মোটা মাটির থালা
বিশ্বনাথ পাল
বুড়ো হলে নোলা বাড়ে, তা বলে তোমার মত এত লকলকে নোলা ভূভারতেে কোত্থাও দেখি নি – –সাধনা ওর বৃদ্ধ স্বামী মন্মথবাবুকে রুক্ষ্ম গলায় বৌমাদের শুনিয়ে ক’টা কথা শোনাতে গিয়েও থেমে যায়।
গলা বুজে আসে।
সংসারের সবধকল হাসিমুখে সহ্য করা মানুষটার বিছানাগত হবার সাথে সাথেই একচোখা সংসারের হঠাৎ পরিবর্তন সাধনার বুকে কাঁপন ধরিয়েছে। কাণ্ডারী। কায়িক পরিশ্রম দিয়ে এ গাঁয়ে প্রথম ইটের বাড়ি করা। কালার টিভি কিনে আনা। ছেলে দুটোকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়াতে শহরে হস্টেলে রাখা । সেই মানুষটার শেষ সময়ে খাওয়ার খোঁটা দিয়ে বড় বউ সংসারটা কে একেবারে ডামাডোলের মুখে তুলে দিলে। ছোট বউ ওর পাল্লায় পড়ে মৃত্যু পথ যাত্রী শ্বশুর মশায়ের কলা খাওয়ার বাতিকটিকে পর্যন্ত বিঁধতে ছাড়ল না।
সাধনা এ কথা ওর বৈমাত্রেয় ভাইকে ফোনে বলতেই সে গাছপাকা চার ফেনি কলা পাঠিয়েছে। মোড়ের মাথায় একটা দোকানে রাখা কলা আনতে গিয়েই তো অনেকটা সময় নষ্ট হল।
দু দলের দলাদলি থেকে হাতাহাতি। তাই নিয়ে থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়াল। হাতের কলাগুলো থলে থেকে বের করে বুড়োর চোখের সামনে ধরার আগে ছলনার ধমক আর সেই সঙ্গে রুমের সুইচটা দিয়ে ও বুঝল কারেন্ট নেই। অসময়ে বে ঘোরে ঘুমনো মানুষটার কাছ থেকে কোন প্রতিক্রিয়া না আদায় করতে পেরে হাত দিয়ে ঝাঁকুনি দিল। মাথার কাছে যে কলার জন্য ছোট বউ ঝগড়ার পাহাড় উপড়ে দিয়েছিল সেটাকে হঠাৎ আসা বিজলী বাতির আলোয় দেখে সে আশ্বস্ত হল। মনে মনে বলল, যাক বুড়োর জ্ঞানগম্যি তা হলে দেরিতে হলেও খানিকটা হয়েছে দেখছি।
ক’ টা মাছি। মুখের কাছে ভন ভন করছে।
হাঁ করে ঘুমানোর চিরকেলে স্বভাবের নিন্দা করতে গিয়েও থেমে যায় সাধনা। মুখে হাত দিয়ে দেখে শরীরে জ্বরটা উধাও । বরফের মতো ঠাণ্ডা। কঙ্কাল সার বুকে মাথা দিয়ে হার্টের লাকডুবাডুবটা তড়িঘড়ি শোনার চেষ্টা করে।
কেঁদে ওঠে সাধনা।
একসাথে ঠোকাঠুকির সংসারে সকলে বিশেষ করে বউমার দল মাটির মোটা থালা বলে উপহাস করতো, সেটা আজ এই রকম করে ভেঙে বুকটাকে দুমড়ে মুচড়ে দেবে তা কখনোই ভাবে নাই সাধনা।
বুকের এই অসম্ভব যন্ত্রণার
মাঝেই যদি ওর মরণ হয় তবে সাধনাা আজ সত্যি সত্যিই বেঁচে যায়।