জলের নাম মৃত্যু
ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ
সেদিন রোদের শাসনে মেঘেরা উধাও
অবুঝ এক দলিত বালক তার ইস্কুলে
খুঁজেছিল এক আঁজলা জল
অবিবেচক তৃষ্ণায়।
গলা শুকিয়ে কাঠ
তাই সে ভুলেছিল অকস্মাৎ
সময়ে অসময়ে পিপাসায়
শুধুই উচ্চবর্ণেরই অধিকার,
জলেরও আছে প্রখর বাছবিচার।
তার চোখে তখন ইস্কুলঘর
যেন এক মরুভূমি বিশাল;
এক ঢোঁক জলের বিনিময়ে
সে দিতে পারে অকাতরে
তার ঘুড়ি লাটাই মার্বেলগুলির সম্ভার।
তৃষিত চাতক সেই অবুঝ বালক
তবু খুঁজেছিল এ মরুতে এক চুমুক জল
মরুভূমিরও তো থাকে মরুদ্যান
অন্ততঃ মরীচিকার প্রবঞ্চনা বা সান্ত্বনা!
ঐ উঁচু টেবিল থেকে কে দেয় শীতল হাতছানি?
কে ঐ মরালগ্রীব জলকলস?
সে কি বিভ্রম না মরীচিকা না মায়া?
পাত্রাধার জলের গায়ে পড়ে
অন্ত্যজ বালকের পিপাসার ছায়া
অবোধ বালক যেন নিশির ডাকে
পায়ে পায়ে পৌঁছেছিল
সেই অমোঘ নিয়তির কাছে,
মন্ত্রমুগ্ধের মত ফেলেছিল
ছুঁয়ে
বেদের মত উঁচু সেই জলপাত্রটিকে
তখনই বিনামেঘে উঠেছিল ঝলসে বিদ্যুতের চাবুক,
বাসুকির ফণার মত ফুঁসেছিল দিগন্তজোড়া ঢেউ,
বজ্রপাতে খুন হল কত নিরীহ বৃক্ষের উচ্চাশা,
প্রলয় কি সমাগত চৌকাঠে?
পিপাসায় মথিত সেই দলিত বালকও
খুন হয়ে গেল
উঁচু জাতের কসাইয়ের হাতে;
তখনই এসে গেল অমৃত মহোৎসবের পরোয়ানা
সেই পাড়াগাঁর ইস্কুলের দুয়ারে
চিতার ওপর এক বুক তৃষ্ণা নিয়ে আছে শুয়ে
সেই মূর্খ বালক,
মেঘেরা কোথা থেকে এল দলবেঁধে,
অঝোরে ঝরে
তার ঈষৎ বিস্ফারিত দুই ঠোঁটের মাঝে…
তারাও জানে মনে মনে
বড় দেরী হয়ে গেল এবারে।