
বিশ্ব অসুন্দরীর গোপন
জবানবন্দী
ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ
(সংবাদে প্রকাশ মেরি অ্যান বেভান-কে বিশ্বের কুৎসিততম নারী আখ্যা দেওয়া হয়েছে। সেই প্রসঙ্গে আমার আখ্যান) :
খোলা মঞ্চে তোমরা আমাকে করালে প্যারেড
তন্নতন্ন করে দেখলে আমার ঊরু নিতম্ব মুখ
জহুরীর মত করলে জরিপ আমার সিঁটিয়ে থাকা বুক
কুশ্রী-বিজ্ঞানীরা এসে খতিয়ান খুলে
মোটা চশমা চোখে
টর্চের আলোয় আমার দেহকে ফালা ফালা করে
ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে নিল বুঝে
এক তিল রূপও যেন না থাকে লুকিয়ে
শরীরের কোন গোপনতম কোণে,
বিশ্ব-অসুন্দরীর শিরোপা থেকে যাবে অধরাই এ জীবনে
আমি তাই দম চেপে অস্ফুটে প্রার্থনা করে যাই:
হে প্রভু! দাও দাও আরো উদার হাতে ঢেলে দাও অপার কুশ্রীতা
হে করুণাময়! তুমি নিশ্চিত কর আমার নিখুঁত রূপহীনতা
হে বিনোদনপ্রেমী দর্শক! সজোরে নিক্ষেপ কর তোমাদের ঘৃণা
ছুঁড়ে দাও প্রাণপণে আরো পচা ডিম, মুখভর্তি থুতু, ঠোঙাভর্তি আবর্জনা
হে ধর্ষক! তুমি হাতের নাগালে নারীমাংস দেখেও উগরে দাও তোমার ধার্মিক বমি
ক্লীব হয়ে যায় তোমার ধর্ষণসামগ্রী
ওগো, বেঁটে মোটা বিয়ে না হওয়া মেয়ে!
সিলিং থেকে খুলে নাও ওড়নার ফাঁস
শুধু ভাব একবার তুমি তো অন্ততঃ আমার চেয়ে তো বেশি সুন্দরী
যাও ফিরে যাও সুন্দর পৃথিবীতে
ছাদনাতলার পবিত্র আহ্বানে
তোমরা যারা মেয়েমানুষের রূপের কর বেসাতি
হও ধৃতরাষ্ট্র, বাঁধো তোমাদের শকুনী চোখ কাল কাপড়ে।
সীতা সাবিত্রী বেহুলা কুন্তী গান্ধারী
সবাইকে তো করিয়েছ প্যারেড যুগে যুগান্তরে
পুরুষদের লেলিহান দৃষ্টিলেহনের সামনে,
যাও চলে তোমরা ভুল মঞ্চ ছেড়ে
রূপের বিকিকিনির হাটে
তোমরা যারা কবি
চন্দ্রাহত হও শ্বেতীগ্রস্ত চাঁদের রূপতৃষ্ণায়
তার কলঙ্ক দেখেও ভান কর না দেখার;
কোনদিন কি দেখেছ তার পিঠে একঢাল কাল চুলে
জমে আছে আবহমানকালের উপেক্ষার অন্ধকার?
কোনদিন কি সেই অদেখা চাঁদ পেয়েছে প্রশ্রয় তোমার কবিতার?
এসো প্রণম্য বিচারক!
গা ঘিনঘিন যতই করুক তোমার
তবুও নিক্তি মেপে নাও আমার কুশ্রীতার সার্বিক পরিমাণ
এসো, শাইলকের মত হিসেব করে দেখে নাও
আমাকে দেবে কি দেবে না বিশ্রীশ্রেষ্ঠার লোভনীয় সম্মান
দেরি কোরো না তোমরা আর
পাদপ্রদীপের আলোর নীচে
আমার সন্তান দাঁড়িয়ে আছে ঠায়
পেটে তার জ্বলন্ত খিদে আছে অপেক্ষায়
কখন তুলে দেব মুখে তার
একমুঠো তেঁতো খাবার।
১৩.১০.২০২২