Dr. Taimur Khan

লিটিল ম্যাগাজিন রিভিউ

কয়েকটি উল্লেখযোগ্য লিটিল ম্যাগাজিন 

🍁

তৈমুর খান 

🍁

আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতির তথা জীবনচেতনার তথা স্বপ্নের তথা নিষ্ঠা ও শ্রমের মাধ্যম হলো লিটিল ম্যাগাজিন। নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হলেও পত্রিকাগুলি কখনোই পুরনো হয় না। তাই সময় পেলেই ফিরে ফিরে পড়ার ইচ্ছে হয়। পাতা উল্টে উল্টে দেখতে থাকি  স্রষ্টাদের সৃষ্টির নানা অভিমুখ। জীবনের কত উত্থানপতন ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে তাঁদের উপলব্ধিগুলি ভাষা পেয়েছে। তাঁদের স্বপ্নগুলি মুকুলিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তের কয়েকটি লিটিল ম্যাগাজিন এবারের আলোচনার বিষয়।

    ১

 শ্বেতকলম

🍁

 তৃতীয় বর্ষের দীপাবলি সংখ্যা ‘শ্বেতকলম’(১৪২৯) পত্রিকাটি বেশ আকৃষ্ট করেছে। খুব যত্নের সঙ্গেই পত্রিকার মুদ্রণ ও অলংকরণ। প্রতিটি লেখাকেই সুচারুভাবে পরিবেশন করা হয়েছে। ‘এই শীতের শহরে’ নামে কবিতায় সুদীপকুমার চক্রবর্তী লিখেছেন: “এই স্বৈরাচারী সময় কেমন বেঁধে রেখেছে দেখো/ নির্বিকার অস্তিত্বের অঙ্গীকারে—/ বলতো এখন কী করে যাই/ এই নরম শীতের শহরে ধূসর কক্ষপথ ধরে!/ এই আবহাওয়াও তো বদলে যেতে পারে হঠাৎ তুষার ঝড়ে!” শীতের শহরে উন্মাদ প্রেমিককে এভাবেই আমরা দেখতে পাই, যার কাছে সময় প্রতিকূল। দিলীপকুমার দাস লিখেছেন সুকেশী অন্ধকারের কথা: “অগত্যা আকাশ দেখে, প্রোমোটার দুয়ারে দাঁড়ায়।” যেন গ্রাস করে নিতে থাকে আমাদের মানবিক সত্তাকে। মৌমিতা গুহ লিখেছেন: “আমার একমুঠো বৃষ্টি চাই,/ অন্তরের ভ্যাপসা গন্ধ থেকে মুক্তি চাই,/ হৃদয়ের জানালা দিয়ে একঝাঁক বর্ষার আনাগোনা,” তখন বুঝতে পারি হৃদয়ের সতেজ তরুগুলি কতটা ব্যাকুল। পিঙ্কু চন্দ্র লিখেছেন:”গাছে গাছে ভালবাসার ফুল”। কতই না কবিতার পংক্তি ছড়িয়ে আছে যার মধ্য দিয়েই জীবন এবং সময়কে অনুধাবন করতে পারি। উল্লেখযোগ্য কবিরা হলেন কঙ্কন গঙ্গোপাধ্যায়, নজর উল ইসলাম, সুদীপকুমার চক্রবর্তী, ফিরোজা খাতুন, ববিতা পাল, কর্ণ কাপুরি, সুফি রফিক উল ইসলাম, শুভশ্রী দত্ত, শংকর হালদার, প্রশান্ত মণ্ডল, কাজল মৈত্র, প্রিয়াঙ্কামান্না সিং, জাহ্নবী পাল, অন্বেষা দাস প্রমুখ বহু কবি। অল্পকথায় গল্পগুলিতে আবেগের উষ্ণতা ছড়িয়ে দিয়েছেন: সন্দীপ মুখোপাধ্যায়, শুভদীপ হাজরা, সজল দেবলস্কর, সুভাগতমোহন রায়, মনোরঞ্জন গড়াই, চন্দ্রানী মজুমদার, হামিদুল ইসলাম, মানসী গাঙ্গুলী, প্রতীক সরকার, স্বপন জায়দার, বরুণচন্দ্র পাল, সুশান্ত দত্ত, অরিত্র মণ্ডল, সুশীলকুমার দত্ত  আরও বহু গল্পকার। প্রবন্ধগুলিতে দেখতে পাই: আধ্যাত্মিক, তাত্ত্বিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আলোর উৎসব দীপাবলিকে বিশ্লেষণ করেছেন রীতা রায়। বিষ্ণুর দশ অবতার রূপ ধারণ করার কারণগুলি উল্লেখ করেছেন মানসী কাঁড়ার। রবীন্দ্র গানে বর্ষা প্রসঙ্গ নিয়ে লিখেছেন ইরা চক্রবর্তী। ডিজিটাল পুজো কতখানি গ্রহণযোগ্য তার মুগ্ধতা বিশ্লেষণ করেছেন অর্ণব অধিকারী। বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বলেছেন সাগর দেবনাথ। সুন্দরবনের অসুন্দর জীবনের কথা উল্লেখ করেছেন দীপ্তরূপা মল্লিক দাশগুপ্ত। পর্নোগ্রাফি দেখার কী ফল তার মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করেছেন গৌতম সমাজদার। নিরুদ্দিষ্টের প্রতি চিঠি এবং একটি ছেলের তার বাবার উদ্দেশ্যে লেখা চিঠি এই দুটি উল্লেখযোগ্য লেখা লিখেছেন অজিতকুমার বাগ এবং নীতা গাঙ্গুলী। এছাড়া ভ্রমণ কাহিনি লিখেছেন তাপসকিরণ রায়, মিঠুন মুখার্জী ও দেবব্রত আচার্য। বই আলোচনা এবং ডায়েরির পৃষ্ঠা ও অঙ্কন অনেক বিষয়েই পত্রিকাটিকে সমৃদ্ধ করেছে। যোগাযোগের ঠিকানা: সম্পাদক অয়ন ব্যানার্জী, অনুভূতি প্রকাশন, পানাগড় বাজার, পশ্চিম বর্ধমান- ৭১৩১৪৮, whatsapp: ৭০৯৮৭১৩৫৩৭, মূল্য ১৫০ টাকা।

  ২

 সাহিত্য প্রবাহ

🍁

 দ্বাদশ বর্ষ উৎসব সংখ্যা ‘সাহিত্য প্রবাহ’(১৪২৯)-এর সম্পাদকীয়তে প্রথমেই লেখা হয়েছে “ব্রহ্ম সত্য স্বরূপ, জ্ঞান স্বরূপ, অনন্ত স্বরূপ।” তারপরেই দুর্গা নামের উৎপত্তির এবং স্বরূপের বিশ্লেষণ করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই পত্রিকাটির অভিমুখ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করেই বাঙালি মননের আশ্চর্য উদ্দীপন জেগে ওঠে। এই পত্রিকার লেখাগুলি থেকেই স্পষ্ট হয়। সুদূর  পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি গ্রাম থেকে পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। সাম্প্রতিক কালের উল্লেখযোগ্য বহু কবি এই পত্রিকায় কলম ধরেছেন, এঁদের মধ্যে উল্লেখ করা যায়: আরণ্যক বসু, সুনীল মাজি, চৈতালি সৎপথী, ঋত্বিক ত্রিপাঠী, গুরুপদ মুখোপাধ্যায়, গোবিন্দ ধর, অরূপ পান্তী, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, সঞ্জয় সোম, অমল কর, চন্দন ভট্টাচার্য, মনোজ মোহন চক্রবর্তী, উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়, ভবেশ বসু, ভবেশ মাহাতো, অনুপম ভট্টাচার্য, ভারতী বন্দ্যোপাধ্যায়, অভীককুমার দে, অসীম ভুঁইয়া, সন্দীপন বেরা, তাপস মুখোপাধ্যায়, অনিন্দিতা শাসমল, রাজীব ঘোষ, মিঠুন চক্রবর্তী, লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল, সুজিত মান্না, পুলক রায়, শ্রীতনু চৌধুরী, বিক্রমজিৎ ঘোষ প্রমুখ অনেক কবি। দ্বিসার্ধশতবর্ষে রাজা রামমোহন রায়ের মূল্যায়ন করেছেন সুব্রত পণ্ডিত। তাঁর গদ্যটি ভালো লেগেছে। প্রকৃতির এক গানের জার্নি বিষয় লিখেছেন ভবানীপ্রসাদ গুইন। তাঁর প্রবন্ধের বিষয়টি একেবারে অসাধারণ। বেশ কিছু গল্প এবং অণুগল্প পাঠককে আকর্ষণ করবে। গল্পকাররা হলেন বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়, মঙ্গলপ্রসাদ মাইতি, তপন তরফদার, তপতী বিশ্বাস, অমৃতা ঘোষ, হৈমন্তী ভট্টাচার্য, রণধীশ চক্রবর্তী, অজয়কুমার শীল, বিজয় শীল প্রমুখ। তিনটি উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ লিখেছেন কামরুজ্জামান, তুলসীদাস মাইতি ও প্রসূন কাঞ্জিলাল। ছড়া, রম্যরচনা, ভ্রমণ কাহিনি, আঞ্চলিক কবিতা, ভৌতিক গল্প প্রভৃতি  অজস্র বিষয় রয়েছে। যোগাযোগ: সম্পাদক তারাশঙ্কর দে, গ্রাম রাধানগর, ডাকঘর আমলাগোড়া, থানা গড়বেতা, জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর, সূচক- ৭২১১২১,চলভাষ: ৯১৫৩০৪ ৭৮৮২,মূল্য ৮০ টাকা।

   ৩

 এখন তমোহা

🍁

 সপ্তম বর্ষ শারদ সংখ্যা ‘এখন তমোহা’ (১৪২৯) বেশ চিমছাম সুন্দর একটি পত্রিকা। পত্রিকার প্রচ্ছদেও অনন্যতা আছে। লেখা নির্বাচন ও পরিবেশনেও ঝরঝরে সুরুচির ছাপ স্পষ্ট। ‘স্বর্গ হইতে পতন’ শিরোনামে অদ্ভুত একটি প্রবন্ধ লিখেছেন উত্তম দত্ত। কাব্য সাহিত্যের মানুষ, সাধারণ মানুষের চোখে অনেক সময়ই তাঁরা দেবতার মতো। তাঁদের সৃষ্টি দেখেই শ্রদ্ধায় নত হয় অনেকেই। কিন্তু তাঁদেরও এমন কিছু অধোগতি চরিত্রদোষ আছে যা জানার পর মনোভাব পাল্টে যায়। মানবচরিত্রের মধ্যে যে আদিম প্রবৃত্তির দেখা পাওয়া যায় তাতে এঁরাও ব্যতিক্রমী নয়। যতই উন্নত সৌন্দর্যময় জীবনধারার ধারণা জন্মাক না কেন, বহু ব্যবহারে শেষপর্যন্ত তা ক’অক্ষরগোমাংসে পরিণত হয়। লেখক লিখেছেন “স্বপ্নের নারী বা পুরুষকে প্রতি রাতে নগ্ন দেখতে দেখতে এতকালের জমিয়ে তোলা মায়াবৃত্ত ও স্বর্গীয় মোহ ধ্বংস হয়ে যেতে বাধ্য।” এই সংখ্যার গল্পগুলিও অসাধারণ। অরুণাচল দত্তচৌধুরী ‘আত্মবিনাশী’ গল্পে শিক্ষা-সংস্কারের ভেতর জীবনচেতনার আলোক সন্ধান করেছেন। এক ভিন্ন জগতের ভেতর তিনি পাঠককে নিয়ে গেছেন। এমনই মনস্তাত্ত্বিক আরও দুটি গল্প লিখেছেন অপরাহ্ণ সুসমিতো ও পারমিতা মণ্ডল। জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মেও সুহার জীবনে যৌবন আসে, একসময় কামার্ত তাড়নায় সেও রক্তাক্ত হয়। অপরদিকে অন্য গল্পে নিজস্ব বাড়ির খোলামেলা পরিবেশ এবং তার সঙ্গে প্রাণের সংযোগ কতখানি তা ফুটে ওঠে। দুটি গল্পই ভাবিয়ে তোলে। বেশ কিছু ভালো কবিতা পড়ার সুযোগ হয়েছে এই সংখ্যায়। গোলাম রসুল লিখেছেন “আমরা সেই দিকে যাই/ যেদিকে শুধু জমে থাকা ফাঁপা শব্দগুলোর প্রতিক্রিয়া হয়/ আর শূন্যের মতো অপেক্ষা করি।” অসাধারণ নাথিংনেসের বোধ জেগে উঠেছে। প্রণব বসুরায় লিখেছেন “বাহান্ন ক্রোশ পথ হেঁটে/ কোন রাস্তা কোথায় যে মেশে…” অদ্ভুত এই জীবনের রাস্তা। কোথায় এর গন্তব্য আমরা কেউ জানি না। দার্শনিকবোধের মধ্যে দিয়েই কবিতার এই ইঙ্গিতময়তা। অন্যান্য কবিদের মধ্যে হলেন পল্লব গোস্বামী, আফজল আলি, সৌমাল্য গড়াই, জয়তী দাস, হিমাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়, রিয়া চন্দ্র, সোনালি ঘোষ, জয়াশিস ঘোষ, দেবাশিস ঘোষ, অভিনন্দন মাইতি, বন্ধুসুন্দর পাল, আশরাফুল মণ্ডল, বর্ণময় বাড়ৈ, রুমা ঢ্যাং অধিকারী, কৌশিক সেন, মণিশংকর বিশ্বাস, নূপুর রায়, মোহন দাস, সুদেষ্ণা ব্যানার্জি, পৃথা রায়চৌধুরী, সোমা দাস বৈদ্য, তমোগ্ন মুখোপাধ্যায়, ঝিলম ত্রিবেদী, অরূপরতন হালদার, অবন্তিকা পাল, সন্তু মুখোপাধ্যায়, চন্দন রায়, রত্নদীপা দেঘোষ, নীলম সামন্ত এবং আসিফ আলতাফ। যোগাযোগ:সম্পাদক সুরজিৎ সেনগুপ্ত, ৭৫৭/১,নতুন গ্রাম, ৩ নং হরির মাঠ, পোঃ মোড়পুকুর, রিষড়া, হুগলি-৭১২২৫০, চলভাষ :৮৯১০৪৮৮৩৬৪,মূল্য ৩০ টাকা।

  ৪

অন্বেষা

🍁

৪০ তম বর্ষের শারদ সংকলন ‘অন্বেষা’(১৪২৯) পত্রিকাটি বিশেষভাবে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে। এর লেখাগুলি সুনির্বাচিত। সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করেছেন “চার দশক ধরে ‘অন্বেষা’ সাহিত্য পত্রিকা সাংগঠনিকভাবে প্রকাশিত হয়ে চলেছে এই নদিয়ার গোকুলপুর অঞ্চল থেকে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহযোগিতার মহান প্রসারিত হৃদয় হতে বাহিত স্বাভাবিক ছন্দে।” কিন্তু এই পত্রিকার উত্তরসূরি কারা হবে এখানেই এসেছে সংশয়। ডিজিটাল বুক্ কি পত্রিকার বিকল্প হতে পারে? মুদ্রিত বইয়ের পক্ষেই তাই মত দেওয়া হয়েছে। খুব ভালো লাগলো সম্পাদকীয়। বহু কথার মধ্যে আরও বলা হয়েছে: সোশ্যাল মিডিয়ায় শুধু নিজের লেখাটুকু পোস্ট করবেন না, অন্যের লেখাও পড়ুন এবং আলোচনা করুন। লিটিল ম্যাগাজিন এর সম্পাদকও যে কত দায়িত্ববান হতে পারেন তা বুঝতে পারছি। কয়েকটি মূল্যবান নিবন্ধ প্রবন্ধ যা উল্লেখ করতেই হয়: সন্দীপন সেনের লেখা ‘দ্বারকানাথের উইল’, যেখানে রবীন্দ্রনাথের ঠাকুরদা দ্বারকানাথ কীভাবে চাকুরি ছেড়ে স্বাধীন উপার্জনের পথে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। বিচক্ষণ তাঁর কর্মকাণ্ডের পরিচয় আছে। অরিন্দম দাশগুপ্ত লিখেছেন ‘অপরাধ সাহিত্য, অ্যাকশন ছবি আর ট্যুরিজমে’র ভেতরের নানা কাহিনি। খুব মূল্যবান রচনা। বেশ কিছু কবিতা মন ভরিয়ে দেয়। অপূর্ব পাল লিখেছেন “যতবার আত্মহননের পথে যাই/ আমার সামনে এক নদী এসে পড়ে” অদ্ভুত এক মনন দৃশ্যকল্পে প্রবেশের চাবি দিয়েছেন তিনি। যেখানে ইতিহাস থেকেই উঠে আসে মানবজীবনের চিরন্তন আবেগ। রণজয় মালাকার লিখেছেন “অক্ষরের ভিতর দিয়েই আমাদের রাস্তা।/ অনুভবের ভিতর দিয়েই আমাদের পথ।” আশ্চর্য জীবনদর্শনের পথে কাব্যনির্মাণের আলো খুঁজে পেয়েছেন তিনি। এরকমই বহু কবিতা এই পত্রিকায় রয়েছে। উল্লেখযোগ্য কবিরা হলেন শুভঙ্কর বসু, মোহম্মদ শাহরুদ্দিন ফিরোজ, সমরেন্দ্র বিশ্বাস, পিন্টু বেতাল, শম্পা হালদার, সমর সুর, শুদ্ধসত্ত্ব ভট্টাচার্য, মীরা মুখোপাধ্যায়, এনাক্ষি হালদার, শান্তময় গোস্বামী, তাপস বাগ, জগন্ময় মজুমদার, আরণ্যক বসু, পুণ্যব্রত মুখোপাধ্যায়, রূপক চট্টোপাধ্যায়, শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায়, তপনকুমার দাস, সাকিল আহমেদ, মিত্রা ঘোষ, অনিমেষ চক্রবর্তী, দ্বিজেন আচার্য, সিদ্ধেশ্বর পোদ্দার, কুশল মৈত্র, নির্মাল্য দাশগুপ্ত, মালা চক্রবর্তী, চিরপ্রশান্ত বাগচী, নীহাররঞ্জন দাস, দেবাশিস ঘোষ, উত্তমকুমার পুরকাইত, কমল পাল প্রমুখ আরও বহু কবি। বিদেশি কবিতা অনুবাদ করেছেন বাণী চক্রবর্তী ও কৌশিক দাস। বেশ কয়েকটি গল্প শিহরন জায়গায়। উল্লেখ্য গল্পকাররা হলেন মৈনাক দে, অরিন্দম গুপ্ত, অমিতাভ ঘোষ, শুভাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, রাজকুমার মাহাতো, শ্রেয়া বাসুমজুমদার, বিন্দু মুখোপাধ্যায়। অণুগল্প লিখেছেন দেব চক্রবর্তী, অপূর্ব বিশ্বাস, তরুণ মান্না, সৌরভ দেবনাথ, শিবপ্রসাদ পাল। ভ্রমণকাহিনি লিখেছেন ঈশানী রায়চৌধুরী। এছাড়া পুস্তক সমালোচনা এবং খাগের কলম নামে আরও দুটি বিভাগ রয়েছে। যোগাযোগ: সম্পাদক অন্বেষা, গোকুলপুর, কাটাগঞ্জ, নদিয়া- ৭৪১২৫০, দূরভাষ: ৯৮৩৬৪১৫৫১৬, মূল্য ৫০ টাকা।

     ৫

 সাহিত্যালোক পত্রিকা

🍁

 ত্রয়োদশ বর্ষের শারদ সংখ্যা ‘সাহিত্যলোক পত্রিকা’(১৪২৯) যথেষ্টই সমৃদ্ধ একটি পত্রিকা। সম্পাদকীয় থেকে জানা যাচ্ছে “এবারের সাহিত্যালোক শারদ সংখ্যা উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের লেখক-কবিদের মিলিত প্রয়াস।” সুতরাং পত্রিকায় উত্তরবঙ্গের বহু লেখকের লেখা আমরা পেয়েছি। প্রথমেই একটি মূল্যবান প্রবন্ধ লিখেছেন দুর্গেশ গিরি ‘প্রসঙ্গ পুরাণ’। পুরাণ কোনগুলি, রামায়ণ-মহাভারত এবং আর কী কী;এই প্রসঙ্গেই তিনি ১০৮টি পুরাণের কথা বলেছেন। ইতিহাসের সঙ্গে কু

পুরাণের সম্পর্ক বুঝিয়েছেন। দেবী দুর্গার মহিমা ব্যাখ্যা করেছেন মলয় দত্ত। মহামায়ার স্বরূপ মাতৃ আরাধনার কল্পসূত্র অন্বেষণ করেছেন কৃষ্ণগোপাল দে। সনাতন সংস্কৃতির আলোকে মাতৃ আরাধনার ইতিহাস অনুসন্ধান করেছেন সাক্ষীগোপাল চক্রবর্তী। বীরভূম জেলা শাক্তভূমির পিঠস্থান ছিল সেগুলির অনুসন্ধান ও চিহ্নিতকরণ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন লোকগবেষক সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায়। চণ্ডীদাস কয়জন এবং তাঁদের রামী বিতর্ক নিয়ে তথ্যপূর্ণ প্রবন্ধ লিখেছেন উত্তম মণ্ডল। অসংখ্য গল্প আছে এই সংখ্যায়। উল্লেখ্য গল্পকাররা হলেন সুভাষ দে, বিমলাংশুশেখর চক্রবর্তী, তাপস ওঝা, মিহির পাল, সঞ্জয় উপাধ্যায়, চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়, রাজীব পাল, অজয় আচার্য, জগন্ময় মিশ্র, অনিমেষ চট্টোপাধ্যায়, অরণ্যপলাশ মণ্ডল, ধান্তুপ্রসাদ সিনহা, বিমলকুমার সোম, রাজীব ঘাঁটি, স্বপন দত্ত, মতিয়ার রহমান প্রমুখ। শতাধিক কবিতা লিখেছেন এই সময়ের বহু কবি। সঙ্গে আছে আঞ্চলিক কবিতা এবং ছড়াও। যোগাযোগ: সম্পাদক অলক দাঁ, দুবরাজপুর, বীরভূম- ৭৩১১২৩, দূরভাষ: ৮৬৩৪৫০৯৬৫৯, মূল্য উল্লেখ করা হয়নি।

   ৬

 আলোর পাখি

🍁

 ২৫ বর্ষের চতুর্থ সংখ্যা ‘আলোর পাখি’(ডিসেম্বর ২০২২) বরাবরের মতোই এবারের সংখ্যাটিও ভালো লাগার তালিকায় রাখলাম। ‘হে বেদনা’ নামের ছোট্ট একটি কবিতায় দীপ্তিমানাই ঘোষ লিখেছেন : “ধুলোটের ঘণ্টাধ্বনি শেষে/ পৃথিবী নগ্ন হয়/ জলাশয়ের কাছে।/ আমিও ভিজেছি/ সহজাত কান্নায়।” খুব অন্তর্মুখী কবিতা। দিশারী মুখোপাধ্যায় লিখেছেন “সে তার নিজের আকার খুঁজে বেড়াচ্ছিল” সত্তার অন্বেষণ তো বেঁচে থাকার মধ্যেই আবর্তিত হয়। তবু কবির কবিতায় এক অবচেতনের ক্রিয়া নিহিত থাকে। তাই কবিতাটির শেষ হয় “সব পাথর লোহাজলে ভিজে দিব্যি নরম” যা আমাদের ভাবনারও অগোচর। এই সংখ্যার অন্যান্য কবিরা হলেন : সত্যজিৎ সেন, ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। বাস্তবানুগ অসাধারণ গল্প লিখেছেন: রমেশচন্দ্র সেন, দেবাশিস সরকার, হেমন্তিকা কর। লেখকদের মনস্তাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণ দুর্দান্ত। তথ্যবহুল বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ আছে এই সংখ্যায়। ত্রিপুরা বসু ‘সেকালের সংবাদপত্রে বইয়ের বিজ্ঞাপন’ বিষয়ে অনুসন্ধান করেছেন। মহেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন ‘স্মৃতি পটলে বাংলা-গান’।ছোটবেলায় শোনা বিভিন্ন গানের প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন। আজ সেসব ইতিহাস। বিকাশ এস জয়নাবাদ লিখেছেন ‘নদীর কথা কবির কথা’। নদীর গতি প্রবাহ এবং রহস্যময় চলনের সঙ্গে কবির ভাবব্যঞ্জনায়ও গভীরভাবে রেখাপাত করে। তেমনি কথাসাহিত্যিকদেরও প্রভাবিত করে। সপ্রাসঙ্গিক আলোকপাত অনবদ্য হয়ে উঠেছে। তপনকুমার রায় ১৩৫০ সালে প্রকাশিত রমেশচন্দ্র সেনের তীব্র ব্যঙ্গ বিদ্রূপাত্মক গল্প ‘বেঙ্গল অর্ডিনেন্স নাম্বার ফোর’ বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। নীতীশ ভট্টাচার্যের ধারাবাহিক ‘কথা মন নিয়ে'(৭) এবং নির্মলকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ইতিবৃত্তে দুর্গাপুর'(৮) ধারাবাহিক দুটিও স্বমহিমায় প্রকাশিত হয়েছে। যোগাযোগ: সম্পাদক: তপনকুমার রায়, বি-১৫, সুকান্ত পল্লি, দুর্গাপুর-৭১৩২০১, পশ্চিম বর্ধমান।চলভাষ-৯৮৩২১১১১৫৮, মূল্য ৪০ টাকা ।

🐦

20230107_174826.jpg

Dr. Taimur Khan

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *