গল্প
চার বন্ধু
কলমে-সিদ্ধেশ্বর হাটুই
সুখাডালী/সারেঙ্গা/বাঁকুড়া
গ্রাম থেকে একটু দূরে পুকুর পাড়ে একটি ঝুপড়ি ছিল। তার পাশেই শ্মশান , শ্মশানের পাশে শ্মশানযাত্রী প্রতীক্ষালয় , তার নিকটেই ছিল একটি বিশাল বড় পুরানো বট গাছ,। গ্রামের মানুষ মারা গেলে সেখানে দাহ করা হয়। শ্মশানযাত্রী প্রতীক্ষালয়টি বেশিরভাগ সময় ফাঁকাই থাকে। গ্রামের যুবক ছেলেরা সেখানে বসে তাস খেলে। সেরকমই প্রতিদিন সন্ধ্যেবলা একটি চার্জার লাইট জ্বেলে চারজন বন্ধু তাস খেলে- কমল,অমল, বিমল,ও শ্যামল। প্রায় প্রত্যেক দিনই তারা সন্ধ্যে বেলায় তাস খেলে। সবার বয়স মোটামুটি কুড়ির কাছাকাছি হবে। কমল ও অমল কলেজে পড়ে, বিমল ও শ্যামল পড়াশোনা ছেড়ে বর্তমানে কাজে মন দিয়েছে। এভাবে তারা দু’ বছর ধরে শ্মশানের ওখানে তাস খেলছে।
হঠাৎ একদিন কমলের পিতা বুকে ব্যথা নিয়ে মারা গেলেন। কমলের পিতাকে ঐ শ্মশাশেই দাহ করা হল। তারপর বেশ কয়েকদিন খেলা বন্ধ রয়েছে। কমলের পিতার শ্রাদ্ধশান্তি হওয়ার পর শ্যামল কমলকে বলল-‘কমল আর কী খেলা হবে না, যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে ,’ কমলের চোখ ছলছল করে উঠল, রুমালে চোখ মুছে বলল-“হবে….হবে …কেন হবে না !, আজই হবে তুই -অমলও বিমলকে জানিয়ে দিবি। এই বলে তারা দুজনে যে যার কাজে চলে গেল।
দিন শেষ হয়ে সন্ধ্যে নেমে এসেছে। কথামতো সঠিক সময়ে চার বন্ধু শ্মশানযাত্রী প্রতীক্ষালয়ে পৌঁছে গেছে। সেদিন কিন্তু তাস খেলা শুরু হল না। কমলের মন খারাপ হয়ে গেল। শ্মশানের যে স্থানে তার পিতার চিতা সাজানো হয়েছিল সেখানে গিয়ে কমল কাঁদতে লাগল। কেউ কোথাও নেই,অমল, বিমল,ও শ্যামল কমলকে শান্ত করার চেষ্টা করল, কিন্তু কোন লাভ হল না। কাঁদতে কাঁদতে কমল সংজ্ঞা হারিয়ে পড়ে রইল। অমল পাশের পুকুর থেকে জল এনে কমলের হাতে মুখে দেবে বলে শ্মশানে পড়ে থাকা একটা ভাঁড় কুড়িয়ে ছুটে গেল জল আনতে। ততক্ষণে বিমল ও শ্যামলের মনে হল শ্মশানের পাশের ঝুপড়ি থেকে ভয়ঙ্কর একটা আওয়াজ যেন বেরিয়ে এল, তারপর বিমল ও শ্যামলের ভয়ে বুক কেঁপে উঠল। ভয়ে কমলকে একা ফেলে রেখে তারা দুজনে ছুটে পালিয়ে গিয়ে গ্রামে গিয়ে থামল।
অমল যখন ভাঁড়ে করে পুকুর থেকে জল এনে শ্মশানে পৌঁছাল তখন দেখল কমল একাই পড়ে আছে শ্মশানে, কেউ নেই……। অমল অবাক হয়ে গেল , ভাবল কী এমন হল বিমল ও শ্যামল না বলে পালিয়ে গেল। অমল নিজের মনকে শ্ক্ত করে কমলের হাতে মুখে জল দিল, তখন কমলের চেতনা ফিরে পেল , কিন্তু ভুলভাল কথা বলতে লাগল এবং উন্মত্তের মতো তার দিকে এগিয়ে এসে অমলকে মারতে শুরু করল। অমল তখন কমলকে ধরে জোরে একটি চড় মারল তার গালে। তারপর কমল অমলকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। তারপর তারা দুজনে বাড়ি চলে গেল।
পরের দিন সকাল বেলা চার বন্ধুর যখন দেখা হল তখন বিমল ও শ্যামল কোন কথা বললো না, চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। অমল তখন কমলকে ডেকে বলল –“ দেখ বিমল ও শ্যামলকে দেখ ! ভালো করে দেখ, ,এটাই তো বন্ধুত্ব তাই না। এদের সঙ্গে পথ চলবি, আমাকে শ্মশানে কেউ খেয়ে ফেললো না , ওরা বিপদের মুখে তোকে আর আমাকে ফেলে ছুটে চলে এল। তবু তোর বাড়ির কাউকে বা গ্রামের কাউকে ব্যাপারটা জানালো না। এরা ভীষণ স্বার্থপর , এদেরকে বন্ধু বলবি ? না….না,,,,আমি এমন বন্ধু চাই না।“
অমলের সমস্ত কথাগুলো শোনার পর বিমল ও শ্যামল বলল-“দেখ ভাই খুব বড় ভুল হয়ে গেছে, জীবনে আর কখনো আমরা এমন ভুল করব না। এবারের মতো ক্ষমা করে দে।“ একথা শুনে অমল ও কমল একটু এগিয়ে এসে বিমল ও শ্যামলকে জড়িয়ে ধরল। আর বলল কখনো কোনদিন কাউকে বিপদে একা ফেলে রেখে চলে আসবি না। এভাবে আবার তারা বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হল।
‘’
SIDDHESWAR HATUI