায় কী মেলে।
আপনজন থেকে যেদিন থাকবে দূরে
বুঝবে সেদিন কেন মানুষ বিশ্বাসের মর্যাদায় ভর করে চলে।
এখনো আঁধার
শাক ভাজতে তেল নেই যাদের
তারা শাক তুলে আর করবে কী,
ভালো মন্দ খাবার কোথায়
জীবনে পাতে পড়েনা ঘি।
মাথার চুল তাই রুখাই থাকে
পায়েতে নেই জুতো
পরনে তাদের ছিন্ন বস্ত্র
সেলাই করার নেই সুতো।
পূজো-পার্বণে লোক দেখা
পকেটে নেই টাকা,
দিন চালাতে হিমশিম্ খায়
গড়ের মাঠ ফাঁকা।
গতর খাটিয়ে করলে কাজ
নামের বেঁচে থাকা,
দীন যে বোঝে দিনের জ্বালা
অশিক্ষায় থাকে ঢাকা।
আঁধারে করে রাত্রি যাপন
নেই বৈদ্যুতিন আলো
সারা রাতেই আঁধারেতে
সবকিছু দেখে কালো।
এদের কথা ভাবছে কে আর
দিন যাচ্ছে চলে,
বর্তমানে সমাজ এখন
অর্থেই কথা বলে।
মনের আকাশে
মনের আকাশটা আজ বড়ই মেঘলা
জীবন সমুদ্রে আজ শুধুই ভাটার পর ভাটা,
দিন বদলের স্বপ্নগুলো আজ ভেঙে ভেঙে
টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে সমাজের বুকে।
মদের চাহিদা বাড়ছে দিনে দিনে
অজ্ঞান থাকার স্বভাবটা রপ্ত করতে চাইছে বহু মানুষ,
জ্ঞানপাপীরা ভুলে গেছে স্বপ্ন দেখতে
দিন বদলের স্বপ্ন………………..
যেখানে থাকবেনা দারিদ্র-হাহাকার
সম্প্রীতির বাঁধনটা থাকবে অটুট, নারীরা সুরক্ষিত
শিশুরা ভোগ করবে তাদের সম্পূর্ণ অধিকার,
পূর্ব কালের ন্যায় সুরক্ষিত হবে বড়দের সম্মান।
লজ্জা বোধ-সম্পর্ক জ্ঞান জাগ্রত হবে সকলের মনে
বিরাজ করবে শুধু শান্তি আর শান্তি……..
অসহায়
নীড় হারা পাখি দুটি
বেঁধেছিল সুখের বাসা
আকস্মিক এল ঝড়
চূ্র্ণ হল সকল আশা।
সেদিন সেই মধ্যরাতে
এসেছিলেন নিদ্রা দেবী
ঘুমের চামর বুলিয়ে চোখে
লাগিয়ে দিলেন ঘুমের চাবি।
অজ্ঞানের প্রাণে ফিরল জ্ঞান
যখন শরীরে পড়ল বৃষ্টির ফোঁটা,
ঘুমের ঘোরে চোখে পড়ল
বাসার উপর অসংখ্য ফুটা।
দোলনার মতো দুলছে বাসা
কি ঝড় এল সর্বনাশা,
গরিবি ঐ বুনন খানি
ভেবেই পাখিরা হারালো ভাষা।
হঠাৎ বাসা ভাঙল ঝড়ে
পড়ল পাখিরা হুড়মুড়িয়ে
নির্বাক পাখিটা দেখল চেয়ে
সঙ্গীটা তাকে গেল ছেড়ে।
ভাবল পাখিটা মনে মনে
থাকত যদি দালান বাড়ি
শক্ত-পোক্ত আবরণে ঢেকে
পচা খড়কুটো ছাড়ি,
দু-জনেতে থাকতাম সুখে
জীবন সমুদ্র দিতাম পাড়ি।
(কবি ও লেখক) সিদ্ধেশ্বর হাটুই, গ্রাম+পোঃ-সুখাডালী, থানা-সারেঙ্গা, জেলা-বাঁকুড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত /মোবাইল নং-৯১৫৩৩৫৫৯৬৩

চাই সে কলরব
বিশ্বনাথ পাল
এই যে পুজো চারিদিকে খুশীর কলরব।
দুঃখীজনে দুঃখ ভুলে মেতেছে আজ সব
প্রাণের বেদন, মনের ভার
লাঘব করে মা সবার
প্রাণের তারে বাঁধেন আনন্দেরই সুর।
মনের ময়লা, মনের গ্লানি
দূষণ ভূষণ আমরা জানি
বাগিয়ে বিদায় করে তাদের
আর না যেন দেখি মুখ তাদের
সব জান্তা কুমড়ো কাটা ভাসুর
থুরি, তারাই আসল অসুর।
মন থেকে বের না করলে চাইবে শুধু শব মৃত্যু পুরীর দুয়ার ফিরি চাই সে কলরব।

নতুন বইয়ের সুগন্ধ
মহ : আরিফ
নতুন বইয়ের সুগন্ধে
মেতে উঠেছি আনন্দে ।
আজকে পাবো নতুন বই,
এই খুশির সংবাদ টা সবাইকে কই ।।
হাফ পেন্ট,সাদা জামা –
গায়ে নিতে খুবই মজা ।
হাত মুখ ধুয়ে আমি
একেবারে রেডি ।
ছোট্ট ব্যাগটা কাধে নিয়ে ,
দৌড় দিলুম বন্ধুদের সাথে ।
একদৌড়ে পৌঁছেগেলুম –
গ্রামের ছোট্ট বিদ্যালয়ে ।
বিদ্যালয়ে পৌঁছাতেই দেখলাম ,
কত রঙের সারি সারি বই ।
নতুন বইয়ের সুগন্ধে
মেতে উঠলাম আনন্দে ।।
খুশি ছিলাম তেমন আমি
যেমন গাড়ি কিনেছি অনেক দামি ।
ঘন্টা কয়েক পরে ,
বই পেলাম হতে ,,
বই পেয়েই আমি অনেক খুশি
মুখে ছিলো মস্ত হাসি ।
বইতে কিছু না পরে যাতে
জড়িয়ে রাখলাম বুকের সাথে ।
বেল পড়তেই দিলাম দৌড়,
যেমন দৌড়াই চোর ।
চোরের মত দৌড়ে আমি ,
খেলাম অনেক হচট ।
হচটে আমার পায়ের আঘাত
একটুও নাই মনে ,,
মেতে উঠেছি আনন্দে ,উল্লাসে ।।।

মানবতার গলদ
জোবায়ের হোসেন
মুসলিম আমি, ইসলাম আমার ধর্ম
রক্ত আমার লাল বর্ণ।
সে হিন্দু করে মূর্তি পূজা
মানে উপোস, রাখে না রোজা।
সে যায় মন্দিরে আর আমি মসজিদে
এইতো আমাদের ভিন্নতা,
আমি করি সেজদাহ আল্লাহকে
সে ডাকে ভগবানকে তারই মন্দিরে।
প্রকৃতির সন্তান মোরা একসাথে করি বাস
ভক্ষন করি একই মাটির চাষ,
বেদ থেকে কোরানের ঐ কালো কালি,
আমরা পাপ থেকে মুক্ত হতে শিখি।
আমার কাছে আমার ইমান সবথেকে দামী,
কি করে ভাংবো আমি নবীজির মানবতার বাণী।
একটি ব্যাগে থাকে যদি দুই ভাইয়ের লাল রক্তবিন্দু,
চিহ্নিত করতে পারবে কোনটি আমার আর কোনটি হিন্দুর???

রাজা রামমোহন রায় স্মরণে
বিকাশ চন্দ্র মণ্ডল
গদীবেড়ো, রঘুনাথপুর, পুরুলিয়া
২৭/০৯/২২
জন্ম ১৭৭২ সনের শুভ ক্ষণে ২২ শে মে
বাংলার নব জাগরণের প্রথম ঋত্বিক,
রাজা রামমোহন রায় হলেন ভারত পথিক ।
হুগলি জেলার রাধানগর গ্রামে তব ধাম
পিতা রামকান্ত রায়, মাতার তারিণী দেবী নাম।
মূর্তি পূজোয় অবিশ্বাসী, মাতৃ ভক্তিতে যে প্রণম্য
সতীদাহ প্রথার নামে নিষ্ঠুর নিয়ম ছিল যে জঘন্য।
লর্ড বেন্টিং এর সহায়তায় নিষিদ্ধ করে দিলে
” সংবাদ কৌমুদী ” নামে সংবাদ পত্র প্রকাশিলে
ইংরেজী শিক্ষার বিস্তারে তুমিই তো অগ্রদূত হলে।
সর্ব ধর্ম সমন্বয়ে নূতন ধর্ম মত ব্রাহ্ম ধর্মের করলে প্রবর্তন
১৮২৮ সালে দ্বারকানাথের সাথে ব্রাহ্ম সমাজ ও
ডেভিড হেয়ার কে নিয়ে হিন্দু কলেজের প্রতিষ্ঠা।
বর্তমানে যার প্রেসিডেন্সি কলেজ নামের পরিবর্তন
বাদশা ২য় আকবরের দেওয়া ” রাজা ” উপাধি তব ভূষণ ।
১৮৩৩ সনের ২৭ শে সেপ্টেম্বর ত্যাগিলে ইহলোক
শিক্ষাব্রতী তথা সমাজ সংস্কারক ভারত পথিক ।
রাজা রামমোহন রায়ের বৃষ্টল শহরে হয়ছে মৃত্যু বরণ
আজিকার বিশেষ শোকের দিনে করি তব চরণ পূজন।

প্রদীপ ভট্টাচার্য
মানুষের পংক্তিমালা – ১
কোন এক প্রাগৈতিহাসিক যুগে আমি শ্যাওলা ছিলাম
সময়ের বাতাস আর সাগরের স্রোতে আমার শরীর
বারে বারে আঘাত পেত বক্রতীরে অপঘাত বললে
এভাবে ক্রমশঃ তুমি মানুষ হয়ে গেলে —
এখোন তুমি হাঁটতে জানো পথ চেনো নিজে
এখোন তুমি কাঁদতে জানো চোখ মুছ নিজে
এখন হাসতে জানো আনন্দ করো মহাসুখে
এখোন তুমি জেনে গ্যাছো প্রাণ আর নিষ্প্রাণ
চামড়া একটা খোলস মাত্র ভেতরে থাকে প্রাণ।
একদা সমুদ্র থেকে তোমার স্হান বদলেছে অরণ্যে
চোখ খুললেই দ্যাখো অপার সবুজের হাতছানি
পাখিদের গান,ঝরা পাতার শব্দ,বাতাসের কানাকানি
ময়ূরের সুরে বিমোহিত সকল কিছুর পঞ্চদানি
তুমি এখন শিল্পী,মুক্ত প্রভাতের তারুণ্য ভৈরবী,
শিবের গাজন; সমর ক্ষেত্রের নির্ভুল ত্রিশূল।
মানুষের পংক্তিমালা – ২
প্রতিনিয়তঃ তোমার যুদ্ধ করতে হয় এখন বেঁচে থাকার
দলবেঁধে হিংস্র বর্বর প্রাণীদের সাথে আমৃত্যু বুবুক্ষের
লড়তে হয় কাকতালীয় টাইফুন ঝরের সাথে অহরহ
আকাশের বিজলীর সাথে ভূমিকম্পের সাথে একত্রে
পরিত্রাণ পেতে তুমি ছুটে যাও বৃক্ষ-দেবতার কাছে
গঙ্গার কাছে মানুষের কাছে মানুষ দেবতা করে।
বিবস্র শরীরে কর সৃষ্টি সমান নারীর ঘর এখন তুমি
ঘরকে কোরেছ আঁধার আর আঁধারকে কোরেছ গুহায় ঘর
অতঃপর লেপ্টে থাকো শরীরের পরে শরীর প্রেমের কাছাকাছি কানামাছি খেলা করো মহাসুখের
মৃত্যুর সাথে অস্তিত্বের—
জীবন এখন রক্ত ঝরায় যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায়
অন্বেষণ করো আত্নরক্ষার সকল কলাকৌশল
সাগর থেকে পাথর এনে শাণ দাও তাতে
পাথরে পাথর ঘষে জ্বালাও আঁধারের আলো।
এভাবে প্রয়োজনের চিলে কোঠায় হয়ে ওঠো অণুক্ষণ
সময়ের সাহসী সৈনিক আবিষ্কারের উত্তরসুরী।
মানুষের পংক্তিমালা -৩
অবশেষে কতযুগ পরে এলে
সবাই ছুটি নিলেও তুমি—–
নদী হয়ে আকাশে চাঁদের মত নিরবে পড়েছিলে।
যুগের পলিতে তোমার মাটি
তাই লেগে থাকে রোদের পিঠে রূপসার মিছিলে
ক্লান্তিহীন নানান বর্ণে খচিত সবুজে সরল সুশ্রী।
মানুষের পংক্তিমালা – ৪
কত দেশের লোহা-লক্কর এনে এখানে জড়ো করলে
তুমি গড়লে তোমার চাহিদার কারাগার অযোধ্যা ভূমি
তারপর গাধার পিঠে চড়িয়ে দিলে আশ্চর্যের পিদীম।
আলাদীনও অবাক হয়েছে এই কৌশলী কারুকার্যে
ওরা গড়ে তোলে অট্টালিকায় জীবন ক্যাসিনো
ঘামের সাথে নিশিদিন ভাঙ্গে গড়ে হাড় রুদ্র খেলাঘর।
মানুষের পংক্তিমালা – ৫
আলোর প্রদীপ থেকে যে ছায়াপথ দেখায়
গন্তব্যের মসৃণ ঠিকানা নিশ্চিত আলো
কালো নেই বলে তৈরী করে আরো নিশ্ছিদ্র ছায়াপথ
তুমি চিনলেনা কেবলই ডুবে গেলে কালোর বিবরে।
আকণ্ঠ পান করো শতাব্দির যুগ-শস্যের বর্জ-বীজ
বিচার করোনা লোভী সমুদ্রের জাতপাত নিদ্রাহীন
আধুনিকতার নামে লাগাম ধরো উলঙ্গতার
অথচ তুমি কূল-শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি দেবতার সকল সুবিধাভোগী।
স্বেচ্ছাচারিতার শৃঙ্গ থেকে ভেসে আসে ভোগ-বিতৃষ্ণায়
দম-ফাটানো চিৎকার প্রতিদিন গ্রাস করে সূর্য-বলয়
পৃথিবীর অলি-গলিতে কান্না জুড়ে নৃশংসতার রুদ্র-রূপ
হরদম সুবিধাবাদী সভ্যতার ফেরিঅলা প্রতিদিনকার রুটিনে।
অতঃপর একদিন
ভোরের সময় ভেসে ওঠে চোখে উঁচু উঁচু ইমারত
রোদের উষ্ণতায় আঁচ করে নগরীর কৃশ শরীর
অভিমানী বাতাস তাই রাগ করে বনধ্ এর ডাক দ্যায়।
গরমকাল মানে একতরফা ঘাম ঝরার স্বাধীনতা
রাজপথে দীর্ঘ সময় দাঁড়নোর সবুজ প্রতীক্ষা।
বুক ফাটা তেষ্টায় সস্তা বরফের অন্তহীন চাহিদা।
অন্ধ নগরী এখন বন্ধ করেছে প্রকৃতির রূপ-লাবণ্য
একটা শেফালি ফুল ছাদ থেকে দেখে পীচঢালা রাস্তা
পথিকের কোলাহল যান-বাহনের তড়িঘড়ি শব্দ কৌশল।
বহুুদিন তাই দেখা হয়না জোছনার আঁচলে গোলাপের আনাগোনা
চড়ুই পাখীর চঞ্চল ডানায় পাপড়ি ছড়ানোর দৃশ্য
প্রজাপতির রংঙ্গীন ডানায় নীলাকাশে উড়ে যাবার চেষ্টা।
ভাবছি এবার জানালা বরাবর রোপণ করবো একবিঘা চারাগাছ তারপর
সোনালী রোদেরা চলে গেলে প্রতিদিন তার গোড়ায় দেব জলের পরশ
তাড়াতাড়ি বড় হবার জন্য দেব ফুল ফোঁটার প্রাকৃতিক সার আর আদর
দিলামও তাই দেখি
মাস-দুমাস পরে একি! গাছটাতে ফুল ধরেনি শুধু
বেড়েছে শাখা-প্রশাখা তার বড় কাটাগুলো
জানালার ফাঁক দিয়ে ঠিক পরিস্কার দেখা যায়।
গোলাপের প্রতি আমার আগ্রহ কমে গ্যাছে ইদানিং অনুভব করি হাসনা হেনার মোহ
সাঁঝ-বাতির ঊষালগ্নে হেলে পড়া গোধূলির উন্নাসিকতা
দেয়ালের কার্ণিশে মিশে
ঝুলে থাকা পাতা -বাহারের গন্ধবিহীন আবহ কেবল ক্লান্তির বিছানায় নগরীর শেফালীকে মনে করিয়ে দ্যায় সারাক্ষণ।
জোছনার আঁচলে গোলাপের কথকতার ঘ্রাণ এখন শুধুই অতীতের স্মৃতি।
আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি অদূরে ঐ বৃহদাকার ইমারতের পাশে এক চিলতে উঠোনের বৃক্ষে অন্ধকারে আবছা আলোয় সন্ধ্যে পাখীর ডানা ঝাপটানোর দৃশ্য শাখা দোলনা
মনে হয় আণবিক বোমার মত পৃথিবী গ্রাস করবে একদিন।
অতঃপর কৃষ্ণা নদীর খতিয়ান
কৃষ্ণা নদীর পানি এসে পড়ে কর্ণফুলি বরাবর
আশে পাশে ফসলের মাঠগুলো চেয়ে থাকে প্রবাহে
অনন্ত আকাশের দিকে দ্যাখে প্রতিদিন আলো
কালো শকুনী পায় মৃতের গন্ধ যুগপৎ।
ইতিমধ্য মাপা হয়ে গেছে পৃথিবীর দৈর্ঘ্য প্রস্থ
পরিসংখ্যান হয়ে গেছে মাটি থেকে সূর্যের দূরত্ব
এলিয়েনরা এখনো রিফিউজী বলে তুষার মানব
তাবৎ দেশের চোখ এখোন এখানে অধরা
পৃথিবীর আহ্নিক গতি বার্ষিক গতি দেখে ধ্রুবতারা।
সংবাদের প্রথম পৃষ্ঠায় থাকে অবাক করা চমক
কোন এক দর্জি দেখে পৃথিবীর দৈর্ঘ্য প্রস্হ
বেরসিক কবি খাতা কলম নিয়ে হাসে অকপট
সৃষ্টির গতিপথ দেখে যখন পরমাণু রকেট
বোমা ফাটে সবুজ পৃথিবীর ফসলের মাঠে।
সুন্দরের দর্শন থেকে ছুটে আসে পাহাড়ী ঝর্ণা
জমির ফসলেরা চেয়ে থাকে মহাজনের হাট
সৃষ্টির গতিপথ রোধ করে গণিতের ধারাপাত
ঘাতক হাটে দ্যাখে তার অবয়ব নিজের আয়নায়।
অতঃপর কৃষ্ণা নদীর পানি গড়ায় বঙ্গোপসাগরে
কারণ প্রত্যেক নদীর একটা যোগসূত্র আছে নদীর সাথে
যেমন পৃথিবী এখন দেখে নিজেকে নিজের অন্তর্ঘাতে ।
অতঃপর কৃষ্ণা নদীর খতিয়ান
কৃষ্ণা নদীর পানি এসে পড়ে কর্ণফুলি বরাবর
আশে পাশে ফসলের মাঠগুলো চেয়ে থাকে প্রবাহে
অনন্ত আকাশের দিকে দ্যাখে প্রতিদিন আলো
কালো শকুনী পায় মৃতের গন্ধ যুগপৎ।
ইতিমধ্য মাপা হয়ে গেছে পৃথিবীর দৈর্ঘ্য প্রস্থ
পরিসংখ্যান হয়ে গেছে মাটি থেকে সূর্যের দূরত্ব
এলিয়েনরা এখনো রিফিউজী বলে তুষার মানব
তাবৎ দেশের চোখ এখোন এখানে অধরা
পৃথিবীর আহ্নিক গতি বার্ষিক গতি দেখে ধ্রুবতারা।
সংবাদের প্রথম পৃষ্ঠায় থাকে অবাক করা চমক
কোন এক দর্জি দেখে পৃথিবীর দৈর্ঘ্য প্রস্হ
বেরসিক কবি খাতা কলম নিয়ে হাসে অকপট
সৃষ্টির গতিপথ দেখে যখন পরমাণু রকেট
বোমা ফাটে সবুজ পৃথিবীর ফসলের মাঠে।
সুন্দরের দর্শন থেকে ছুটে আসে পাহাড়ী ঝর্ণা
জমির ফসলেরা চেয়ে থাকে মহাজনের হাট
সৃষ্টির গতিপথ রোধ করে গণিতের ধারাপাত
ঘাতক হাটে দ্যাখে তার অবয়ব নিজের আয়নায়।
অতঃপর কৃষ্ণা নদীর পানি গড়ায় বঙ্গোপসাগরে
কারণ প্রত্যেক নদীর একটা যোগসূত্র আছে নদীর সাথে
যেমন পৃথিবী এখন দেখে নিজেকে নিজের অন্তর্ঘাতে ।
অরণ্যের গান
অরণ্যের কথা শুনবো বলে
কৌতুহলে তার কোলে বসি
সে আমায় বাতাস করে মনটা সবুজ হলে
রহস্য মূলে শোনায় সৃষ্টি
নবীনের রোমাঞ্চকর ঝর্ণার গান ঝরা পাতার বোলে
মৃত্তিকা কুড়ায় স্মৃতির রজনীগন্ধ্যা বিদায়ের মাসুলে।
প্রয়োজনের এপিঠ ওপিঠ
প্রায় গোলাকার একটি বৃত্তে দর্শন দাঁড়িয়ে
অনেক পাতার মধ্যে বিচরণ করে সময়ের
অজস্র আলো নিয়ে আলোকিত সূর্য
তবু পৃথিবী নামক গ্রহে অন্তহীন আঁধার।
কল্পনার কোন আকার নেই তবু তাকে
দেখা যায় নদীর অববাহিকায় চরের মাঝে
জীবিত অথবা মৃত বৃক্ষের কাছে আনাগোনা করে
আকাশ তার নীল ছায়ায় সুগন্ধি ছড়ায়।
বিজ্ঞানের আলোক বর্ষ পৌঁছে গেলে অনেকদূর
চোখে পড়ে গুহার গর্তে বুদ্ধিদ্বীপ্ত মানুষ ঘুমায়
যদিও পোষা প্রাণীরা রাত কাটাতে ভালবাসে সাজানো ঘরে
অথচ অরণ্যের মুক্ত বাতাসে অবাধ বিচরণ তার।
সময় এগিয়ে যায় মেঘের আড়ালে বৃষ্টি হয়ে
সাগরের স্রোতে মিশে যায় প্রতিদিন সে
জল হয়ে সৃষ্টি রক্ষা করে ঝিনুকের আবরণে
হৃদয়ের স্পন্দন নিশ্চিত ঘুমিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়ে।
বিশেষ দর্শনে জলের আরেক রূপ বরফ
বাতাসের উষ্ণতায় গলে ক্রমাগত ধারায়
শূণ্য থেকে শূণ্যে গেলে নিন্ম-চাপের মগডালে
উন্মাদনার আবহে উত্তাল পৃথিবী নড়েচড়ে বসে।
ক্ষুধার অন্তর্দহনে প্রাণী হত্যা করে এক অপরকে
তবে কী প্রয়োজনে দর্শন মানে অন্ধকার দর্শন মানে আলো
যেমন ভূপৃষ্ঠের একপ্রান্তে যখন আলো অন্য প্রান্তে
অন্ধকার ছেয়ে ফেলে জগতের সকল সভ্যতার মনন!!
প্রদীপ ভট্টাচার্য,
অণুকবিতা—
পথ ১
মধ্য গগন থেকে তাকিয়ে আছে সূরুয
মেঠো পথ বেয়ে গ্যাছে সরল রোদ
চিরকুটে লেখা নেই গন্তব্যের ঠিকানা
শুধু হেঁটে চলেছে অন্তবিহীন ক্লান্তিহীন চারণা
ছুটে আসে সবুজ পাতা থেকে কালো ছায়া
আসমান পড়ে মাথায় চোখ তার অমাবশ্যা।
পথ ২
অচেনা পথের বাঁকে পথ চলে গেছে
পথহারা পথিক খোঁজে পথের শেষে
একটা ঠিকানা নামহীন গোত্রহীন সার্বভৌম
স্বপ্ন হাঁটে স্পন্দিত বুকে ছন্দ তোলে অথচ
লাল নীল পতাকা উড়ে টাইফুনের পিঠে
উড়ে ঘরবাড়ী বাস্তুহারা মানুষ তবু ছবি আঁকে।
পথ ৩
একদিন ঘুমিয়ে ছিলো সে সংসার পেতে
কোন এক বাদলা দিনে ওঠে পিচ্ছিল পথে
দ্যাখে চারিদিকে সীমানা প্রাচীর উঠেছে।
বর্তমান থমকে আছে ভবিষ্যত অজানা হাটে
বিকি-কিনি করে দরপতনের আবিষ্কারক ছকে
মূল্যহীন চাহিদা তার বসত গড়ে মাটির গর্তে।

টান
নিখিল রঞ্জন গুহ,
স্বপ্ন ভাঙা সে এক দুঃসহ বেদনা,
ছোট্ট শিশুর বেড়ে ওঠা শরীরে
জড়িয়ে থাকা ঘ্রাণ,বিষন্ন মন, আকুলি প্রাণ
নিশি ডাকে ভেসে চলা, ছিন্ন নাড়ির টান ।
কেনিয়ার সাফারিতে নিস্প্রাণ বেদনায়
কানে কানে বলে যায়
তিস্তার ঢেউ ভাঙা ছন্দে নূপুরের গান।
শৈশবের স্মৃতি ভেজা নিত্যদিনের কুঁড়ে ঘরের কূটকাচালী ,
নদী চর,বন কুলের ঝোপঝাড় টেনে নেয় মন
নিঃশব্দে কাছে, আরো গভীরে—বেজে ওঠে ঘুঙুরের তান ।

অশোক ব্যানার্জী
আমার বাংলা।
আবার আসব ফিরে এই বাংলায় জড়ালে মাগো এ কোন মায়ায় গ্রামের মেঠো পথ,
সবুজ ধানের মাঠ বেলা শেষে নিস্তবদ্ধ পুকুর ঘাট।
এখানে ঘুম ভাঙ্গে পাখিদের ডাকে সকাল ভাসে শিশুদের কলতানে তপ্ত দুপুর ঘুঘুর ডাক ঘুম নামে চোখে সন্ধ্যায় পাখি ফেরে নিজ নিজ শাখে।
এই বাংলার বায়ু মাটি জল মায়ের স্নেহের মতই কোমল জনমে জনমে আসব ফিরে এই বাংলায় রব মাগো তোমারই ছায়ায়।
আজ চারদিকে শুধু অবিশ্বাস শয়তানেরা ফেলছে নিঃশ্বাস তবু মনে আছে প্রত্যয় সেই দিনে ভালবাসারই হবে জয়।

নাটাই ছাড়া ঘুড্ডি
জাহাঙ্গীর চৌধুরী
ঘুড্ডি উড়ে আকাশ জুড়ে
নাটাই নাইরে হাতে।
ঘুড্ডি ঘুড্ডি কাটাকাটি
চলছে দিনে রাতে।
ঘুড্ডি এখন খুঁজে বেড়ায়
নিত্য ঊর্ধ্ব গগন।
নাটাই ছাড়া ঘুড্ডির গতি
কেমনে হবে দমন ?
দর্শক সবাই দেখছে শুধু
মুখেতে নেই ভাষা।
শিলা হস্তে নাটাই ধরলে
মিটবে সবার আশা।
ঈদগাহ, চট্টগ্রাম।

তোমার মামার বাড়ি
অজিত বৈরাগ্য
ওই যে দূরে মাঠের পরে
বাঁ হাতের ওই ,রাস্তা ধরে।
পাকড় গাছটির পাশ কাটিয়ে
তোমার মামার বাড়ি ।
গেলে পড়ে মজা হবে
চলো তাড়াতাড়ি ।
পা চালিয়ে জলদি করে
দেখ না খোকা ওই,তাকিয়ে ।
দূরে ওই,উড়ছে লাল পাড় সাদা
শাড়ি ওইটি,তোমার মামার বাড়ি ।
আর একটু চলনা বাবা, আমি
কি আর কূলে নিতে পাড়ি।
এখন তুমি বড়ো হয়েছো
আর হয়েছো ভারি।
তোকে ভুলায় সাদ্দি কার
আয় না একটু কাছে ।
সাঁঝের বেলা শিয়াল আসে
পড়লে এথা পাছে।
বনবিড়ালেরা ওই,বনের ধারে
গাইবে বসে গান।
ভয়ে তখন যাবে আমার প্রান
বুঝবি তখন মা কোথায় ।
আর কোথায় মামার বাড়ি
দূর আকাশে চাঁদের বাড়ি,
দেবো আমি পাড়ি।

আমার দাদিমা
মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান
ছোট্ট কালে হঠাৎ করে মা গেলেন মরে,
‘মা কোথায়?’ প্রশ্ন করি দাদির গলা ধরে।
করুণ মুখে দাদীমা বলেন আদর করে,
‘ঐ আকাশের তারা হয়ে আছেন স্বর্গ-ঘরে।’
রাতের তারা দেখে দেখে রাত করেছি পার,
জনমদুখিনীর ছবিখানি পাইনি খুঁজে আর।
দুখের সাথি দাদি মা আমার কাঁদেন সারা রাত,
নিরব হয়ে চেয়ে থাকি গলায় রেখে হাত।
সন্ধ্যাকালে পড়ার সময় বলেন কোমল স্বরে,
‘লেখাপড়া করে যে জন, গাড়ি-ঘোড়া চড়ে।’
লেখাপড়া করলাম দিদি পেলাম না তো গাড়ি,
লেখাপড়ার নেই প্রয়োজন করতে গাড়ি-বাড়ি।
একদিন এক সন্ধ্যাকালে হাতটি নিয়ে থাবায়,
বলেন আমায়, ‘যাচ্ছি চলে, ডাকছে তোরই দাদায়।’
চোখ ছল ছল বললো আমায় রেখে মাথায় হাত,
‘কাঁদিস না তুই আমার তরে, জাগিস না আর রাত।’
খেলার সাথী দাদি মা যে আমার সে-ই যে গেলো চলে,
আমায় ফেলে একলা ঘরে আর কিছু না বলে।
মা-র বিদায়ে হৃদয় জ্বলে ঘুম আসে না চোখে,
দাদীমার ও জন্য আমার অশ্রু ঝরে শোকে।
মা ও দাদীর লাগি’ থামে না কান্নারা,
বুকের ভেতর পাথর গলে ঝরে অশ্রুধারা।
আল্লাহ তোমায় সেজদা করে বলছি তুলে হাত,
সকল মা-ও দদাদী কে তুমি দানিও জান্নাত।