#jibonto lash

নামঃ,,,” আমি জীবন্ত লাশ,,,

—–“তুমি না!!!আজকাল খুব জ্বালাও। মানুষের সামনেও। উফফ….তোমাকে নিয়ে আর পারিনা চিনি।। ”
আমার খরগোশ। নাম দিয়েছি চিনি। ও খুব মিষ্টি দেখতে যে!! তাই!!ওর সাথে আমার নামটা মিলানোর জন্যও দিয়ে থাকতে পারি বলতে পারো। মা-বাবা, দাদু, দিদিভাই, নানু, চাচ্চু, চাচি মা সবাই আমাকে অনেক আদর করে। তাই আমাকে সবাই ভালোবেসে নাম দিয়েছে” মিষ্টি মা “।খুব মিলেমিশে থাকি আমরা। খুব বড় একটা পরিবার। কিন্তু বাসায় আমার বয়সী কেউ নেই যার সাথে খেলবো। তাতে কি!! আমার পরিবারের সবাই আমার সাথে খেলে। আর চিনি!! ও তো আমার সাথেই সারাক্ষণ।।

আমি মাকে বলেছি,আমাকে একটা খেলার সাথী গিফট করতে। মা বাবা বলেছে 5 থেকে 6 মাসের মধ্যেই নাকি সে আমার বাসায় আসবে। আর সে নাকি মায়ের পেটে আছে! হা হা..আমি প্রথম প্রথম বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু ইদানিং দেখি মায়ের পেট ফুলে উঠছে! তাই বিশ্বাস করছি একটু একটু ।।

চাচ্চুর খুব জ্বর হয়েছিল।। কিছুদিন আগে।আজ ভালো হয়ে গিয়েছে।তাই সবাই মিলে পিকনিকে যাচ্ছি। আমাদের বাড়িতে ভালো কিছু হলেই পিকনিকে যাই আমরা। তাই আজও যাচ্ছি। আমরা সবাই।।রাঙ্গামাটি যাচ্ছি। বেশি দূরে না।।বাসা থেকে ৪৮কি.মি.।।

বাসে উঠলাম সবাই।মা,আমি,বাবা,চাচ্চু,চাচিমা,দাদু,দাদিমা,নানু আর আমার কোলে আমার চিনি।বাবা শুধু মজা করে।। আমায় বলছে,”আমার মা-টা এমনিতেই এত মিষ্টি সাথে চিনিকেও কোলে নিয়েছে।পিপড়া ধরলে কি করবে মা!”
“ইশ,,,বাবা!তুমিও না!”
বাবা আমকে ধরে আদর করছে।।বাবা এমন ই।আমকে পেলে তার তার সব ব্যথা দূর হয়ে যায়। চাচ্চু আমকে চকলেট দিয়েছে।চাচিমা নতুন জামা কিনে দিয়েছে।লাল!আমি ওইটাই পরে এসেছি।সবাই বলেছে আমাকে নাকি পরির মতো লাগছে।।নানু আমকে বলেছে,আমি নাকি লাল গোলাপ 🥀।।হাহাহা।।।দাদু, দিদিভাই একসাথে চুপ করে বসে আছে।আমি বললাম,”এই তোমাদের কি হয়েছে?”
তারা বলল,”তাদের মন নাকি কু গাইছে।।কিছু একটা নাকি বাজে হবে।।”আমি একটা ধমক দিলাম।বললাম,”এইসব বললে কিন্তু আমি যাবনা!”
আর তারা চুপ হয়ে গেল।তারা আমকে তাদের “চোখের মণি” বলে।।

বাস চলছে।।মাঝ রাস্তায় হঠাৎ গাড়ির কি একটা সমস্যা হলো।ড্রাইভার আঙ্কেল বলল,টায়ার নাকি বদলাতে হবে।১০মিনিট লাগবে।১০মিনিট পার হয়ে গেল।তিনি আসেন না।সেই যে গেছে টায়ার আনতে!!মা আমকে বলল,”চল বাহিরে দাড়াঁই একটু।”তাই আমরা গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম।আমারা দেখলাম বাসের পাশে একটা বিদ্যুৎের থাম্বা।খুব ই কাছে।আশেপাশে দেখার মতো কিছু নেই। একটু দূরে চলে এসেছি হাটতে হাটতে। মা বলল,”চলো এখন যাই। আমার ভালো লাগছে না।। ”
“হ্যাঁ, চলো মা। ”
দূর থেকেই দেখতে পেলাম গাড়ির আঙ্কেল টা টায়ার নিয়ে এসেছেন। এবং লাগানোর জন্য কিছু করছিলেন। আমরা দূরে ছিলাম।।

আমরা দূরে ছিলাম স্পষ্ট দেখা যায় না।তো এরপর আমি কিছু বুঝতে পারলাম না। আমার মা,থমকে গেল এক মুহূর্তের মধ্যে কি হয়ে গেল। মনে হচ্ছিল সময় থেমে গেছে। এটাই শেষ নিঃশ্বাস।আমরা দেখলাম হঠাৎ ওই বিদ্যুতের খাম্বা বিস্ফোরণ হল।

আর আমাদের বাসটা একদম পুড়ে ছাই হয়ে গেল। ঝাঁঝড়া হয়ে গেল সব মানুষ। আমার বাবা, চাচ্চু, নানা, দিদিভাই,দাদু, চাচিমা কেউ রইল না। সবাই পুড়ে ছাই হয়ে গেল। আমার মা হঠাৎ পড়ে গেল। আমি মাকে ডাকি মা সারা দেয় না। আমি মার পাশে বসে কান্না করছি।হঠাৎ চিনি মার ফোনের কাছে গেল। তারপর আমি মামাকে কল দিলাম। তারপর মামা এলো। এইসব দেখে মামার গায়েও শক্তি নাই । আমাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার বললেন মার নাকি কোমর চলে গেছেন। মার বাসায় থাকি গত সাতটি বছর। এখন আমি কলেজে পড়ি। একদিন মাকে ঘুম পাড়ার ছিলাম। মা একেবারেই ঘুমিয়ে গেল। আমাকে ছেড়ে মা ও চলে গেল। পাশে থাকলো সেই চিনি ।কিন্তু একদিন আমি আর চিনি বৃষ্টিতে ভিজলাম। কিন্তু আমার চিনিও আমাকে ছেড়ে চলে গেল। এখন আর জীবনের কোন মানে নেই।আমি এখন জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে আছি। আমি একটা জীবন্ত লাশ।।।।।

Noushin Akter

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *