অলীক শহর
ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ
আমার সেই শহরে খুব যেতে ইচ্ছে করে
গর্ভিনীর মত চলেছে ডাবলডেকার
পৌঁছবে যখন সময় হবে তার
ফুটপাতও হাঁটে একটু হোঁচট খেয়ে
রকে একটু আড্ডা মেরে
পথচলতি মেয়েটার দিকে আড়চোখে দেখে….
রাস্তা ভেজানোর উৎসারিত গঙ্গাজলে
ভগীরথ আদুড় গায়ে মাখে
পাঁচশো এক সাবান
আমার হাতে সাকুল্যে একটি টাকা
আমি কিনে নিতে পারি গোটা কলকাতা
করুণা বশতঃ গন্তব্য আপাতত
কলেজ পালানোর দেশ-
অচল এক সরকারি বাসের খোল
গানে গানে কেঁপে ওঠে ছেঁড়া সিট থেকে ফুটো ছাদ
তর্কে পার হয়ে যায় সাত সমুদ্দুর
এগজস্ট পাইপ থেকে দলাদলা বেরোয়
সিগারেটের পোড়া নিঃশ্বাস
এ শহর দেখায় বেশ
ডাবলডেকারের দোতলায়
কোন হলুদ দোতলার জানলায়
কোন হরিণী চোখ চকিতে পর্দা সরায়
না লেখা কবিতার মত সারাদিন
সেই চোখ পিছু ছাড়ে না আমার
এই শহরে সুন্দরী ট্রামের অহঙ্কারে
সবিনয়ে করে দেয় পথ উলোঝুলো বাস
দু্ কামরার বিলাসিনী হীল পায়ে যায়
নিজস্ব সরলরেখা ধরে
লাস্যময়ীর মত র্্যাম্পে হাঁটার ভঙ্গিমায়
হায় সে লুকিয়েছে কোন নিরালায়
যেখানে রোজ সকাল দুপুর রাতে
স্টেশনে স্টেশনে বমি করে লোকাল ট্রেন
যেখানে সক্রেটিস দেখে
ফিনিক্স পাখির মতো
আধপোড়া বইগুলো জেগে উঠে
খুঁজে নেয় কম্পমান আঙ্গুল
ময়দান যেখানে সন্ধ্যার হাত ধরে এসে বসে
চিনাবাদামের লাজুক খোসা ছাড়ায়
চৌরঙ্গীর আলোর ফুটকিগুলো ধুলোয় ম্লান নক্ষত্রের মত;
ছ্যাকরা গাড়িতে প্রদক্ষিণ করে ভিক্টোরিয়ার পরী
শুন্যে ভেসে থাকে ক্লান্ত হ্রেষারব
এইখানে খালিপেট চারমিনারখেকোরা
একমনে লিখে যায় নাগরিক এপিটাফ
কলেজ স্ট্রিটে সূর্যকে নামায় রাত দেড়টায়
মাতাল পার্ক স্ট্রিটও জানে
ডিরোজিও এখনও স্বপ্ন দেখে চলে
ডাবলডেকার মাঝরাতে
শক্তিকে ফেরৎ দিয়ে যায়
তার গেরস্ত ডেরায়
জড়ানো গলায় কে ডেকে ওঠে
অজিতেশ আছো অজিতেশ
আমাকে ফিরিয়ে দাও
সেই সিনেমার ভীড়
রাতজাগা জলসা
ভোররাতে নিখিলের মীড়
এইসব দিনেরা
দাবানলের মত ব্যস্ত হয়ে
নিমেষে জ্বলে খাক
কেউ কি ফিরিয়ে দেবে সেই অলীক শহর
এই নির্বান্ধব প্লাস্টিক উপত্যকায়।