GALPO & POEM

গল্প
কলমে-সিদ্ধশ্বর হাটুই
সুখাডালী/সারেঙ্গা/বাঁকুড়া

বেশ কয়েক বছর পূর্বে গ্রামাঞ্চলে যে সময় ধান কাটা হতো, তখন যারা কৃষক তারা খুবই উৎকণ্ঠার মধ্যে রাত কাটাতেন। বাড়িতে থাকলেও কোনমতে চোখে ঘুম আসতো না। তার কারণ একটাই -যদি কেউ বা কাহারা ধান চুরি করে নিয়ে চলে যায় তাই। বংশীবাবু ছিলেন গ্রামের একজন মধ্যম আকারের চাষি। তখন আমন ধান কাটা চলছে সারা মাঠ জুড়ে। বংশী বাবুও ধান কেটে মাঠে গাদা করে রেখেছেন পরের দিন বাড়ি আনবেন বলে। কিন্তু চোরের ভয়ে রাতে তো পাহারা দিতেই হবে, না হলে যদি চুরি হয়ে যায় ! এই ভেবে সে সকালেই একটি ত্রিপল দিয়ে ছোট্ট একটি তাবু খাটিয়ে রেখছেন রাত্রে থাকার জন্য। পাশাপাশি আবার অনেক চাষিই থাকবেন এই ভেবে মনের মধ্যে সাহস নিয়ে সন্ধ্যা হতে না হতেই তার স্ত্রীকে গিয়ে বলে-
“আমাকে খাবার দাও , খেয়ে মাঠে যেতে হবে, মাঠে ধান কেটে ফেলে রাখা যা সমস্যা, চুরি হয়ে যেতে পারে।“
চটপট খাওয়া সেরে বংশী বাবু হাতে একটি লাঠি আর একটি টর্চ লাইট নিয়ে মাঠে যাবে বলে বেরোলেন। বেরোনোর পূর্বে তার স্ত্রীকে বললেন-“চিন্তা করবে না, আমি ঠিক ভাবে থাকব, মাঠে আমার মতো অনেকেই তো আছে।“
তারপর বংশীবাবু বেরিয়ে গেলেন। মাঠে পৌঁছে তাবুর ভেতরে চুপ করে বসে রইলেন, আর মনে মনে ভাবছিলেন-
‘বেটা চোর আজ আসুক, লাঠি দিয়ে এমন মার মারবো না এক্কেবারে বাপের নাম ভুলে যাবে।‘
এইভাবে সে চুপচাপ বসে রইল। পাশাপাশি আরো কিছু টর্চের আলো দেখা যাচ্ছে, বংশীবাবু একটার পর একটা বিড়ি ধরিয়েই চলেছেন। আর একবার করে তাবুর বাইরে যাচ্ছেন, আবার ভেতরে প্রবেশ করছেন।

এভাবে অনেকটা রাত কেটে গেল, প্রায় রাত বারোটা বাজে তখন মাঠ নিস্পন্দ। হঠাৎ একটি আওয়াজ পেলেন বংশীবাবু, যেন কেউ আসছে। তারপর হাতে টর্চটা নিয়ে যেই তাবুর বাইরে বেরোলেন, ঘটে গেল এক বিস্ময়কর ঘটনা। বংশীবাবু তাবুর বাইরে বেরিয়ে দেখেন তার মুখের সামনে একটি প্রকাণ্ড হাতি।
কোন কিছু ভাবার মতো পরিস্থিতি বংশী বাবুর ছিল না। ছুটতেও পারলেো না। সঙ্গে সঙ্গে হাতি তাকে শুঁড়ে ধরে দূর দিকে আছড়ে ছুড়ে মারলো। বংশীবাবু গিয়ে পড়লেন একটু দূরে মাঠের একটি বড় আলের কোলে। তখনো বংশীবাবুর জ্ঞান আছে, আহত হয়েছেন বেশ ভালো মতো। হাতির ভয়ে নড়াচড়া না করে চুপচাপ আলের কোলে শুয়ে রইলেন। হাতিটি চারিদিকে তখন বংশী বাবুকে খুঁজতে ব্যস্ত, হাতিটি যখন বংশীবাবুকে খুঁজে পেল না তখন রাগে চিৎকার করে বেশ কয়েকটি জমির আল পায়ে করে ছারখার করে ভেঙে ফেলে ধান খেয়ে অন্যত্র চলে গেল। ততক্ষণে পাশাপাশি থাকা চাষিরা যারা মাঠে ছিলেন তারা ছুটে পালিয়েছেন যে যার নিরাপদ স্থানে।

বংশীবাবু দেখলেন হাতি চলে গেছে, কিন্তু কোন করার নেই, তখন তার শরীরে প্রচণ্ড যন্ত্রনা শুরু হয়ে গেছে, কোমরের ও বুকের এবং পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। পালানোরও কোন উপায় নেই। সে ঐ ভাবেই রাতটা কাটালো।
পরের দিন সকাল বেলায় যখন গ্রামের লোকজন তাকে দেখল তখন বংশীবাবুকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হল।
তারপর দুমাস হাসপাতালের বিছানায় বংশীবাবুকে কাটাতে হল। কিন্তু বংশীবাবু আজও সম্পূর্ণ সুস্থ্য হতে পারলেন না। এই ঘটনা ঘটার পর বেশ কিছুদিন রাত্রে ধান পাহারা দিতে কেউ মাঠে যেতেন না।

জন্ম
কলমে-সিদ্ধেশ্বর হাটুই
সুখাডালী/সারেঙ্গা/বাঁকুড়া/পশ্চিমবঙ্গ

সাগরের জল সূর্যের তাপে
হাল্কা হয়ে উড়ে যায় আকাশে ,
মেঘে একটু একটু করে জমা হয়ে
ভারী হয়ে পড়ে ঝরে পৃথিবীপৃষ্ঠে ।
কত নালা দিয়ে সেই জল মিশে নদীতে,
নদী আবার ছুটে গিয়ে মিলে সেই সাগরে,
যেখান থেকে শুরু হয়ে এদিক ওদিক চলা
শেষে আবার যেতে হয় ফিরে …..আবার
সেই উদ্ভবের ….ঐ স্থানে।

আমার কোলে
কলমে-সিদ্ধেশ্বর হাটুই
সুখাডালী/সারেঙ্গা/বাঁকুড়া/পশ্চিমবঙ্গ

তোমার সেই মুখখানি, আজও মনে পড়ে
কেন যে হৃদয়ে বেদনায় নড়ে চড়ে,
তুমি গেছে চলে সবারে ফেলে ,
যতই ভাবী যাবো ভুলে, পারিনি …যেতে ভুলে
ভুলে যেতে, তোমার স্মৃতিরা আজও যেন বলে
ডেকে বলে ভাই, একদিন তো আসবি আমার কোলে।

সমানে সমানে
কলমে-সিদ্ধেশ্বর হাটুই
সুখাডালী/সারেঙ্গা/বাঁকুড়া/পশ্চিমবঙ্গ

তেলে জলে মিশে না কভু
চেষ্টা করলে বৃথা,
একই পাত্রে রাখলে তাদের
দু-জনেই পাবে ব্যথা।
সমানে সমানে মিলে ভালো
থাকে তারা সুখে,
চলার পথটা একই রকম
তাই সুখ থাকে দুঃখে ।

যেমন নাচায় তেমনি নাচি
কলমে-সিদ্ধেশ্বর হাটুই
সুখাডালী/সারেঙ্গা/বাঁকুড়া/পশ্চিমবঙ্গ

কে যে কখন কোন স্থানে থাকে
বলতে পারে আর কে ?
আজ এখানে কাল সেখানে
কার ইচ্ছায় যায় সে !
আমরা তো সেই কাঠের পুতুল
যেমন নাচায় তেমনি নাচি,
জীবনটা চলে তার ইচ্ছার বলে
পরমেশ্বের ইচ্ছায় আমরা বাঁচি।

বাস্তবে
কলমে-সিদ্ধেশ্বর হাটুই
সুখাডালী/সারেঙ্গা/বাঁকুড়া/পশ্চিমবঙ্গ

বাস্তবে তারে দেখো না যারে
আনো না মনে তারে একটি বারে,
ঘুমের মধ্যে পাবে না দেখা
স্বপ্নে তুমি পাবে না তারে।
মনটা যদি সুদর্শন হয়
কী হবে তার অঙ্গের হারে।

সে আসল নয়
কলমে-সিদ্ধেশ্বর হাটুই
সুখাডালী/সারেঙ্গা/বাঁকুড়া/পশ্চিমবঙ্গ

ভালোবাসা যদি না কাঁদায়
সে আসল নয়,
মন যদি দাও কাউকে তোমার
সে কী অন্য কারো হয় !
কেমন করে এ মনে ওমন মিশে !
লাগে ভীষণ ভয়।

ফেসবুক
কলমে-সিদ্ধেশ্বর হাটুই
সুখাডালী/সারেঙ্গা/বাঁকুড়া/পশ্চিমবঙ্গ

অভ্যেস হয়ে গেছে এটাই
বেশির ভাগ মানুষ পছন্দ করে
যা সমাজের চোখে মন্দ প্রভাব ফেলে
যা নব প্রজন্ম কে বিপদে ধরে
ফেসবুকে তাই উত্তম কিছু দেখে না
হয় না লাইক-কমেন্ট-শেয়ার,
অশুভতে মজে গেছে আজ
ভালো কিছু তো শেখার।
ভালো যা হয় সে তো তিক্ত
অনেকেই তাই মন্দের ভক্ত।
এসব বললে আবার আমার বিপদ
সকলেই হবে আমার প্রতি বিরক্ত।

এ মন জানে
কলমে-সিদ্ধেশ্বর হাটুই
সুখাডালী/সারেঙ্গা/বাঁকুড়া/পশ্চিমবঙ্গ

পারছি না আর চলতে পথে
লাগছে ব্যথা ভীষণ বুকে,
কত বেদনারা উড়ছে বাতাসে
তারই সুবাভি মরছি শুকে।
কাঁদছি আমি মনে মনে
সে ব্যথা কেউ কী শোনে,
এক জীবনে এত ব্যথা
সে শুধু এই মন-ই জানে।

বৃথা ক্রন্দনে
কলমে-সিদ্ধেশ্বর হাটুই
সুখাডালী/সারেঙ্গা/বাঁকুড়া/পশ্চিমবঙ্গ

একটা সময় থেমে যাবে জীবন
কাঁদবে তোমরা আমার স্বজন।
আমার পোষা পাখিগুলো সব
কেঁদে কেঁদে উড়ে করবে কূজন।
ভালোবাসার চোখের জল
পড়বে মাটিতে করে টলমল
কী হবে লাভ বৃথা ক্রন্দনে
শুকোবে তোমাদের চোখের জল।

মনের জানালা
কলমে-সিদ্ধেশ্বর হাটুই
সুখাডালী/সারেঙ্গা/বাঁকুড়া/পশ্চিমবঙ্গ

মনে জাগে সাধ তোমাদের বলি
জমা আছে যত কষ্ট,
অনেকেই বলে আপন যা আছে
রাখো গোপনে, বললে স্বভাব নষ্ট।
পারি না আমি রাখতে ঢাকা
এই পোড়া মনের জ্বালা,
নষ্ট হলেও তবু আমি করে ফেলি সব ব্যক্ত
খোলা রাখি তাই এ মনের জানালা।

PHATO.jpeg

SIDDHESWAR HATUI

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *