
দুষ্ট রাজার গল্প “
বিকাশ চন্দ্র মণ্ডল
গদীবেড়ো, রঘুনাথপুর, পুরুলিয়া
পাড়ার দুষ্ট ছেলে বলে তার খুব নাম ডাক। মামা বাড়িতে বিদ্যালয়ে এক সাথে মামার সাথে আর সেই সুবাদে, পাশে থেকে দেখার ও বোঝার সুযোগ পেয়েছিলাম। এ যেন শরৎ চন্দ্র মহাশয়ের সৃষ্ট ” ইন্দ্রনাথ ” ।
তার একটা নিজস্ব বন্ধু মহল ছিল, সেখানে সে রাজা। রাজার মতোই শাসন করত । অভিযোগ করার সাহস পেতো না কেউ । ঐ দলে এক কোয়াক ডাক্তারের ছেলেও ছিল। সে বাড়ি থেকে সকলের চাইতে একটু বেশি বেশি টাকা টিফিন খরচ পেত। সেই ছেলেটি রাজার ছিল বিশেষ প্রজা। ভয়ে ভয়ে থেকে রাজার সমস্ত নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করত। না মানলে কঠিন শাস্তি জুটত কপালে। যেদিন যত টাকা কর বসত, ডাক্তারের ছেলেটি নিজে না টিফিন খেয়েও রাজার হাতে নিবেদন করত। রাজা ” পরের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে” সাঙ্গাতদের জন্য বরাদ্দ করত কোন দিন চটপটি, কোনদিন ঘুঘনি বা ফুচকা । এই ভাবে রাজা বড় বড় হতে হতে ষষ্ঠ শ্রেণির পর আর কোন দিনও স্কুল মুখো হল না।
এবার পাড়ায় চলত গুণ্ডারাজ। কারো বাগানে ভালো পেয়ারা ধরলে চুরি করে খাওয়া। ঠাকুর বাড়ির পাঁচিল টপকে বড় বড় কাঁচা বেল পেড়ে এনে মাঠে খড় কুটো জ্বেলে পুড়িয়ে খাওয়া।
ঘটল এক অযাতিত ঘটনা। কয়েকটি দিন ধরে রাজাকে চিরুণী তল্লাশি করেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার পাড়া তো কাকার দোকান থেকে, ছল করে অনেক টাকা সরিয়ে দিয়ে চম্পট দিয়েছে।
বাড়ি থেকে দূরে তার পাড়াতো কাকার মুদি দোকান । ভর দুপুরে কাকা বাজার থেকে ফিরে জিনিস পত্র রাখার জন্য অনেক বার রাজাকে দিয়ে বাড়ি থেকে কাকিমার নিকটে চাবি আনিয়েছে। কাকিমা প্রত্যহ তার হাতে চাবি দিয়েই দেয়, কাকা এসেছে এই ভেবে। সেদিন কাকা না এলেও চাবি চেয়ে এনে দোকান থেকে টাকা নিয়ে চম্পট দেয়।
সেদিন হঠাৎ তার বাবা রাজাকে পিঠতে পিঠতে বাড়িতে এনেছেন। ওর হাতের টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় বাড়িতে ফিরছে। তবে শুধু হাতে ফেরেনি, অনেক কিছুর সাথে এক জোড়া বুট জুতো ও একটা ভালো ফুটবল এনেছে ।
পড়াশোনো ছেড়ে দিলেও রাজা নিজের বাড়ির সদর বৈঠক খানায় ফি বৎসর সরস্বতী পুজোয় আমাদের পাশে রাখত, পেট পুরে খিচুড়ি খেতাম।
ডাক্তারের সেই ছেলেটি, বাবার চেম্বার সামলাচ্ছে। দুঃখের বিষয় রাজা আর এ জগতে নেই। রাজা অসুস্থতা নিয়ে দুই সন্তান কে স্ত্রীর জিম্মায় দিয়ে পরলোকে যাত্রা করেছে।
এটা দুষ্ট রাজা কে ভগবানের দেওয়া শাস্তি নয় কি ?
আমার লেখা দুষ্ট রাজা গল্পটি প্রকাশিত হওয়ায় আমি আপ্লুত ।
পরিবারে সকলকে আমার শারদ শুভেচ্ছা ।