Franz Kafka

Franz Kafka

প্রবন্ধ

ফ্রান্‌ৎস কাফকা
শংকর ব্রহ্ম

দ্বিতীয়_পর্ব

১৯১৫ সালে জার্মানির লিপজিগ থেকে প্রকাশিত কাফকার অন্যতম সেরা সাহিত্যকর্ম ‘Die Verwandlung’ (‘The Metamorphosis’)। এই উপন্যাসের প্রথম লাইনটিকে গণ্য করা হয় পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম সেরা একটি লাইন হিসেবে। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র গ্রেগর সামসা একজন ট্রাভেলিং সেলসম্যান। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন তিনি পোঁকা হয়ে গেছেন। অর্থাৎ তার রূপান্তর হয়ে গেছে। এই উপন্যাসের প্রথম লাইনটিই ছিলো ঠিক এমন,

“এক সকালে ঘুম থেকে উঠে গ্রেগর সামসা দেখলো – সে পোঁকা হয়ে গেছে!”

পৃথিবীর হাজারো মানুষকে এই একটি লাইন যুগ যুগ ধরে ভাবনার খোরাক দিয়েছে। নোবেলজয়ী সাহিত্যিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ আন্দোলিত হয়েছিলেন এই একটি লাইন পড়ে। কী সাবলীলভাবে একজন মানুষের শারীরিক রুপান্তরের খোলসে সামাজিক রুপান্তরের কথা বলে গেলেন। যে গ্রেগর সামসার উপর নির্ভর করে দাঁড়িয়ে ছিল তার পুরো পরিবার, কয়েকদিন পরে তিনিই পরিণত হলেন পরিবারের অনীহার পাত্রে। এই উপন্যাসেও বাবাকে তিনি দেখিয়েছেন ভয়ানক চরিত্রে। বাবার নিক্ষেপ করা আপেলের আঘাতেই পোঁকায় রুপান্তরিত ছেলে এগিয়ে যাচ্ছে মৃত্যুর দিকে। এই উপন্যাসের লেখনী শুধু মার্কেজের মতো তরুণ সাহিত্যিককেই প্রভাবিত করেনি, যুগের পর যুগ ধরে প্রভাবিত করে গেছে শত সহস্র সাহিত্যবোদ্ধাকে।

এরপর একে একে প্রকাশিত হয়েছে ‘In the Penal Colony’,’A Hunger Artist’ এর মতো কালজয়ী সব সাহিত্যকর্ম। কিন্তু শরীরের অবস্থাটা যে তার ভালো নেই।
১৯১৭ সালে চৌত্রিশ বছর বয়সেরকাফকার যক্ষ্মা ধরা পড়ে। ভয়ংকর ছোঁয়াচে এই রোগের চিকিৎসা তখনও তেমন প্রচলিত না থাকায় নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে নিতে বাধ্য হোন কাফকা। এই সময় লিখছেন নিজের আরেক মাস্টারপিস ‘The Trial’। যক্ষ্মার কারণে কাফকাকে চাকরি থেকে পেনশন দিয়ে বাধ্যতামূলক অব্যাহতি দেওয়া হয়।
লেখালেখিতে আরো ভালোভাবে মনোনিবেশ করতে চেয়েও পারছিলেন না। ক্রমান্বয়ে রোগা হয়ে যাচ্ছিলেন, হাসপাতাল আর যক্ষ্মা নিবারণ কেন্দ্রগুলোতে দিন কাটছিলো কাফকার। হতাশা আর একাকীত্বও হয়তো চেপে বসেছিলো কাফকার কাঁধে।

বিয়ে করেননি কাফকা, বলতে গেলে সুযোগ হয়ে ওঠেনি। অনেক নারীর সংস্পর্শেই এসেছেন, কিন্তু কাউকেই ধরে রাখতে পারেননি। কাফকার প্রথম প্রেমিকা ছিলেন ফেলিস বাউয়ার। তাকে কম করে হলেও কাফকা পাঁচশত চিঠি লিখেছেন। মৃত্যুর পরে সেই চিঠির সংকলন নিয়ে ‘Letters to Felice’ নামে বইও বেরিয়েছে। কিন্তু তার সাথে দুবার বাগদান হলেও দুবারই তা ভেঙে যায়।
১৯২০ সালে যক্ষ্মার কবলে পড়া কাফকা মিলেনা জেসেন্সকা নামে এক চেক সাংবাদিকের প্রেমে পড়েন। বাস্তব জীবনে যতটা প্রেমিক ছিলেন কাফকা তার চেয়ে অনেক বেশি ছিলেন কাগুজে প্রেমিক।
মিলেনাকেও লিখেছেন শয়ে শয়ে চিঠি। তার কাছে লেখা চিঠিগুলো নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে আরেক বেস্টসেলিং বই ‘Letters to Milena‘।
কাফকার শেষ প্রেমিকার নাম ছিলো ডোরা ডিয়ামান্ট। ১৯২৩ সালে কাফকার জীবনপ্রদীপ যখন একটু একটু করে নিভে আসছে তখন তার সাথে পরিচয় হয়। মৃত্যু যখন ঠিক দরজায় কড়া নাড়ছে ঠিক তখন দুজন মিলে পরিকল্পনা করলেন তারা প্যালেস্টাইন যাবেন, সুখের সংসার শুরু করবেন। রেস্টুরেন্ট খুলে ডোরা রান্না করবেন আর কাফকা হবেন ওয়েটার। সুন্দর ছিমছাম আর নির্ভেজাল বাকী জীবনটা দুজন একসাথে কাটিয়ে দিবেন।
কিন্তু সেই সুযোগটুকু আর কাফকা পেলেন না। কোনো এক অদ্ভুত কারণে নিজের লেখার একটা বড় অংশ নিজেই পুড়িয়ে দিলেন। বাকী যা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো তা বন্ধু ম্যাক্স ব্রডকে পুড়িয়ে দেওয়ার অনুরোধ করে গেলেন।
১৯২৪ সালের ৩ জুন কাফকা চিরতরে ধরাধাম ত্যাগ করেন। কিন্তু সবেমাত্র তার লেখার অনুবাদ শুরু হয়েছে।
‘দ্য ট্র্যায়ালে’ জোসেফ কে নামক এক ব্যক্তিকে একদিন ভোরে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু তার অপরাধ কী এটিই তাকে জানতে দেওয়া হয়নি। তাকে বন্দী করা হয়নি, তবে তার বিচার চলতে থাকে। এই উপন্যাসে কাফকা তুলে ধরেছেন বিচারব্যবস্থা আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতার এক অনবদ্য ছবি।
কাফকার নামে রচিত হয়েছে শত-সহস্র বই। পৃথিবীর সীমানায় তাকে বেঁধে রাখতে না পারলেও কাফকাকে কাগজের কারাগারে চিরতরে তাকে বন্দী করে রেখে দিয়েছেন পৃথিবীজোড়া সাহিত্যবোদ্ধারা।

কাফকার পরিবার ছিলো মধ্যবিত্ত এবং আশকেনাজি নামক এক সম্প্রদায়ের ইহুদি। ফ্রানৎস কাফকার বাবা বাবা হারমান কাফকা ( ১৮৫২ – ১৯৩১ ) শুরুর দিকে সেনাবাহিনীর সৈনিক ছিলেন, এরপর সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি কিছুদিন ভ্রাম্যমাণ সেলসম্যান এর কাজ করেন। এই কাজও তিনি বেশিদিন করলেন না সব ছেড়ে দিয়ে তিনি স্যুভেনির , ফ্যান্সি জিনিসপত্র আর কাপড়চোপড়ের দোকান চালু করেন প্রাগের ওল্ড টাউন স্কোয়ারে। সেই দোকানের কর্মচারীর সংখ্যা ছিল ১৫ জন, অর্থাৎ যথেষ্ট বড় দোকানই ছিলো। তার ব্যবসার নিজস্ব লোগোও ছিলো। ব্যবসার লোগো ছিল দাঁড়কাক (চেক ভাষায় Kavka)
কাফকার মা ছিলেন ইয়ুলি কাফকা (১৮৫৬-১৯৩৪), তিনি ছিলেন এক ধনাঢ্য প্রতিষ্ঠিত রিটেল ব্যবসায়ীর মেয়ে। শিক্ষা-দিক্ষায় তিনি তার স্বামীর উপরে ছিলেন। ফ্রানৎস কাফকার বাবা-মা বাসায় কথা বলতেন ইদ্দিশ (হিব্রু বর্ণমালায় লেখা আকেনাজি ইহুদি মূল থেকে তৈরি হওয়া, গোঁড়া ইহুদিদের ব্যবহৃত হিব্রু ও সেমেটিক সংমিশ্রণের এক জার্মান ভাষার রূপ) ঘেঁষা এক জার্মান ভাষায়। কিন্তু ‘ শিক্ষিত জার্মান ’ ভাষা তখন যেহেতু ছিল সমাজে ও চাকরিতে উপরে ওঠার জন্য জরুরি , তাঁরা তাঁদের ছেলেমেয়েদের ‘শিক্ষিত জার্মান ভাষা’ শিখতেই অনুপ্রাণিত করতেন।

ফ্রানৎস কাফকারা ছিলেন মোট ছয় ভাই বোন , তাদের মধ্যে ফ্রানৎস কাফকা সবার বড়। ফ্রানৎসের বয়স ৬ হওয়ার আগেই তার অন্য দুই ভাই গেয়র্গ ও হেইনরিখ একদম শিশু বয়সেই মারা যায়। এরপর জন্ম নেন ফ্রানৎসের তিন বোন : গ্যাব্রিয়েল ( ১৮৮৯-১৯৪১ ) ; ভ্যালেরি ( ১৮৯০-১৯৪২ ) ; ওটলি (১৮৯২-১৯৪৩)। এই ওটলি ছিলেন কাফকার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ।
তিন বোনের মৃত্যুর সাল দেখে হয়তো অনুমান করতেই পারছেন, তারা ফ্যাসিস্ট হিটলারের নাৎসি বাহিনীর হলোকাস্টের শিকার।
কাফকার পরিবার শুরুর দিকে থাকতেন একটা ছোট, ঠাসাঠাসি অ্যাপার্টমেন্টে। তাদের বাসায় এক কাজের মেয়ে থাকত, এজন্য হয়তো কাফকার গল্প ও উপন্যাসে কাজের মেয়ের কথা ঘুরেফিরে আসে।
কাফকার ঘর প্রায়ই থাকত অনেক ঠান্ডা, প্রাগ শহর তখনো বিদ্যুৎ এর ছোঁয়া পায় নি, সুতরাং হিটিং সিস্টেম এর কথাই আসে না। ঘর গরম করার জন্য সেই মধ্যযুগীয় কয়লা চিমনিরই ব্যবহার করতে হতো। ১৯১৩ সালের দিকে কাফকারা একটি বড় অ্যাপার্টমেন্ট এ উঠেন। ততোদিনে কাফকার ২ বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। অবশ্য এর মাঝে কাফকাদের বহুবার বাসা বদল হয়েছে।
কাফকার বাবা-মা দুজনেই দোকানের কাজ নিয়ে প্রচন্ড ব্যাস্ত থাকতেন। কাফকার মা তার দিনের দশ-বারো ঘন্টাই কাটাতেন দোকানের কাজ করে। কাফকার সময় কাটতো তার বোন ও কাজের মেয়েটির সঙ্গে। কাফকা ও তার তিন বোন সকলেই কাজের মেয়েটির হাতে মানুষ হয়েছে। বাবা মায়ের সঙ্গ তাদের ভাই বোনেরা কেউই খুব একটা পায়নি।
কাফকা সিনাগগে যেতে পছন্দ করতেন না। সিনাগগ হচ্ছে ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়। বছরে চার বার কাফকাকে তার বাবার সাথে সিনাগগে যেতে হতো, সবগুলোই ছিলো ধর্মীয় উৎসব। সিনাগগে যেতে না চাইলেও তার বাবার ভয়ে তাকে যেতে হতো। কাফকার বাবা ছিলেন প্রচন্ড রকমের রাগী ও বদমেজাজি মানুষ।
১৮৯৩ সালে কাফকা এলিমে এলিমেন্টারি স্কুল ছেড়ে কাফকা প্রাগের ওল্ড টাউন স্কোয়ারের ওপর অবস্থিত কিল্কি প্যালেসে (এটারই নীচুতলায় ছিল তাঁর বাবার দোকান) কড়া শাসনের ও ক্ল্যাসিক্যাল শিক্ষাদান রীতিতে চালানো জার্মান মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হন।
এই স্কুলের পড়াশোনার মাধ্যম ছিলো জার্মান। কিন্তু কাফকা কেবল চেক ভাষা লিখতে ও পড়তে পারতেন তখন। তার চেক ভাষার দক্ষতার জন্য তিনি সকলের কাছে প্রশংসিত হতেন। কিন্তু কাফকা নিজেকে চেক ভাষায় সাবলীল মনে করতেন না।
কাফকা ১৯০১ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করে প্রাগ শহরের কার্ল-ফার্দিনান্দ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি প্রথমে পড়াশোনা শুরু করেন রসায়ন বিষয়ে, কিন্তু মাত্র দু’সপ্তাহ যেতেই কাফকা বিষয় পরিবর্তন করে আইনের ছাত্র বনে যায়। কাফকা হয়তো বুঝেছিলেন ওসব রস- কষের প্যাচ হয়তো তার মাথায় ঢুকবে না। আইন শাস্ত্র যে কাফকা পছন্দ করতেন তাও নয়। তবে আইনে ভর্তি হওয়ার কাফকার বাবা খুশি হয়েছিলেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। আইনে পড়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়া সহজ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সাথে সাথেই কাফকার বেশ কজন বন্ধু জুটে যায় তার মধ্যে ছিলেন সাংবাদিক ফেলিক্স ভেল, লেখক অস্কার বাউম, ফ্রানৎস ভেরফেল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বছরের পড়া শেষ হতেই কাফকার সঙ্গে পরিচয় হয় ম্যাক্স ব্রডের, যে ছিলেন কাফকার সবচেয়ে কাছের, এবং বতমানে কাফকার জগৎবিখ্যাত হওয়ার পেছনে পুরো কৃতিত্ব ব্রডেরই।
তাঁর প্রিয় বন্ধু ম্যাক্স ব্রড ও ছিলেন আইনের ছাত্র। ম্যাক্স ব্রডই প্রথম খেয়াল করেন খুব কম কথা বলা, লাজুক ধরণের এই ছেলেটির মেধা ও প্রজ্ঞা অত্যন্ত গভীর ও অগাধ।
ফ্রানৎস কাফকা ১৯০৬ সালের ১৮ জুলাই আইনশাস্ত্রে ডক্টরেট ডিগ্রি পান এবং এর পরে এক বছর আদালতে বাধ্যতামূলক বেতনহীন ক্লার্কের চাকরি করতে শুরু করেন। পড়াশোনার ক্ষেত্রে কাফকার কখনোই আইন পছন্দের বিষয় ছিলো না। কাফকার প্রিয় বিষয় ছিলো দর্শন ও ধর্ম। তবে কাফকার কোনও ধর্মের প্রতিই খুব একটা টান অনুভব করতেন না।
কাফকা তার কর্মজীবনে শুধুমাত্র দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছিলেন এবং মাঝখানে বড় ধরণের কোনো ব্যবসা করার ও উদ্যোগ তিনি নিয়েছিলেন।
কাফকার প্রথম চাকরিটি ছিলো ইতালিয়ান একটি বীমা কোম্পানিতে। কোম্পানির নাম ছিল Assicurazioni Generali, এই কোম্পানিতে তিনি ১৯০৭ সাল থেকে ১৯০৮ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন, সবমিলিয়ে ছয়-সাত মাসের বেশি হবে না।
এই ইতালিয়ান কোম্পানিতে কাজ করার সময় কাফকা তার জীবনের অসুখী সময়গুলো কাটান। সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত তাকে অমানুষিক পরিশ্রম করতে হতো। দীর্ঘ পরিশ্রমে তার মন-মানসিকতা থাকত সবসময় বিষন্ন তার উপর বেতন ছিল অতি সামান্য। এই চাকরি করতে গিয়ে কাফকা লেখা-লেখি করার সামান্য সময়টুকু ও পেতেন না। কাফকা তার রূপান্তর উপন্যাসের গ্রেগর সামসা চরিত্রটি কাফকার এই সময়কার পরিস্থিতিতে নিজেকে কল্পনা করেই লিখেছিলেন হয়তো। ১৯০৮ সালের জুলাই মাসের শুরুর দিকে কাফকা নিজের চাকরির ইস্তফা দেন।
ইতালিয়ান কোম্পানির চাকরি থেকে পদত্যাগ করার ঠিক দু’সপ্তাহ পর কাফকা সরকারি বীমা প্রতিষ্ঠান Workers ‘ Accident Insurane Institute for the Kingdom of Bohemia তে যোগ দেন। এই অফিসে কাফকার দায়িত্ব ছিল, মিল বা কারখানার শ্রমিকেরা কাজ করতে গিয়ে আহত হলে , সেসব দুর্ঘটনার তদন্ত করা ও ক্ষতিপূরণের অঙ্ক নির্ধারণ করা। তখনকার দিনে মেশিনে কাটা পড়ে হাতের আঙুল হারানো কিংবা অন্য কোনো অঙ্গের ক্ষতি হওয়া ছিল বেশ নৈমিত্তিক ঘটনা।
তবে কাফকার বাবা ছেলের এই চাকরি মোটেও পছন্দ করতেন না। তিনি তার ছেলের এই চাকরিকে Brotberuf বা ‘ রুটির চাকরি ‘ বলে খোঁটা দিতেন। কাফকা তার কাজের বেলায় ছিলেন সবসময় খুঁতখুঁতে, সৃজনশীল ও যত্নশীল, আর তাই খুব দ্রুত তার পদন্নোতি হয়। ১৯১৫ সালের দিকে কাফকার বেতন ছিল প্রায় ছয় হাজার ক্রাউন এখন অর্থের মূল্য অনুযায়ী সাত-আট লক্ষ টাকা। সাত-আট লক্ষ টাকার বেতন কে কোনোভাবেই ছোট চাকরি বলা যায় না। যেখানে কাফকার অন্য সহকর্মীরা মাসে মাত্র ৯০০-১০০০ ক্রাউন বেতন পেতেন।
১৯১৮ সালের শুরুর দিকে কাফকার বাবা পাঁচ লক্ষ ক্রাউন দিয়ে একটি নতুন অ্যাপাটমেন্ট কেনেন। যার মূল্য আজকের দিনের দশ মিলিয়ন ডলারে কাছাকাছি। চাকরিতে পদোন্নতি হওয়ার পর কাফকার কাজ ছিলো বীমা কোম্পানির ক্ষতিপূরণ দাবির যথার্থতা নির্ণয় করা, রিপোর্ট লেখা, ব্যবসায়ীদের আবেদন নিষ্পত্তি করা ইত্যাদি। এই বিশাল প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক প্রতিবেদন ( Annual Report ) তৈরি করার মতো বড় কাজটিও কাফকা করেছেন অনেক বছর। কাফকার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তার বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরির ও সম্পাদনার কাজে তার দক্ষতার বিশেষ প্রশংসা করতেন।
কাফকার চাকরি দুপুর দুটোর মধ্যেই শেষ হয়ে যেত। এজন্য সাহিত্য চর্চা করার জন্য কাফকা যথেষ্ট পরিমান সময় পেতেন। সাহিত্য চর্চার সময় কাফকা কিছু উদ্ভট পদ্ধতি অবলম্বন করতেন। এর মধ্যে একটি হলো লেখালেখির সময় প্রকৃতির ডাক দিলে লেখায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে, আর তাই তিনি রুমের দরজা বন্ধ করে পুরোপুরি নগ্ন হয়ে লিখতে বসতেন, যেন লেখালেখির সময় বাহিরে না যেতে পারেন।

(ক্রমশঃ)

প্রথম পর্বের লিঙ্ক

https://www.facebook.com/100057519306055/posts/pfbid0MWymGLM24PZrgRRKzavZmXYKf9pDWhmBi5ZsW5gXScZWATNWCwA6Cn4MFxwZjFYGl/

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *