স্তন ক্যান্সার সচেতনতা
ইমরান খান রাজ
স্তন ক্যান্সার ! এক ভয়াবহ মরনব্যধির নাম। মেয়েদের যত ক্যন্সার হয়, তার ২৩ ভাগই হলো স্তন ক্যান্সার। সারা বিশ্বে প্রতি আট জন মহিলার মধ্যে একজন স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বহন করে থাকে। বাংলাদেশেও প্রতি বছর নতুন প্রায় বিশ হাজার নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। শুরুর দিকে স্তন ক্যান্সার ধরা পড়লে তা সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভব। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে খুব সহজে এই বিপদ এড়িয়ে চলা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার নির্ণয় করা খুবই সহজ এবং এর মাধ্যমে প্রায় শতভাগ ক্যান্সার সহজে নিরাময় করা যায়। সাধারণত ৫০ বছরের বেশি বয়সী নারীদের মধ্যে এ ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে। আর ৪০ বছরের উপরের নারীরা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে৷ তবে সব বয়সের নারীরাই স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকে। এবিষয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, মাসিকের পরের সাত দিন নিজে নিজেই স্তনে কোনো চাকা আছে কিনা তা দেখে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, সামান্যতম অবহেলার ফলে হতে পারে মারাত্মক বিপদ।
অক্টোবর মাস’কে পিংক অক্টোবর বলা হয়ে থাকে। পুরো বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর ১০ অক্টোবর তারিখে স্তন ক্যান্সার সচেতনতার দিন হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ১০ অক্টোবর স্তন ক্যান্সার সচেতনতার দিন হিসেবে ধরা হলেও পুরো অক্টোবর মাস জুড়েই পালন করা হয় স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম। বাংলাদেশেও অক্টোবর মাসে স্তন ক্যান্সার বিষয়ক সচেতনতামূলক কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে আমাদের দেশেই স্তন ক্যান্সারের সকল আধুনিক চিকিৎসা করানো সম্ভব। বাংলাদেশ সরকারের সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্তের ফলেই এক্ষেত্রে আমরা এতটা এগিয়ে যেতে পেরেছি। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট এবং হাসপাতালে রয়েছে বিশেষায়িত ব্রেস্ট ক্যান্সার ইউনিট। এছাড়া বেসরকারি সেক্টরেও আছে উন্নত-আধুনিক সব চিকিৎসা সেবা।
ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. নাজনীন নাহার বলেন, স্তন ক্যান্সারে শুধু নারীরা নন, পুরুষেরাও আক্রান্ত হতে পারেন। তবে নারীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি থাকে। দেরি করে সন্তান গ্রহণ বা যাদের সন্তান নেই, যারা সন্তানকে বুকের দুধ পান করায় না, এছাড়া খাদ্যাভ্যাসে শাকসবজি বা ফলমূলের চাইতে চর্বি ও প্রাণীজ আমিষ বেশি থাকলে এবং প্রসেসড ফুড বেশি খেলে, এবং অতিরিক্ত ওজন যাদের রয়েছে তাদেরও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। চিকিৎসকদের মতে, প্রায় ১০০ ভাগ স্তন ক্যান্সার-ই নিরাময় যোগ্য। প্রাথমিক অবস্থায় স্তন ক্যান্সার সনাক্ত করতে পারলে এবং শুরুর দিকেই যথাযথ চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারলে স্তন ক্যান্সার শতভাগ নিরাময় করা সম্ভব। যেসব লক্ষণগুলো দেখা মাত্রই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে সেগুলো হচ্ছে- ১) স্তনে চাকা বা পিণ্ড দেখা দিলে৷ ২) স্তনের বোঁটার কোন ধরনের পরিবর্তন, যেমন ভেতরে ঢুকে গেলে, অসমান বা বাঁকা হয়ে গেলে। ৩) স্তনের বোঁটা দিয়ে অস্বাভাবিক রস বের হলে। ৩) স্তনের চামড়ার রং বা চেহারায় পরিবর্তন হলে এবং ৪) বাহুমূলে পিণ্ড বা চাকা দেখা গেলে। এইসব লক্ষণ নিজের শরীরে দেখা মাত্রই দ্রুত চিকিৎসকের সেবা গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশে এখনো ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতার অভাব আছে। অনেকে লজ্জার কারণে আবার অনেকে ভীত হয়ে নিজের স্তন সম্পর্কিত সমস্যাগুলো গোপন রাখে৷ আর তাঁদের এই গোপন রাখা স্বভাবের কারনেই দেখা দেয় বিপদ। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় যারা চিকিৎসা নিতে আসেন, তাদের বেশির ভাগই আসেন প্রায় শেষ পর্যায়ে। যার ফলে সেইসব রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা দিয়ে সাড়িয়ে তোলা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠে। তাই আমাদের সকলের উচিত স্তন ক্যান্সার বিষয়ে পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা তৈরি করা। মনে রাখতে হবে, স্তন ক্যান্সারে নয় ভয়, সচেতনতায় হবে স্তন ক্যান্সার জয়। স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সকল নারীদের সামনে এগিয়ে আসতে হবে। সচেতনতার পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের নারীদের স্তন ক্যান্সারে আধুনিক চিকিৎসা সেবা গ্রহণে সহযোগিতা করতে হবে। লজ্জা আর ভয় নয়, বরং সাহসিকতা আর মেধা দিয়ে স্তন ক্যান্সার জয় করতে হবে।
নামঃ ইমরান খান রাজ
শিক্ষার্থী, শেখ বোরহানউদ্দিন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজ।
ঠিকানাঃ সাতভিটা, নারিশা, দোহার-ঢাকা ১৩৩২।