কবিতাসমগ্র – ০১

শাপলা বড়ুয়া

অমিত শক্তিধর
শাপলা বড়ুয়া

বলুক সবাই, বিকলাঙ্গ আত্মা আমি
বলুক সবাই, অন্য সবার মতো নই আমি,
তাতে কী যায় আসে, আমি আমার মতো
নিজের হাতে গড়েছি আমার নিজ জগত,
এই জগতে যখন ইচ্ছে আমি ডুব দিতে জানি।

সভ্য, ভব্যতা নিয়ে এতই যখন বড়াই তোমার
আমার মতো শুদ্ধ জগত আছে তোমার?
অসভ্যদের গুড়িয়ে, চাইলে নতুন কিছু গড়তে জানি
তোমাদের মনের কথা যত একে একে পড়তে জানি।

জানুক সবাই, অন্যদের মতো নই আমি,
এই অসভ্য সমাজ কখন, কী দিয়েছে আমায়?
তোমরা সুস্থজন, অসুস্থ কারখানা গড়েছো দিনকে দিন
জেনে রাখো, হান্নাহ,আলঞ্জো, হপকিন্সদের সতীর্থ আমি
আমার হাতেই জ্বালাবো একদিন নতুন সবুজের আলো‌।

Kobita

চয়েজ
সৌদামিনী শম্পা

সৌদামিনী শম্পা

যদি একটা ফোন আমার মন ভালো করে দিতে পারতো!
যদি কোনো একটা নম্বর থেকে আসা মেসেজে অজান্তেই ঠোঁটের কোণে ফুটৈ উঠতো হাসি,
যদি কোনো অডিও মেসেজে বাজতো বেসুরো গলায় গাওয়া প্রিয় গানের একটা কলি, খুব ভালো থাকতাম!

যদি আজ নবমীর সন্ধ্যেটা কেটে যেতো আরো এক নরম, অল্প কাঁপা পাঁচটা আঙুল, মুঠির মধ্যে চেপে,
মনে হত রাজ্য জয় করেছি!
যদি এক অনভ্যস্ত শাড়ির খসখস নিরন্তর বেজে যেত কানের পাশে, মঞ্জীরার ছন্দের মত,
যদি তার খোলা চুলের স্পর্শ, দুষ্টু হাওয়ার হঠাৎ পাগলামিতে মাঝে মাঝেই আঁধার করতো আমার দুচোখ, তবে খুব ভালো থাকতাম!

দূরে বেজে যাওয়া চেনা গানের কলি,
কোনো এক অজানা তন্বী বা স্থুলকায়া আমার জন্যে রাখা মন,
কোনো এক ঘেমে লেপটে যাওয়া কাজল ক্লান্ত দুচোখ,
আর নতুন জুতোয় সারারাত হেঁটে পায়ে সদ্য যন্ত্রনাময় ক্ষত নিয়ে বিধ্বস্ত বাড়ি ফেরা কল্পপ্রেমিকার কল্পনায়,
আমি মন্দ নেই কিন্তু!

আসলে ভালো থাকাটা একটা চয়েজ, খারাপ থাকাও!
আমি প্রথমটা বেছে নিয়েছি!

sahityapatrika

ঝরা পাতা
প্রশান্ত গিরি

ঝরা পাতা প্রশান্ত গিরি

ঝরা পাতা… যাও গো বলে
এ জীবনে তুমি কি পেলে ?
গ্রীষ্ম কি তোমায় করেনি বরণ ?
বর্ষা কি তোমার ধোয়নি চরণ ?
ভ্রমর বসন্তে গুনগুনিয়ে …
যায়নি কি তোমায় গান শুনিয়ে ?
শুধু কি সেজেছ বাহারি সাজে…
আর পুড়েছ নিতি প্রখর তেজে ?
কেউ কি বাসেনি তোমায় ভালো ?
সব শুনবো …তুমি আমায় বলো
কোন অভিমানে মুখ হয়েছে লাল ?
অশ্রু সিক্ত তোমার অধর গাল |
দেখেছিলে কত স্বপ্ন মধুর …
সে যে স্বপ্ন হয়েই থেকেছে সুদূর
ভেবেছিলে …
দখিনা বাতাসে দোলাবে মাথা
তারাদের সাথে বলবে কথা …
কোকিলের সাথে গাইবে গান
জড়ের বুকে ঢালবে প্রাণ |
জানি …
পাওনি কিছু , নিঙড়ে দিয়েছ তবু
হাসি মুখ সদা , নেই অভিযোগ কভু
দূর হতে একা চাঁদ কাঁদে এক সাথে
জোছনা বিছিয়ে জাগে বিনিদ্র রাতে |
আমি খুঁজছি …
পাণ্ডুলিপি তোমার না বলা কথার
ওরা নির্বাক সাক্ষী কত নীরব ব্যাথার
এত আলো পৃথিবীতে তবু কাটেনি তিমির
কেঁদে কেঁদে ঝরে গেছে ভোরের শিশির |

ঝরা পাতা প্রশান্ত গিরি

নিশীথিনী
মোঃ আতাউল্লাহ আল মাহমুদ

মোঃ আতাউল্লাহ আল মাহমুদ

কে তুমি?
কল্পিত বাতায়ন পাশে
বারে বারে তুমি এসে
চলে যাও মৃদু হেসে
কোন কথা না বলিয়া।।যুগ যুগ ধরি শুধুই শুধাই
কোথা হতে আস, ঠিকানা কোথায়?
সকল জিজ্ঞাসা গেলযে বৃথাই
শুধু চলে যাও, নিরব হাসিয়া।

হস্ত মেলিয়া যদি ছুঁতে চাই
তখনি দেখি আর কেউ নাই
চুখের পলকে দিগন্তে মিলাও
শুন্য বাতায়ন, শুধু আমি একা
দৃষ্টিসীমার শেষে অসীম দিগন্ত রেখা—–
আর আমি শুধু একা, বড্ড একা।।

কতবার তোমায় করেছি বারণ
তবুও কেন তব এই নিষ্ঠুর আচরণ?
নির্লজ্জের মত ক্ষনে ক্ষনে এসে
কোন কথা না বলে যাও শুধু হেসে
চলে যাও শুধু , আমায় মোহে ফেলিয়া?

হে নির্বাক?জনম কেটে গেল
তোমার হাসির রহস্য খুঁজিয়া
তুমি ধরণীর কেহ,
নাকি তব বাস কোন ভিনগ্রহ ?
অদ্যাবধি পাইনি বুঝিয়া।

আসলে তুমি কেহ নও
স্বর্গের হুরী নও
মর্তের নারীও নও
নও তুমি কর্মের শুভ পুরস্কার।
তুমি আমার সকল অপুর্ণ বাসনার
শৈল্পিক তিরস্কার।।

মোঃ আতাউল্লাহ আল মাহমুদ

শিখণ্ডী ঈশ্বর
ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ

 শিখণ্ডী ঈশ্বর                ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ

তুমি যদি সেবাদাস
তুমি কেন ঈশ্বর হতে চাও
তুমি যদি ঈশ্বরের ধ্বজাধারী
তুমি কেন ঈশ্বরের ত্রিশূলে রক্ত চাও

ঈশ্বরের ডি এন এ
কি দেখেছো কখনও
কার কার রক্তে আছে মিল
কিম্বা নেই কার রক্তে,তা কি জানো

তুমি মন্দিরে সাজিয়ে রাখো
বোবা কালা বিগ্রহ
অথচ নিরস্ত্র কবিতার খাতায়
ঈশ্বরের স্তাবকতা খোঁজো

তোমার পাথরের পুতুল
তোমারই কথায় ওঠে বসে
তা বলে ভেবো না
কবির বুকের প্রতিটি কোষও তোমার বশে

তুমি হতে পারো হিটলার
হতে পারো মুসোলিনি , চেঙ্গিস খান
মুখোশের আড়ালে সবাই এক
তোমরা এক পেয়ালা থেকেই করো পান

তোমার সঙ্গে ডি এন এ হলে বেমিল
জানি তৈরী বধ্যভূমি
কবির প্রতিটি রক্তের ফোঁটায় হবে
হাজারো কবিতার জন্মভূমি।

০৪.১০.২০২২

 শিখণ্ডী ঈশ্বর                ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ

সমঝোতা শূন্য সুখ
আব্দুর রহমান

সমঝোতা শূন্য সুখ আব্দুর রহমান

প্রতিটি শব্দের ভেতর
বাস করে আর একটি পৃথিবী
তাকে ধরা ছোঁয়ার কথা বললে আমাদের ভাগ্যগুলো ভেসে ওঠে

শব্দের অর্থ পাখির উড়ে যাওয়ার পথে
আমাদের পরিচিত বলয়
গরম লোহার রড
আগ্নেয়াস্ত্র

এমন উন্মাদ এই সব হাত অনুগত চোখ
হেঁটে চলে গেল
আর আমাদের ঠিকানা অস্থির অবয়ব
এঁকে দেয় জীবনের সমঝোতা শূন্য সুখ।

সমঝোতা শূন্য সুখ আব্দুর রহমান

দেখব যে শ্রীবদন
বিশ্বনাথ পাল

দেখব যে শ্রীবদন বিশ্বনাথ পাল

নবমীর নিশি ফুরিয়ে গেলেও
হবে না যে ভোর,
দুঃখের দিনে তুই বিহনে
খাটবে না আর জোর।
এই সাজ গোজ, এই প্যাণ্ডেল
এই যে দীপের আলো,
মন খারাপের সময় এসে
করবে যে সব কালো।
আশার বাসা সর্বনাশা
হবে ছন্নছাড়ার মাঠ,
ফুলগুলো সব পড়বে ঝরে
গাছ হবে সব কাঠ,
উনুন পুজোর জোগাড় হয়ে
ছড়াবে যে ধোঁয়া
কৈলাসেতে থাকবি বাছা
পাব না আর ছোঁয়া,
সোনার কাঠি রূপোর কাঠি
হবে অকেজো যে তখন
ঝাপসা চোখেও দেখব
কন্যে তোরই শ্রীবদন ।।

Kobita

সবার উৎসব
সত্যেন মন্ডল

সবার উৎসব সত্যেন মন্ডল

একঘেঁয়ে জীবনে এখন উৎসব এলে, ধর্ম বর্ণ জাতি ভুলে
মাতছি এখন আনন্দেতে, সব ভুলে আর হৃদয় খুলে ।

দুর্গতিনাশিনী দুর্গা মা ,এখন তিনি সার্ব্বজনীন
তার পূজাই দুর্গোৎসব, আমরা সবাই জানি।
পূজাতে তাই উদার মনে, হৈ হুল্লোড় করি
ধর্ম যার যার উৎসব সবার, এটাও আমরা মানি।

সংকীর্ণতার প্রাচীর ভেঙে, উদার মনে আজ
আলোর আকাশ চাই —-
হাতেতে হাত মিলিয়ে ,খুশির ঈদুৎসবেও তাই
উঠি মেতে ভাই ভাই।

জগৎ জীবকে ত্রান করতে, এসেছিলেন যিনি
জগৎবাসী যার কাছে, এখনও আছেন ঋণী ।
জন্মদিনের তার উৎসবকেই, খ্রীষ্টোৎসব বলে জানি
সেই উৎসবেও উঠছি মেতে ,জ্ঞানি অজ্ঞানি জ্ঞানিগুণী।

মানবতাবাদের এই যুগেতে, আমরা সবাই মানুষ
এখন আমরা আপন সবাই ,ফিরেছে মোদের জ্ঞান হুঁশ ।

 Satyen Mondal
ঠিক তখনই রণেশ রায়

ঠিক তখনই
রণেশ রায়

লবণাক্ত স্ফটিক স্বচ্ছ ফেনিল ঢেউ
যখন আছড়ে পড়ে তোমার ওপর
উগড়ে দেয় গরল তোমাকে লক্ষ্য করে
যেন এক কালনাগিনী।
দীঘার সমুদ্র তট থেকে আমি দেখি
দেখি তোমার ভয়ার্ত মুখ।

ঠিক তখনই দেখি আমি
তোমার অন্তরের সেই দানবী জেগে ওঠে
দেখি ওর চোখের সে ভয়ঙ্কর চাহুনি
সে জেগে ওঠে তার দৃপ্ত ভঙ্গিমায়,
তাকে দেখি তার নাচের মুদ্রায়,
ভয়ংকরী সে ঝাঁপিয়ে পড়ে—–
দানবীর রুদ্রমূর্তি দেখে সমুদ্র পিছু হটে
সে তার ফণা নামিয়ে আনে
তুমি সাঁতরে চলো তার ঢেউ এ ঢেউ এ
নীলাভ সে তোমার আলিঙ্গনে।

sahityapatrika

ইচ্ছা পূরণ
মোবারক হোসেন

মোবারক হোসেন

একটি ইচ্ছা পূরনের আশায়
দিন গুনি,রাত গুনি
হাজারো প্রহরের ঢেউ ভেঙ্গে
আমায় হত্যা করে স্বপ্ন,
নষ্ট করি নয়নের জল।
আকাশকে উল্টে খুজি
নদীর গতি রোধ করি
পাহাড়ের পাষান বুকে মাথা ঠুকে
আহাজারি করে হৃদয়ের কান্না
গলা চেপে ধরেও শুধু পারিনা
সময়কে ঠায় দাড়িয়ে রাখতে।
কবে কখন মনের সোনালী আলোয়
কার মনের ছায়া পড়ে ছিল
আজও সেই ছায়া ঠায় দাড়িয়ে আছে
শুধু সময় দাড়িয়ে নেই
তার হিসাবের খাতায় কেটে গেছে বিশটি বছর।
মানুষের মন এমন কেন !
পৃথিবীতো এমন নয়,
মাটির বুকে সূর্যের আলোয়
গাছ,পাখি মেঘের কত ছায়া পড়ে
তাদের ছায়াতো ঠায় দাড়িয়ে থাকেনা-মুছে যায়;
বিশ বছর আগে দেখা সেই ছায়ায় দাড়িয়ে
আজও খুজি সেই ছায়ার মানুষটিকে
যদি কখনো চোখের স্বাদ মিটে
মৃত্যুর আগে সেটা হবে আমার ইচ্ছা পূরণ।

Kobita

পুঁজিবাদ
দীপক বেরা

পুঁজিবাদ  দীপক বেরা

জীবনের অলিগলিতে এখন দেদার পণ্যায়ন
জটিলতার সূচক হয়ে নিত্যযাপনের অংশীদার
সমাজ, রাষ্ট্র, পররাষ্ট্র নীতিতে অর্থনীতির মারপ্যাঁচ
রাজনৈতিক সমকামিতায় বুঁদ, অযুত সন্মোহন
সেনসেক্স এর গ্রাফ ওঠে নামে
শেয়ার বাজার ঘোড়ার ডিমে দিয়ে যায়— ‘তা’
সন্দিগ্ধ সম্ভাবনায় দারিদ্র মোচনের অঙ্গীকার
শুধু মানুষে মানুষে বিচ্ছেদ, কাটাছেঁড়ার ব্যবচ্ছেদ
ফাস্টফুডের চায়না প্রজনন, অর্ডার দিতে লম্বা কিউ
প্রযুক্তির বারকোড লেবেলে নির্ধারিত গুপ্ত মূল্য
মূল্যবোধের শুকনো চরে লাঙল চষে ব্যর্থ কৃষক
লাঙলের ফলায় উঠে আসে কেবল কার্বন কালি
নাকের সামনে ‘অচ্ছেদিন’-এর মূলো ঝোলে
সুতোয় বাঁধা নীতিহীন নেতৃত্বের লম্ফ-ঝম্প
আসলে, নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত তারা
তারপর, হারিয়ে যায় সীমালঙ্ঘনের চোরাবালিতে…

আমাদের শিরায় শিরায় পূর্বপুরুষের রক্ত
সংগ্রামী চেতনার দ্রোহ নিয়ে শিরদাঁড়া বেয়ে
কখনও কখনও এই কাঙাল বুকে নেমে আসে
কিছুদিনের সিলেবাস বহির্ভূত আগুনমালার পাঠ
অতঃপর, অপেক্ষার দিন গুনি…
গর্জে ওঠে রক্তচক্ষু, তর্জনী আঙুল—
প্রতিবাদ মিছিল আজ ভীত, ক্লান্ত ভীষণ;
বিলাসিতার শর্টকাট হুকে আটকে গেছে পুঁজিবাদ!

টালিগঞ্জ, কোলকাতা।
০৪|১০|২০২২

sahityapatrika

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *